পহেলা বৈশাখ,সংস্কৃতির আড়ালে অপসংস্কৃতি

লিখেছেন লিখেছেন প্রতিবাদী কণ্ঠ ১৪ এপ্রিল, ২০১৩, ০৭:৪৪:২২ সকাল



“বৈশাখ এলো, বৈশাখ এলো,

গ্রাম গঞ্জে পড়ছে সাড়া

সবুজ গাঁয়ের আঁচল ছুঁয়ে

ছুটছে নদী পাগল পারা”

নোট টা যখন লিখছি তার ৪-৫ ঘণ্টা পরেই বাংলা নববর্ষ ১৪২০ সাল। নোট টা পহেলা বৈশাখের ৭/৮ দিন আগে লিখতে চেয়েছিলাম কিন্তু সময় সংকুলানের কারনে লিখতে পারি নি।

যাই হোক সবাই কে বাংলা নববর্ষের শুভেচ্ছা জানিয়ে শুরু করছি।

পহেলা বৈশাখ বা বাংলা নববর্ষ। বাঙ্গালী জাতির অত্যাবশ্যক পালনীয় ও ঐতিহ্য বাহী একটি সংস্কৃতি।

বাঙ্গালী জাতি হিসেবে বাংলা নববর্ষের দিন টিকে আমারা নানা আয়োজনে বরন করে নেই।

৩৬৪ দিন আর যেই সংস্কৃতি ধারন করি না কেন , ১ টি দিনের জন্য আমারা খাটি বাঙ্গালী হয়ে যাই। সকালে এসে ইলিশ ভাজা আর পান্তা ভাত খাওয়া , হলুদ শাড়ি পরে রমনার বটমূলে গলা ফাটিয়ে ‘এসো এসো হে বৈশাখ এসো এসো’ গান গাওয়া.........

যুবক-যুবতি হাতে হাত ধরে ‘বৈশাখী নিত্য’ হাজারও দর্শকের সামনে পরিবেশন করা

আরও কতো কি.........???!

এই হল আমাদের বর্তমান সমাজে প্রচলিতি পহেলা বৈশাখ সংস্কৃতি।

কিন্তু এই গুলই কি আমাদের (বাঙ্গালীদের) পহেলা বৈশাখের শিকড়ের সংস্কৃতি না ভিন্ন কিছু...............????

আসুন মুল আলোচনার সুবিধাত্তে সংক্ষেপে দেখে নেই বাংলা সালের উৎপত্তি ও পহেলা বৈশাখ সংস্কৃতি।

ভারতে ইসলামী শাসনামলে হিজরি পঞ্জিকা অনুসারেই সকল কাজকর্ম পরিচালিত হতো।

মুল হিজরি পঞ্জিকা চান্দ্র মাসের উপর নির্ভরশীল। চান্দ্র বাসর সৌর বাসরের চেয়ে ১১/১২ দিন কম হয় । কারন সৌর বাসর ৩৬৫ দিন,আর চান্দ্র বাসর ৩৫৪ দিন। একারণে চান্দ্র বাসরে ঋতু গুলো ঠিক থাকে না । আর চাষাবাদ ও এজাতিও অনেক কাজ ঋতু নির্ভর। আজন্ম ভারতের মঘল সম্রাট আকবরের সময়ে প্রচলিত হিজরি চান্দ্র পঞ্জিকাকে সৌর পঞ্জিকায় রুপান্তরিত করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।

৯৯২ হিজরি মতাবেক ১৫৮৪ খ্রিষ্টাব্দে সম্রাট আকবর এ হিজরি সৌর বর্ষপঞ্জির প্রচলন করেন। ৯৬৩ হিজরি সাল থেকে বঙ্গাব্দ গননা শুরু হয়। ইতিপূর্বে বঙ্গে প্রচলিত শকাব্দ বা শক বর্ষপঞ্জির প্রথম মাস ছিল চৈত মাস।কিন্তু ৯৬৩ হিজরি সালের মুহারম মাস ছিল বাংলা বৈশাখ মাস,এজন্য বৈশাখ মাস কে বঙ্গাব্দ বা বাংলাবর্ষ পঞ্জির প্রথম মাস এবং ১লা বৈশাখ কে নববর্ষ ধরা হয়।

“এখান থেকে আমরা কিছু টা ধারনা পাই যে , আমাদের দেশে প্রচলিত বাংলা সন মুলত ইসলামী হিজরি সনেরই একটি রুপ।’’

মোঘল সময় থেকেই পহেলা বৈশাখে বাংলা নববর্ষ উপলক্ষে কিছু অনুষ্ঠান করা হতো। প্রজারা চৈত্রমাসের শেষ পযন্ত খাজনা পরিশোধ করতেন এবং পহেলা বৈশাখে জমিদারগন

প্রজাদের মিষ্টি মুখ করাতেন এবং সামান্য কিছু আনন্দ-উৎসব করা হত।এছাড়া বাংলার সকল ব্যাবসায়ী ও দোকানদার পহেলা বৈশাখে ‘হালখাতা’ করতেন। পহেলা বৈশাখ এই সব নিয়ম কানুনের মাঝে সিমাবদ্ধ ছিল। এ ধরনের কোন কিছু সংগঠিত হওয়া মুলত ইসলামে নিষিদ্ধ বলার কোন যৌক্তিক কারন নেই।

এবার আসি বর্তমান সময়ে আমাদের পহেলা বৈশাখ উৎযাপন প্রসঙ্গে,

আমারা জাতি গত ভাবে বাঙ্গালী হলেও আমাদের সবচেয়ে বড় পরিচয় হল আমারা

মুসলিম। বর্তমান সময়ে পহেলা বৈশাখে আমরা যেসব কর্ম-কাণ্ড লক্ষ করে থাকি এর অধিকাংশই বাওনলাদেশের সংখ্যা গরিষ্ঠ মুসলিম জনগোষ্ঠীর মূল্যবোধের সাথে প্রচণ্ডভাবে

সাংঘষিক।

আজ আমাদের দেশে পহেলা বৈশাখ উৎযাপনের নামে যুবক-যুবতি থেকে শুরু করে শিশু দের কে পযন্ত অশ্লীলতা ও বেহায়াপনার প্রশিক্ষন দেওয়া হচ্ছে। শহরে-গ্রামে বৈশাখী মেলার নামে লটারির নামক জুয়ার আসর বসানো হচ্ছে আর রাতে সংস্কৃতি অনুষ্ঠানের নামে শুরু হয় নগ্ন বেহায়াপনা।

নববর্ষ উৎযাপনের সার্টিফিকেট নিয়ে আধুনিক মনা ততা কথিত প্রগতশিল নারীরা যেন নিজেদের রূপ-সৌন্দয্য ও দেহ প্রদর্শনের এক উন্মক্ত প্রতিযোগিতাই লিপ্ত হয়।

নববর্ষ উৎযাপনের নামে প্রেমিক বা প্রেমিকার সাথে অবাধ মেলামেশা এমন কি অসামাজিক কার্যকলাপে লিপ্ত হওয়া টা এখন কোন বিষয়ই না।

আর common বিষয় হিসেবে মঙ্গল শোভাযাত্রার নামে পৌত্তলিক পুজা তো থাকছেই।

বর্তমান সময়ের এই সমস্থ কারযকলাপ জাহেলি যুগ কেও মনে হয় হার মানাই।

যা নিচে কুরআনের দুটি আয়াত থেকে বোঝা যায়।

‘’যদি তোমরা আল্লাহ কে ভয় করে থাক তাহলে কমল আওয়াজে কথা বল না, যাতে রোগা গস্থ দিলের মানুষ লভে পরে যায়; বরং সোজাসুজি ও স্পষ্ট ভাবে কথা বল। তোমরা তোমাদের ঘরে শান্তি তে বসবাস কর এবং আগের জাহেলি যুগের মতো সাজ-সজ্জা দেখিয়ে বেরিও না।”

(সুরা আহযাব-৩২)



“হে আদম সন্তান তোমাদের প্রতি পোশাক নাজিল করেছি।যাতে তোমাদের শরিরের লজ্জাস্থান ঢাকা যায় এবং শরিরের হেফাজত ও সাজ-সজ্জা হয়। আর তাকওয়ার পোশাক সবচেয়ে ভালো।”

(সুরা আ’রাফ-২৬)



এই হল আমাদের পহেলা বৈশাখ। দেশীও সংস্কৃতির আড়ালে অশ্লীলতার প্রসার ঘটানো হচ্ছে।

আফসোস বাঙালি......!

যেই বাঙালি পহেলা বৈশাখে মাটির সাথে মিশে যাই, সেই বাঙালি আবার কিছুদিন পর মেতে উঠি থার্টি ফাস্ট নাইট পালনের নগ্ন সংস্কৃতিতে।

যেই বাঙালি পহেলা বৈশাখে বৈশাখী শাড়ি ,পাঞ্জাবি,ফতুয়া পড়ি

সেই বাঙালি আবার কিছুদিন পরে পশ্চিমা সংস্কৃতি লালিত অদ্ধ নগ্ন পোশাক পরে চলা ফেরা করি......

একটি দিনের জন্য পান্তা ভাতের কদর করি,

আর দ্বিতীয় দিন বলি পান্তা ভাতা কি মানুষ খায়.........???

এই মনসত্তের বাঙ্গালী কে আমি ধিক্কার জানাই।
যদিও আমি নিজে একজন বাঙ্গালী। আমি দেশ কে ভালোবাসি।দেশের সংস্কৃতির প্রতি আমার যথেষ্ট স্রধা বোধ আছে।

তাই বলে দেশিও সংস্কৃতি পালনের নামে এমন কিছু করব না যা ইসলামী শরিয়া পরিপন্থি।নববর্ষ পালন করা যদি মুসলিম জাতির জন্য জায়েজ হত তাহলে যে সন থেকে উৎপত্তি আমাদের বাংলা সন সেই হিজরি আরবি নববর্ষ পালনের বিধান থাকতো।

মুক্তিযুদ্ধ ও বাঙালি চেতনাই বিশ্বাসী কিছু গণ্য-মান্য বাক্তিরা বলে থাকেন ‘ধর্ম যার যার কিন্তু দেশ সবার,সবার একটাই পরিচয় আমরা বাঙালি, তাই পহেলা বৈশাখ একটা সার্বজনীন জাতীয় অনুষ্ঠান, এখানে অংশগ্রহনে ধর্মের বাধা কথায়...???

যারা এমন কথা বলে থাকেন তাদের কাছে আমার প্রশ্ন

১. নারী-পুরুষের অবাধ মেলামেশা কি ইসলাম সাপোর্ট করে?

২. নারী-পুরুষ একত্রে বসে গান-বাজনা কি ইসলাম সাপোর্ট করে?

৩.মঙ্গল শোভাযাত্রার নামে পৌত্তলিক পুজা কি ইসলাম সাপোর্ট করে?

৪.অশ্লীলতা ও বেহাইপনা কি ইসলাম সাপোর্ট করে?

৫.প্রেম-ভালোবাসার নামে নংগ্ন ভালোবাসা কি ইসলাম সাপোর্ট করে?

যদি পারেন আমরা এই প্রশ্ন গুলার উত্তর দিয়া পহেলা বৈশাখ পালন করেন।

সর্বশেষ আধুনিক মনা প্রগতিশিলদের দের একটা বক্তব্য তুলে ধরি।

তারা হেফাজতে ইসলামের ১৩ দফা দাবি কে বলছে মধ্যযুগীও নিয়ম-নীতি

অথচ হাজার বছরের পুরানো পহেলা বৈশাখের নামে অপ সংস্কৃতি পালন তাদের বাদছে না।

তখন ভুলে যাচ্ছে যে এটা মধ্যযুগীও সংস্কৃতি।

পহেলা বৈশাখ নিয়ে আর কিছু বলতে পারছি না। বেশি বললে হয়ত দেশদ্রোহী হয়ে যাব......

আল্লাহ আমাদের সবাই কে এই নব্য আধুনিক জাহিলায়াত থেকে রক্ষা করুন।

আমিন।

বিষয়: বিবিধ

২১৭৩ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File