২৫ অক্টোবরেই সংসদ ভেঙ্গে দেয়া হতে পারে! যে লক্ষ্যে হামিদকে রাষ্ট্রপতি, শিরিনকে স্পিকার করা

লিখেছেন লিখেছেন বেকার সব ০৬ জুন, ২০১৩, ০৫:১৯:০০ বিকাল



তত্ত্বাবধায়ক নয়, দলীয় সরকারের অধীনেই আগামী ১০ম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের টার্গেট নিয়ে পরিকল্পনা মাফিক কাজ করছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সরকার। আর এর আগেই চলতি বছরের ২৫ অক্টোবরেই জাতীয় সংসদ ভেঙ্গে দেয়ার চিন্তা-ভাবনা করছে বর্তমান সরকার।

সূত্রমতে, সংসদ ভেঙ্গে দেয়ার দিনেই সংশোধিত সংবিধান অনুয়ায়ী বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকেই প্রধান করে নির্বাচনকালীন সরকার গঠন করা হবে। নতুন এই সরকারের সদস্য সংখ্যা ২১ থেকে ২৫ জনের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকতে পারে।

সরকারের শীর্ষ স্থানীয় নীতিনির্ধারক মহলের অনেকের ধারণা, তত্ত্বাবধায়ক ইস্যুকে কেন্দ্র করে নির্বাচনে বিএনপি না এলেও জামায়াতসহ বিরোধীদলের অন্যান্য শরিক সদস্যরা সাধারণ নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে পারে। যদি একান্তই বিএনপি ওই নির্বাচনে অংশগ্রহণ নাও করে তবে তাদের এক শ্রেণীর নেতাকর্মীরা সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনের মতো করে অংশ নেবে।

যদি কোন কারণে নির্বাচনকালীন গঠিত দলীয় সরকার দেশ পরিচালনায় ব্যর্থ হয় বা নির্বাচন করার মতো অবস্থার দিকে এগিয়ে যেতে না পারে বা সম্ভব না হয়, সেক্ষেত্রে দেশে জরুরি অবস্থা জারি করে নতুনভাবে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার বা জাতীয় সরকার গঠন করারও বিকল্প পরিকল্পনা থাকবে নির্বাচনকালীন সরকারের। দেশের সার্বিক পরিস্থিতি গুরুতর রূপ নিলে সামারিক শাসন জারি করার মতো পদক্ষেপও নিতে পারে সেই সরকার।

বিশ্লেষকরা বলছেন, কোনো কারণে প্রধান বিরোধীদল বিএনপিসহ ১৮ দলীয় জোটের সঙ্গে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সরকারের সম্ভাব্য সংলাপ ফলপ্রসূ না হলে বা দু’পক্ষ নূন্যতম ঐক্যমতে পৌঁছতে না পারলে দেশ নিশ্চিতভাবে এক নতুন পরিস্থিতির দিকে এগিয়ে যাবে। বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকার আগামী ১০ম জাতীয় সংসদ নির্বাচন নির্ধারিত সময়ে সম্পন্ন করতে বদ্ধপরিকর হওয়ায় দেশের রাজনৈতিক সংকট আরও তীব্রতর হয়ে উঠবে।

অন্যদিকে, কোন কারণে নির্ধারিত সময়ে নির্বাচন অনুষ্ঠিত না হলে দেশে কী পরিস্থিতি সৃষ্টি হতে পারে তা নিয়ে চিন্তাভাবনা করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকসহ সরকারের নীতিনির্ধারক মহল।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, সময় মতো সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠানে ব্যর্থ হলে দেশের ভেতরে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ, দেশব্যাপী নানান সহিংসতা অনিবার্য় হয়ে উঠতে পারে। তেমন পরিস্থিতিতে সম্ভাব্য বিশৃংখলা রোধে ডিসেম্বরের শেষ অথবা জানুয়ারির শুরুতে সম্ভাব্য নির্বাচনকালীন সরকার জরুরি অবস্থা জারি করবে বা তত্ত্বাবধায়ক আদলে অন্তর্বর্তী সরকার গঠন করে ক্ষমতায় থেকে যাবে অথবা সামরিক শাসন জারি করে পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার শেষ চেষ্টা চালাতে পারে। বিশ্লেষকরা বলছেন, সে ক্ষেত্রে শেখ হাসিনার অন্তর্বর্তী সরকারের মেয়াদ হতে পারে ছয় থেকে আট সপ্তাহ।

বিশ্লেষকদের মতে, দেশে সামরিক শাসন জারি হওয়ার আশঙ্কাই বেশি। এই সামরিক শাসনের পরপরই পদাধিকার বলেই সেনাপ্রধান হবেন প্রধান সামরিক আইন প্রশাসক। অথবা তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আদলে নতুন ভাবে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠিত হলে শেখ হাসিনার পরিবর্তে জাতীয় সংসদের স্পিকার ড. শিরিন শারমীন চৌধুরী অথবা যে কোনো একজন অরাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব নতুন প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব পেতে পারেন।

আর সামরিক শাসন জারি হলে প্রধান সামরিক আইন প্রশাসক হিসেবে কাজ করবেন সেনাপ্রধান নিজেই এবং যতক্ষণ পর্যন্ত নিরপেক্ষ কাউকে নতুন প্রধানমন্ত্রী করা না হবে ততক্ষণ পর্যন্ত সেনাপ্রধানই প্রধানমন্ত্রীই দায়িত্ব পালন করতে পারেন।

অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠিত হলে ওই সরকারের সদস্য সংখ্যা হতে পারে ৩০ থেকে ৩৫। ক্ষমতাসীনসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতৃবৃন্দ ছাড়াও বিভিন্ন পেশা ও সুশীল সমাজের প্রতিনিধি থাকবে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারে।

রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা আরও বলেছেন, নতুন সরকারের আমলে আবারও সংবিধান সংশোধন করার উদ্যোগ নেওয়া হতে পারে। সেনাপ্রধানের নেতৃত্বে নবগঠিত কেবিনেট সংবিধান সংশোধনের জন্য কমিটি গঠন করতে পারে। সংশোধিত সংবিধান অনুমোদনের জন্য প্রয়োজনে গণভোট অনুষ্ঠানের ব্যবস্থা নিতে পারে সরকার।

আর তত্ত্বাবধায়ক সরকার বা অন্তবর্তীকালীন সরকার প্রধানের দায়িত্ব স্পিকারকে দেয়া হলে সংবিধান সংশোধনের প্রয়োজন হবে না। কারণ স্পিকার বা রাষ্ট্রপতি সংবিধান মতে অন্তবর্র্তীকালীন সরকার প্রধানের দায়িত্বে থাকতে পারেন। আর এই সুযোগ নিতেই রাষ্ট্রপতি হিসেবে এডভোকেট আব্দুল হামিদ এবং স্পিকার হিসেবে ড. শিরিন শারমীন চৌধুরীকে দলীয় মনোয়ন দিয়েছিল ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ। বর্তমান রাষ্ট্রপতি ও স্পিকার আওয়ামী লীগের নেতা হলেও দেশের সর্বস্তরের জনগণের মতো বিএনপিসহ সমমনা দলগুলোর কাছেও তাদের কিছুটা গ্রহণযোগ্যতা ও সর্মথন রয়েছে । এ কারণেই আওয়ামী লীগ রাষ্ট্রপতি পদে এডভোকেট আব্দুল হামিদ এবং স্পিকার পদে ড. শিরিন শারমীন চৌধুরীকে বসিয়েছে। আওয়ামী লীগের শীর্ষ নীতিনির্ধারকদের ধারণা, অন্তবর্তীকালীন সরকারের প্রধান হিসেবে বিএনপি স্পিকারকে মেনে নিয়েই সংসদ নির্বাচনে অংশ নেবে।

এদিকে ডিসেম্বরের ১০ম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নেয়ার ব্যাপারে সব রাজনৈতিক দলগুলোকে রাজি করানর পরিবর্তে তাদেরকে কৌশলে বাইরে রেখতে বর্তমান সরকার গোপনে জোরেশোরে কাজ করে যাচ্ছে বলে কোন কোন পর্যবেক্ষক বলছেন। এরই অংশ হিসেবে নির্বাচনকে অর্থবহ এবং গ্রামীণ অর্থনীতিকে গতিশীল ও চাঙ্গা করার প্রয়াস হিসেবে স্থানীয় সরকার নির্বাচন সম্পন্ন করার উদ্যোগ নিতে যাচ্ছে। এরইমধ্যে স্থানীয় সরকারের অধীনে কয়েকটি সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন আয়োজন করেছে নির্বাচন কমিশন। বিরোধীদল বিএনপিকে ছাড়াই এসব নির্বাচন শেষ করার কৌশল হিসেবে সরকার বিরোধীদলের রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড বন্ধের লক্ষ্যে ধরপাকড়া, জেল-জুলুমসহ নানান উস্কানিমূলক বক্তব্য রাখছে বলে অভিযোগ উঠেছে।

কিছু কিছু রাজনৈতিক বিশ্লেষক দাবি করেছেন, তত্ত্বাবধায়ক সরকার ছাড়া জানুয়ারিতে কোনো অবস্থাতেই আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন করা সম্ভব নয়। এ কথা জেনেই সরকার স্থানীয় সরকার নির্বাচনের মাধ্যমে তাদের শেকড় সুদৃঢ় করতে চায়। একই সঙ্গে বর্তমান সরকার আরও দীর্ঘ মেয়াদে ক্ষমতায় থাকতে চায়। এ কারণে তারা নতুন আইন, সংস্কার ও বিভিন্ন অজুহাতে সংসদ নির্বাচন নিয়ে টালবাহানা করতে পারে। তারা সংবিধান বর্হিভূতভাবে কাজ করে দেশকে বিপর্যয়ের দিকে ঠেলে দিচ্ছে বলেও বেশ কিছু সূত্র দাবি করছে।

প্রথম এখানে

বিষয়: বিবিধ

১৮১৮ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File