মায়ের শাসন
লিখেছেন লিখেছেন বড় ভাইয়া ২০ এপ্রিল, ২০১৩, ০২:৪৯:২৮ দুপুর
[এই ছবিটি নেট থেকে নেয়া]
আমার একটা দুর্ভাগ্য- আমার প্রতিবেশী সম-বয়সী ভাই থেকে চাচার সংখ্যা বেশী ছিল। খেলার সাথী বেশীর ভাগই চাচা। আমরা যখন হাটা থেকে দৌঁড়াতে শিখছি তখন ম্যারাডোনা জ্বরে কাঁপছিল বিশ্ব। সেই ১৯৮৬, ১৯৯০ দুই বিশ্বকাপতো ম্যারাডোনার সুখ-দুঃখের বিশ্বকাপ। ক্রিকেট খুব একটা জনপ্রিয় হয়ে উঠেনি তখনও। দেশ দুই ভাগে বিভক্ত থাকত। আবাহনী আর মোহামেডান, কেউ হারে কেউ জিতে সমান সমান!
খেলার মাঠ একটাই তা হলো আমাদের শতবর্ষী বিদ্যালয়ের মাঠ। সেখানে বড়রা খেলত। আমরা সাহস করতাম না মাঠে খেলার। শুষ্ক মৌসুমে মাঠের অভাব হতো না। কিন্তু বর্ষায় আমরা মাঠের অভাব পূর্ণ করতাম রাস্তায় খেলে। গোল বার হতো আমাদের গায়ের জামা, কিংবা জুতা। বল? যেদিন বলের মালিক থাকতনা সেদিন জাম্বুরা, কিংবা খড়ের বান্ডিল। কিন্তু খেলা মিস হত না। বৃষ্টিতে ভিজে ফুটবল খেলে নাই, এমন হাদারাম গ্রামে ছিলনা।
শৈশবের এসব মজার স্মৃতির সাথে মা’র কী সম্পর্ক তাইনা? ছোট্ট একটা সম্পর্ক আছে। বিড়াল এবং কুকুর বৃষ্টি বুঝেন? মানে মুষুলধারে বৃষ্টি! সেই বৃষ্টিতে মা’কে ফাঁকিদিয়ে সমবয়সী চাচাদের সাথে পাশের বাড়ির পাশের অনাবাদী জমিতে ফুটবল খেলতে নামলাম। মাঠ কর্দমাক্ত আর তাই আমাদের সবার শরীরও কর্দমাক্ত। বৃষ্টি চলাকালে কোন আপত্তি কারো ছিলনা। রহস্য কেউ বুঝেনি! বৃষ্টি বন্ধ হওয়ার পর কে যেন দেখে ফেলেছে, পেলে-ম্যারাডোনারা জন্ম পোশাকে ফুটবল খেলছে। সেই ফুফু বা চাচী বা দাদী বা অন্যকেউ যিনি দেখেছেন তিনি চিৎকার জুড়ে দিলেন- ‘হোলা-হাইনের কাম দেইখছ? বেগ্গুন ল্যাংড়া অই বল হিড়ের’ [পোলা-পাইনের কাজ দেখছ? সবাই ল্যাংটা হয়ে বল খেলছে]। আর যায় কই? আম্মা আসলেন বাঁশের কঞ্চি নিয়ে। পিটাতে পিটাতে পুকুরে। আমিও সহজ সরল সুবোদ বালক, শরীর পরিস্কার করে ঘরে ফিরলাম।
মায়ের শাসন অনেক পেয়েছি, কিন্তু সেদিন ছিল রাম-ধোলাই। সব খেলার সাথী থেকে আমিই বেশী মার খেয়েছি। শুধু ল্যাংটা হয়ে ফুটবল খেলার অপরাধে!
বিষয়: বিবিধ
৩০৩৯ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন