ডেড লাইন ভুজপুর-ফটিকছড়ি : এই ঋণ রক্তের ঋণ। অর্ধশতাধিক কর্মী নিহত, তবুও মিডিয়াও নীরব! কর্মীদের মনোবল হারানোর ভয়ে!!
লিখেছেন লিখেছেন বড় ভাইয়া ১৩ এপ্রিল, ২০১৩, ১১:৩৪:২০ রাত
এভাবে পুড়তে থাকে গাড়ি বহর!!
হায়দারের সেই গানের কলিটা বার বার, বার বার হৃদয়ে বাজছে। ছাত্রলীগের ছোট ভাইরা চিৎকার দিয়ে কাঁদতেও পারছে না। এত্ত এত্ত অত্যাধুনিক অস্ত্রে সজ্জিত হয়েও তারা লাশ হয়ে পড়ে আছে ফটিকছড়ির পাহাড়ে, খালে-বিলে, পুকুরে। সত্যি কষ্ট লাগছে। এত্তগুলো প্রাণ, এত্তগুলো হুন্ডা, গাড়ি। একটা গ্রামের শতভাগ মানুষতো জামায়াত হয়ে যায়নি।
ঘুরে ফিরে কারারুদ্ধ নাছিরের চেহারাটা মনে করার চেষ্টা করছি। তার ছবি শুধু পত্রিকায় দেখেছিলাম। সে তার খেলার সাথী আফাজকে হারিয়ে এই দেশের আদালতে যখন কোন বিচার পায়নি, পায়নি তার পিতাকে গলায় জুতা ঝুলিয়ে গ্রামের পর হাটিয়ে অপমান করার কোন বিচার। একটা সমাজ কতটুকু নষ্ট হলে এই দুটি ঘটনা নীরবে সইতে পারে। আপনি-আমি কারো না কারো সন্তান। একবার শুধু নাছিরের পিতার জায়গায় আপনার পিতাকে বসান, তারপর ভাবুন আপনি সন্তান হিসেবে আপনার কী করণীয়? হ্যা আপনি আইনের কথা বলবেন, আদালতের কথা বলবেন- সেই আইন-আদালতে দিনের পর দিন ঘুরে এর কোন প্রতিকার পায় নাছির। প্রশাসন তৈয়ব তৈরী করেছে। খুনী তৈয়ব। দীর্ঘ প্রায় দুই যুগের অধিক সময় উত্তর চট্টগ্রামের এই জনপদ মৃত্যু উপাত্যকা ছিল। নাছির সহ ঐ অঞ্চলের সাধারণ মানুষ স্বাভাবিক জীবন যাপন করতে পারনি। হাজার হাজার ভিন্নমতে মানুষ নিজের জন্ম ভীটায় থাকতে পারেনি। ১৯৯৬ সালে আওয়ামীলীগ সরকার গঠনের পর ২০০০ সাল পর্যন্ত প্রায় ৪০০ জামায়াত-শিবির ও সাধারণ মানুষ আওয়ামীগুন্ডা তৈয়ব বাহিনীর হাতে প্রাণ দিয়েছে। একটা জেনারেশন তাদের দাদার বাড়ি-নানার বাড়ী শুধু মা-বাপের মুখে গল্পের মতো শুনে। চোখে দেখে না। এই কষ্টেরইবা প্রতিকার কী?
বিশ্বাস হচ্ছে না? এইতো কয়েক বছর আগের কথা। ২০০৩/০৪ সালে, যখন জামায়াত ক্ষমতার অংশীদার তখন প্রায় দেড় যুগ পর নিজ পিতৃভূমিতে গিয়েছিল ইসমাইল নামের এক বড় ভাই। আর ফিরে আসেনি। তার লাশ এসেছে শহরে। এরি নাম আওয়ামীলীগ-ছাত্রলীগ। ফটিকছড়িতে সোনা চোরাকারবারী রফিকের এই সফলতার হাত ধরেই আওয়ামীলীগে হাজারী, তাহের আর শামীম ওসমান সৃষ্টি হয়।
সেদিন কী ঘটেছিল ভুজপুরে?
চোরাকারবারী রফিকের মৃত্যুর পর আরেক সন্ত্রাসী পেয়ারু ঐ এলাকার আওয়ামীলীগের ভবিষ্যৎ ত্রাণ কর্তারূপে এগিয়ে আসে। দলের নেতৃত্ব শূণ্যতা পূর্ণ হবে এটাই স্বাভাবিক। তাই বলে বল প্রয়োগে কেন? যে এলাকার একটা জেনারেশন এলাকাছাড়া হয়ে আছে তৈয়ব’র মতো সন্ত্রাসীর অস্ত্রের ভয়ে। সেই এলাকায় আবার বল প্রয়োগ কেন? প্রত্যক্ষদর্শী এক ছোট ভাই সেদিন কল করে জানাল ভাই- এলাকায় হামলা হয়েছে। কে করেছে তৈয়ব বাহিনী। কী নিয়ে আক্রমণ করেছে? গ্রামের ছেলে আওয়ামীলীগের মত অস্ত্র ব্যবহারকারী নয় যে অত সহজে অস্ত্রের নাম বলবে। সহজ উত্তর দিল অনেক রকম অস্ত্র। আমরাতো কখনো দেখিনি। তবে ৩০০ মত হুন্ডা বহর ছিল, কয়েকটা মিনি ট্রাক, ১টা মাইক্রো, ১টা প্রাইভেট কার। তারা মিছিল নিয়ে ভুজপুর গেল। মিছিল থেকে আপত্তিকর শ্লোগান দিচ্ছিল আর ফাঁকা ফায়ার করছিল। নাম ধরে ধরে গালি দিচ্ছিল আর ফায়ারও করছিল। ঐ অবস্থায় কয়েকজন স্থানীয় পাল্টা ইট মারা শুরু করল। ২/৪জনের সাহসিকতায় এগিয়ে এল আশপাশের মানুষ। খেলা জমে গেল। দুই যুগের হিসেব বুঝে নেয়ার খেলা। খেলা যখন চলছিল তখন আম জনতার প্রতিরোধের প্রাচীরে পিষ্ঠ বহিরাগত সন্ত্রাসীরা। পর্দার আড়ল থেকে ছেলে হারা মা ছুটে এল, ছুটে এল ভাই হারা বোন আরো এল পিতা হারা পুত্র। এবার শোক নয়, রক্তের বদলা। দীর্ঘ ২ যুগের রক্তের হিসেব নিতে তারা বদ্ধপরিকর। কোন বাধাই আর বাধা নয়। পুলিশ ছিল অসহায়। পুলিশও জানে আওয়ামীলীগ এই জনপদে কী পরিমাণ ধ্বংশজজ্ঞ চালিয়েছিল। তাই তারা আম-জনতার উপর চড়াও হয়নি। প্রাণ-পণ শুধু পেয়ারু আর তৈয়বকে রক্ষা করার চেষ্টা করেছে। এতটুকু তারা সফল। কিন্তু তৈয়ব-পেয়ারু জীবনে এই দৃশ্য আর দেখেনি।
এভাবে পড়ে থাকে সন্ত্রাসী গাড়ি বহরের কংকাল!!
কালের কন্ঠ একটা রিপোর্ট করেছে তা হুবহু তুলে ধরছি।
চট্টগ্রামের ফটিকছড়ি উপজেলার কাজিরহাটে হেফাজতে ইসলাম ও জামায়াত-শিবিরের বেপরোয়া হামলা থেকে রক্ষা পায়নি আওয়ামী লীগ ও অঙ্গসংগঠনের এক সময়ের বাঘা সন্ত্রাসীরা। হামলায় র্যাব-পুলিশের সাবেক তালিকাভুক্ত শীর্ষ সন্ত্রাসী আবু তৈয়ব, আবদুল কৈয়ূম, মহিউদ্দিন, চুন্নু, জানে আলম, আবদুল হালিম, ফারুক, আব্বাস উদ্দিন, কামাল উদ্দিনসহ ২০ থেকে ২৫ জন আহত হয়েছে। এর মধ্যে ২৮টি মামলার সাবেক আসামি আবু তৈয়বের মাথায় আটটি সেলাই পড়েছে। অন্যদের কারো চোখে, কারো মাথা, পা ও শরীরের বিভিন্ন অঙ্গ ধারালো অস্ত্রের আঘাতে মারাত্মক জখম হয়েছে। তারা চিকিৎসা নিচ্ছে চমেকসহ নগর ও জেলার সরকারি-বেসরকারিহাসপাতালে।
বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার আগে ফটিকছড়ির ২০ ইউনিয়নের প্রায় ছয় লাখ মানুষ দীর্ঘদিন ধরে আওয়ামী লীগ, যুবলীগ ও ছাত্রলীগের এসব শীর্ষ সন্ত্রাসীর কাছে জিম্মি ছিল। তাদের হাতে ছিল একে-৪৭, এম-১৬, জি-৩সহ ভারী বিভিন্ন অস্ত্র। এসব শীর্ষ সন্ত্রাসীর মধ্যে একেকজনের বিরুদ্ধে চাঁদাবাজি, সন্ত্রাস, অপহরণ, হত্যাসহ নানা অপরাধে ১০ থেকে সর্বোচ্চ ২৮টি পর্যন্ত মামলা ছিল। গত সোয়া চার বছরে রাজনৈতিক বিবেচনায় দলীয় এই ক্যাডারদের সব মামলা প্রত্যাহার ও খারিজ হয়ে যায়। তাদের অনেকেই এখন জনপ্রতিনিধি ও আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ফটিকছড়ির এইচ এম আবু তৈয়ব উত্তর জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও জেলা আওয়ামী লীগের গত কমিটির সদস্য ছিলেন। তাঁকে সবাই চেনে তৈয়ব বাহিনীর প্রধান হিসেবে। তাঁর বিরুদ্ধে যে ২৮টি মামলা ছিল, এর বেশির ভাগই হত্যা মামলা। তৈয়ব এতই ভয়ংকর ছিলেন যে ১৯৯৮ সালে নিজ সংগঠনের নেতা রাশেদুল আনোয়ার টিপুকে কুপিয়ে গুলি করে হত্যা করতে দ্বিধা করেননি। গত ওয়ান ইলেভেনে পলাতক থাকার পর বর্তমান সরকারের আমলে তাঁর সব মামলা প্রত্যাহার হয়ে যায়। এই তৈয়ব বৃহস্পতিবার হেফাজত ও জামায়াত-শিবিরের হামলায় গুরুতর আহত হয়ে এখন চিকিৎসা নিচ্ছেন ফটিকছড়ির একটি হাসপাতালে।
আহত আবু তৈয়ব গতকাল সন্ধ্যায় হাসপাতাল থেকে মোবাইল ফোনে কালের কণ্ঠকে বলেন, 'আমার বিরুদ্ধে যেসব মামলা ছিল সব রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। এখন কোনো মামলা নেই।' তিনি বলেন, 'আমরা যদি অস্ত্র নিয়ে মাঠে নামতাম তাহলে প্রাণহানি এবং দুই শতাধিক নেতা-কর্মী আহত হতো না।'
হামলায় আহত আরেক সাবেক সন্ত্রাসী আবদুল কৈয়ূমের বিরুদ্ধে হত্যা, অপহরণসহ এক ডজন মামলাও খারিজ হয়ে গেছে এই সরকারের আমলে। তিনি বর্তমানে ফটিকছড়ি থানা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক। বৃহস্পতিবারের ছুরির আঘাতে তাঁর বাম চোখে গুরুতর জখম হয়েছে।
ওই দিন উপজেলা আওয়ামী লীগ ও অঙ্গসংগঠনের হাজারো নেতা-কর্মী, সমর্থক নিয়ে হরতালবিরোধী মিছিলটির নেতৃত্ব দিয়েছিলেন ফটিকছড়ি উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান ও গত সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী এ টি এম পেয়ারুল ইসলাম। হেফাজত ও জামায়াত-শিবির ক্যাডারদের হামলায় আওয়ামী লীগের সাবেক সন্ত্রাসীদের আহত হওয়া প্রসঙ্গে তিনি বলেন, 'পরিকল্পিতভাবে হেফাজত ও জামায়াত-শিবির ক্যাডাররা তালেবান স্টাইলে আমাদের নেতা-কর্মীদের ওপর নজিরবিহীন হামলা চালিয়েছে। রাজনৈতিক কারণে আমাদের প্রতিপক্ষ বিগত সরকারগুলোর আমলে আওয়ামী লীগ ও এর অঙ্গসংগঠনের সক্রিয় নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে অনেক মামলা দিয়েছিল। যাদের বিরুদ্ধে অপরাধে জড়িত থাকার কথা বলা হয়েছে তাদের বিরুদ্ধে এখন কোনো মামলা নেই।'
# তৈয়বের পরিচয় তার জাতভাইয়ের পত্রিকায়ও বলেছে, এবার ভাবুন মানুষ জীবনের ঝুকি নিয়ে দেশের প্রথম শ্রেণির এই সন্ত্রাসীদের পেদিয়েছে। এই ঋণ রক্তের ঋণ। এই ঋণ শোধের একটা সুযোগ প্রয়োজন ছিল। তা উত্তর চট্টগ্রামের এই জনপদ হাতে পেয়েই কাজে লাগিয়েছে।
বিষয়: বিবিধ
৫৭৯৫ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন