পন্ডিত মশাই মেরেছে
লিখেছেন লিখেছেন টিপিক্যাল বাংলাদেশি ০৭ এপ্রিল, ২০১৪, ০৪:৪১:৩২ বিকাল
বিনে পয়সায় আওয়ামীলীগ প্রস্তুতকৃত নাটক আর চলচ্চিত্র দেখে হাসতে হাসতে পেট ফেটেঁ যাওয়ার জোগাড়। এমন নির্মল হাসি বাংলাদেশিরা অনেকদিন পর হাসতে পারছে বলে আমার মনে হয়। মন্দ যা কিছু-ই এদেশে ঘটছে, তার জন্য জামায়াত-শিবিরকে দোষী সাব্যস্ত করে প্রাণদন্ডে দন্ডিত করা হচ্ছে। সর্বশেষ মহাহাসির নাটক মঞ্চস্ত হয়েছে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে। আভ্যন্তরিন কোন্দলের বলী হয়ে রোস্তম ইহলোক ত্যাগ করেছে, আর যারা তাকে ইহলোক ত্যাগ করতে বাধ্য করেছে, তারা বলছে, দেয়াল বেয়ে ফিল্মি স্টাইলে শিবির এই কাজ সম্পাদন করেছে। এটি শুনে আমিতো হেসেই খুন! এই মুহুর্তে শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের দেবদাস উপন্যাসের কিছু অংশের কথা আমার মনে পড়ছে। নিচে সেই অংশটুকু তুলে ধরলাম:
এই সময়ে পার্বতী একটু অন্যমনস্ক হইয়া পড়িল,—অমনি বাঁশের ডগা উপরে উঠিয়া গেল এবং সঙ্গে সঙ্গে দেবদাস নোনাডাল হইতে নীচে পড়িয়া গেল। বেশী উঁচু ছিল না বলিয়া তেমন লাগিল না, কিন্তু গায়ে অনেক স্থানে ছড়িয়া গেল। নীচে আসিয়া ক্রুদ্ধ দেবদাস একটা শুষ্ক কঞ্চি তুলিয়া লইয়া পার্বতীর পিঠের উপর, গালের উপর, যেখানে-সেখানে সজোরে ঘা-কতক বসাইয়া দিয়া বলিল, যা, দূর হয়ে যা।
প্রথমে পার্বতী নিজেই লজ্জিত হইয়া পড়িয়াছিল; কিন্তু যখন ছড়ির পর ছড়ি ক্রমাগত পড়িতে লাগিল, তখন সে ক্রোধে ও অভিমানে চক্ষু দুটি আগুনের মতো করিয়া কাঁদিয়া বলিল, এই আমি জ্যাঠামশায়ের কাছে যাচ্ছি—
দেবদাস রাগিয়া আর এক ঘা বসাইয়া দিয়া বলিল, যা, এখনি বলে দিগে যা—বয়ে গেল।
পার্বতী চলিয়া গেল। যখন অনেকটা গিয়াছে, তখন দেবদাস ডাকিল, পারু!
পার্বতী শুনিয়াও শুনিল না—আরও দ্রুত চলিতে লাগিল। দেবদাস আবার ডাকিল, ও পারু, শুনে যা না!
পার্বতী জবাব দিল না। দেবদাস বিরক্ত হইয়া, কতকটা চিৎকার করিয়া, কতকটা আপনার মনে বলিল, যাক—মরুক গে।
পার্বতী চলিয়া গেলে, দেবদাস যেমন-তেমন করিয়া দুই-একটা ছিপ কাটিয়া লইল। তাহার মনটা বিগড়াইয়া গিয়াছিল। কাঁদিতে কাঁদিতে পার্বতী বাড়ি ফিরিয়া আসিল। তাহার গালের উপর ছড়ির দাগ নীল হইয়া ফুলিয়া রহিয়াছে। প্রথমেই ঠাকুরমার চক্ষে পড়িল।
তিনি চেঁচাইয়া উঠিলেন,—ওগো, মা গো, কে এমন করে মারলে পারু?
চোখ মুছিতে মুছিতে পার্বতী কহিল, পণ্ডিতমশাই।
ঠাকুরমা তাহাকে ক্রোড়ে লইয়া ভয়ানক ক্রুদ্ধ হইয়া কহিলেন, চল তো, একবার নারাণের কাছে যাই, দেখি সে কেমন পণ্ডিত! আহা—বাছাকে একেবারে মেরে ফেলেচে!
পার্বতী পিতামহীর গলা জড়াইয়া কহিল, চল।
মুখুয্যে মহাশয়ের নিকট আসিয়া পিতামহী পণ্ডিত মহাশয়ের অনেকগুলি পুরুষের উল্লেখ করিয়া তাহাদিগের পারলৌকিক অশুভ ইচ্ছা প্রকাশ করিলেন এবং খাদ্যদ্রব্যেরও তেমন ভাল ব্যবস্থা করিলেন না। শেষে স্বয়ং গোবিন্দকে নানামতে গালি পাড়িয়া বলিলেন, নারাণ, দেখ তো মিনসের আস্পর্ধা! শুদ্দুর হয়ে বামুনের মেয়ের গায়ে হাত তোলে! কি করে মেরেচে একবার দেখ। বলিয়া গালের উপর নীল দাগগুলা বৃদ্ধা অত্যন্ত বেদনার সহিত দেখাইতে লাগিলেন।
নারায়ণবাবু তখন পার্বতীকেই প্রশ্ন করিলেন, কে মেরেচে পারু?
পার্বতী চুপ করিয়া রহিল।
==
মারলো কে, আর দোষ কার!
বিষয়: রাজনীতি
১১৫৯ বার পঠিত, ৬ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
"চোরের মা'র বড় গলা
নিত্য খায় দুধ কলা" তাদের দুধ কলার দিন ফুরিয়ে আসছে।
মন্তব্য করতে লগইন করুন