তারাবীর নামাজের রাক'আত সংখ্যা

লিখেছেন লিখেছেন আকাশকুসুম ০১ সেপ্টেম্বর, ২০১৪, ০৯:০২:০৮ রাত

সন্মানিত মুসলিম ভাইয়েরা, অন্যভাবে নেবেন না আমার কথাগুলো যদিও একটু কঠিন লাগে। তারাবীহ ২০ রাকাত ধরে নিয়ে তার পক্ষে দলীল খোঁজা বাদ দিয়ে অথবা শুধু ৮ রাকাত ধরে নিয়ে তার পক্ষে দলীল খোঁজা বাদ দিয়ে, দয়া করে প্রকৃত মাসআলা জানার চেষ্টা করুন আর একাডেমিক পদ্ধতিতে শেখার চেষ্টা করুন। ইনশা'আল্লাহ তাতে সবার উপকার হবে।

আমি খুব কম সময় নেট-এ দেই তাই সাধারণতঃ পোষ্ট বা কমেন্ট করি না। এক্ষেত্রে করতে বাধ্য হচ্ছি। এরপর হয়ত কমেন্টের জবাব দেয়ারও ফুরসত পাব না, সেজন্যে ক্ষমাপ্রার্থী।

আমার পরিচয়, আমি মধ্যপ্রাচ্যের একটি ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়েছি, এবং আমার স্পেশালাইজেশন হচ্ছে হাদীস।

তারাবীর সালাতের কোন নির্ধারিত রাক'আত সংখ্যা নেই। রাসুল(সাঃ) থেকে ৮(+৩) রাক'আত পড়া প্রমাণিত, আর এর বেশী পড়ার কোন সহীহ প্রমাণ নেই। আবার, রাসুল(সাঃ) থেকে বর্ণিত রয়েছে - "রাতের সালাত দুই-দুই রাক'আত করে, যখন রাত শেষ হয়ে যাওয়ার আশংকা কর তখন এক রাক'আত বেতর পড়ে নিও।" তার মানে, এর কোন উপরের লিমিটও নেই, যে যত পড়তে পারে, তার ইচ্ছা, তাতেও কোন বাধা নেই। ঊমার(রাঃ) যেমন উবাই ইবনে কাব(রাঃ)-কে ৮ রাক'আত তারাবী পড়ানোর নির্দেশ দিয়েছিলেন (মুয়াত্তা ইমাম মালিক), ঠিক তেমনি এটাও প্রমাণিত যে, তার সময়ের শেষের দিকেই ২০ রাক'আতও পড়া হয়েছে যা চালু থেকেছে খোলাফায়ে রাশেদীনের সময়ে। আর মদীনায় ৩৬ রাক'আতও পড়া হত। তাছাড়া, এটা নফল সালাত (সুন্নাতে মুয়াক্কাদা-অধিকাংশ স্কলারের মতে), ওয়াজিব নয়, আর যেহেতু দুই দুই রাক'আত করে যত পড়া যায়, কোন লিমিট নেই, সেহেতু ২০ বা ৩৬ রাক'আতে কারো আপত্তি থাকতে পারে না। রাক'আত সংখ্যা বাড়ানোর একটা কারণ ছিল ক্বীরাতের (কিয়ামের) দীর্ঘতা কমিয়ে আনা যাতে দূর্বল বা রোগীদের কষ্ট কম হয়, এবং যাতে তারা চাইলে ৮ রাক’আত পড়ে অন্ততঃ রাসুল(সাঃ) এর সুন্নাতটুকু পালন করতে পারে।

৮ রাক’আত রাসুল(সাঃ) এর সুন্নাহ, আর ২০ রাক’আত খোলেফায়ে রাশেদীনের সুন্নাহ (মনে রাখতে হবে যে রাসুল(সাঃ) এর হাদীস – “আলাইকুম বি সুন্নাতী ওয়া সুন্নাতে খোলেফায়ে রাশেদ” – অনুযায়ী আমাদের জন্য পালনীয় দুটোই)। এক্ষেত্রে একটা অপরটার বিপরীত নয়, বরং ইনক্লুসিভ। যে ৮ রাক’আত পড়ল (রাসুল(সাঃ)-এর কথা ভেবে) সে যেমন ভাল করল, ঠিক তেমনি যে ২০ রাক’আত পড়ল (দুই দুই রাক'আত করে যত পড়া যায় এই ভেবে, বা খোলেফায়ে রাশেদীনের আমলের কথা ভেবে) সেও তেমনি ভাল করল (-ইবন তাইমিয়ার মতও এটাই)।

এটা নিয়ে বাড়াবাড়ি না করে বরং আমাদের উচিৎ প্রকৃত জ্ঞান অর্জনের চেষ্টা করা, আর ইসলামের হাতকে শক্তিশালী করা। আর নিজেকে প্রশ্ন করা, আমি যা করছি তা কি শুধুমাত্র আল্লাহ্‌র সন্তুষ্টির জন্যই করছি, নাকি আমি যা বিশ্বাস করি তা ঠিক প্রমাণের জন্যই করছি?

আল্লাহ্‌ সুবহানাহা ওয়া তা’আলা আমাদেরকে ইসলামের বিজয়ের দিকে অগ্রসর করুন; আর নিজেদের মাঝে, পরিবারের মাঝে, সমাজের মাঝে, দেশের মাঝে, সারা পৃথিবীতে ইসলাম কায়েম করার তৌফিক দান করুন। আমিন।

বিষয়: বিবিধ

১১১৪ বার পঠিত, ৫ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

260485
০১ সেপ্টেম্বর ২০১৪ রাত ০৯:০৭
চিরবিদ্রোহী লিখেছেন :
ঊমার(রাঃ) যেমন উবাই ইবনে কাব(রাঃ)-কে ৮ রাক'আত তারাবী পড়ানোর নির্দেশ দিয়েছিলেন (মুয়াত্তা ইমাম মালিক)

৮ রাক’আত রাসুল(সাঃ) এর সুন্নাহ, আর ২০ রাক’আত খোলেফায়ে রাশেদীনের সুন্নাহ (মনে রাখতে হবে যে – “আলাইকুম বি সুন্নাতী ওয়া সুন্নাতে খোলেফায়ে রাশেদ” – আমাদের জন্য পালনীয় দুটোই) এক্ষেত্রে একটা অপরটার বিপরীত নয়, বরং ইনক্লুসিভ। যে ৮ রাক’আত পড়ল (রাসুল(সাঃ)-এর কথা ভেবে) সে যেমন ভাল করল, ঠিক তেমনি যে ২০ রাক’আত পড়ল (দুই দুই রাক'আত করে যত পড়া যায় এই ভেবে) সেও তেমনি ভাল করল (-ইবন তাইমিয়া)।

ভাই কি কষ্ট করে উপরের দলীল দুটোর ফুল রেফারেন্স দিতে পারবেন?
260501
০১ সেপ্টেম্বর ২০১৪ রাত ০৯:৩১
আকাশকুসুম লিখেছেন : ১। মুয়াত্তা ইমাম মালিক – অধ্যায় ৬, পরিচ্ছেদ ২, রেওয়ায়েত ৪
Yahya related to me from Malik from Muhammad ibn Yusuf that as- Sa'ib ibn Yazid said, "Umar ibn al-Khattab ordered Ubayy ibn Kab and Tamim ad-Dari to watch the night in prayer with the people for eleven rakas.The reciterof the Qur'an would recite the Mi'in (a group of medium-sized suras) until we would be leaning on our staffs from having stood so long in prayer. And we would not leave until the approach of dawn."

وَحَدَّثَنِي عَنْ مَالِكٍ، عَنْ مُحَمَّدِ بْنِ يُوسُفَ، عَنِ السَّائِبِ بْنِ يَزِيدَ، أَنَّهُ قَالَ أَمَرَ عُمَرُ بْنُ الْخَطَّابِ أُبَىَّ بْنَ كَعْبٍ وَتَمِيمًا الدَّارِيَّ أَنْ يَقُومَا، لِلنَّاسِ بِإِحْدَى عَشْرَةَ رَكْعَةً قَالَ وَقَدْ كَانَ الْقَارِئُ يَقْرَأُ بِالْمِئِينَ حَتَّى كُنَّا نَعْتَمِدُ عَلَى الْعِصِيِّ مِنْ طُولِ الْقِيَامِ وَمَا كُنَّا نَنْصَرِفُ إِلاَّ فِي فُرُوعِ الْفَجْرِ ‏.‏
reference : Book 6, Hadith 4

260507
০১ সেপ্টেম্বর ২০১৪ রাত ০৯:৩৫
আকাশকুসুম লিখেছেন : ২। সুনান ইবন মাজাহ (হাদীস - হাসান) Vol. 1, Book 1, Hadith 42
(“আলাইকুম বি সুন্নাতী ওয়া সুন্নাতে খোলেফায়ে রাশেদীন” এই লম্বা হাদীসের একটা অংশ)
Yahya bin Abu Muta' said:
I heard 'Irbad bin Sariyah say: 'One day, the Messenger of Allah (ﷺ) stood up among us and delivered a deeply moving speech to us that melted our hearts and caused our eyes to overflow with tears. It was said to him: 'O Messenger of Allah, you have delivered a speech of farewell, so enjoin something upon us.' He said: 'I urge you to fear Allah, and to listen and obey, even if (your leader) is an Abyssinian slave. After I am gone, you will see great conflict. I urge you to adhere to my Sunnah and the path of the Rightly-Guided Caliphs, and cling stubbornly to it. And beware of newly-invented matters, for every innovation is a going astray.'"

حَدَّثَنَا عَبْدُ اللَّهِ بْنُ أَحْمَدَ بْنِ بَشِيرِ بْنِ ذَكْوَانَ الدِّمَشْقِيُّ، حَدَّثَنَا الْوَلِيدُ بْنُ مُسْلِمٍ، حَدَّثَنَا عَبْدُ اللَّهِ بْنُ الْعَلاَءِ، - يَعْنِي ابْنَ زَبْرٍ - حَدَّثَنِي يَحْيَى بْنُ أَبِي الْمُطَاعِ، قَالَ سَمِعْتُ الْعِرْبَاضَ بْنَ سَارِيَةَ، يَقُولُ قَامَ فِينَا رَسُولُ اللَّهِ ـ صلى الله عليه وسلم ـ ذَاتَ يَوْمٍ فَوَعَظَنَا مَوْعِظَةً بَلِيغَةً وَجِلَتْ مِنْهَا الْقُلُوبُ وَذَرَفَتْ مِنْهَا الْعُيُونُ فَقِيلَ يَا رَسُولَ اللَّهِ وَعَظْتَنَا مَوْعِظَةَ مُوَدِّعٍ فَاعْهَدْ إِلَيْنَا بِعَهْدٍ فَقَالَ ‏"‏ عَلَيْكُمْ بِتَقْوَى اللَّهِ وَالسَّمْعِ وَالطَّاعَةِ وَإِنْ عَبْدًا حَبَشِيًّا وَسَتَرَوْنَ مِنْ بَعْدِي اخْتِلاَفًا شَدِيدًا فَعَلَيْكُمْ بِسُنَّتِي وَسُنَّةِ الْخُلَفَاءِ الرَّاشِدِينَ الْمَهْدِيِّينَ عَضُّوا عَلَيْهَا بِالنَّوَاجِذِ وَإِيَّاكُمْ وَالأُمُورَ الْمُحْدَثَاتِ فَإِنَّ كُلَّ بِدْعَةٍ ضَلاَلَةٌ ‏"‏ ‏

Grade : Hasan (Darussalam)
Vol. 1, Book 1, Hadith 42
260533
০১ সেপ্টেম্বর ২০১৪ রাত ১০:১৩
প্যারিস থেকে আমি লিখেছেন : আপনার লেখাটা পড়ে খুব ভালো লেগেছে।
260546
০১ সেপ্টেম্বর ২০১৪ রাত ১০:৩৬
বুড়া মিয়া লিখেছেন : আমি অবশ্য আপনাদের মতো এসবের খুব একটা জ্ঞান রাখিনা, তবে আপনাদের থেকে অনেক আলোচনা, কিছু কিছু বই পড়ে যা মনে হয়েছে – ফরয এর বাইরে যতো রকম নামায আছে সবই নফল। আর তারাবীর ব্যাপারে আপনার মতোই মনে হয়েছে।

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File