মনোবিকলন , সমাজবিকলন দুটি সমস্যা

লিখেছেন লিখেছেন শাহজালাল খান ১৪ এপ্রিল, ২০১৩, ০৫:২২:২৪ বিকাল

আজ দুইটি ঘটনা বলবো যার মধ্যে দুইটি দৃষ্টিভঙ্গির সমস্যা রয়েছে । ঘটনাটিকে আমরা সাহিত্যিক নির্মিতি হিসেবেই বিবেচনা করবো , বাস্তবতা জীবনের কোন না কোন ক্ষেত্রে লক্ষ্য করলে মিলবে । পাঠকরা আশা করি নির্মোহ দৃষ্টিতে তাদের বিশ্লেষণ উপস্থাপন করবেন ।

মনোবিকলনঃ

সম্ভ্রান্ত এক মুসলিম পরিবারের পুত্রবধূ । ঢাকায় অভিজাত এলাকায় তার পাঁচতলা বাড়ি রেখে স্বামী মারা যান । মহিলাটির প্রতীকী নাম দিলাম জাফরিন । জামরিনের এককন্যা । কন্যাটি তৃতীয় শ্রেণীতে পড়ে । সংসারে ব্যাংকার স্বামী যা রেখে গেছেন তা দিয়ে জাফরিনের জীবন পরিচালনায় কোন সমস্যায়ই পড়তে হয়না । সমস্যা একটি জায়গায় ঢাকাতে তার দেখাশোনার কেউনেই । স্কুলে যাওয়া আসার পথে পরিচয় হয় রিয়েল এস্টেট কোম্পানিতে চাকুরি করেন এমন এক তরুণ অফিসারের সাথে । প্রথম প্রথম ফোনেই কথাবার্তা ভালমন্দ চলতে থাকে । তারপর আস্তে আস্তে সখ্যতা গড়ে ওঠে । সেখান থেকে জাফরিনের বাড়িতে যেদিন লোকজন থাকেনা সেদিন জাফরিনের আমন্ত্রনেই যাওয়া আসা শুরু হয় । সম্পর্কটি গভীর থেকে গভীরে প্রবেশ করে । জাফরিন এর আশেপাশের পাড়া পড়শি তাদের সম্পর্কটি আচ করে প্রথম প্রথম জাফরিনকে এ ব্যাপারে জিজ্ঞাস করে । জাফরিন তার নব্যবন্ধুকে আর বাড়িতে ডেকে আনা সমীচিত মনে করেনা । বন্ধুকেই বলে আমাদের মেলামেশা এখন থেকে অন্যত্র হবে । জাফরিনের কর্পোরেট বন্ধুটি তখন শুধুমাত্র জাফরিনকে কাছে পাওয়ার জন্য নতুন বাসা ভাড়া করে । সেখানে জাফরিন বাচ্চাকে স্কুলে দিয়ে স্কুলের সময়টুকু বন্ধুর সময়ের সাথে মিলায়ে নতুন বাসায় যাতায়াত শুরু করে । বন্ধুটির নাম হাসিব । হাসিব এখনো বিয়ে সাদি করেনি । জাফরিনের সাথে যখন তার পরিচয় হয়নি তখন তার বাড়িতে বিয়ের তোড়জোড় শুরু হয় । হাসিব প্রথমে রাজি হলেও এখন আর বিয়ের নামও মুখে নেয়না । জাফরিনের সঙ্গে তার সম্পর্ক চলতে থাকে । হাসিব যে বাড়িতে ভাড়া থাকে সে ফ্ল্যাট বাসায় কে কখন কোথা থেকে আসে এর কোন খোজ খবর কেই রাখেনা । এতে জাফরিন হাসিবের মেলামেশায় কোন সমস্যায় হয়না । একদিন সন্ধ্যায় হঠাৎ করে হাসিবের এক বন্ধু বাসায় এসে হাসিব ও জাফরিনকে দেখতে পায় । জাফরিন তার মেয়েকে মায়ের কাছে রেখে বান্ধবীর বাসায় বিয়ের দাওয়াত আছে বলে বের হয়ে এসেছে আর আজ বাড়িতে ফিরবেনা বলেই এসেছে । হাসিব তার বন্ধুর কাছে জাফরিনকে লুকাতে পারেনা বলে বিস্তারিত খুলে বলে । হাসিবের বন্ধুর সাথে ছোটবেলা থেকেই ছিল অন্তরঙ্গ বন্ধুত্ব । হাসিব তার সাথে বাল্যবন্ধু বলে পরিচয় দেয । হাসিবের বন্ধু জাফরিনকে বলে ভাবি হাসিবও যা আমিও তা । আমরা দুইবন্ধু মনের কথা সবসময় ভাগাভাগি করে নেই । আপনি আমাকে পর ভাববেননা । জাফরিন কিছু না বুঝেই তাকে সম্মতি দিয়ে বলে ‌‌‌‌তাতো অবশ্যই ' । এদিকে রাতে হাসিব ও জাফরিন এক রুমে ঘুমাতে গেলে বন্ধুটি বলে দোস্ত নতুন জায়গা আমার ভয় লাগে তোরা দরজা দিয়ে ঘুমাসনা । দরজাটি খোলা রাখিস । হাসিবের বন্ধুর আর রাতে ঘুম হয়না । গভীর রাত পর্যন্ত পায়চারি করতে থাকে । একসময় সে দরজার ফাঁকদিয়ে উকি মেরে দেখে হাসিব ও জাফরিন এখন শারীরিক মিলনে ব্যস্ত । সে আর সহ্য না করতে পেরে আস্তে আস্তে দরজা ঠেলে তাদের পিছনে দাঁড়িয়ে থাকে । উত্তেজনার চরম পর্যায়ে হাসিব অপারগ হয়ে উঠে গেলে বন্ধুটি জাফরিনকে জড়িয়ে ধরে । জাফরিনও তাকে ভাবাবেগে তাকে জড়িয়ে ধরে তৃপ্তি মেটানোর পর বুঝতে পারে এ হাসিব নয় এটি হাসিবের বন্ধু । এরপর হাসিব ও তার বন্ধু ও জাফরিন শুধু একে অপরের দিকে তাকাতাকি করেই যে যার মতো কোন কথা না বলে ঘুমিয়ে পড়ে । হাসিবের বন্ধুও তার রুমে যেয়ে শুয়ে পড়ে । সকাল বেলা হাসিব তার বন্ধুকে বলে তুই এ কাজটি ঠিক করিসনি । হাসিবের বন্ধু বলে জাফরিন রাজি না হলে কী এটা হতো । যা হোক এরপর হাসিবের বন্ধুর সাথে জাফরিনের কথা হয় । জাফরিনও তার সাথে কথা বলে । হাসিবের বন্ধু জাফরিনকে বলে এবার যেদিন তুমি হাসিবের ওখানে যাবে আমাকে ফোন করবে । আমি সময়মতো হাজির হবো । একদিন জাফরিন হাসিবের বন্ধুকে বলে আমি আজ দুপুরে যাব । তুমি এসো । হাসিবের বন্ধু তখন তার আর এক বন্ধুকে সঙ্গে নিয়ে হাজির হয় । হাসিব তার বন্ধুকে বলে তুই আসলি আসলি তা উনাকে নিয়ে আসলি কেন । তখন হাসিবের বন্ধু বলে ও ব্যাপার না । ওর সাথে রাস্তায় দেখা হয়েছিল তা এড়াতে পারেনি । তখন হাসিবের বন্ধুর সাথে নতুন যে বন্ধুটি এসেছিল সে জাফরিনকে দামি একটি শাড়ি দিযে বলে এটা আপনার জন্য উপহার । আপনার কথা আমি অনেক শুনেছি । আপনার কথা শুনেই আমি আসলে আপনাকে ভালবেসে এই শাড়িটি নিয়ে এসেছি । জাফরিন তখন শাড়িটি গ্রহণ করে । দুপুরে খাওয়া দাওয়া হলে হাসিবের বন্ধু বলে হাসিব আমি ঐ রুমে গিযে আমরা দুইজন জাফরিনের সাথে একটু কথা বলি । হাসিব বলে তা বল । জাফরিন যদি যেতে চায় কথা বল সমস্যা কী ? তখন হাসিবের বন্ধু জাফরিনকে ডেকে পাশের রুমে নিয়ে যায় । সঙ্গে তার বন্ধুও যায় । উভয়ে কথা বলার এক পর্যায়ে তারা দুই বন্ধু মিলে জাফরিনকে চুম্বন করলে জাফরিন কিছুটা আপত্তি করতে থাকে । পাশের রুম থেকে হাসিব ব্যাপারটি বুঝতে পেরে ঘরে প্রবেশ করে দেখে জাফরিনের সাথে তারা উভযেই মেলামেশা করছে । হাসিব তখন পাশ থেকেই বললো কাঠাল চুরি করার মতলব করলো এক শেয়াল আর খেয়ে যায় অন্য শেয়ালে । তখন তারা চারজন মিলে সেদিন একসাথে দুপুরটি উপভোগের সাথে কাটিয়ে দিল । বিকালে যাওয়ার সময় হাসিবের বন্ধুর সাথে আসা নতুন বন্ধুটি উপহার হিসেবে জাফরিনকে ১০ হাজার টাকা দিয়ে বললো আমার সাথে তোমার এই সম্পর্ক যেন সারাজীবন টিকে থাকে । জাফরিনও তাতে হ্যাঁ সূচক সম্মতি জানালো । এখন হাসিব আর তান বন্ধু জাফরিনকে ফোন করলে আর কাছে পায়না । কারণ জাফরিন ও পাশ থেকে বলে আসলে দশ হাজার টাকা রেডি রাখতে হবে । ওরা শুনতে পেযেছে জাফরিনকে এখন টাকা দিয়ে যে কোন মানুষই পেতে পারে । অথচ জাফরিনের কোন অভাব নেই । সে ছিল সম্ভ্রান্ত ঘরের এক বউ ।

দ্রঃ ঃ জাফরিনের এই সমস্যার সমাধান কী ? জাফরিনের মানসিকতা বহালে আসলে কোন পরিবেশের সাহচর্য প্রয়োজন ছিল । জাফরিন জীবনে ভুল করেছে না করেনি? জাফরিনের বর্তমান জীবন নিয়ে কোন আফসোস নেই । সে ভাবছে সখও মিটছে টাকাও আসছে । আসলে জাফরিন কোন মানসিকতার শিকার ?

সমাজ বিকলন

আকলিমার বিয়ে হয়েছিল এক কাঠ ব্যবসায়ীর সাথে । কাঠ ব্যবসায়ী স্বভাব চরিত্রে ভাল থাকলেও সে ছিল বদমেজাজি । রাগ যখন হতো তখন সে সামলাতে পারতনা । আবার রাগ কমলে রুবিনাকে সে অনেক ভালবাসত । এভাবে তাদের প্রায় দশ বছর সংসার চলে । একদিন আকলিমা বাবার বাড়ি গেলে তার ৪দিন পর আসার কথা ছিল । কিন্তু আকলিমা এক সপ্তাহ পর আসলে এ নিয়ে তার স্বামী প্রচন্ড ক্ষিপ্ত হয় । এক কথা দু কথা বলতে বলতে হঠাত ঘটনাটি মহীরূহ আকার ধারণ করে । আকলিমার স্বামী তাকে তালাক দিয়ে দেয় । তালাকটি শেষ পর্যন্ত কাজির মাধ্যমেই সম্পাদন হয় । আকলিমার স্বামীকে কেউ বুঝাতে পারেনা । আকলিমাও জেদ ধরে স্বামীর বাড়ি থেকে বেরিয়ে যেয়ে তালাকের ব্যাপারটা মেনে নেয় । এভাবে দুবছর কেটে গেলে আকলিমা আর দ্বিতীয় কোন বিয়ে করেনি । তার স্বামীও করেনি । একসময আকলিমার প্রতি আবার তার স্বামী আকৃষ্ট হয় । সে ক্ষমা চেয়ে আকলিমাকে আবার নিতে চায় । আকলিমাও একপর্যায়ে আবার স্বামীর ঘরে আসতে চায় । কিন্তু ধর্ম মানতে হলে আকলিমা আর সরাসরি স্বামীর ঘরে আসতে পারেনা । তখন তার স্বামী তার এক মুরুব্বি চাচা বয়েসি লোককে গোপনে গোপনে ঠিক করে সে আকলিমাকে বিয়ে করে ছেড়ে দিবে । সমাজও জানবে রুবিনার তো আর একজায়গায় বিয়ে হয়ে ছাড়াছাড়ি হয়েছে । সুতরাং তার আর পূর্বের স্বামীর ঘরে যেতে বাঁধা নেই । ঘটনাটি শুধু তার চাচা বয়েসি লোক , আকলিমার স্বামী ও আকলিমার মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকে । কথা ছিল তিন মাস অথব ছয়মাস পর সে আকলিমাকে ছেড়ে দেবে । কিন্তু ছয় মাস পার হবার পরও ঐ লোকটি আকলিমাকে ছাড়তে চায়না । এভাবে প্রায় এক বছর গড়িয়ে যায় । আকলিমার স্বামী আকলিমার নতুন স্বামীকে অনেক হামকি ধুমকি দেয় । তাতে কোন কাজ হয়না । তখন আকলিমার স্বামী তাকে তালাক দিয়ে চলে আসতে বললে আকলিমা তা অস্মীকার করে । আকলিমার নতুন স্বামী মুরুব্বি গোছের লোকটি ছিল হতদরিদ্র । একদিন দলবল নিয়ে মুরুব্বিকে প্রচন্ড মারধোর করে আকলিমার পূর্বের স্বামী । সে লোকজন নিয়ে এসে আকলিমাকে তুলে নিয়ে যায় । সে রাতেই কাজি ডেকে আকলিমাকে জোর করে বৃদ্ধকে তালাক দিতে বাধ্য করা হয় । তারপর আকলিমাকে তিনমাস তার এক ফুফুর বাড়িতে আটকে রাখে । তিনমাস পর বুঝিয়ে শুনিয়ে আকলিমাকে বিয়ে করতে চায় । কিন্তু আকলিমা অনড় । সে বুড়া বেচে থাকতে আর কাউকে বিযে করবেনা । অবশেষে কাজি ডেকে জোর করে বিয়ে করে আকলিমার পূর্বের স্বামী । কিন্তু সে রাতেই আকলিমা বিষ খেয়ে আত্মহত্যা করে ।

বিঃদ্রঃ আকলিমার কাছে জীবন ও দাম্পত্য জীবনের সংজ্ঞাটি আসলে কী ? আকলিমা জীবনটাকে আসলে কিভাবে দেখতে চেয়েছিল ?

বিষয়: বিবিধ

১২৬৮ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File