সংস্কৃতি , জীবনধারা ও আজকের সংগ্রাম
লিখেছেন লিখেছেন শাহজালাল খান ০৬ এপ্রিল, ২০১৩, ১০:৩৫:৪৩ রাত
দেশের প্রতি মানুষের মমতা কোথা থেকে আসে এটা যদি চিন্তা করা হয়, তাহলে বিভিন্ন চেতনা জাগ্রত হয়ে সামনে কতকগুলো বিষয় ভেসে আসে । প্রথমতঃ মা , দ্বিতীয়তঃ ভাষা , তৃতীয়তঃ শৈশবে বেড়ে ওঠা দিনগুলোর স্মৃতি , চুতুর্থতঃ তার পরিবেশ , পঞ্চমতঃ সামাজিক পারিপার্শ্বিক উপযোগিতা । আমাদের মেধা, মনন, চিন্তা চেতনার জায়গাগুলো শৈশবের শিক্ষা থেকেই নিজের মধ্যে বেড়ে ওঠে । এ শিক্ষার সিংহভাগ পারিবারিক ও বাদবাকি প্রাতিষ্ঠানিক ও সামাজিক । আমরা যদি আমাদের আর্থসামাজিক প্রেক্ষাপটে ও সামাজিক দৃষ্টিভঙ্গিতে নিজেদের শৈশবের দিকে একটু নজর দেই দেখব সেখানে আমরা যে পরিবেশের মধ্যে বেড়ে উঠেছি তার অর্ধেক ধর্মীয় সংস্কৃতি আর অর্ধেক সামাজিক সংস্কৃতি তথা বাঙালি সংস্কৃতি । কোরআন শরীফ পড়েনি বা আরবি শিখেনি এমন মধ্যব্ত্তি পরিবার পাওয়া যাবে কিনা সন্দেহ । নামাজ পড়েনি, জানাজায় যায়নি , ঈদগাহ চিনেনা , বিয়ে ধর্মীয় বিধানে হয়নি এমন কোন শ্রেণী কোন বিত্তের মধ্যেই খুজে পাওয়া যাবেনা । আবার পহেলা বৈশাখে যায়নি, মেলায় যায়নি , হালখাতার নাম শুনেনি এমন বাঙালিও খুজে পাওয়া যাবেনা । সুতরাং মুসলমানদের জীবনবোধ ও জীবনধারায় এই বিষয়গুলো খুবই গুরুত্বপূর্ণ । একটু খেয়াল করলেই দেখতে পাব আমরা অনেকেই পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়িনা , কিন্তু অধিকাংশই শুক্রবার জুম্মার নামাজ পড়তে যায় । অনেকসময় জুম্মার নামাজ না পড়লেও ঈদের নামাজ পড়তে কেনা যায় । প্রথম রোজা ও প্রথম তারাবির নামাজ না পড়লে কেনা অস্বস্তিতে ভোগে । সমাজের চরম ঘুষখোর , বাটপার , জোচ্চর , সম্পদলুণ্ঠন কারী , ইজ্জ্বত হননকারী ব্যক্তিরাও এক্ষেত্রে বাদ যাননা । যদিও কিনা মানুষের ব্যক্তিগত একটা জীবন থাকে যা তার নিজস্ব । আমরা কেউ কখনোই আমাদের ব্যক্তিগত জীবনের মন্দ অধ্যায় কখনোই কারো কাছে প্রকাশ করিনা । তারপরও বিবেকের কাছে প্রশ্ন করলে আমাদের চরিত্রনামা আমাদের কাছে পরিষ্কার হয়ে যায় । এমন একটি অবস্থায়ও আমরা কিন্তু ধর্ম ও ধর্মীয় মূল্যবোধ লালন না করলেও একটি জিনিস আমাদের মধ্যে কাজ করে সেটি হলো আল্লাহ ও তার রাসূল প্রীতি । এটা মনে হয় বাঙালি মুসলমানদের মজ্জাগত একটি বৈশিষ্ট্য । শৈশব থেকে মসজিদ , মুসল্লি , তাদের সুন্দর ব্যবহার ও হাসি , ভালোমন্দ জিজ্ঞাসা করা দেখতে দেখতে আমরা বড় হয়েছি । সুতরাং ঐ একটি জায়গায় আমাদের চরম শ্রদ্ধাবোধ লুকিয়ে আছে । এটাকে আমরা বলতে পারি বাঙালি মুসলিম সংস্কৃতির এক অনন্য বৈশিষ্ট্য । যে বৈশিষ্ট্যের লালিত সন্তান এখানকার প্রায় সব মুসলমানেরা । পাশাপাশি আজকের যারা প্রজন্ম , তারা মুক্তিযুদ্ধ , পাকিস্তানের ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট , আমাদের ভাষা আন্দোলন , অধিকাররে প্রম্নে আমাদের অপ্রাপ্তি , নেতৃত্বের প্রশ্নে আমাদের পিছিয়ে পড়া । পাকিস্তান আন্দোলনে বাঙালি মুসলমি নেতৃত্ব যথা সময়ে সঠিক সিদ্ধান্ত না নিতে পারা এবঙ আমাদের বিশাল অর্জন পাকিস্তানের জিন্নার হাতে চলে যাওয়া এসব্ই নতুন প্রজন্ম ইতিহাস থেকেই জেনেছে । তারপর ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপটের হাত ধরেই এসেছে আমাদের কাঙ্খিত স্বাধীনতা । স্বাধীনতা এই শব্দ বা বোধ আজ আর কারো বুঝিয়ে দিতে হয়না । কারণ প্রত্যেকেই অন্ততঃ তার ব্যক্তি স্বাধীনতা কী এটা বুঝে । মত প্রকাশ , যথাযথ অধিকার , সম্পদের প্রাপ্যতা , সমতা এই বিষয়গুলো স্বাধীনতার অন্তুর্ভূক্ত তা আর কাউকে বুঝিয়ে বলতে হয়না । ভূমির অধিকার যেমন আমরা সবাই বুঝি তেমনি স্বাধিকার এর প্রশ্নটিও একই ভাবে বুঝি । তাইতো কথাই কথাই বলি আমার স্বাধিনতা আমার অধিকার খর্ব হচ্ছে । সুতরাং আমাদের বোধের কাছে আমার স্বাধীনতা যেমন সুস্পষ্ট তেমনি আমার মননের কাছে আমাদের ধর্মবোধও সুষ্পষ্ট । আমরা একথা সবাই বুঝতে পারি আমাদের দেশ এখন আর কোন বিদেশি শক্তির রক্তচক্ষুর ধার ধারেনা । কারো সরাসরি হস্তক্ষেপের সম্ভাবনার মধ্যেও নেই যাতে আমার স্বাধীনতা বিপন্ন হতে পারে । তাই এই মুহুর্তে আমরা স্বাধীনতা বা মুক্তিযুদ্ধ বলতে তার অর্জিত ফলাফলকে বুঝে থাকি । যেমন পরীক্ষায় পাশ করার পর ফলাফল বা তার পুরস্কার আমাদের কে আকৃষ্ট করে । কিন্তু যখন দেখি আমার ফলাফল থেকে আমি বঞ্চিত । আমার মত প্রকাশের স্বাধীনতা কেড়ে নেওয়ার পাঁয়তারা হচেছ , আমার ভাতের অধিকার খর্ব হচ্ছে । আমার নিরাপত্তা দিতে রাষ্ট্র ব্যর্থ হচ্ছে তখন আমরা বলি আসলে আমার মুক্তি আসেনি । আমার মুক্তিযুদ্ধ আমাকে কার্যকর ফল দিতে পারেনি । সুতরাং মুক্তিযুদ্ধের চেতনা আমাদের কাছে এখন ভিন্ন ভিন্না মাত্রা ও বোধ নিয়ে হাজির হয় । এমতাবস্থায় আমাদের নেতৃত্ব যদি মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বলতে অতীত কে বুঝিয়ে থাকেন তাহলে সেটাকে বলা হয় রাজনৈতিক মহাভ্রান্তি । আমি আসলে কী চাই । আমি চাই আমার খাদ্য , আমার নিরাপত্তা , আমার নিরাপদ আবাসন ও সামাজিক মর্যাদা ও ব্যক্তিগত মূল্যবোধের সম্মান রক্ষা । যা একটা পরাধীন দেশে সম্ভব নয় । আবার এই ব্যাপারটি যখন একটা স্বাধীন দেশের নির্বাচিত সরকার দিতে পারেনা তখন আবার ক্ষমতা বদলের প্রশ্ন আসে । যার নাম গণতন্ত্র ও ক্ষমতার পালাবদল ।
কিন্তু একটা জায়গায আমাদের মনে রাখতে হবে কখনো কখনো অধিকারকে ছাড়িয়ে যায় সংস্কৃতি ও বিশ্বাস । না খেয়ে মরে যাব তবু মাথা নত করবো না । না খেয়ে মরে যাব তবু সম্মান হারাবোনা । এটা যেমন আমাদের প্রবৃত্তিতে কাজ করে আর সে কারণেই আমরা কখনো কখনো সম্পদের চেয়ে সম্মানকে বেশি গুরুত্ব দেয । বিশ্বাস কে জীবনের চেয়ে বেশি মর্যাদাবান মনে করি । আমাদের জীবন বোধের একটি অংশ হচ্ছে সারাদিন পরিশ্রম করে কিছু অর্থ উপার্জন , তারপর বাজার করে বাড়ি ফিরে রান্না বান্না করা , খাওয়া দাওয়া শেষ করে শোকর আলহামদুলিল্লাহ বলা । এই জীবন বোধ সম্পর্কে যারা উদাসীন তারা আসলে সামাজিকতার ভাষা বুঝে না । আর এই না বুঝতে পারা থেকেই আজকে বাংলাদেশের এই সামাজিক অস্থিরতা । এদেশের সকল শিক্ষিত সমপ্রদায় , সংস্কৃতিবান , আধুনকিতায় বিশ্বাসী মানুষদের বিশ্বাস করতে শিখতে হবে আমাদের জীবনে যেমন পহেলা বৈশাখের বিচিত্রতা আসে , মেলা , পার্বনের উৎসব আসে তদ্রুপ রোজা , ঈদুল ফিতর , ঈদুল আজহা ও জীবনে একবার হজ্জ ব্রত পালন করার স্বপ্ন আসে । এই দুই মুল্যবোধের বাইরে যেয়ে স্বতন্ত্র কোন মূল্যবোধ এদেশে টিকে থাকবেনা দীর্ঘস্থায়ী ভাবে । তাই অতিবাঙালিপনা করতে যেয়ে ধর্মকে বিসর্জন দিলে তার পরিণতি কী হতে পারে তার নমুনা এখন দেখতে পাওয়া যাচ্ছে । সুতরাং আধুনিক জীবন যাপন ও আধুনিকতা মানে অপরের মুল্যবোধ ও বিশ্বাসের জায়গায় আঘাত করা নয় । মানুষ হিসেবে সম্মানের সাথে টিকে থাকতে হলে প্রত্যেকের মূল্যবোধকে পরম শ্রদ্ধা করতে হবে । তা না হলে সে সামাজিক মর্যাদা হারানোর পাশাপাশি ইতহিাসের আস্তাকুঁড়ে বসবাস করবে ।
বিষয়: রাজনীতি
১২২৩ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন