থার্টি ফাস্ট নাইট
লিখেছেন লিখেছেন মোহাম্মদ কাশেম মরিচ্যা ২৮ ডিসেম্বর, ২০১৩, ০৩:২২:৪৯ দুপুর
বাংলার
সভ্য রূপকে অসভ্যতার রূপ দিয়ে কলঙ্কিত করার পাশ্চাত্য কূটচাল: ভূমিকা: ডিসেম্বরের ৩১ তারিখ রাত ১২.০১ মিনিট হওয়ার সাথে সাথে শুরু হয় আরেকটি নতুন সন গণনা। একটিবছরকেপশ্চাতেরেখেমানবজাতিএগিয়েযায়
সম্মুখপানে। আমাদের দেশে সম্প্রতি বর্ষবরণ অনুষ্ঠানের নামে সাধারণত যা হয়, (ফ্যাশন শো, ফায়ার প্লে, ডিজে) এগুলো সম্পর্কে ইসলামের দৃষ্টিভঙ্গি কী? এগুলো মুসলমানদের মৌলিক চেতনা-বিশ্বাসের
সাথে সাংঘর্ষিক না সঙ্গতিপূর্ণ? এ বিষয়ে আজকে আমাদের আলোচনা। থার্টি ফাস্ট নাইট ও ১লা জানুয়ারী পালনের ইতিহাস: ইতিহাসের তথ্য অনুযায়ী, খ্রিষ্টপূর্ব ৪৬ সালে জুলিয়াস
সিজার সর্বপ্রথম ইংরেজী নববর্ষ উৎসবের প্রচলন করে। পহেলাজানুয়ারীপাকাপোক্তভাবেনববর্ষের
দিন হিসেবে নির্দিষ্ট হয় ১৫৮২ সালে গ্রেগরিয়ান ক্যালেন্ডারের প্রবর্তনের পর। ধীরে ধীরে ইউরোপসহ বিভিন্ন দেশে গ্রেগরিয়ান ক্যালেন্ডার (খ্রিষ্টানদের তথাকথিত ধর্মযাজক, দুশ্চরিত্র, (যার বিবাহ বহির্ভূত একটি সন্তান ছিল) পোপ গ্রেগরীর নামানুসারে যে ক্যালেন্ডার) অনুযায়ী নববর্ষ পালন করা হচ্ছে। ইরানে নওরোজ বা নববর্ষ শুরু হয় পুরনো বছরের শেষ বুধবার এবং উৎসব চলতে থাকে নতুন বছরের ১৩ তারিখ পর্যন্ত। সাধারণভাবে প্রাচীন পারস্যের স¤্রাট জমশীদ খ্রিষ্টপূর্ব ৮০০ সালে এই নওরোজের প্রবর্তন করেছিল। মেসোপটেমিয়ায় আকিতু বা নববর্ষ শুরু হতো নতুন চাঁদের সঙ্গে। ব্যাবিলনিয়ায় নববর্ষ শুরু হতো মহাবিষুবের দিনে ২০ মার্চ। অ্যাসিরিয়ায় শুরু হতো জলবিষুবের দিনে ২১ সেপ্টেম্বর। মিসর, ফিনিসিয়া ও পারসিকদের নতুন বছর শুরু হতো ২১ সেপ্টেম্বর। গ্রীকদের নববর্ষ শুরু হতো খ্রিষ্টপূর্ব পঞ্চম শতাব্দী পর্যন্ত ২১ ডিসেম্বর। রোমান প্রজাতন্ত্রের
পঞ্জিকা অনুযায়ী নববর্ষ শুরু হতো ১ মার্চ এবং খ্রিষ্টপূর্ব ১৫৩ এর পরে ১ জানুয়ারীতে। মধ্যযুগে ইউরোপের বেশিরভাগ দেশে নববর্ষ শুরু হতো ২৫ মার্চ। পহেলাজানুয়ারীপাকাপোক্তভাবেনববর্ষের
দিন হিসেবে নির্দিষ্ট হয় ১৫৮২ সালে গ্রেগরিয়ান ক্যালেন্ডার প্রবর্তনের পর। ধীরে ধীরে ইউরোপসহ সারা বিশ্বে গ্রেগরিয়ান ক্যালেন্ডার
অনুযায়ী ইংরেজী নববর্ষ পালন করা হচ্ছে। বছরের বিদায় বেলায় একজন মুমিনের অনুভূতি: বর্তমানে বর্ষবরণ বরণ নামে যে অশ্লীলতা, বেহায়াপনা, হৈ-হুল্লোড় এবং নগ্নতার প্রদর্শন চলে, তা কি একজন নি¤œস্তরের মুমিনের জন্যও শোভা পায়? বরং বছরের সূচনালগ্নে যখন একজন মুমিন উপস্থিত হয়, তখন তার অনুভূতি এই ধরণের হওয়া দরকার, যে দিনগুলো আমার শেষ হয়ে গেল, তা তো আমার জীবনেরই একটি মূল্যবান অংশ। একটি বছর শেষ হওয়ার সরল অর্থ, আমার জীবনের দালান থেকে ৩৬৫ দিনের ৩৬৫ টি পাথর যেন খসে পড়ল। আমার জীবন সংকীর্ণ হয়ে এলো। এতো আনন্দের নয়, চিন্তার ব্যাপার। এখন আনন্দ-
উল্লাসের সময় নয়, বরং সময় হল, হিসাব-নিকাশের সময়। কাজেই একটি বছরের উপসংহারে দাঁড়িয়ে মুমিনের মানসপটে প্রশ্ন উত্থাপিত হয়
যে, একটি বছরকে তো আমি শেষ করেছি, কিন্তু যে মহান উদ্দেশ্যে (তাঁর ইবাদত- বন্দেগীর জন্য) মহান আল্লাহ আমাকে এই বসুন্ধরায় পাঠালেন, সে পথে কতটুকু অগ্রসর হয়েছি? সে পথে আমার প্রাপ্তি কতটুকু? ইসলামী জাহানের দ্বিতীয় খলীফা হযরত ওমর (রা.) (মৃ-২৩ হি.) একবার মিম্বারে দাঁড়িয়ে তাঁর খুৎবায় এক ঐতিহাসিক উক্তি উপস্থাপন করেছিলেন, যা ইমাম তিরমিযী (রহ.) (২০৯-২৭৯ হি.) স্বীয় গ্রন্থ তিরমিযী শরীফ এবং ইমাম ইবনে আবী শায়বা (রহ.) (মৃ.-২৩৫ হি.) স্বীয় গ্রন্থ মুসান্নাফেইবনেআবীশায়বায়
উল্লেখ করেন। হযরত ওমর (রা.) বলেছিলেন, হিসাব চাওয়ার পূর্বে নিজের হিসাব করে নাও, তোমার কাজ পরিমাপ করার পূর্বে নিজেই নিজের কাজের পরিমাপ করে নাও। (জামে’ তিরমিযী ৪/৬৩৮) ইসলাম ধর্মে উৎসবের রূপরেখা: আমরাঅনেকেউপলব্ধিনাকরলেও
উৎসব সাধারণত একটি জাতির
ধর্মীয় মূল্যবোধের সাথে সম্পৃক্ত হয়। উৎসবের উপলক্ষগুলো খোঁজ করলে পাওয়া যাবে, উৎসব পালনকারী জাতির ধমনীতে প্রবাহিত ধর্মীয় অনুভূতি, সংস্কার ও ধ্যান- ধারণার ছোয়া। যেমন, খৃস্টানদের বড়দিন তাদের বিশ্বাস মতে ¯্রষ্টার পুত্রের জন্মদিন। ইহুদীদের নববর্ষ “রোজ হাশানাহ” উল্ড টেষ্টামেন্টে বর্ণিত ইহুদীদের ধর্মীয় পবিত্র দিন
‘সাবাত’ হিসেবে পালিত হয়। এমনিভাবে প্রায় সকল জাতির
উৎসব উপলক্ষের মাঝেই ধর্মীয়
চিন্তাধারাখুঁজেপাওয়াযাবে।
আর এজন্যই প্রিয় নবী সা. দ্বর্থহীনভাবে মুসলিম জাতির উৎসব নির্ধারণ করে দিয়েছেন। ফলে অন্যদের উৎসব এ জাতির সংস্কৃতিতে অনুপ্রবেশের কোন সুযোগ নেই। রাসূল সা. ইরশাদ করেন, প্রত্যেক জাতির নিজস্ব ঈদ (উৎসব) রয়েছে, আর এটা (ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আযহা) আমাদের মুসলিম জাতির ঈদ। (বুখারী শরীফ ও মুসলিম শরীফ) এ হাদীস থেকে মুসলিম এবং অমুসলিম জাতির উৎসবের
মৌলিক একটি গুরুত্বপূর্ণ পার্থক্য প্রতিভাত হয়। অমুসলিম সম্প্রদায়ের উৎসবের
দিনগুলো হচ্ছে তাদের জন্য উচ্ছৃংখল আচরণের দিন। এদিনে তারা নৈতিকতার সকল
বাঁধ ভেঙ্গে দিয়ে অশ্লীল কর্মকান্ডে লিপ্ত হয়, আর এই কর্মকান্ডের অবধারিত রূপ হচ্ছে মদ্যপান ও ব্যভিচার। অপরদিকে মুসলিম জাতির উৎসব হচ্ছে ইবাদতের সাথে সরাসরি সম্পৃক্ত। বিষয়টিকে আমাদের গভীরভাবেউপলব্ধিকরতেহবে।
ইসলাম কেবল কিছু আচার- অনুষ্ঠান এবং আনুষ্ঠানিকতার নাম নয়, বরং তা মানুষের পুরো জীবনকে আল্লাহর সন্তুষ্টি ও নির্দেশ অনুযায়ী বিন্যস্ত ও সজ্জিত করতে উদ্যেগী হয়। সে জন্য মুসলিম জাতির আনন্দ-উৎসব আল্লাহর বিরুদ্ধাচরণ ও অশ্লীলতায় নিহিত নয়, বরং আল্লাহর নির্দেশ পালন ও নিষেধ থেকে বিরত থাকার মাঝেই নিহিত। তাই তাদের প্রতিটি কাজের রন্ধ্রে- রন্ধ্রে জড়িয়ে থাকবে তাদের
ধর্মীয় মূল্যবোধ, তাদের ঈমান, আখিরাতের প্রতি তাদের অবিচল বিশ্বাস, আল্লাহর প্রতি ভয় ও ভালবাসা। থার্টি ফাস্ট নাইট পালন করা: উপরের আলোচনার প্রেক্ষিতে ‘থার্টি ফাস্ট নাইট’ পালন করা নিঃসন্দেহে হারাম। এটা বিজাতীয় উৎসব। বিজাতীয় উৎসবে যারা অংশ গ্রহণ করবে, তারা তাদের দলভূক্ত হয়ে যাবে। কারণ নবীজী সা. ইরশাদ করেন, যে অন্য জাতির সাথে আচার- আচরণে, কৃষ্টি- কালচারে সামঞ্জস্য গ্রহণ করবে সে তাদের দলভূক্ত বিবেচিত হবে। (সুনানে আবু দাউদ) পবিত্র কুরআনে মহান আল্লাহর দ্বর্থহীন ঘোষণা, প্রত্যেক জাতির জন্য আমি একটি নির্দিষ্ট বিধান এবং সুস্পষ্ট পথ নির্ধারণ করেছি। (সুরা মায়িদাহ আয়াত-৪৮) তাই, একজন মুসলিম খৃস্টান পাদ্রী পোপ গ্রেগরিয়ান এর নামানুসারে যে ক্যালেন্ডার, সেই ক্যালেন্ডার অনুযায়ী ইংরেজী ১ জানুয়ারীকে নববর্ষ হিসেবে পালন করলে তার ঈমান চলে যাওয়ার সমূহ সম্ভাবনা রয়েছে। বর্তমান বাংলাদেশের হালচাল: বাংলাদেশের মত একটি বৃহত্তম মুসলিম রাষ্ট্রে এ রাতে জায়গায় জায়গায়, বিভিন্ন স্পটে উচ্ছৃংখল যুবক- যুবতীদের বেহায়াপনায় বাঁধা সৃষ্টি করতে পুলিশ- র্যাব নিযুক্ত করতে হয়। পত্রিকার ভাষ্য অনুযায়ী, বাংলাদেশের প্রায় সব অভিজাত হোটেল যথা, ওয়েস্টিন, রুপসী বাংলা, প্যান-প্যাসিফিক
সোনারগাঁও,
আগ্রাবাদে থার্টি ফাস্ট নাইট উদযাপনের জন্য টিকেট
বিক্রি করা হয়। টিকেকের মূল্য ত্রিশ হাজারের উর্ধ্বে। এই দেশে অনেক নামধারী মুসলমান আছেন, যারাএকটিরাতকেউদযাপনের
জন্য হাজার-হাজার ব্যয় করে হোটেল শেরাটনে রাত কাটাবেন, মদপান করে নাচ- গান করবেন, অন্যায় ও পাপ কাজে লিপ্ত হবেন। মহৎ(?) কাজ, নতুন দিন ও নতুন বর্ষকে স্বাগতম জানাবেন। হায়রে আফসোস! আমাদের করণীয়: সুতরাং ইসলামী দৃষ্টিকোণ থেকে ইংরেজী নববর্ষ সংক্রান্ত যাবতীয় অনুষ্ঠান সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। কারণ এতে কয়েক ধরণের ইসলাম বিরোধী কর্মকান্ড রয়েছে। ১. শিরকপূর্ণ অনুষ্ঠানাদি, চিন্তাধারা ও সংগীত। ২. নগ্নতা, অশ্লীলতা, ব্যভিচারপূর্ণ অনুষ্ঠান। ৩. গান ও বাদ্যপূর্ণ অনুষ্ঠান। ৪. সময় অপচয়কারী অনর্থক বাজে কথা ও কাজ। এমতাবস্থায়
প্রতিটি মুসলিমের দায়িত্ব হল,
নিজেএগুলোথেকেসম্পূর্ণরূপেবিরত
থাকা এবং মুসলিম সমাজ থেকে এই ঈমানবিধ্বংসীপ্রথাউচ্ছেদের
সর্বাত্মক
প্রচেষ্টা চালানো নিজ নিজ সাধ্য ও অবস্থান অনুযায়ী। এ প্রসঙ্গে আমাদের করণীয় হলো, ১. এ বিষয়ে দেশের শাসকগোষ্ঠীর দায়িত্ব হবে আইন প্রয়োগের মাধ্যমে নববর্ষের যাবতীয় বিজাতীয় অনুষ্ঠান নিষিদ্ধ ঘোষণা করা। ২. যাদের নিজস্ব প্রভাব ও দাপট রয়েছে, তাদের কর্তব্য হবে অধীনস্থদেরকে এ কাজ থেকে বিরত রাখা। ৩. ইমামগণ এ বিষয়ে মুসল্লীদেরকে সচেতন করবেন ও বিরত থাকার উপদেশ দেবেন। ৪. পরিবারের প্রধান এ বিষয়টি নিশ্চিত করবেন যে, তার পুত্র-কন্যা, স্ত্রী কিংবা তার অধীনস্থ অন্য কেউ যেন নববর্ষের কোন অনুষ্ঠানে যোগ না দেয়। ৫.
এছাড়াব্যক্তিগতভাবেপ্রত্যেকেতার
বন্ধুবান্ধব, আত্মীয়-স্বজন, সহকর্মী, সহপাঠী, পরিবারের মানুষ এবং প্রতিবেশীকে উপদেশ দেবেন এবং নববর্ষ পালনের সাথে কোনভাবে সম্পৃক্ত হওয়া থেকে বিরত রাখার চেষ্টা করবেন। তাই, আমরা বাংলার সুনাগরিকদের প্রতি উদাত্ত আহ্বান জানাচ্ছি, তারুণ্যের প্রতি হৃদয়ের তপ্ত আহ্বান এবং আর্জি পেশ করছি, জাগ্রত হোন বাংলার সভ্য জনগণ ও দেশপ্রেমিক জনতা, আজকের এই বাংলার সভ্য রূপকে অসভ্যতার রূপ দিয়ে কলঙ্কিত করার পাশ্চাত্য সংস্কৃতির প্রতীক থার্টি ফাস্ট নাইট উদযাপনের বিরুদ্ধে। পীর আওলিয়ার লালনভুমি বাংলার পবিত্র রক্ত যাদের শরীরে প্রবাহমান, আশা করছি তারা আজকের এই পাশ্চাত্য
সংস্কৃতিকেআস্তাকুড়েনিক্ষেপ
করে, আর যারা বুঝেনা অথবা বুঝেও মীর জাফর সেজে নিজ সভ্যতাকে পদদলিত করে পাশ্চাত্য সংস্কৃতির এই নোংরা অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করবে তাদের বিরুদ্ধে ঈমান এবং দেশপ্রেমের ব্রত নিয়ে গর্জে উঠবেন। জাগ্রত হোক জাতীয় বিবেক এই প্রত্যাশায়………………
বিষয়: বিবিধ
২০৪৩ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন