ধর্ম ও সমাজ ইসলাম সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদ সমর্থন করে না

লিখেছেন লিখেছেন মোহাম্মদ কাশেম মরিচ্যা ০৬ এপ্রিল, ২০১৩, ০৮:৫৭:০৬ রাত

ইসলাম সহিংসতাকে কঠোরভাবে নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছে, সব ধরনের হত্যা, রক্তপাত ও অরাজকতা প্রত্যাখ্যান করেছে, সৎ ও ভালো কাজে সহযোগিতার নির্দেশ দিয়েছে, পাপ ও নির্যাতনমূলক কাজ থেকে বিরত থাকতে বলেছে। কোনো ধরনের সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডকে ইসলাম সমর্থন করে না, বরং ঘৃণা করে। ইসলামে সন্ত্রাস, বোমাবাজি ও জঙ্গিবাদের কোনো স্থান নেই। নিরপরাধ ব্যক্তিদের হত্যা করা ইসলামের সঙ্গে সংগতিপূর্ণ নয়। অন্যায়ভাবে হত্যাকে সবচেয়ে বড় গুনাহ বলে হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘নরহত্যা বা পৃথিবীতে ধ্বংসাত্মক কর্মকাণ্ডের অপরাধে অভিযুক্ত ব্যক্তি ছাড়া কেউ কাউকে হত্যা করলে সে যেন দুনিয়ার সমগ্র মানবগোষ্ঠীকে হত্যা করল, আর কেউ কারও প্রাণ রক্ষা করলে সে যেন পৃথিবীর সমগ্র মানবগোষ্ঠীকে প্রাণে রক্ষা করল।’ (সূরা আল-মায়িদা, আয়াত-৩২) ইসলাম সব ক্ষেত্রে শান্তি ও সামাজিক স্থিতিশীলতার কথা বলে। ইসলামে পারস্পরিক অভিবাদনেও শান্তি কামনা করা হয়। সমাজে অশান্তি, বিশৃঙ্খলা, অনিরাপত্তা ও নৈরাজ্য সৃষ্টির মতো ঘৃণ্য কাজকে ইসলাম কখনো সমর্থন করে না। প্রকৃতপক্ষে ইসলাম হলো মধ্যম পন্থার ধর্ম। চরম পন্থা, বাড়াবাড়ি, জোরজবরদস্তি ও বল প্রয়োগ ইসলাম কখনো অনুমোদন করে না। মানুষের জীবনের সর্বোচ্চ নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পবিত্র কোরআনে ঘোষিত হয়েছে, ‘আল্লাহ যার হত্যা নিষিদ্ধ করেছেন যথার্থ কারণ ব্যতিরেকে তোমরা তাকে হত্যা করো না।’ (সূরা বনি ইসরাইল, আয়াত-৩৩) হাদিস শরিফে বর্ণিত আছে যে, ‘দুনিয়া ধ্বংস করে দেওয়ার চেয়েও আল্লাহর কাছে ঘৃণিত কাজ হলো মানুষ হত্যা করা।’ (তিরমিজি) কিন্তু কুচক্রী মহল ইসলামকে ভুল ব্যাখ্যা দিয়ে মানবসভ্যতাকে ধ্বংসের পাঁয়তারা করছে। তারা মানুষের ধর্মের প্রতি আনুগত্যকে দুর্বলতার সুযোগ নিয়ে পরকালীন মুক্তির নামে ধর্মত্যাগী করছে। ধর্মান্ধ জঙ্গিবাদ মূলত একটা উগ্র আদর্শবাদ, যা মতাদর্শের বিভ্রান্তিকর ব্যাখ্যাকে কেন্দ্র করে গড়ে ওঠে। কিছু বিপথগামী লোক ইসলামের নামে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে ধর্মকে অবমাননা করছে। তারা তাদের হীন স্বার্থ অর্জনে পথভ্রষ্ট তরুণদের ব্যবহার করছে। এমনকি তারা সংখ্যালঘুদের বেলায়ও উগ্রবাদী। অথচ ইসলাম এ ব্যাপারে সুস্পষ্ট দিকনির্দেশনা প্রদান করেছে। প্রত্যেক মুসলমান ও অমুসলমানদের ধন-সম্পদ, ইজ্জত-আব্রু ও জীবন অন্য মুসলমানের কাছে আমানতস্বরূপ। এ গচ্ছিত আমানতকে সংরক্ষণ করা তার ওপর অর্পিত দায়িত্ব। রাসুলুল্লাহ (সা.) সতর্কবাণী উচ্চারণ করে বলেছেন, ‘মনে রেখো! যদি কোনো মুসলিম অমুসলিম নাগরিকের ওপর নিপীড়ন চালায়, তার অধিকার খর্ব করে, তার কোনো বস্তু জোরপূর্বক ছিনিয়ে নেয়, তাহলে কিয়ামতের দিন আমি রাসুল তার বিরুদ্ধ পক্ষ নেব।’ (আবু দাউদ) মানবজাতির শান্তি ও মুক্তির লক্ষ্যে প্রেরিত নবী-রাসুল যে বিধিবিধান প্রবর্তন করেছেন, তা যখন কোনো দেশ বা সমাজ পরিত্যাগ করেছে, তখন তাদের মধ্যে সন্ত্রাস ও নৈরাজ্য বিস্তার লাভ করেছে। কারণ, এ বিশ্বপ্রকৃতি ও মানবসভ্যতার মূল নিয়ন্ত্রক হলেন আল্লাহ তাআলা। তিনিই মানুষের শান্তি, নিরাপত্তা ও সফলতার জন্য উপযুক্ত বিধি-ব্যবস্থা দান করেছেন। কোনো সমস্যার সমাধান কীভাবে হবে, তা তিনি রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর মারফত মানুষকে জানিয়েছেন। এ জীবনব্যবস্থা বা সমাধান যে সমাজে বিদ্যমান থাকবে, সে সমাজে শান্তি ও নিরাপত্তা বজায় থাকবে। মহানবী (সা.) সামাজিক বিপ্লবের মাধ্যমে যেভাবে ইসলাম প্রতিষ্ঠা করেন, সেভাবে তা প্রতিষ্ঠা করতে হবে। ইসলামের প্রাথমিক যুগে সন্ত্রাস-হানাহানিতে জর্জরিত আরব সমাজে কঠোর আইন প্রয়োগের মাধ্যমেই শান্তি ও নিরাপত্তা স্থাপিত হয়েছিল। পবিত্র কোরআনে সন্ত্রাস ও হত্যাকাণ্ডের কঠোরতম শাস্তির বিধান সম্পর্কে ইরশাদ হয়েছে, ‘কেউ ইচ্ছাকৃতভাবে কোনো মুমিনকে হত্যা করলে তার শাস্তি জাহান্নাম, সেখানে সে স্থায়ী হবে এবং আল্লাহ তার প্রতি রুষ্ট হবেন ও তাকে অভিশপ্ত করবেন এবং তার জন্য মহা শাস্তি প্রস্তুত রাখবেন।’ (সূরা আন-নিসা, আয়াত-৯৩) ইসলাম অস্ত্রবাজি, সন্ত্রাসী হামলা, আগ্রাসন ও যুদ্ধের ঘোরবিরোধী। ইসলাম নির্যাতন, অনিষ্ট, দাঙ্গা-হাঙ্গামা এবং খুনোখুনি করাকে মারাত্মক পাপ ও জঘন্য অপরাধ বলে গণ্য করে। ইসলাম মানবতাবিরোধী সব ধরনের রক্তক্ষয় ও অসৎ উদ্দেশ্য হাসিলের জন্য নিরীহ মানুষ হত্যাকে প্রশ্রয় দেয় না। এমনিভাবে সমাজে ফিতনা-ফ্যাসাদ, বিপর্যয়, অস্থিতিশীলতা সৃষ্টি করাকে হত্যার চেয়েও জঘন্যতম অপরাধ সাব্যস্ত করা হয়েছে। কেউ যাতে বোমাবাজি ও সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে জড়িত হতে না পারে, সে জন্য মুসলমানদের মধ্যে গণসচেতনতা সৃষ্টির জন্য শুক্রবার জুমার নামাজের খুতবায় মুসল্লিদের উদ্দেশে সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদের ওপর বিশেষ বয়ান প্রদান করতে মসজিদের ইমাম-খতিবদের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে হবে। ইসলাম সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদ সমর্থন করে না—তাই মানবসভ্যতার শান্তি ও সংহতি প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে আলেম সমাজের করণীয় বিষয়ে অত্যন্ত গুরুদায়িত্ব রয়েছে। সন্ত্রাসবাদ ইসলামবিরোধী—আর কোনো মহৎ ধর্ম সন্ত্রাসবাদের পক্ষে অবস্থান নিতে পারে না। কোনো দায়িত্বশীল গোষ্ঠী বা সমাজ সন্ত্রাসবাদের পক্ষ সমর্থন করতে পারে না। ইসলাম মানবজাতির জন্য শাশ্বত শান্তি, প্রশান্তি ও নিরাপত্তার উৎস। বর্তমান প্রেক্ষাপটে সবচেয়ে বড় প্রয়োজন হচ্ছে আধুনিক সভ্যতার উত্তম অর্জনগুলোকে ধারণ করার মাধ্যমে অখণ্ড সভ্যতার মূল্যবোধ থেকে ইসলামকে তুলে ধরা। এ ক্ষেত্রে ইসলাম সমগ্র বিশ্ববাসীর জন্য কীভাবে মানবকল্যাণ বয়ে আনবে, সে পথের রূপরেখা পরিষ্কার করাও আলেম-ওলামাদের কর্তব্য। বিশ্বব্যাপী সন্ত্রাসবিরোধী বার্তা যাতে ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে দেওয়া যায়, সে জন্য সারা দেশে সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদবিরোধী ইসলামি সম্মেলনের আয়োজন করা উচিত। কারণ, এ ব্যাপারে আলোচনা যত বেশি হবে, ততই মানুষ আরও স্বচ্ছ ধারণা লাভে সক্ষম হবে। এটি সন্ত্রাসবাদবিরোধী ইসলামের মর্মবাণীকে ছড়িয়ে দেওয়ার জন্য সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি ও আন্তধর্মীয় সংলাপের শান্তিপূর্ণ সূচনা হতে পারে।

বিষয়: বিবিধ

১৩৪৪ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File