বেশ্যা,সিফিলিস ও সেক্যুলার (পর্ব-১)

লিখেছেন লিখেছেন মাজহার১৩ ২০ ডিসেম্বর, ২০১৪, ০৫:০১:৪৬ বিকাল



বেশ্যা শব্দটি শুনলেই কল্পনায় ভেসে আসে মেঘলা ও চামেলীদের চেহারা। চামেলীদের নাম শুনে সংসর্গ পেতে কারও হৃদয়ে যেমন উদগ্র বাসনা জন্মায় আবার কেউ মনে মনে তওবা এস্তেগফার বলে গালে চড় দিয়ে কুবাসনা থেকে দূরে থাকে। আমাদের ভাষা ও সাহিত্য এবং সমাজের এতখানি অধঃপতন হয়নি যে এই শব্দটি জনসম্মুক্ষে উচ্চারিত হলে বক্তা জিভ কেটে দুঃখ প্রকাশ করে না কিংবা শ্রোতা কানে হাত দিয়ে না শোনার ভান করে না। হালে শব্দটি বুদ্ধির পরে যুক্ত হয়ে বুদ্ধিজীবি কিংবা জ্ঞানপাপীর সমার্থক শব্দ হিসেবে ব্যাবহৃত হচ্ছে এবং বুদ্ধিবেশ্যাদের একটি সংক্ষিপ্ত লিষ্টও প্রকাশিত হয়েছে। যারা এই বুদ্ধিবেশ্যাদের তালিকা প্রনয়ন করেছেন বর্ননার সুবিধার্থে তাঁদের একটা নাম দেয়া যাক, বাইজী। বাইজী বা নাচনেওয়ালীরা নিজেরা যেমন নাচে তেমনি অন্যদেরও নাচায়। যেমন শাহবাগে নাচিয়েছে আবার শহীদ মিনারেও। তবে এই বাইজীরা এত কৌশলী তারা এপার ওপার দুই বাংলার মানুষকে সমান তালে লুঙ্গিড্যান্স স্টাইলে নাচিয়েছেন। তবে এপার বাংলার চেয়েও ওপার বাংলার বুদ্ধিবেশ্যাদের উদ্দীপনা বেশী।তারা ব্রিটিশদের ফেলে দেয়া ডিভাইন্ড এন্ড রুল তত্ত্ব ১৯৪০ সালের লাহোর প্রস্তাবের পর থেকে প্রয়োগ শুরু করেছে যার শুভ পরিনতি হয়েছে ৭১সালে।দালাল আইনে তারা ক্ষান্ত হননি। এই তত্ত্বটি ভিন্ন সময়ে ভিন্ন ফরমেটে চালু আছে। যেমন কিছুদিন মুক্তিযুদ্ধের চেতনার পক্ষে বিপক্ষে দ্বিধাবিভক্ত করেছে, যখন এটা মুখ থুবড়ে পড়েছে এখন জংগীতত্ত্ব নিয়ে হাজির। জংগীবাদের পক্ষে বিপক্ষে জাতিকে বিভক্ত করার নিমিত্তে বর্ধমান বিস্ফোরনে বাংলাদেশ কানেকশন ফেরি করছে। এ থেকে অনুমেয় বাইজীদের শেকড় কত গভীরে এবং প্রাচীন। কাকতালীয়ভাবে বাইজীর সাথে তাদের নামকরনটা মিলে গেছে। তবে এই বাইজীদের কল্যানে বাঙ্গালী সাবলীলভাবে বেশ্যা শব্দটি উচ্চারন করতে শিখেছে।

সিফিলিস শব্দটির সাথে প্রথম পরিচয় ঘটে ২০০১ সালে বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নকালীন সময়ে এলিপ্যান্ট রোডে শেলটেক শিয়েরা ভবনে কম্পিউটার কেনার সময়। আমার মত প্রত্যন্ত গ্রামের রক্ষনশীল পরিবার থেকে আসা কেউ হয়ত মনে করতে পারে ইহা কি কম্পিউটার ভাইরাস। কম্পিউটার বিক্রয়কারী প্রতিষ্টানটির মালিক ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন ছাত্র পরবর্তীতে সৌদি আরবের একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যাপনা করেন। অধ্যাপনা শেষে তার IT পড়ুয়া ছেলের কল্যানে কম্পিউটার ব্যাবসা শুরু করেন। নতুন মার্কেট, বেচাকেনা কম তাই ক্রেতাদের সাথে সুযোগ পেলেই গল্প করতেন। কাকতালীয়ভাবে মিলে গেল উনার জন্মস্থান আমার জেলা নোয়াখালী। আলাপের এক পর্যায়ে মুক্তিযুদ্ধে ঢাকাবিশ্ববিদ্যালয়ের ভুমিকা প্রসঙ্গে বলতে গিয়ে উনি বলেছেন , মুক্তিযুদ্ধ শেষে কলিকাতা ফেরত অনেক ছাত্র ও ছাত্রনেতারাই সিফিলিসে আক্রান্ত হয়ে পড়েন। তখন বুঝি নাই ইহা কি কোন পদক, পদবী না রোগ। লজ্জায় জিজ্ঞাসা করিনাই পাছে যদি বোকা ভাবেন। জহির রায়হান গুম না হলে হয়ত কোন ডকুমেন্টারী বা চিত্রনাট্যের মাধ্যমে আমরা জানতে পারতাম।

অবিভক্ত বাংলায় বেশ্যাবৃত্তির প্রাতিষ্ঠানিকভাবে চালু ও ব্যাপকভিত্তিতে সম্প্রসারিত হয় ব্রিটিশ শাসনামলে। তবে এই বেশ্যাবৃত্তিই তাদের জন্য কাল হয়ে দেখা দিল।যেই অল্পসঙ্খ্যক সৈন্যের উপর নির্ভর করে সংখ্যাগুরু ভারতবাসীকে শাসন ও শোষন করতো সেই ব্রিটিশ সৈন্যরা ব্যাপকভাবে বেশ্যাদের সাথে সংসর্গ স্থাপন করায় সিফিলিস বা যৌন রোগে আক্রান্ত হয়ে পড়ল যা মারাত্মকভাবে বেড়ে গিয়েছিল।সেই সময়কার সরকারী রিপোর্টে ইংরেজ সেনাদের মধ্যে ১৮২৭ সালে যৌন রোগের হার ছিল ২৭% যা ১৮৬০ সালে গিয়ে বেড়ে দাড়িয়েছিল ৭০%। সেনা নির্ভর সরকারের প্রান ওষ্টাগত, অনেক সৈন্যেকে অক্ষম বলে বরক্ষাস্ত করতে হল। আবার নতুন রিক্রুট আবার সিফিলিস। তবে অনুকরনপ্রিয় ভারতবাসীও ইহা অনুকরন করতে ভুলে নাই।১৯৬৬ সালের রিপোর্ট অনুসারে ভারতীয় সৈন্যেদের প্রতি হাজারে ৫৪.৪% যৌন রোগে আক্রান্ত ছিল।এভাবে কতদিন চলা যায়।অন্যদিকে উদার মানবিকতা ও প্রগতিশীল মানসিকতার জন্য বেশ্যাবৃত্তিও বন্ধ করা যাচ্ছে না। এ থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য ইংরেজ সরকার ১৯৬৪ সালে পাশ করেন ক্যান্টনমেন্ট এক্ট (ActXXII,1864)। মানব চিন্তা প্রসুত আইন দিয়ে যদি মানুষকে নিয়ন্ত্রন করা যেত তাহলে বাংলাদেশের ৭২ সালের সংবিধানই যথেষ্ট ছিল, ষোল বার সংশোধন করা লাগত না। তবে মজার বিষয় হলো ১৬ বারের ১৩ বারই ছিল বিতর্কিত এবং রক্তপাত মিশ্রিত। ক্যান্টনম্যান্ট এক্ট ১৯৬৪ দিয়েও শেষ রক্ষা হলো না।সরকার উপলদ্ধি করল সেনা ছাউনির বাহিরের বেশ্যাদের নিয়ন্ত্রনের জন্য নতুন আইন করা দরকার, ততদিনে ১৯৬৭ সালে কলকাতার হেলথ অফিসার ফেবর টনয়ের মেমরেন্ডামে দেখা গেল বেশ্যার সংখ্যা ৩০,০০০। এটা অনেকটা পাপ পাপ বাড়ায়, বেশ্যা বাড়ায় বেশ্যা। বেশ্যাবৃত্তি বন্ধ কিংবা বেশ্যার সংখ্যা কমানোর উদ্যোগ না নিয়ে যৌন রোগ আটকানোর জন্য ইংরেজ সরকার ১৯৬৮ সালে “Indian Contagious Disease Act” বা “চৌদ্দ আইন” চালু করল। স্কুলে শিখেছিলাম Prevention is better than cure বা প্রতিকারের চেয়ে প্রতিরোধ অধিকতর ভাল। ইন্ড্রাস্ট্রিয়াল ইঞ্জিনিয়ারিং ডিপার্টমেন্টে কাজ করার সুবাদে বুঝেছি সমস্যা সমাধানের নিমিত্তে Fishbone Diagram এর মাধ্যমে Root cause analysis করে সমস্যা চিহ্নিত করে এর সমাধান করা।এই জ্ঞানগর্ভ তত্ত্ব নিয়ে আমার উপলদ্ধি জ্ঞানীরা যা বলে তা করেনা, যা করে তা বলে না। ইংরেজ সরকারের উপর্যপুরি দুবার আইন প্রনয়ন থেকে চিন্তাশীল মানুষের উপলদ্ধি হওয়া উচিত জাগতিক জ্ঞানলব্দ আইন থেকে মানবতার দীর্ঘস্থায়ী কিংবা চিরস্থায়ী কল্যান সম্ভব নয়।

অধিকাংশ মানুষ কুকাজ থেকে বিরত থাকে মুলত পাপবোধ থেকে। ধর্ম মানুষকে পাপবোধ শিক্ষা দেয় যা অন্যায়, অপরাধ থেকে দূরে থাকতে নিদেনপক্ষে চিন্তা করতে শেখায়। বিবেক যখন কুপ্রবৃত্তির নিকট পরাজিত হয় তখনই মানুষ অন্যায় ও পাপ করে থাকে। কুপ্রবৃত্তির বিরুদ্ধে লড়াইয়ে টিকে থাকতে ধর্মীয় বিশ্বাস ও পরকালের চিন্তা বিবেককে সজীব রাখে। ধর্মীয় বিশ্বাস কিংবা পরকালের চিন্তা ও বিচারের সম্মুক্ষীন হওয়ার বিষয়টি মানুষের চেতনায় না থাকলে মানুষ বেপরোয়া হবে এবং ন্যায় অন্যায়ের হিতাহিত জ্ঞানের অভাবে বিশ্বশান্তি বিঘ্নিত হবে। তবে স্টিফেন হকিংযের মত প্রতিবন্ধী দ্বারা হয়ত পাপ সংঘটিত হওয়া যেমন অসম্ভব তেমনি নপুংশক দ্বারা ধর্ষন। কিন্তু এই ব্যাতিক্রমকে দৃষ্টান্ত হিসেবে নিয়ে ধর্মকে নির্বাসিত করার মাধ্যমে সেক্যুলারিজম আমদানী করা মুর্খতার শামিল। ধর্মনিরপেক্ষতার বাই প্রোডাক্ট হল ধর্মহীনতা।

পর্ব-২

বিষয়: বিবিধ

৪৯০৮ বার পঠিত, ১৬ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

295998
২০ ডিসেম্বর ২০১৪ বিকাল ০৫:৪২
মাজহার১৩ লিখেছেন : বেশ্যাগমনে যেমন সিফিলিস হয়, তেমনি সেক্যুলার রাষ্ট্রব্যাবস্থায় নাস্তিকের জন্ম হয়। ধর্ষন, খুন, খারাবী ও গনতন্ত্র হত্যা করা হয়।
২১ ডিসেম্বর ২০১৪ রাত ১২:০৩
239543

A PHP Error was encountered

Severity: Notice

Message: Undefined offset: 7238

Filename: views/blogdetailpage.php

Line Number: 917

"> রায়হান রহমান লিখেছেন : তালেবানের পোন্দানির চোটে ইসলামের এইডস আমাসা শুরু হইসে।
২১ ডিসেম্বর ২০১৪ সকাল ০৯:৩২
239589
মাজহার১৩ লিখেছেন : ব্যাবহারই বংশের পরিচয়। ধর্মহীন লোকেরাই যুক্তির পরিবর্তে গালাগালি দিয়ে থাকে।
296027
২০ ডিসেম্বর ২০১৪ সন্ধ্যা ০৭:২৯
এ কিউ এম ইব্রাহীম লিখেছেন : ধন্যবাদ
২১ ডিসেম্বর ২০১৪ সকাল ০৯:৩৩
239591
মাজহার১৩ লিখেছেন : আপনাকেও ধন্যবাদ
296035
২০ ডিসেম্বর ২০১৪ রাত ০৮:০৯
শরাফতুল্লাহ লিখেছেন :
স্টিফেন হকিংয়ের মত প্রতিবন্ধী দ্বারা হয়ত পাপ সংঘটিত হওয়া যেমন অসম্ভব তেমনি নপুংশক দ্বারা ধর্ষন। কিন্তু এই ব্যাতিক্রমকে দৃষ্টান্ত হিসেবে নিয়ে ধর্মকে নির্বাসিত করার মাধ্যমে সেক্যুলারিজম আমদানী করা মুর্খতার শামিল।


লেখার জন্য ধন্যবাদ, অনেক ভালো হয়েছে।
296058
২০ ডিসেম্বর ২০১৪ রাত ০৯:৫০
শেখের পোলা লিখেছেন : মানুষ বানানো আইনে মানুষকে শাস্তি দেওয়া যায় কিন্তু মানুষ বানানো যায়না৷ অন্যকারও আইন লাগে৷ ধন্যবাদ৷
২১ ডিসেম্বর ২০১৪ সকাল ০৯:৩৪
239594
মাজহার১৩ লিখেছেন : গুরুত্বূর্ন মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ।
296088
২১ ডিসেম্বর ২০১৪ রাত ১২:০২

A PHP Error was encountered

Severity: Notice

Message: Undefined offset: 7238

Filename: views/blogdetailpage.php

Line Number: 764

"> রায়হান রহমান লিখেছেন : তালেবানের পোন্দানির চোটে ইসলামওলাদের এইডস আমাসা শুরু হইসে।
২১ ডিসেম্বর ২০১৪ সকাল ০৯:৩৫
239595
মাজহার১৩ লিখেছেন : আপনি অনেক ক্রোধান্বিত হয়েছেন। দুঃখিত!
296171
২১ ডিসেম্বর ২০১৪ দুপুর ১২:০৪
হতভাগা লিখেছেন :
''ধর্মনিরপেক্ষতার বাই প্রোডাক্ট হল ধর্মহীনতা। ''


০ ধর্মহীন মানুষ পশুর সমতুল্য
২১ ডিসেম্বর ২০১৪ দুপুর ১২:১৩
239614
মাজহার১৩ লিখেছেন : ্ধন্যবাদ মন্তব্যের জন্য। দ্বিতীয় পর্ব পড়ার আমন্ত্রন।
296185
২১ ডিসেম্বর ২০১৪ দুপুর ০১:২৪
ইবনে আহমাদ লিখেছেন : তথ্যপূর্ণ লেখা। অনেক কিছু জানলাম। আগামী পর্বের অপেক্ষায়।
২১ ডিসেম্বর ২০১৪ দুপুর ০২:৩৪
239654
মাজহার১৩ লিখেছেন : ধন্যবাদ। ২য় পর্ব ইতোমধ্যে পোষ্ট হয়েছে। পড়ে আপনার মতামত জানাবেন।
296193
২১ ডিসেম্বর ২০১৪ দুপুর ০২:৫০
মোতাহারুল ইসলাম লিখেছেন : আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ। অনেক কিছু জানলাম।
২১ ডিসেম্বর ২০১৪ দুপুর ০২:৫৮
239660
মাজহার১৩ লিখেছেন : আপনাকেও ধন্যবাদ।

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File