শরিয়ত প্রতিষ্ঠায় ভোট লাগবে কেন?
লিখেছেন লিখেছেন মাজহার১৩ ০২ অক্টোবর, ২০১৪, ১২:০৩:৪৪ দুপুর
মুসলমান হওয়ার অর্থই হলো, নিজ দায়িত্বে আল্লাহর আইনের প্রতিষ্ঠায় জ্বিহাদে নামা। অথচ শরিয়তের প্রতিষ্ঠার বিষয়টিকে অনেকেই ভোটে দিতে বলেন। এটি এক ভয়ানক অজ্ঞতা ও বিভ্রান্তি-প্রসূত। যে দেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ জনগণ মুসলমান, নামায-রোযা আদায়ের ন্যায় শরিয়তী-আইন অনুযায়ী বিচারপ্রাপ্তীও তাদের, মৌলিক অধিকার। মুসলিম বিশ্বে বিগত ১৪০০ বছরে অসংখ্য স্বৈরাচার এসেছে। কিন্তু নামায-রোযা আদায়ের ন্যায় শরিয়তী বিধানের প্রয়োগে কোন মুসলিম শাসকই হস্তক্ষেপ করেনি। এটি যেমন মোঘল আমলে ছিল, তেমনি নবাব সিরাজুদ্দৌলার শাসনামলেও। তখন যে ভারতবর্ষে মুসলিম জনসংখ্যার অনুপাত হিন্দুদের চেয়ে বেশী ছিল তাও নয়। শরিয়তি শাসনকে ছিনতাই করেছিল মুসলিম দূষমন ব্রিটিশ সরকার। প্রশ্ন হোল, ছিনতাইয়ের মাল ফেরত নিতে ভোট লাগবে কেন? তাছাড়া যে দেশের জনসংখ্যার শতকরা ৯০ ভাগ মুসলমান সেদেশে শরিয়তে বিষয়টি ভোটে দিলে সেটি তো জনগণকে বেঈমান ভাবার মত জঘন্য অপরাধ হবে। তাছাড়া এরূপ ভোটে তাদেরকেও মহাবিপদের মুখে ফেলা হবে। এটি কোরআনকে বা নামায-রোযার বিধানকে জনগণের ভোটে অনুমোদন করিয়ে নেওয়ার মত। জনগণকে এভাবে ভয়ানক ফিতনায় ফেলা হবে। যদি অজ্ঞতার কারণে কেউ যদি শরিয়তের পক্ষে ভোট না দেয়, তবে সে মুরতাদে পরিণত হবে। আর মুরতাদের শাস্তি তো মৃত্যুদন্ড। মুসলমান হওয়ার এটিও শর্ত যে, আল্লাহর সে মৃত্যুদন্ডের বিধানটির বাস্তবায়নেও সে সচেষ্ট হবে। যদি রাষ্ট্র ইসলামের সে বিধানটি বাস্তবায়নে অনাগ্রহী হয় তবে অন্য কোন সংগঠন বা ব্যক্তি সেটির প্রয়োগে আসতে পারে। তখন দেশজুড়ে অরাজকতা বাড়বে। উলামাদের মাঝে নানা বিষয়ে মতভেদ থাকলেও মুরতাদের শাস্তি যে মৃত্যুদন্ড তা নিয়ে কোন কোন মতভেদ নাই। আর মুরতাদ বা কাফের হওয়ার জন্য কি পুরা কোরআনকে অস্বীকার করার প্রয়োজন আছে? কোরআনে বর্নীত আল্লাহর একটি বিধানের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ ঘোষণাই তো কাফের হওয়ার জন্য যথেষ্ট। সেটি শরিয়তের বিরুদ্ধে মতপ্রকাশের মধ্য দিয়েও হতে পারে। এব্যাপারে আল্লাহতায়ালার আয়াত হলো, - “…আল্লাহ যা কিছু (পবিত্র কোরআনে) অবতীর্ণ করেছেন সে অনুযায়ী যারা বিচার কার্য পরিচালনা করেনা তারাই কাফের।.... তারাই জালেম। …তারাই ফাসেক।” -সুরা মায়েদা, আয়াত ৪৪, ৪৫, এবং ৪৬। আল্লাহর পক্ষ থেকে এমন সুস্পষ্ট ঘোষণা আসার পরও কি শরিয়তের প্রতিষ্ঠার প্রশ্নে মুসলমানদের থেকে অনুমতি নেওয়ার প্রয়োজন আছে? এমন প্রশ্ন কাফের দেশে উঠতে পারে, কিন্তু কোন মুসলিম দেশের রাজনীতিতেও কি এটি কোন প্রশ্ন? তাছাড়া নির্বাচন তো অর্থশালী দুর্বৃত্তদের ভোট কেনার বৈধ অধিকার দেয়। তাদের অর্থের সাথে বিপুল অর্থায়ন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও ভারতসহ বহু অমুসলিম দেশের, - যারা মুসলিম দেশে শরিয়তের প্রতিষ্ঠার মধ্যে নিজেদের অকল্যাণ দেখতে পায়। এখানে বিষয় হলো, মুসলমানদেরকে মুসলমান হওয়ার দায়বদ্ধতা বুঝিয়ে দেওয়া। ঈমানদার হওয়ার অর্থ যে শুধু নামায-রোযা আদায় নয়,বরং শরিয়তের প্রতিষ্ঠায় ময়দানে নামা -সেটি সুস্পষ্ট করা। সেটি বুঝাতে পারলে প্রতিটি ঈমানদার ব্যক্তিই নিজ উদ্যোগে শরিয়তের প্রতিষ্ঠায় নিজ নিজ সহায়-সম্বল নিয়ে জিহাদে নামবে। এবং সে জিহাদে অর্থদান, শ্রমদান ও প্রাণদানকে জীবনে সবচেয়ে বড় সফলতা গণ্য করবে।
বাংলাদেশে ৯০% মুসলমানের মধ্যে ৫-৭% ইসলামের মুল চেতনা বুঝে, ১০-১২% ইসলাম সম্পর্কে বিষদভাবে জানে। যেখানে ৮৫-৯০% মুসলমান নামখাওয়াস্তে মুসলমান সেখানে আল্লাহর আইন প্রতিষ্টার জন্য জনমত যাচাই করা কি যথার্থ। শরীয়ত সম্পর্কিত বিষয়ে আমজনতার মতামত নেয়ার বিপক্ষে
সুরা আনয়ামের ১১৬ আয়াতে আল্লাহ এরশাদ করেছেন,
“ আর হে মুহাম্মাদ ! যদি তুমি দুনিয়ায় বসবাসকারী অধিকাংশ লোকের কথায় চলো তাহলে তারা তোমাকে আল্লাহর পথ থেকে বিচ্যুত করে ফেলবে৷ তারা তো চলে নিছক আন্দাজ-অনুমানের ভিত্তিতে এবং তারা কেবল আন্দাজ-অনুমানই করে থাকে৷”
মুসলমানদেরকে তাদের দায়িত্ব বুঝানোর কাজে নামতে হবে পবিত্র কোরআনকে নিয়ে। পবিত্র কোরআনের চেয়ে বিপ্লবী গ্রন্থ কি বিশ্বে দ্বিতীয়টি আছে? মহান আল্লাহর এ গ্রন্থটি পড়ে প্রাথমিক যুগের মুসলমানেরা এতটাই অনুপ্রাণীত হতো যে, খেজুর খেতে বসা ক্ষুদার্ত মানুষটি, জ্বিহাদের ডাক শুনে মুখের খেজুর ফেলে দিয়ে জ্বিহাদে ঝাঁপিয়ে পড়েছে এবং শহিদ হয়েছে। খেজুর চিবাতে দেরী হয়ে যাবে এবং তাতে দেরী হবে জান্নাতে পৌছতে, সে দেরীটুকুও তাদের সয়নি। মিশর, সিরিয়া, ইরাক, আলজেরিয়া, সূদান, মরক্কো, ইরানসহ ইসলাম যেখানেই গেছে সেখানেই আল্লাহর এ কিতাবটি রাষ্ট্রজুড়ে বিপ্লব এনেছে। মুসলমানের কাজ হলো কোরআনের শিক্ষাকে সর্বজনের কাছে পৌঁছে দেওয়া। সেটি হলে বাঁকি কাজটুকু কোরআন নিজেই করবে। চারিদিকে ছিটনো বীজের কিছু বীজ পাথরের উপর পড়ে, সেগুলো গজায় না। কিছু বীজ ঝোপঝাড়ে পড়ে, সেগুলো গজালেও প্রতিকূল পরিবেশে বেড়ে উঠেনা। কিন্তু কিছু বীজ উর্বর ভূমিতেও পড়ে। সেগুলো যত্ন পেলে প্রবলভাবে বেড়ে উঠবে এবং উত্তম ফসলও দিবে। তেমনি কোরআনী জ্ঞানের বেলায়ও। তাই স্ট্রাটেজী হতে হবে কোরআনের জ্ঞানকে প্রতিটি মানুষের কাছে পৌঁছে দেওয়া। মু’মিনের জীবনে এর চেয়ে বড় নেকীর কাজ নেই। অন্য কোন মানুষের জন্য এর চেয়ে বড় কল্যাণকর কাজও নেই। ইসলামী রাষ্ট্রবিপ্লবের লক্ষ্যে বস্তুতঃ এটিই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কাজ। তাই মুসলমানদের জন্য প্রায়োরিটি কোন দলের ক্যাডার হওয়া নয়, পার্টির প্রচার পত্র বিলিও নয়, বরং সেটি হতে হবে পবিত্র কোরআনের নিষ্ঠাবান পাঠক ও প্রচারক হওয়ায়। একমাত্র এ পথেই সে যেমন নিজের জন্য সিরাতুল মোস্তাকিম খুঁজে পাবে তেমনি সেটির সন্ধান দিতে পারবে লক্ষ লক্ষ মানুষের। এটাই তো পয়গম্বরদের কাজ। আর আল্লাহর খলিফা রূপে সে কাজ তো প্রতিটি মুসলমানের।
তাহলে কিভাবে প্রতিষ্টিত হবে ইসলাম, জানতে পড়ুন নিচের লিঙ্কগুলো।
ইসলামী রাষ্ট্রবিপ্লবের রোডম্যাপ
যে দায়িত্ব প্রতিটি মুসলমানের
ইসলামের বিজয় যে পথে অনিবার্য হয়
বাংলাদেশে ইসলামের বিজয় কীরূপে সম্ভব?
বিষয়: বিবিধ
১৫৭৯ বার পঠিত, ৭ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন