খালেদা যত সহনশীল হবেন ততই আত্মদহনে ভুগবেন হাসিনা।
লিখেছেন লিখেছেন মাজহার১৩ ২২ মে, ২০১৪, ০৯:১৭:৩১ সকাল
আওয়ামী লীগকে আওয়ামী লীগেরই তৈরী করা ফাঁদে ফেলার কৌশল নিয়েছে বিএনপি। ১৫ই জানুয়ারি সংবাদ সম্মেলন থেকে এই কৌশলটির স্পষ্ট ইঙ্গিত দিয়েছেন খালেদা জিয়া। জনবান্ধব রাজনীতির মধ্য দিয়ে বিএনপিকে ধ্বংস করে দেওয়ার মতো রাষ্ট্রীয় পদক্ষেপ নেওয়া থেকে ক্ষমতাসীন দলকে নিরস্ত করতে পারবেন খালেদা জিয়া। এমনকি এই রাজনৈতিক কৌশলের মধ্য দিয়ে বর্তমান সরকারকে নিজেদের মধ্য থেকে ভেঙ্গে পড়ার পরিবেশও সৃষ্টি করে ফেলতে পারেন তিনি। পাশাপাশি, শেখ হাসিনার দুর্বলতাগুলোকে আরও প্রকাশ্যে এনে নিজেদের জয় নিশ্চিত করার কৌশলটিও বাস্তবায়ন করার লক্ষ্যে নিজেদের শক্তি বিনিয়োগ করতে পারবে বিএনপি।
নতুন এই কৌশলের অনুষঙ্গ হতে পারে, বিএনপিকে ঘায়েল করার বন্দুকের নল আওয়ামী লীগের দিকে ঘুরিয়ে দেওয়া। যুদ্ধাপরাধের বিচারবিরোধী, স্বাধীনতাবিরোধী শক্তি ইত্যাদি আখ্যা দিয়ে বিএনপিকে বাদ দিয়ে নিজেরাই নির্বাচন ও সরকার গঠন করেছে আওয়ামী লীগ। এবার শক্তি ও সংঘাতের পথে নয় শুধুই সহনশীলতা আর অপেক্ষার কৌশল নিয়ে বিএনপির দিকে ছুঁড়ে মারা এই অস্ত্রগুলো আওয়ামী লীগের দিকে ঘুরিয়ে দিতে পারে বিএনপি।
বিশ্লেষকদের মতে, যুদ্ধাপরাধের বিচার, জামায়াত নিষিদ্ধকরণ ইত্যাদি কোন কর্মসূচীতেই বিএনপির কোন ক্ষতি নাই। যুদ্ধাপরাধের বিচার হলে বর্তমান জামায়াতে ইসলাম যেমন কলঙ্কমুক্ত হবে তেমনি বিএনপিও অনেকগুলো অভিযোগ থেকে রেহাই পাবে। একারণেই, এবার আর এ সকল ইস্যুতে পিছিয়ে না থেকে বরং ক্ষমতাসীন দলকে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে চাপে রাখতে পারে বিএনপি। এইভাবে, বিএনপিকে পোড়ানর আওয়ামী কৌশলগুলোকে খোজা করে দিয়ে শেখ হাসিনার জন্য আত্মদহনের পথ শক্তিশালী করতে পারেন খালেদা জিয়া।
এছাড়া, বিএনপির কঠোর কর্মসূচী চলাকালে সংখ্যালঘুদের ওপর হামলার মতো ঘটনায় অভিযোগের আঙ্গুল উঠছিল বিএনপির দিকে। ফলে, একদিকে বিএনপি প্রশ্নবিদ্ধ হচ্ছিল অন্যদিকে ‘সংখ্যালঘুদের রক্ষক’ হিসেবে শক্তিশালী হচ্ছিল আওয়ামী লীগ। এবার কঠোর কর্মসূচীর পথ থেকে সরে এসে নিজেরা প্রশ্নবিদ্ধ হওয়া বন্ধ করার পাশাপাশি হাতে ধরে আওয়ামী লীগকে শক্তিশালী করে দেওয়ার পথ থেকেও সরে আসল বিএনপি।
এইভাবে, সম্মুখ লড়াইয়ে শক্তি ব্যয় না করে, বিএনপিকে বাগে রাখার আওয়ামী লীগের কৌশলগুলোকে সহজেই ব্যর্থ করে দিতে পারবে বিএনপি। ফলে নিজেদের শক্তি অক্ষুন্ন রেখে গ্রামে-গঞ্জে-শহরে নিজেদের জনপ্রিয়তা বৃদ্ধির জন্য মনযোগ দিতে পারবে দলটি। পাশাপাশি ৫ই জানুয়ারির প্রহসনের নির্বাচনসহ ক্ষমতায় টিকে থাকতে আওয়ামী লীগের নানান কৌশলগুলোকে জনগণের সামনে এনে নিজেরা আরও শক্তিশালী হতে পারবে তারা। এইভাবে, শেখ হাসিনার জন্য বহুমাত্রিক মানসিক চাপের সমুদ্র উন্মুক্ত করতে পারেন খালেদা জিয়া।
এরই ফাঁকে বিএনপি একটি নির্দোষ হুমকি হিসেবে বড় হতে থাকবে। কিন্তু খালেদা জিয়ার সহনশীল রাজনৈতিক কৌশলের কারণে সংখ্যালঘুদের ওপর হামলা, যুদ্ধাপরাধের বিচার, জামায়াতের রাজনীতির মতো ইস্যুগুলোকে প্রধান করে দেখানর সুযোগ হারাবে আওয়ামী লীগ। এর বিপরীতে সরকারকে বিএনপি ও জনগণের মুখোমুখি হতে হবে জনকল্যাণের প্রকৃত ইস্যুগুলো নিয়ে। কিন্তু যতই সদিচ্ছা থাকুক, দশম সংসদে আওয়ামী লীগের জন্মই হয়েছে কতগুলো সীমাবদ্ধতা ও দূর্বলতা কপালে লিখে নিয়ে। বিএনপিকে ছাড়া নির্বাচন করতে গিয়ে আওয়ামী লীগ একাধিক দলের সাথে সমঝোতায় গিয়েছে। এই সকল সমঝোতা পূরণ করতে গিয়ে দশম সংসদের আওয়ামী লীগ জনকল্যাণের কাজে কমই সময় দিতে পারবে। শেখ হাসিনা অনেকটুকু সময়ই পার করবেন এই সকল সমঝোতা টেকানর দেন-দরবারে।
এছাড়া, বিএনপিবিহীন নির্বাচন নিশ্চিত করতে গিয়ে একাধিক দেশের সাথেও নানান সমঝোতায় যেতে হয়েছে আওয়ামী লীগকে। এছাড়া, শেখ হাসিনাকে পরস্পর প্রতিদ্বন্দ্বী রাষ্ট্রগুলোকে নিজের মিত্র হিসেবে বাছাই করতে হয়েছে। এই কারণে শেখ হাসিনা আন্তর্জাতিক অঙ্গনে একই সাথে দুই নৌকায় পাঁ দেওয়ার মতো পরিস্থিতিতে আছেন। এই ধরণের একটি পরিস্থিতিতে খালেদা জিয়ার জন্য সুনাম ও শক্তি অক্ষুন্ন রেখে সুদিনের জন্য অপেক্ষা করতে পারাটাই একটি বড় কৌশল হতে পারে। এর পাশাপাশি আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে বিএনপির ভাবমূর্তি উজ্জ্বল করাটাও একটি বড় চ্যালেঞ্জ। খালেদা জিয়া এই সহনশীলতার রাজনীতিতে স্থির থাকতে পারলে আন্তর্জাতিক মণ্ডলে নিজের ভাবমূর্তি যেমন উজ্জ্বল করতে পারবেন তেমনি দুই নৌকায় পাঁ দেওয়া শেখ হাসিনার ভবিষ্যৎও দেখতে পারবেন বিনা পরিশ্রমে।
আন্তর্জাতিক রাজনীতি ছাড়া জাতীয় রাজনীতিতেও আওয়ামী লীগকে দেশের জনগণের সামনে আরও বেশি প্রশ্নবিদ্ধ করতে কিংবা রাজনীতির ইস্যু পেতে শুধু অপেক্ষাই করতে হবে বিএনপিকে। এ সকল কারণে বিএনপির সহনশীলতার রাজনীতি আওয়ামী লীগের আত্মদহনের নামান্তর হতে পারে।
বিষয়: বিবিধ
৯৯৮ বার পঠিত, ২ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
সেক্ষেত্রে আগাম নির্বাচনের জন্য আন্তজার্তিক চাপ বাড়ানো যাবে।
মন্তব্য করতে লগইন করুন