বিদেশী প্রভূদের চাপে ঘোষণা আসছে বাজেটের আগে! জানুয়ারিতে নির্বাচন

লিখেছেন লিখেছেন মাজহার১৩ ২১ মে, ২০১৪, ১১:০৫:০৩ রাত

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে চলতি বছরের আগামী বাজেটের আগেই জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সময় ঘোষণা করার জন্য চাপ দেয়া হচ্ছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, অষ্ট্রেলিয়া, জার্মান, ইউরোপীয় ইউনিয়ন, জাপান, চীন, ইংল্যান্ড এরা সবাই আগাম নির্বাচন চাইছে। আগাম নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য প্রয়োজনীয় সব ব্যবস্থা নিতেও সরকারকে চাপের মধ্যে রাখা হয়েছে। নির্বাচনের রোডম্যাপ ঘোষণার জন্য উল্লেখিত আন্তর্জাতিক গোষ্ঠী বর্তমান সরকারকে সময় বেঁধে দিয়েছে। জুনের পর থেকে তারা আর সময় দিতে চাইছে না। সেই হিসাবে তৎপরতাও চলছে।

সম্প্রতি মার্কিন রাষ্টদূত ড্যান ডাব্লিউ মজিনা দ্রুত সংলাপ ও সব দলের অংশগ্রহণে নির্বাচনের কথা বলছেন। বাণিজ্য মন্ত্রী তোফায়েল আহমেদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন। নিজেদের অবস্থান তুলে ধরেছেন। অন্য দিকে সংবাদ সম্মেলন করেও জনগণের কাছে মার্কিন সরকারের মনোভাব প্রকাশ করেছেন। এরপরের দিন বেগম খালেদা জিয়ার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন। এরপর দিনই মার্কিন সিনেটে বাংলাদেশের প্রসঙ্গ নিয়ে আলোচনা হয়েছে। তারা ধারাবাহিকভাবে এই আলোচনা করে যাচ্ছে। আর সরকারের উপর চাপ বাড়াচ্ছে।

সূত্র জানায়, আন্তর্জাতিক মহলের চাপ প্রতিনয়ত বাড়ায় আওয়ামী লীগ ভেতরে ভেতরে আগাম নির্বাচনের জ্বরে কাবু হলেও তা প্রকাশ করছে না। এই পরিস্থিতিতে দুটো ভিন্ন কৌশল নিয়েছে আওয়ামী লীগ। প্রথমতঃ ভেতরে ভেতরে কেমন করে, কিভাবে নির্বাচন হবে তার প্রস্তুতি নিবে তারা। নির্বাচনের প্রস্তুতির কথা ভাবলেও উপরে উপরে পাঁচ বছর মেয়াদ পূরণ করার কথাই বলাবেন বিভিন্ন মন্ত্রীদের দিয়ে। এর মধ্য দিয়ে সরকারের শক্ত অবস্থানের কথাই বোঝানর চেষ্টা করবেন তারা। এই কৌশলের মূল লক্ষ্যই হচ্ছে বিএনপির মনোবল ভেঙ্গে দেওয়া। বিএনপির মনোবল ভেঙ্গে দেওয়ার লক্ষ্যে কাজ করছেন প্রধানমন্ত্রী থেকে শুরু করে সরকারের মন্ত্রীরা। তারা বিএনপিকে রাজনৈতিকভাবে আরো দুর্বল করে দিতে চাইছে। যাতে করে আগাম নির্বাচন হলেও বিএনপি ক্ষমতায় আসতে না পারে। তাদের পাশে জনগণ না থাকে এবং আওয়ামী লীগই আবারও নানা কৌশল করেই সরকারে আসতে পারে। তাই আগাম নির্বাচন হোক আর না হোক আওয়ামী লীগের লক্ষ্য হচ্ছে, যেমন করেই হোক তারা ২০২১ সাল পর্যন্ত ক্ষমতায় থাকবেন। সেই হিসাবে অনেক অঙ্ক কষেই হাঁটছেন শেখ হাসিনা। একারণেই, বিদেশিদের সঙ্গেও নানান কৌশল করে নিজেদের ক্ষমতায় থাকা নিশ্চিত করতে চাইছে আওয়ামী লীগ।

প্রধানমন্ত্রীর পররাষ্ট্র বিষয়ক উপদেষ্টা নিয়মিতভাবে বিদেশী রাষ্ট্রগুলোর প্রতিনিধিদের সাথে যোগাযোগ রক্ষা করছেন। তাদের সব কথা মানার ভাব দেখিয়ে হলেও সরকারের প্রতি সমর্থন বাড়াতে চাইছেন। আগাম নির্বাচন করার জন্য বলেছেন, সেটাও মেনে নিয়েছেন। তবে কবে করবেন তা বলছেন না।

তবে সরকারকে সেই অংকের ফল এত সহজে মেলাতে দিতে রাজি না আন্তর্জাতিক মহল। এই অবস্থায় তারা ভেতরে ভেতরে সরকারের বিরুদ্ধে কাজ করে যাচ্ছে। সরকারকে দিয়ে কেমন করে নির্বাচন আবারও দেয়ান যায় সেই পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করার লক্ষ্যে কাজ করছেন তারা।

কূটনীতিক ও আওয়ামী লীগের এমন পাল্টাপাল্টি অবস্থানকে কাজে লাগাতে পারছে না বিএনপি। শেখ হাসিনা ২০০৯ সাল থেকে ২০১৪ সালের গোড়া পর্যন্ত বিএনপিকে নিয়ে যা করতে চেয়েছেন বা চাইবেন তার সব হয়েছে। যা করতে চেয়েছেন তাই করতে পেরেছেন। বিএনপি যা চেয়েছে তার কিছুই দিবেন না ঠিক করেছিলেন সেটাতে পেরেছেন। গত ছয় বছরে শেখ হাসিনা একের পর এক বিজয়ের হাসি হাসছেন। বেগম খালেদা জিয়াকে বার বার সাময়িক পরাজয় মেনে নিতে হয়েছে। তিনি রাজনৈতিক চালে ভুল করেছেন বলেও মনে করা হচ্ছে।

৫ই জানুয়ারি জনগণ ভোট দেয়নি। খালেদা জিয়া এটাকে তাদের বিজয় মনে করছেন। এতদসত্ত্বেও প্রথম সারির নেতাদের ওপর ভরসা করতে পারছেন না তিনি। বিভিন্ন নেতার ব্যাপারে তার মনে সন্দেহ দানা বেঁধেছে। তারা সফল হতে পারেননি কোন আন্দোলন করে। খালেদা জিয়ার ঘনিষ্ট একটি সূত্র জানায়, বিএনপির কাউন্সিল হবে। এই জন্য প্রস্তুতিও নেয়া হচ্ছে। আর কাউন্সিল করে নতুন নতুন ও সাহসী নেতাদের এবং বিশেষ করে গত এক বছরে যারা বিভিন্ন এলাকাতে আন্দোলন করে সফল হয়েছেন ওই সব নেতাদেরকে আগামী দিনের জন্য দায়িত্ব দিতে হবে। আর তা না হলে হবে না।

আগামী দিনে বিএনপিকে নতুন করে আন্দোলন করতে হবে। সরকার আগাম নির্বাচন দিতে চাইছে। আন্তর্জাতিক প্রভাবশালী শক্তিগুলো যখন আওয়ামী লীগের সঙ্গে কথা বলছে তখন তারা তাদেরকে এটাই বলেই আশ্বস্ত করছেন যে, তারা নির্বাচন দিতে চান। বিএনপিকে শর্ত মেনেই আলোচনায় আসতে হবে। তারাও চিন্তা করছে যে, সরকারি দল যা বলছে তাতে যুক্তি আছে। এই কারণে তারাও জামায়াতকে ছাড়ার কথা বলছে বিএনপিকে। কিন্তু বিএনপি চেয়ারপারসন তাদেরকে ছাড়তে রাজি নয়। এই কারণে সরকারের সঙ্গে আলোচনায় বসার জন্য যে উদ্যোগ নেয়া দরকার তা নিতে পারছেন না। সরকারও এমন এক কৌশল করে দিয়েছে যে যাতে করে সংলাপ দ্রুত করতে না হয়। আওয়ামী লীগ এক্ষেত্রে ডাবল রোল প্লে করছে। বিএনপি সেটা বুঝলেও তারা কোন ড্রাবল রোল প্লে করতে পারছে না। কেবল সরকারের সঙ্গে আলোচনা করার আগ্রহ প্রকাশ করছে। কিন্তু সরকারকে তাদের সঙ্গে সংলাপে ও আলোচনায় বসার জন্য কোন ধরনের চাপ তৈরি করতে পারছেন না। সরকার তাদেরকে আন্দোলন করতে দিবে না সিদ্ধান্ত নিয়েছে। সরকার এতে সফলও হচ্ছে। বিদেশিদের চাপ অনুযায়ী সরকার কারাগারে আটক নেতাদের ছেড়ে দিতে বাধ্য হচ্ছে। আওয়ামী লীগ প্রভাবশালী আন্তর্জাতিক শক্তিকে দেখাতে চাইছে যে, ক্ষমতাসীন দল তাদের কথা মেনে বিএনপির নেতাদেরকে ছেড়ে দেয়ার জন্য সব ব্যবস্থা করেছে। এটাও তাদের একটি কৌশল।

এদিকে সরকারের একজন প্রতিমন্ত্রী বলেন, বিএনপি আন্দোলন করুক, মিছিল মিটিং করুক। কিন্তু তাদেরকে কোন ভাবেই সফল হতে দেয়া যাবে না যাতে তারা সরকারকে হটানর জন্য আন্দোলন করে দেশের পরিস্থিতি অশান্ত করবে। এটা কোন ভাবেই আমরা মানবো না। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে কাজে লাগানো ছাড়াও আমরা তাদের সংখ্যা আরো বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছি। সরকার একদিকে বিএনপির সঙ্গে আলোচনার কথা বলছে অন্য দিকে আবার নতুন করে বিএনপির সব ধরনের আন্দোলন ঠেকানোর জন্য প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছে। এই অবস্থায় বিএনপিকে একটি বড় সমাবেশ করতে দিলেও এখন আর সেইভাবে সমাবেশ করার জন্যও সুযোগ দিতে চাইছে না। সব মিলিয়ে বিএনপি কোণঠাসা অবস্থায় রয়েছে। সরকার তাই যাতে করে বিএনপি জনগণকে পাশে টানতে না পারে সেই অবস্থায় রেখেই বিএনপি সঙ্গে আলোচনা করে একটি সমঝোতার নির্বাচন দিতে চাইছেন। সমঝোতাটাও করবে সরকার এমনভাবে যাতে করে বিএনপি মানলে মানতে পারে আর না মানলেও বিএনপিরই ক্ষতি, তাতে সরকারের কোন ক্ষতি নেই। এই রকম একটি পরিকল্পনা চলছে।

সূত্র জানায়, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, অষ্ট্রেলিয়া, জার্মান, ইউরোপীয় ইউনিয়ন, জাপান, চীন, ইংল্যান্ড এরা সবাই আগাম নির্বাচন চাইছে। এর আগে তারা সব দলের অংশহগ্রহণে একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচন চেয়েছে। আর এই নির্বাচন চাইলেও সরকার তা করেনি। এমনকি জাতিসংঘের সহকারি সেক্রেটারি জেনারেল অস্কার ফার্নান্দেজ তারানকো বাংলাদেশে এসে দুই দলকে রাজনৈতিক আলোচনার টেবিলে বসালেও শেষ পর্যন্ত্ সাফল্য আসেনি। তারানাকো চলে যাওযার পর তারা একটি বৈঠকে বসে সফল আলোচনা করবে এমন প্রত্যাশা করলেও তা হয়নি। সরকার নিয়ম রক্ষার নির্বাচনের কথা বলে ক্ষমতাসীন হয়ে একেবারেই ক্ষমতায় বসে গেছেন। এখন আর সমঝোতা করার কোন ইচ্ছে নেই। তবে বিদেশিদের কাছে এটাই বোঝানার চেষ্টা করেছেন তারা নির্বাচন না করলে সমস্যা হতো। আর সেই সঙ্গে এটাও গণতন্ত্রের জন্যও সমস্যা হতো। এই ব্যাপারে আন্তর্জাতিক শক্তিগুলো কোন ছাড় দিতে রাজি নয় তাদের কথা একটাই নির্বাচন হতেই হবে। এর কোন বিকল্প নেই। বাংলাদেশে তারা এক দলীয় নয় কিংবা সরকারের ইচ্ছে মাফিক বিরোধী দল নয় তারা শক্তিশালী ও বড় সকল রাজনৈতিক দলের অংশগ্রহণে নির্বাচন দেখতে চাইছে। সেটাই যাতে করে সেই ব্যাপারে কাজ করছে। এখন তারা প্রকাশ্যে ততোটা তা না করলেও ভেতরে ভেতরে বিভিন্নভাবে সরকারের উপর চাপ তৈরির চেষ্টা করছে। সরকারের সঙ্গে তাদের আলোচনাও হয়েছে। এই আলোচনার প্রেক্ষিতে তারা বলেছে এপ্রিল পর্যন্ত সময় দিতে। এপ্রিলে সরকার ঘোষণা করবে কবে তারা নির্বাচন করবে। সেই নির্বাচন এই বছরের ডিসেম্বরের মধ্যে হবে এমন কথাও তাদেরকে জানানো হয়েছে। তবে এই কথায় বিদেশিরা এখন একটু শান্ত থাকলেও ও দৌঁড়ঝাপ কম করলেও তারা পুরো বিষয়টি মনিটরিং করছে। কখন কি করতে হবে সেটাও ঠিক করছে। সেই হিসাবে সরকার ভীষণ চাপের মধ্যে রয়েছে। আগাম নির্বাচন না করলে কি হবে সেই ব্যাপারেও সরকারকে সতর্ক করে দিয়েছে ওই সব শক্তিগুলো। ফলে ভেতরে অনেক টানা পোড়েন চললেও এটা প্রকাশ করা হচ্ছে না সরকারের তরফ থেকে। সরকার শক্ত অবস্থানই রাখতে চাইছে। সেই ভাবে কাজ করছে।

এদিকে এখন সরকারের উপর চাপ সৃষ্টি করা বিএনপির একটি বড় কাজ। সরকারের একজন মন্ত্রী বলেন, বিদেশিরা যতই সরকারকে চাপে রাখুক বিএনপি সেই ধরনের চাপ তৈরি করতে না পারলে সরকারতো আগাম নির্বাচনের দিকে যাবে না। এখন বিএনপি কতখানি সরকারের উপর চাপ তৈরি করতে পারে এবং তা করার জন্য কি করতে পারে সেই জন্য চেষ্টা করে যাচ্ছে। সেটাই দেখার বিষয়।

বিষয়: বিবিধ

১৭৯১ বার পঠিত, ৭ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

224414
২১ মে ২০১৪ রাত ১১:১৪
নোমান২৯ লিখেছেন : আসমুদ্র হিমাচল .।.।.।.।.।.।.।.।.।.।.।.।
২১ মে ২০১৪ রাত ১১:২২
171610
মাজহার১৩ লিখেছেন : Waiting Waiting
২১ মে ২০১৪ রাত ১১:৩০
171612
নোমান২৯ লিখেছেন : মিছা কৈলাম ?ভাইয়া ।
২১ মে ২০১৪ রাত ১১:৩৮
171615
মাজহার১৩ লিখেছেন : বাতাসে ভাসছে।
224416
২১ মে ২০১৪ রাত ১১:২৫
হারিয়ে যাবো তোমার মাঝে লিখেছেন : বিদেশীরাই এখন ভরসা। আমাদের কোমরভাঙা বিরোধী দল দিয়ে তো আর কাজ হবে না।
২১ মে ২০১৪ রাত ১১:৩৫
171613
মাজহার১৩ লিখেছেন : কোন বিরোধীদলের কথা বলছেন? গৃহপালিত না ---
আওয়ামী লীগের কোর্টে বল দিতে চাইলে স্বল্প সময়ের জন্য হলেও জামায়াতের সাথে সম্পর্ক করা উচিত এবং আন্তজার্তিক চাপ বাড়ানো সম্ভব।
কারন শত্রুর শত্রু বন্ধু।
যেমন জামায়াত জোটে থাকলে মোদী অবশ্যই বি-এনপির তুলনায় আওয়ামী লীগকে পছন্দ করবে।
আর জামায়াত জোট থেকে বের হলে আওয়ামী লিগও আস্বস্থ হবে যে তারা ক্ষমতায় যেতে না পারলেও বিরোধী দলের মর্যাদা পাবে।
224438
২২ মে ২০১৪ রাত ১২:২০
মাজহার১৩ লিখেছেন : Related Link
Click this link

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File