তারেক রহমান মুক্তিযুদ্ধে শেখ মুজিব ও আওয়ামী লীগের ভুমিকা নিয়ে যা বলছে এর বিরুদ্ধে কারো যুক্তি থাকলে মন্তব্য লিখুন
লিখেছেন লিখেছেন মাজহার১৩ ০৯ এপ্রিল, ২০১৪, ০৭:০২:১৭ সন্ধ্যা
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের তীব্র সমালোচনা করে বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমান বলেছেন, শেখ মুজিব বাংলাদেশের প্রথম ‘অবৈধ প্রধানমন্ত্রী’। তিনি বাংলাদেশের স্বাধীনতা চাননি, তিনি চেয়েছিলেন স্বায়ত্বশাসন।
মঙ্গলবার ওয়েস্ট মিন্সটারের সেন্ট্রাল হলে আয়োজিত সুধী সমাবেশে তিনি এসব কথা বলেন।
যুক্তরাজ্যে স্বেচ্ছ নির্বাসনে থাকা তারেক রহমান বলেন, ‘বাংলাদেশের প্রথম অবৈধ প্রধানমন্ত্রী ছিলেন শেখ মুজিবুর রহমান। কারণ তিনি ১৯৭১ সালের ১০ এপ্রিল গৃহীত স্বাধীনতার ঘোষণাপত্র উপেক্ষা করে প্রধানমন্ত্রী হয়েছিলেন।’
তারেক রহমান ঘোষণাপত্রের একটি বক্তব্য তুলে ধরেন সেখানে লেখা রয়েছে, ‘এতদ্বারা দৃঢ়ভাবে ঘোষণা ও সিদ্ধান্ত গ্রহণ করিতেছি যে, সংবিধান প্রণীত না হওয়া পর্যন্ত শেখ মুজিবুর রহমান প্রজাতন্ত্রের রাষ্ট্রপতি থাকিবেন এবং সৈয়দ নজরুল ইসলাম প্রজাতন্ত্রের উপ-রাষ্ট্রপতি থাকিবেন।’
তারেক রহমান বলেন, ‘কিন্তু ৭২ সালের ১০ জানুয়ারি স্বাধীন বাংলাদেশে ফিরে শেখ মুজিব ১২ জানুয়ারি কিভাবে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শপথ নিলেন? তখনও তো সংবিধান প্রণীত হয়নি।’
বঙ্গবন্ধুর প্রথম প্রধানমন্ত্রীত্বের বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন তুলে বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমান প্রশ্ন রাখেন, ‘বঙ্গবন্ধু যদি প্রথম রাষ্ট্রপতি হন তাহলে দেশ স্বাধীন হওয়ার পর তিনি কেন আবার প্রধানমন্ত্রী হলেন?’
তিনি বলেন, ‘অপ্রিয় হলেও সঠিক ইতিহাসের স্বার্থেই ইতিহাসের কঠিন সত্যগুলো বলা প্রয়োজন।’
তারেক রহমান বলেন, ‘শেখ মুজিব যেভাবে অবৈধভাবে ক্ষমতা দখল করেন, একইভাবে তার মেয়েও বর্তমানে অবৈধভাবে ক্ষমতা আঁকড়ে আছেন।’
তারেক রহমান ২০১০ সালের অক্টোবর মাসে ‘সাপ্তাহিক’ পত্রিকায় প্রকাশিত ড. কামাল হোসেনের একটি সাক্ষাৎকারের উদ্বৃতি দিয়ে বলেন, ‘শেখ মুজিব মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে অর্জিত স্বাধীন বাংলাদেশে ফিরেছিলেন পাকিস্তানি পাসপোর্ট নিয়ে। পাকিস্তানি পাসপোর্ট নিয়ে দেশে ফিরে হয়ে গেলেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ ও স্বাধীনতার প্রতি শ্রদ্ধা দেখিয়ে তিনি জাতিসংঘের ট্রাভেল ডকুমেন্ট নিয়ে ফিরতে পারতেন। কিন্তু তিনি সেটিও করেননি।’
অনুষ্ঠানে তারেক রহমান ২৫ মার্চ বাংলাদেশের ৩৪তম স্বাধীনতা দিবসে আয়োজিত অনুষ্ঠানের নিজের বক্তব্যের উদ্বৃতি দিয়ে বলেন, ‘ওই অনুষ্ঠানে ইতিহাসের আলোকে তথ্য-প্রমাণের ভিত্তিতে বলা হয়েছিল জিয়াউর রহমানই বাংলাদেশের প্রথম রাষ্ট্রপতি এবং স্বাধীনতার ঘোষক। কিন্তু এ বক্তব্যের পর আওয়ামী লীগের কোনো নেতাই কোনো যৌক্তিক ব্যাখ্যা না দিয়ে অশ্লীল কথা বলেছেন।’
তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশের স্বাধীনতার ঘোষক জিয়াউর রহমানকে ছোট করতে গিয়ে শেখ হাসিনা বলেছেন, ৪০০ টাকার মেজর। এ ধরণের মন্তব্য করে শেখ হাসিনা বরং মুক্তিযোদ্ধা ও মুক্তিযুদ্ধকেই অপমান করেছেন। কারণ এই ৪০০ টাকার মেজর, ২০০ টাকার ক্যাপ্টেন, ১০০ টাকার সিপাহী, ৫০ টাকার কৃষক কিংবা লুঙ্গি পরা গামছা পরা স্বাধীনতাকামী মানুষগুলোই কখনো একবেলা অথবা আধাবেলা খেয়ে না খেয়ে মুক্তিযুদ্ধ করেছিলেন। আওয়ামী লীগ নেতাদের মতো নিরাপদে কলকাতা পাড়ি জমালে মুক্তিযুদ্ধ হতো না।’
তারেক রহমান বলেন, ‘ইতিহাস হলো, ৪০০ টাকার মেজররাই মুক্তিযুদ্ধ করেছিলেন। কিন্তু যাদের কাছে মানুষ আশা করেছিল তারা মুক্তিকামী মানুষকে নেতৃত্ব দিবেন, তারা ব্যর্থ হয়েছিলেন।’
তিনি বলেন, ‘শেখ মুজিব বাংলাদেশের স্বাধীনতা চাননি, তিনি চেয়েছিলেন স্বায়ত্বশাসন।’
তারেক রহমান অনুষ্ঠানে মাল্টিমিডিয়ার মাধ্যমে বিদেশি একটি সংবাদ সংস্থায় প্রচারিত শেখ মুজিবুর রহমানের একটি সাক্ষাৎকারের ভিডিও ক্লিপিংস দেখান। ওই সাক্ষাৎকারে শেখ মুজিব বিদেশী এক সাংবাদিকের প্রশ্নের জবাবে বলেন, ‘স্বাধীনতা? নো নো আই ডোন্ট মিন দ্যাট, আই ওয়ান্ট অটোনমি।’
তারেক রহমান বলেন, বর্তমান অবৈধ সরকারের অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবুল মুহিত কয়েকদিন আগে বলেছেন, কারো ঘোষণায় স্বাধীনতা আসেনি। অথচ এই আবুল মাল তার ‘বাংলাদেশ: ইমার্জেন্স অব এ নেশন’ বইয়ে লিখেছেন, জিয়াউর রহমানই প্রথম স্বাধীনতার ঘোষণা দেন।’
অনুষ্ঠানে তারেক রহমান মুক্তিযুদ্ধের সেক্টর কমান্ডার কে এম সফিউল্লাহ, বাংলা নামের দেশ পুস্তকের রেকর্ড, ভারতের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের রেকর্ড, ভারত রক্ষক সাইটের রেকর্ড দেখান যেখানে জিয়াউর রহমানকেই স্বাধীনতার ঘোষক ও রাষ্ট্রপ্রধান বলে উল্লেখ করা হয়েছে।
জিয়াউর রহমানই যে প্রথম প্রেসিডেন্ট ছিলেন এর স্বপক্ষে দেশি বিদেশি ঐতিহাসিক, রাজনীতিবিদ ও লেখকদের বিভিন্ন প্রামাণ্য দলিল সমাবেশে উপস্থাপন করেন।
‘মুক্তিযুদ্ধের পূর্বাপর’ নামে একটি বই থেকে তাজউদ্দিন আহমদের বক্তব্য উদ্বৃত করে তারেক বলেন, ‘২৫ মার্চ রাতে তাজউদ্দিন আহমদ শেখ মুজিবকে স্বাধীনতা ঘোষণার অনুরোধ জানালে শেখ মুজিব স্বাধীনতার ঘোষণা দিতে অস্বীকৃতি জানান। শেখ মুজিব তাজউদ্দিনকে সাফ জানিয়ে দেন, স্বাধীনতার ঘোষণা দিলে তার বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহ মামলা হতে পারে।’
তারেক রহমান বলেন, ‘আওয়ামী লীগের ওয়েবসাইটে উল্লেখ রয়েছে, ’৭১ এর ১০ এপ্রিল থেকে শেখ মুজিব বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি। তাহলে, ২৬ মার্চ থেকে এই পর্যন্ত বাংলাদেশ এবং মুক্তিযুদ্ধ কি নেতৃত্বশূন্য ছিল?’
তারেক বলেন, ‘আওয়ামী লীগ কথায় কথায় রাজাকারদের মন্ত্রী বানানোর জন্য বিএনপির উপর দোষ চাপায়। অথচ বাস্তবতা হলো, বাংলাদেশে তালিকাভুক্ত রাজাকারদের প্রথম মন্ত্রী বানায় শেখ হাসিনা। শেখ হাসিনা তার পিতার আমলের তালিকাভুক্ত রাজাকার মাওলানা নুরুল ইসলামকে মন্ত্রী বানিয়ে তার গাড়িতে প্রথম জাতীয় পতাকা তোলার সুযোগ করে দেন।’
যুক্তরাজ্য বিএনপি আয়োজিত এই সুধী সামবেশে সভাপতিত্ব করেন সংগঠনের সভাপতি শায়েস্তা চৌধুরী কুদ্দুস। সভায় আরো বক্তৃতা করেন বর্তমানে যুক্তরাজ্য প্রবাসী, কার্ডিফ বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক অধ্যাপক ডক্টর এম এ মালিক, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক অধ্যাপক ডক্টর হাসনাত করিম, ড. ফিরোজ মাহমুদ ইকবাল, টাওয়ার হ্যামলেটসের ডেপুটি মেয়র অহিদ আহমদ, বিশিষ্ট সাংবাদিক এ কে এম আবু তাহের চৌধুরী, শিক্ষক ও গবেষক আতিয়ার রহমান, যুক্তরাজ্য স্থানীয় সরকারের সাবেক কর্মকর্তা লুৎফুর রহমান আলী, মাওলানা শামসুল হক চৌধুরী, আগামী জাতীয় নির্বাচনে হাউজ অব কমন্সে লেবার পার্টি মনোনীত প্রার্থী ব্যারিস্টার আনোয়ার বাবুল মিয়া, বৃটিশ বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্সের সাবেক সভাপতি মুকিম আহমেদ, যুক্তরাজ্যের ক্ষমতাসীন কনজারভেটিভ দলের নেতা শাহগীর বখত ফারুক, চার্টার্ড অ্যাকাউট্যান্ট মুসাব্বির হোসাইন, কাউন্সিলার আয়েশা চৌধুরী প্রমুখ। অনুষ্ঠান পরিচালনা করেন, যুক্তরাজ্য বিএনপির সাধারণ সম্পাদক কয়সর এম আহমেদ।
অনুষ্ঠানে অধ্যাপক এম এ মালিক বলেন, ‘৭১ সালের ২৫ মার্চ যেদিন শেখ মুজিব আত্মসমর্পন করলেন সেদিনই মুজিবের রাজনৈতিক মৃত্যু হয়েছে। মুজিব সেদিন আত্মসমর্পন না করে যুদ্ধের নেতৃত্ব গ্রহণ করলে অমর হয়ে থাকতে পারতেন।’
ড. হাসনাত বলেন, ‘আওয়ামী লীগ কথায় কথায় মুক্তিযুদ্ধের চেতনার কথা বলে। অথচ মুক্তিযুদ্ধের মূল চেতনা হলো গণতন্ত্র ও মানুষের স্বাধীনতা। অথচ এর কোনোটিই এখন বাংলাদেশে নেই।’
বিষয়: বিবিধ
১৩১২ বার পঠিত, ১৬ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
আর হুজুগে মাতায় অভ্যস্ত আবেগপ্রবণ বাঙালী জাতিকে এজন্য দোষ দিয়ে-ই বা কি করবো? মুজিববাদীরা তো ঐ সময় শ্লোগান তুলেছিলো - “এক নেতা এক দেশ, বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশ।” মুজিবের কথা-ই তখন ছিলো আইন... সুতরাং মুজিব আইন সম্মতভাবে সব কিছু করছিলেন কিনা তা খতিয়ে দেখার কোনো ফুসরত-ই ছিলো না কোনো মানুষের-ই ঐ সময়ে... কেউ ঐ সময় তার বিরুদ্ধে কিছু বললে তার মনে হয় দালাল বা রাজাকার উপাধী পাওয়া ছাড়া গত্যন্তর ছিলো না...তাছাড়া, পিঠের চামড়া খুলে ডুগডুগি বানানোর সম্ভাবনা তো থাকতো-ই।
এই কথাগুলি তারেখ সাহেব আরও আগে বল্লে ভাল হতো।
ধন্যবাদ
মন্তব্য করতে লগইন করুন