আমরা কি ভারতের ঋন শোধ করতে পেরেছি? আদৌ কি পারব? গত ৪২ বছরের দেনা পাওনার একটি সংক্ষিপ্ত লিস্ট পর্যালোচনা করা যেতে পারে।
লিখেছেন লিখেছেন মাজহার১৩ ১৫ মার্চ, ২০১৪, ০৭:১০:৩০ সন্ধ্যা
ভারতীয় দালালেরাও খুব খুশি হবে কেননা আস্তে আস্তে টুকরো টুকরো করে বাংলাদেশ ভূখ-টি ভারতের কাছে বিক্রি হয়ে যাচ্ছে। এভাবে একটু একটু করে একাত্তরের দেনা পরিশোধ হচ্ছে! কেন যে অন্যের সাহায্য নিয়ে স্বাধীন হতে গিয়েছিলাম? সিঙ্গপুর তো মালয়েশিয়া থেকে পৃথক ও স্বাধীনতা লাভ করেছিল কোন রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ কিংবা ভারতের মত তাদের কোন প্রতিবেশি রাষ্ট্রের সাহায্য ছাড়াই।
ভারত আজ নিলো তো দু’টো তেল ক্ষেত্র, তো কাল নিয়ে যাবে সোনাদিয়া দ্বীপ। ভারত আশুগঞ্জ পোর্ট এখন দিব্যি ব্যবহার করে চলছে; মংলা পোর্ট চাইলে এখনই ব্যবহার করতে পারে; চট্টগ্রাম পোর্ট নিয়ে নেবে সে ঘোষণা দিয়েই রেখেছে; নারায়নগঞ্জে নিজেরাই পোর্ট বানানোর জন্য টেন্ডার করেছে ওরা।
খাল-নদী-জমি ভরাট করে বিদ্যুত কেন্দ্রের মালামাল নিয়ে গেলো সড়ক পথে। এরপরে নিবে পশ্চিম থেকে পূর্ব দিকে একটা করিডোর- পারাপার করবে অস্ত্র ও সৈন্য। বহু আগেই ভারত ওদের পতাকা উড়িয়েছে তালপট্টিতে, যার জন্য জীবন দিতে হল শহীদ জিয়ার মত দেশপ্রেমিক একজন রাষ্ট্রপতিকে। চুয়াত্তরে বেরুবাড়ি নিয়ে নিলেও বাংলাদেশকে চুক্তি মোতাবেক ফেরত দেয় নি দহগ্রাম-আঙ্গরপোতা। দু’বছর আগে সীমান্তে জমি বিনিময় চুক্তিতে আড়াই গুণ নিয়ে গেল। সমুদ্র জয়ের প্রতারণামূলক প্রপাগাণ্ডা চালিয়ে দেশের পূবে ইতোমধ্যে আমরা হারিয়েছি কয়েকটি ব্লক, সামনে পশ্চিমে হারানোর পরেও হবে সমুদ্র উৎসব।
বাংলাদেশ সরকার একদিকে সমুদ্র জয়ের প্রতারণামূলক উৎসব করে সরল জনগণকে ধোঁকা দিচ্ছে। অথচ ভারতীয় পানি আগ্রাসনের বিরুদ্ধে এ সরকার কোন পদক্ষেপ তো নিচ্ছেই না, উল্টো সরকারের মন্ত্রী ও উপদেস্টাদের কথা শোনে অনেক সময়ই বুঝা যায় নি যে, তারা আসলে বাংলাদেশের নাকি ভারতের মন্ত্রী বা উপদেষ্টা! এই যেমন তিস্তা পানিবণ্টন চুক্তি একটি কঠিন ইস্যু বলে মন্তব্য করেছেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিং। বিমসটেক সম্মেলন চলাকালে এক বৈঠকে তিনি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে একথা বলেন। এ খবর দিয়েছে দ্য ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস। ভারতীয় পররাষ্ট্র কার্যালয়ের মুখপাত্র সৈয়দ আকবরউদ্দিন সাংবাদিকদের বলেন, বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তিস্তা পানিবণ্টন চুক্তির বিষয়টি উত্থাপন করেন। জবাবে মনমোহন সিং বলেছেন, ইস্যুটি কঠিন, শেখ হাসিনা এরপর আর কিছুই বলে নি।
এ ছাড়া আন্তঃ সংযোগ নদীগুলো নিয়ে বাংলাদেশের সাথে ভারত প্রতিনিয়ত ছক্কা পাঞ্জা খেলেই চলছে। দিনাজপুরের ক্ষরস্রোতা ছোট-বড় অনেক নদী এখন শুধুই বালুচর। কোথাও হচ্ছে ফসলের আবাদ। কোথাও বা খেলার মাঠ। বিলীন হতে চলেছে নদীগুলোর অস্তিত্ব। হাজার কোটি টাকার সেতু ঠায় দাঁড়িয়ে থাকলেও নিচ দিয়ে দিব্বি হেঁটেই পার হচ্ছে মানুষ, গরু-ছাগল। ভারত তার উপর দিয়ে বয়ে যাওয়া ব্রহ্মপুত্র নদের পানি রিসাইক্লিং করার নামে বাংলাদেশের বেশ কিছু অঞ্চলের অস্তিত্ব হুমকির মুখে ফেলতে মহাপরিকল্পনা নিয়েছে বলে ৬ মার্চে একটি দৈনিকে খবর এসেছে। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ভারতের অব্যাহত পানি আগ্রাসনে মরতে বসেছে ফেনী নদীও। তাদের একতরফা পানি প্রত্যাহারের বিরূপ প্রভাব পড়ছে বাংলাদেশে।
সম্প্রতি এ সংক্রান্ত যে সংবাদ এসেছে গণমাধ্যমে, তা জীববৈচিত্র ও ভূ-প্রাকৃতিক দৃষ্টিকোণ থেকে অত্যন্ত ভাবনার কারণ। জানা যায়, ভারত ফেনী নদীতে বাঁধ দিয়ে পানি আটকানোর জন্য সীমান্তে ব্লক তৈরি করছে। তাদের অতিরিক্ত পানি উত্তোলনের ফলে নদী শুকিয়ে চর জেগে উঠছে। এদিকে ভারতীয় সীমান্ত বাহিনী বিএসএফের বাধায় বাংলাদেশ ছুঁতে পারছে না নদীর পানি। এ যেন নিজ দেশে পরবাসী।
ভারতের বিরুদ্ধে বারবারই পানি আগ্রাসন জোরদার করার অভিযোগ উঠেছে। সম্প্রতি ঢাকায় প্রকাশিত একটি রিপোর্টে বলা হয়েছে, ভারত ৩৫টি নদ-নদীর পানি প্রবাহের দিক পরিবর্তন করে বাংলাদেশকে আরও গভীর সঙ্কটের মুখে ঠেলে দেয়ার পদক্ষেপ নিয়েছে। এ উদ্দেশ্যে দেশটি নতুন কিছু বাঁধ যেমন নির্মাণ করেছে তেমনি সংস্কার করেছে পুরনো কয়েকটি বাঁধেরও। সর্বশেষ এ খবরের পরিপ্রেক্ষিতেই নতুন পর্যায়ে প্রাধান্যে এসেছে তিস্তার পানিতে বাংলাদেশের অধিকার প্রসঙ্গ। এরই মধ্যে প্রমাণিত হয়েছে, তিস্তাচুক্তিসহ নানা কথার মারপ্যাঁচে জনগণকে বিভ্রান্ত করা হলেও আওয়ামী লীগ সরকার সব সময় ভারতের স্বার্থে ভূমিকা পালন করে এসেছে।
ইতোমধ্যে আবারো আলোচনার কেন্দ্রে এসেছে ভারতের বহুল আলোচিত আন্তঃনদী সংযোগ প্রকল্প। ভারত এ আন্তঃ নদী সংযোগ প্রকল্প বাস্তবায়নের কাজ ইতোমধ্যে এগিয়ে নিয়ে চলেছে। এ কার্যক্রমের আওতায় গঙ্গা-ব্রহ্মপুত্র-মেঘনা বেসিনের ৩৭টি নদীর মধ্যে সংযোগ স্থাপন করে এ সব নদীর পানি ব্যাপক হারে প্রত্যাহার করে নেবে। এরফলে ভাটির দেশ বাংলাদেশের অধিকাংশ নদী পানিশূন্য হয়ে পড়বে। বাংলাদেশের একাধিক পরিবেশ বিষয়ক সংগঠন এ নিয়ে উদ্বেগ জানালেও ভারতীয় এ তাবেদার সরকারের পক্ষ থেকে আনুষ্ঠানিক কোন প্রতিক্রিয়া এখনও প্রকাশিত হয় নি।
দেশের বিশিষ্ট পানি বিশেষজ্ঞ ড. আইনুন নিশাত জানান, গজলডোবা বাঁধের মাধ্যমে ভারত পানি প্রত্যাহার করে নিচ্ছে এটাই বাস্তবতা। তার চেয়েও বড় কথা; তিস্তার পানি নিয়ে এখন পর্যন্ত ভারত কোন চুক্তিতে উপনীত হয় নি। বরং এ শুষ্ক মৌসুমে তিস্তার সবটুকু পানিই ভারত প্রত্যাহার করে নিয়েছে। যেটুকু পানি তিস্তায় পাওয়া যাচ্ছে; তা গজলডোবা ব্যারেজ থেকে তিস্তা ব্যারেজের মাঝে যে অন্তর্বর্তী অবস্থান (শত কিলোমিটার) সেখানে উৎপন্ন পানি। তিনি বলেন, এ একতরফা পানি প্রত্যাহারের মধ্য দিয়ে ভারত আন্তর্জাতিক আইনের লঙ্ঘন করছে। এ ব্যাপারে সরকারকে আরও সোচ্চার হতে হবে।
অন্যদিকে, বাংলাদেশকে বাদ দিয়ে মিয়ানমারের সঙ্গে নতুন ট্রানশিপমেন্ট সম্পর্ক তৈরি করতে যাচ্ছে ভারত। উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্যগুলোতে যোগাযোগ স্থাপন করতেই এ প্রকল্প হাতে নিয়েছে দেশটি। কালাদান নামক এ প্রকল্প বাস্তবায়ন হলে সেভেন সিস্টার্স হিসেবে পরিচিত সাত রাজ্যে বাংলাদেশ বাণিজ্য হারাবে। বাজার চলে যাবে মিয়ানমার ও থাইল্যান্ডের কাছে। ভারত ও মিয়ানমারের মধ্যে এ ট্রানজিট প্রক্রিয়া নিয়ে উৎকণ্ঠা প্রকাশ করে বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদের কাছে দীর্ঘ চিঠি লিখেছেন দিল্লিতে বাংলাদেশের হাইকমিশনার তারিক এ করিম।
ভারতের সম্প্রসারণ নীতি বাস্তবায়নে বাধা সৃষ্টিকারী বিডিআর ২০০৯ সালের ২৫-২৬ ফেব্রুয়ারিতে মোটামুটি ধ্বংস করা হয়েছে। পরবর্তীতেও নানান অজুহাতে আর্মিও দেশপ্রেমিক অংশটাকে নিঃশেষ করে দিতে সবকিছুই ভাড়াটিয়া এ সরকার দিয়ে করায়ে নিয়েছে ভারত। আনিসুজ্জামানের নেতৃত্বে বিডিআর হত্যাকাণ্ডে গঠিত তদন্ত কমিটির প্রতিবেদেনে প্রমাণ হয়েছে যে, বিডিআর হত্যাকাণ্ডে আওয়ামি লিগ প্রত্যক্ষ ভাবে জড়িত।
বাংলাদেশের সীমান্ত এখন ভারতের জন্য নিতান্তই রক্ষিত এবং যখন ইচ্ছে হয় সীমান্তবর্তী বাংলাদেশের সাধারণ মানুষ থেকে শুরু করে এমন কি নিজেদের তৈরি বিজিবি সদস্যদেরও মাঝে মাঝে বাংলাদেশের অভ্যন্তর থেকে ধরে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে এবং বিএসএফ এর মন চাইলে মেরে লাশ করা হচ্ছে। ভারতীয় বিএস্এফ এর ফর্মূলায় গড়া বিজিবি প্রতিবাদ করে পতাকা বৈঠক করে কোন রকমে সে হতভাগ্য বাংলাদেশির লাশটাও যদি ফেরত পায়, সে নিয়ে পত্রিকায় হলুদ সাংবাদিকদের ডেকে নিউজ করায়। সেও তো সৌভাগ্য যে, দাদাবাবুরা মেরে লাশ করেছে বটে, অন্ততঃ লাশটি তো ফেরত দিয়েছে। গুমতো করে ফেলে নি। তাছাড়া নিজের দেশে নিজেদের দেশের আইন শৃঙ্খলা রক্ষাবাহিনীর নামে পেটোয়া বাহিনী তো আরও বেয়াড়া স্বয়ং তার নাগরিকদের সাথেই। সাতক্ষীরায় বন্ধু দেশ থেকে বিএসএফ সদস্যদের এনে পর্যন্ত নিজ দেশের মানুষের উপর হত্যাযজ্ঞ চালিয়েছে। রাজশাহীতেসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলেও। এখন সরকারের আজ্ঞাবহ পুলিশ, বিজিবি এবং তাদের সাথে আওয়ামী সন্ত্রাসীদের দিয়েও যখন সরকারের দমন নিপীড়ন ও গণ স্বার্থ পরিপন্থী কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে সারাদেশে ফুঁসে উঠা জনরোষকে মোকাবেলা করতে পারে না, তখন বন্ধু দেশের সাহায্য নিয়ে নিজ দেশের জনগণকে কতল করা হচ্ছে, নির্যাতন করা হচ্ছে, মা বোনদের ওপর নারকীয় অত্যাচার চালানো হচ্ছে। সে ক্ষেত্রে ভারতীয় বাহিনী যদি প্রতিদিন দু‘একজন বাংলাদেশিকে বাংলাদেশ এর ভূখন্ড থেকে ধরে নিয়ে যায় এর্বং লাশ করে ফেলে সে ক্ষেত্রে পতাকা বৈঠক করে লাশ ফেরত পেয়ে বিজিবি প্রধান আজিজ আহমদ না কি নাম যেন তাকে তৃপ্তির ঢেকুর তুলতে দেখি। তখন তীব্র ঘৃণায় বমি আসে। অবস্থাটা এমনই যে, ‘ভিক্ষার দরকার নেই, গৃহস্থ তোর কুত্তা সামলা।’ বাংলাদেশে সামরিক নিরাপত্তা বলয় ভেঙ্গে দিয়ে এখন ভারত নাকে তেল দিয়ে ঘুমাতে পারছে। অন্ততঃ বাঙলাদেশ বর্ডারে তো বটেই। বর্ডারে সমস্যা সৃষ্টিকারী বেয়াদব বাহিনী ধ্বংস করা হয়ে গেছে।
আজিজের মত কাট্টা ভারতীয় দালাল এখন বিজিবি প্রধান। যুদ্ধ হতে পারে এমন শত্রু তালিকা থেকে ভারত সরকার বাংলাদেশের নাম কাটিয়ে নিয়েছে নিজেদের! ৫৪ নদীর পানি তো সেই কবে নিয়ে বাংলাদেশের উত্তরাঞ্চল মরুভূমি বানিয়েছে ভারত। এ বঙ্গেতে আগুন লাগিয়ে ওপারে নির্মাণ হচ্ছে গার্মেন্টসে ইন্ডাস্ট্রি।
বাংলাদেশের হাইটেক সবগুলো প্রতিষ্ঠানের মাথায় ওদের নাগরিক ঝেঁকে বসে আছে। সে সব ভারতীয়রা দেশে রিমিটেন্স পাঠায় ৪ বিলিয়ন ডলারেরও ওপর। তারা এদেশে বসবাস করে, অর্থ কামাই করে, জামাই আদরেও থাকে। কোন ট্যাক্স দিতে হয় না। ওয়ার্ক পারমিট বা ভিসার বালাই নেই অধিকাংশ এসব ভারতীয়দের ক্ষেত্রে। তারা আবার টাকার গরমে এদেশে মধ্যবিত্ত ও উচ্চবিত্ত পরিবারে বাঙালি ললনাদের আকৃষ্ট করে বিয়েও করে। অনেক সময় বিয়েরও প্রয়োজন পড়ে না। লিভিং টুগেদার। সেটিই তো ভাল। এ সব ললনারা ধর্মকর্ম নিয়ে তেমন আর ভাবে না। অর্থই অনেক ক্ষেত্রে অনর্থের মূল হয়। গর্বজাত সন্তান কেমন হয়, সেটি চিন্তা করার ভাব সচেতন দেশপ্রেমিক পাঠকদের ওপর ছেড়ে দিলাম। এভাবে ঢাকাসহ বাংলাদেশের প্রধান শহরগুলোতে জারজ সন্তানে ভরে যাচ্ছে যে সেটি টের পাচ্ছি এখন আমরা আস্তে আস্তে। কেননা ভারতীয়রা জুতোপেটা করলেও এক ধরনের বায়বীয় চেতনার ধারকবাহকরা উহ্ আহ শব্দটিও এখন আর করে না। উল্টো ভারতীয় দেব দেবীর পক্ষেই কোরাস গাইতে থাকে।
বাংলাদেশের ভেতর এখন যে চার লাখ কিংবা পাঁচ লাখ ভারতীয় নাগরিক খুব সুকৌশলে আমাদের নাগরিকদের ছদ্মাবরণে বসবাস ও উচু পদে চাকরি করে যাচ্ছে, তাদের হুকুমে এ দেশের অভ্যন্তরীণ প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলার গুরুভার এখন ৮% সংখ্যালঘুর উপর। ভারতীয় তাবেদার বর্তমান এ সরকারের অগোচরে এসব কিছুই যে নেই, তা হলফ করে বলা যায়। বরং এ সরকারই তাদের এদেশে বসবাসে ও তাদের নির্বিঘ্নে এখানে গণ বিরোধী কার্যক্রম পরিচালনায় তাদের অব্যাহত সহযোগিতা দিচ্ছে বলে একটি নির্ভরযোগ্য সূত্র জানিয়েছে।
বছরের পর বছর ভারতীয় রাজনীতিবিদরা গালাগাল করে আসছে এই বলে যে, ‘গরীব বাংলাদেশিরা’ সীমান্তের কাঁটাতার অতিক্রম করে ভারতে অনুপ্রবেশ করছে, ওখানে কাজ করছে এবং স্থায়ীভাবে বসবাস শুরু করছে।’ তবে প্রকৃত তথ্য হচ্ছে, বাংলাদেশে কাজ করছে অন্ততঃ ৫ লাখ ভারতীয়। তারা বছরে প্রায় ৩৭১ কোটি মার্কিন ডলার বা ৩০ হাজার কোটি টাকা ভারতে পাঠাচ্ছে। এশিয়ান ট্রিবিউনে ড. হাবিব সিদ্দিকীর লেখা Letter from America: Indian Expats in Bangladesh নিবন্ধে তাই তুলে ধরা হয়েছে। এটি আমার দেশ পত্রিকাতে অনুবাদ ছাপা হয়েছে।
ভারতের কেন্দ্রীয় সরকার থেকেও বাংলাদেশের ওপর অব্যাহত চাপ আসে। সংখ্যালঘুদের উপর কখনও কখনও ভারতীয় ফর্মূলায় হামলা হয়। এসব হামলায় অধিকাংশ ক্ষেত্রেই যে সরকার দলীয় তথা আওয়ামি সন্ত্রাসীরা জড়িত থাকে। তাতো অনেক রাখঢাক করে হামলা চালানো হলেও ইতোমধ্যে নানান সূত্রে প্রকাশ হয়ে পড়েছে। সরকার দলীয় সন্ত্রাসীরা হামলা করে বিরোধী দল এর উপর দোষ চাপিয়ে তাদের গ্রেফতার ও নির্যাতন চালানোর মওকা খোঁজা হয়। এভাবেই চলছে এখন বাংলাদেশ। আকাশ সংস্কৃতি আর পোষাক পণ্যে বেঁধে ফেলেছে এদেশের নারী ও যুব সমাজকে। ফেন্সিডিল আর মাদক দিয়ে সয়লাব করে ফেলেছে গোটা দেশ। জাতির মাথার ভিতর যেভাবে কালাচারাল দাসত্ব তৈরি হয়েছে, ক’দিন পরে পুরো দেশ কিংবা নামে দেশটা রেখে আর সবটা নিয়ে গেলেও উহ আহ করার বোধটুকুও হয়ত থাকবে না।
বাংলাদেশের আাইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী যে সরকারি দলের একটি অঙ্গ প্রতিষ্ঠান হিসেবে কাজ করছে, সেটি বর্তমান এ অবৈধ সরকারের তথাকিথিত স্বরাষ্ট্র্র প্রতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের সাম্প্রতিক বক্তব্যে আরেকবারও সুস্পষ্ট হল। গত ৮ মার্চ শনিবার রাতে রাজধানীতে রাজারবাগ পুলিশ লাইন্স টেলিকম মিলনায়তনে বাংলাদেশ পুলিশ সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশনের ৩৪তম বার্ষিক সাধারণ সভায় তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নৌকা তীরে ভেড়াতে পুলিশ বাহিনী সুযোগ করে দিয়েছে। ৫ জানুয়ারির ভোটারবিহীন নির্বাচনের আওয়ামী লীগের জয়ের কথা উল্লেখ করে তিনি এ কথা বলেন।
এদিকে ভারতের সীমান্তবক্ষী বাহিনী বিএসএফ বাংলাদেশের সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিজিবি’র কাছে ৬৬টি ভারতীয় সন্ত্রাসী ক্যাম্পের তালিকা হস্তান্তর করেছে। এসব ঘাঁটি উত্তর-পূর্ব ভারতের ৭টি রাজ্যের বিচ্ছিন্নতাবাদীদের বলে তা ভেঙ্গে দেয়ার জন্য বিজিবিকে অনুরোধ করা হয়েছে। আসাম সীমান্তের বিএসএফ ইন্সপেক্টর সুধির কুমার শ্রীবাস্তব বলেছেন, বাংলাদেশের মাটিতে এসব ঘাঁটির অস্তিত্ব রয়েছে। এ সব ঘাঁটির তালিকা বিজিবিকে দেয়ার কথা গত ৯ মার্চ রোববার সাংবাদিকদের জানিয়েছেন সুধির।
পরিদর্শক জেনারেলদের ৬ মার্চ থেকে ৯ মার্চ মেঘালয়ে তিনদিনের ষান্মাসিক বৈঠকে তালিকাটি হস্তাস্তর করা হয়েছে। ঘাঁটিগুলো ইউনাইটেড লিবারেশন ফ্রন্ট অব আসাম (উলফা), ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট অব বোডোল্যান্ড, দ্যা পিপলস লিবারেশন আর্মিসহ বিভিন্ন বিচ্ছিন্নতাবাদী সংগঠনের। শ্রীবাস্তব জানিয়েছেন, বাংলাদেশ দলের নেতৃত্ব দেয়া ব্রিগেডিয়ার জেনারেল হাবিবুল করিম কোন প্রতিবাদ না করেই জো হুকুম দাদাবাবু মেনে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়ে এসেছেন। অথচ বিভিন্ন সময়ই বাংলাদেশে ভারতের বিচ্ছিন্নতাবাদীদের ঘাঁটির জুজু তুলে আসছে দিল্লি। কেননা বাংলাদেশকে দাবিয়ে রাখার এটিও তাদের একটি হাতিয়ার। অথচ এ ধরনের ঘাঁটি থাকার প্রমাণ কোন সরকারের আমলে কখনোই পাওয়া যায় নি। ভারত এভাবে বাংলাদেশকে চাপে ফেলে তার কার্য উদ্ধার প্রক্রিয়া চালিয়েই যাচ্ছে।
দশ ট্রাক অস্ত্র মামলার রায়ের মাধ্যমে বাংলাদেশের সার্বভৌমত্বকে ছোট করা হয়েছে বলে মত প্রকাশ করেছে ভারতেরই জনপ্রিয় ইংরেজি দৈনিক ‘টাইমস অব আসাম । কারণ, বাংলাদেশের সার্বভৌমত্ব রক্ষা হোক ভারত তা চায় না। এই রায়ের মাধ্যমে মনে হয়েছে বাংলাদেশ যেন ভারতের কাছে একটি বন্ধকী রাজ্য (মর্টগেজ)। ভারতের জনপ্রিয় ইংরেজি দৈনিক ‘টাইমস অব আসামে’ এর অনলাইন সংস্করণে বিশ্লেষণধর্মী একটি প্রতিবেদনে এসব কথা বলা হয়েছে। অন্যদিকে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেছেন, শেখ হাসিনা মনে করেন- জনগণ নয়, ভারতই ক্ষমতার উৎস। বর্তমান সরকার অবৈধ ও অগণতান্ত্রিক। গত ৭ মার্চ শুক্রবার দুপুরে জাতীয় প্রেস ক্লাবে ডেমোক্রেটিক মুভমেন্ট আয়োজিত ‘তারেক রহমানের কারামুক্তি দিবস ও এক-এগারোর প্রেক্ষাপট’ শীর্ষক আলোচনা সভায় তিনি এ কথা বলেন।
দুর্নীতি ও রাজনৈতিক হস্তক্ষেপে বাংলাদেশের বিচার ব্যবস্থা আক্রান্ত বলে মন্তব্য করেছে ওয়াশিংটন ভিত্তিক আন্তর্জাতিক সংস্থা ‘ওয়ার্ল্ড জাস্টিস প্রজেক্ট‘ । গত ৬ মার্চ ওয়ার্ল্ড জাস্টিস প্রজেক্ট ‘ডব্লিউজেপি রুল অব ল’ ইনডেক্স-২০১৪’ শীর্ষক প্রতিবেদনে এসব কথা বলা হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, এ দেশে আইনের শাসন বাস্তবায়নে বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই রয়েছে ব্যর্থতা। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে যে, বাংলাদেশের পুলিশসহ নিরাপত্তা সংস্থার মধ্যে দুর্নীতি উল্লেখ করার মত। সরকারি কর্মকর্তাদের ক্ষমতার অপব্যবহারের বিষয়ে ব্যবস্থা নেয়ার ক্ষেত্রে রয়েছে চরম ব্যর্থতা। দীর্ঘ ওই প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, আটটি সূচকের মধ্যে সবচেয়ে কম স্কোর করেছে দুর্নীতি, দেওয়ানি ও ফৌজদারি বিচার ব্যবস্থা। এতে বলা হয়েছে, বিশ্বের মোট ৯৯টি দেশের ওপর এই প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে। এতে বাংলাদেশের অবস্থান ৯২তম। বলা হয়েছে, এখানে দুর্নীতির প্রচলন রয়েছে। বিশেষ করে তা নিরাপত্তা বাহিনীর মধ্যে উল্লেখ করার মত। এ তালিকায় বাংলাদেশের অবস্থান ৯৫তম।
তবে এতকিছুর পরও দৈনিক ইংরেজি পত্রিকা নিউ এজের সম্পাদক নূরুল কবিরের সাম্প্রতিক একটি বক্তব্য প্রণিদানযোগ্য। তিনি বলেছেন, বাংলাদেশ-পাকিস্তান স্বাধীনতার সময় ভারত ভারতের কাজ করেছে, আমরা আমাদের কাজ করেছি। এখানে ঋণের কিছু নেই। স্বাধীনতার সংগ্রাম ’৭১ সালের আগেই শুরু হয়েছে। তবে, ’৭১ সালে স্বাধীনতা যুদ্ধের সশস্ত্র রূপ নিয়েছে।
গত ৮ মার্চ শনিবার মঞ্জুরুল আলম পান্নার উপস্থাপনায় একুশে টেলিভিশনে ‘একুশের রাত’ অনুষ্ঠানে এসব কথা বলেন নূরুল কবির।
নূরুল কবীর বলেন, এ অঞ্চলের রাজনৈতিক করণে ভারত- পাকিস্তানকে দুর্বল করতে চেয়েছে, আর বাঙালি স্বাধীনতা চেয়েছে। এজন্য স্বাধীনতার সময় ভারত নিজেদের স্বার্থে আমাদের সাহায্য করেছে। এ সুযোগে আমরা আমাদের রাজনৈতিক আকাঙ্ক্ষা বাস্তবায়ন করেছি। ওই দিনই ইতিহাসের ঋণ পরিশোধ হয়েছে।
তিনি বলেন, লাখ লাখ বাঙালি নিজেদের আকাঙ্ক্ষা বাস্তবায়নের জন্য আত্মাহুতি দিয়েছে। বছরের পর বছর সংগ্রাম করে দেশ স্বাধীন করেছে। এটি পাকিস্তানীদের পক্ষে মেনে নেয়া সম্ভব নয়। এজন্য পাকিস্তানী শাসক তাদের ইজ্জত বাঁচানোর জন্য বলেন- আমরা বাঙালিদের কাছে পরাজিত হই নি। আমরা পরাজিত হয়েছি আমাদের সমকক্ষ ভারতের কাছে।
আমিও নূরুল কবিরের বক্তব্যটার ওপর আরও জোর দিতে চাই। আসুন দেশে বিদেশে আমদের শত্রু রাষ্ট্রকে চিহ্নিত করি এবং জনগণের মাঝে আরও সচেতনতা তৈরি করি। দেশপ্রেমিক বুদ্ধিজীবী, সাংবাদিক, সাংস্কৃতিক কর্মী, রাজনীতিক, পেশাদার শ্রেণী, শিক্ষক, শ্রমিক, আইনজীবী সকলেই আসুন দেশ রক্ষায় মিলিত শক্তি গড়ে তুলি। দেশ রক্ষায় আমরা অব্যাহতভাবে লড়ে যাই। লেন্দুপ দর্জির গোষ্ঠী বাংলাদেশে স্থায়ীভাবে ক্ষমতার মসনদে থাকতে পারবে না ইন শা আল্লাহ। জনতার জয় সুনিশ্চিত।
বিষয়: বিবিধ
১৪৩১ বার পঠিত, ১০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন