গুলেন মুভমেন্ট থেকে বের হয়ে অতিরাজনীতিকরনই জামায়াতের জন্য কাল হয়েছে।
লিখেছেন লিখেছেন মাজহার১৩ ১৬ ফেব্রুয়ারি, ২০১৪, ০৫:০৯:০৮ বিকাল
পরিবর্তনশীল সমাজ ও বিশ্বের অনেক কিছুই ক্রমাগত পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। মানুষের জীবন ও জগত সম্পর্কীয় মৌলিক বিশ্বাসের পরিবর্তন না ঘটলেও মৌলিক বিশ্বাস কেন্দ্রিক কার্যসমূহের ব্যাপারে মানুষের দৃষ্টিভঙ্গী বিবর্তন প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে অতিক্রম করছে। ইসলামকে জীবনব্যবস্থা হিসেবে অনুধাবন ও বাস্তব জীবনে পরিপালনের প্রক্রিয়াটি বিশ্বব্যাপী মুসলিম সমাজে বিবর্তনশীল। আর তাই ইসলামকেন্দ্রিক বিষয়সমূহের বাস্তবায়ন প্রক্রিয়ায় আমরা অনেক পার্থক্য লক্ষ্য করি। বিগত চার দশকে তুরস্কে ইসলামপন্থী আন্দোলনের কার্যাবলী প্রখ্যাত দার্শনিক, আলেম, শিক্ষক, চিন্তাবিদ, সমাজ সংস্কারক ফেতুল্লাহ গুলেন এর হাতে অভিনব রূপ ও কৌশল পরিগ্রহণ করেছে। ফেতুল্লাহ গুলেনের সাথে তাঁর সহকর্মীদের এই নতুন দৃষ্টিভঙ্গী ও কার্যকৌশল বিশ্বাসীর নিকট “গুলেন মুভমেন্ট” নামে পরিচিত। তুরস্কে ইসলামপন্থী একে পার্টির ক্ষমতায়ন এবং দীর্ঘ ১০ বছরব্যাপী চরম সমাজতান্ত্রিক ও নাস্তিক্যবাদী সামরিক বাহিনীকে মোকাবেলা করে এরদোগান ও আব্দুল্লাহ গুলের সরকার পরিচালনার নেপথ্যে রয়েছে এই গুলেন মুভমেন্টের ব্যাপক অবদান। এই প্রেক্ষাপটেই বিশ্বব্যাপী ফেতুল্লাহ গুলেন ও গুলেন মুভমেন্টকে নিয়ে শুরু হয়েছে গবেষণা ও পর্যবেক্ষণ। ফেতুল্লাহ গুলেন ও গুলেন মুভমেন্টকে বাংলাদেশের ইসলামপন্থী ব্যক্তিদের নিকট প্রাথমিকভাবে পরিচিত করানোর অংশ হিসেবে আমাদের এ ক্ষুদ্র প্রয়াস।
ঐতিহাসিক পটভূমি : গুলেন মুভমেন্ট হচ্ছে একটি সামাজিক আন্দোলন (Civil society movement)। তুরস্কের ইজমির নগরীর প্রচারক ফেতুল্লাহ গুলেন এবং তার চারপাশের একদল ত্যাগী, নিষ্ঠাবান ছাত্র, শিক্ষক, অভিভাবক এবং স্থানীয় ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের একটি সামাজিক সেবা প্রদানকারী গ্রুপ হিসেবে যাত্রা শুরু হয়েছিল এই গুলেন মুভমেন্টের। পশ্চিমা স্কলারদের নিকট, এককথায়, এটি গুলেন আন্দোলন (গুলেন মুভমেন্ট) হিসেবে পরিচিত। গুলেন মুভমেন্টের স্বেচ্ছাসেবীদের নিকট এটি হিজমেত বা ‘স্বেচ্ছাসেবী আন্দোলন’ হিসেবে পরিচিত। ফেতুল্লাহ গুলেন এই আন্দোলনকে ‘মানবিক মূল্যবোধের ভিত্তিতে ঐক্যবদ্ধ একদল লোকের আন্দোলন’ হিসেবে উল্লেখ করেন।
মুসলিম-বিশ্বাসভিত্তিক আন্দোলন হিসেবে এটি ১৯৬০ সালের দিকে যাত্রা শুরু করে। আর এই উদ্যোগ শুরু হয়েছিল ছাত্র-বৃত্তি, ছাত্রাবাস, স্কুল-কলেজ এবং কোচিং সেন্টারের মাধ্যমে শিক্ষা-সেবা নিয়ে। বিগত চার দশকের মধ্যে এটি জাতীয় পর্যায় থেকে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে উন্নীত হয়েছে। এ সময়ের মধ্যে এটি শিক্ষাক্ষেত্র হতে আন্তঃসাংস্কৃতিক, আন্তঃধর্মীয় সংলাপ ইত্যাদি ক্ষেত্রে তাদের কার্যক্রম সম্প্রসারণ করেছে। বর্তমানে এই আন্দোলনে অংশগ্রহণকারীর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে কয়েক মিলিয়নে। গুলেন মুভমেন্টের অনুসারীদের রয়েছে শত শত ফাউন্ডেশন, কোম্পানি, পেশাজীবী সংগঠন এবং অসংখ্য আনুষ্ঠানিক, উপানুষ্ঠানিক ও অনানুষ্ঠানিক সামাজিক সংগঠন ও সংস্থা।
প্রথম দিকে গুলেন মুভমেন্টের কাজ শুরু হয় মূলত ছাত্র-শিক্ষক, স্থানীয় অধিবাসী এবং বিভিন্ন সভা-সমিতি, সেমিনার ও ক্যাফে-কর্নারে ফেতুল্লাহ গুলেনের খোলা প্রশ্নোত্তর পর্বে যারা অংশগ্রহণ করতো তাদের মাধ্যমে। আন্দোলনের প্রাথমিক পর্যায়ে গুলেন ইজমির শহরের একটি ছাত্রাবাস কাম কোচিং সেন্টারে ডিরেক্টর হিসেবে কাজ করতেন। ফেতুল্লাহ গুলেন মুভমেন্টের প্রাথমিক উন্নয়নে এই ‘কিস্তানি পাজারি’ ছাত্রাবাসের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে। গুলেন ছিলেন একজন সরকারি ধর্ম-প্রচারক। তিনি ধর্ম প্রচারের পাশাপাশি অংশ নিতেন নানা গণবক্তৃতায়। তাছাড়াও গুলেন অংশ নিতেন যেকোনো ক্যাফে-কর্নারে ও চা-চক্রের আড্ডায়। এই সকল পরিবেশে আলোচনা চলত সুশিক্ষার জন্য আবশ্যকীয় নানা অনুসঙ্গ এবং প্রয়োজনীয় নৈতিক মূল্যবোধ নিয়ে। আর এই আলোচনাই গুলেন ও তার চারপাশের লোকজনকে সামাজিক সামষ্টিক মূল্যবোধ নিয়ে কাজ করতে উৎসাহিত করে। এই আলোচনা ও পর্যালোচনার ফলেই পরবর্তীতে স্থানীয় ব্যবসায়ীদের বিনিয়োগের মাধ্যমে গড়ে ওঠে অসংখ্য প্রতিষ্ঠান। আর এই সব প্রতিষ্ঠানের সকল কার্যক্রম শিক্ষাভিত্তিক; যেমনÑ ছাত্রবাস, কোচিং সেন্টার, একাদশ-দ্বাদশ শ্রেণীর কলেজ প্রভৃতি। পরবর্তী সময়ে মিডিয়াভিত্তিক অনেক প্রতিষ্ঠান গড়ে ওঠে। প্রাথমিকভাবে এই সকল মিডিয়া গড়ে উঠেছিল শিক্ষা উদ্যোগের অনুবর্তন হিসেবে। আরো পরের দিকে, সমমনা ও সমপেশার লোকদের নিয়ে গড়ে ওঠে নানা পেশাজীবী, বুদ্ধিবৃত্তিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠন।
আশির দশকের শেষ দিকে তুরস্কে সমাজতান্ত্রিক মতাদর্শের লালন সামরিক শক্তির লৌহশাসনের অবসান ঘটে। ঠিক একই সময়ে সোভিয়েত ইউনিয়নের বিলুপ্তি ঘটে এবং মধ্যএশিয়ায় অনেক মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ স্বাধীন দেশের জন্ম হয়। এই সময় গুলেন মুভমেন্ট দেশের সীমানা পেরিয়ে অন্য দেশে ছড়িয়ে পড়ে এবং আন্তর্জাতিক আন্দোলনে পরিণত হয়। বিশেষ করে সোভিয়েত রাশিয়ার ভাঙনের পর মধ্যএশিয়ার সকল সদ্য স্বাধীন মুসলিম দেশে গুলেন মুভমেন্ট তাদের শিক্ষা কার্যক্রম শুরু করে। তুর্কি নৃতাত্ত্বিক গোষ্ঠীভুক্ত এসব মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশে শিক্ষা খাতে বিনিয়োগের পাশাপাশি গুলেন মুভমেন্ট আন্তঃসাংস্কৃতিক ও আন্তঃধর্মীয় সংলাপ শুরু করে। হান্টিংটেনের “সভ্যতার সঙ্কট” এর বিপরীতে ফেতুল্লাহ গুলেনের এই “আন্তঃধর্মীয় সংলাপ” সবার নজর কাড়তে সক্ষম হয়।
যদিও এন্টার্কটিকা ব্যাতীত বাকী সকল মহাদেশেই গুলেন মুভমেন্টের কাজ সম্প্রসারিত হলেও এর কোনো নিবন্ধিত অফিস বা ঠিকানা নেই। তুরস্কের সকল শহর ও নগরীতে গুলেন মুভমেন্টের দ্বারা অনুপ্রাণিত স্কুল কিংবা সাংস্কৃতিক কার্যক্রম ছড়িয়ে রয়েছে। তুরস্কের বাইরেও সকল মহাদেশ জুড়ে শত শত স্কুল ছড়িয়ে আছে। আর এ সকল স্কুল গুলেনের শান্তিপূর্ণ জীবন ও কর্মের দ্বারা অনুপ্রাণিত। ১৯৬০ সালে গুলেনের কতিপয় শিষ্যের মাধ্যমে শুরু হওয়া এই আন্দোলন ২০০০ সালে লাখ লাখ মানুষের আন্দোলনে পরিণত হয়। আন্দোলনের সাথে জড়িত অনেকেরই গুলেনের সাথে ব্যক্তিগত সাক্ষাতের সুযোগ হয়নি। এটা সত্যিই আশ্চর্যের যে, কিভাবে এটা ঘটল? গুলেন মুভমেন্ট এর কোন্ বিষয় তুরস্কের জনগণকে এতটা আকৃষ্ট করল?
গুলেন মুভমেন্টের বাণী ও তার মূল আকর্ষণ : ষাটের দশকের শেষ দিকে এবং সত্তরের দশকের প্রথম দিকে গুলেন দারিদ্র্য, দুর্নীতি ও মূল্যবোধের অবক্ষয়ের বিরুদ্ধে/বিপরীতে বাস্তবজীবনীভিত্তিক গভীর বিশ্বাস ও মানবসেবার প্রচার শুরু করেন। সে সময় গণতন্ত্রের ওপর অগণতান্ত্রিক বাধা, জনজীবনে ধর্মীয় আচার পালনে বাধা এবং রাজনৈতিক ও ধর্মীয় সংঘর্ষ ছিল নিত্যনৈমিত্তিক। সুন্নী ও আলভী, তুর্কী ও কুর্দি, নিষ্ঠাবান ও সেক্যুলার মুসলিম নাগরিকদের মাঝে উত্তেজনা ছিল চরমে। বিশেষ করে সমাজতন্ত্রী, ফ্যাসিস্ট ও ধর্মীয় চরমপন্থীদের মাঝের রাজনৈতিক ও আদর্শিক সশস্ত্র সংঘাত তুরস্কের রাস্তাঘাটে হাজার হাজার যুবকের মৃত্যুর কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছিল। এছাড়াও তথাকথিত আধুনিকতাপন্থী ও ঐতিহ্যবাদপন্থীদের মাঝে বিরাজমান চরম উত্তেজনা ও অন্যান্য অনেক সমস্যা মিলে তুরস্কের শিক্ষাব্যবস্থাকে পঙ্গু করে ফেলেছিল। আর এসব কারণে ব্যক্তি, সমাজ, জাতি ও গোটা মানবতাকে নিয়ে গুলেনের সামগ্রিক চিন্তাধারা তাঁর শ্রোতাদের নিকট একটি আবেদন সৃষ্টি করেছিল। দারিদ্র্য, পারস্পরিক শত্রুতা (বিশেষ করে ধর্মবিভেদ), সুশিক্ষার অভাবকে গুলেন এসব সমস্যার মূল কারণ হিসেবে সনাক্ত করেন। আর এর সমাধান হিসেবে গুলেন নিম্নোক্ত বিষয়গুলো উপস্থাপন করেন এবং তার অনুসারীদের শিক্ষা দেয়ার চেষ্টা করেন :
১. আত্মশুদ্ধির মাধ্যমে নিজেকে একজন গভীর বিশ্বাসী এবং সে বিশ্বাসের বাস্তব অনুসারী হিসেবে গড়ে তোলা।
২. শুধু নিজের সেবা না করে অন্যদের সেবার চিন্তাও করতে হবে; শুধু নিজের কথা চিন্তা না করে মহৎ ভিশন নিয়েও ভাবতে হবে। তিনি সচেতন যুবক ও জনগণকে প্রশ্ন করলেন, কেন আরো সমৃদ্ধ তুরস্ক চাইবে না? কেন শান্তিপূর্ণ মানবতা কামনা করবে না?
৩. অজ্ঞতা, ধর্ম-বিভাজন, দারিদ্র্য ইত্যাদি যে সকল সমস্যা জাতিকে পঙ্গু করছে তার প্রধান কারণ মৌলিক শিক্ষার অভাব। আর শিক্ষাকে অর্থবহ করে তুলতে হলে সবার আগে দরকার নিষ্ঠাবান শিক্ষা ও প্রশাসকÑ যারা মানুষের কাক্সিক্ষত মূল্যবোধ ছাত্রদের সামনে পালনের মাধ্যমে তুলে ধরবে। কাজেই শিক্ষায় বিনিয়োগ করুন। তিনি আহ্বান জানালেন, যদি আপনি একজন ব্যবসায়ী হন তাহলে কোনো স্কুল প্রতিষ্ঠায় সহায়তা করুন। যদি আপনি সন্তানের জনক-জননী হোন, তাহলে সন্তানদের জন্য সুশিক্ষার ব্যবস্থা করুন এবং আপন আপন এলাকায় স্কুল প্রতিষ্ঠায় এগিয়ে আসুন। আপন পরিসরে প্রত্যেকেই সহায়তা করুন ‘শিক্ষা-প্রকল্প’ বাস্তবায়নে। পরবর্তীতে অন্যান্য প্রকল্প যেমনÑ মিডিয়া, স্বাস্থ্যসেবা, আকস্মিক বিপর্যয়ে সহায়তা দান, দারিদ্র্য দূরীকরণ ইত্যাদি চালু হয়েছিল এবং জনগণের নিকট আবেদন সৃষ্টি করতে পেরেছিল।
৪. সবকিছু সরকারের নিকট থেকে চাইবেন না। নাগরিক দায়িত্ববোধের চেতনায় উদ্বুদ্ধ হয়ে নাগরিক দায়িত্ব পালন করুন এবং কখনো নিজের দায়িত্ব সরকারের ওপর চাপিয়ে দেবেন না। গুলেনের এই আহ্বান জন এফ কেনেডির সেই বিখ্যাত উক্তিরই যেন নতুন এক প্রতিধ্বনি ‘‘প্রশ্ন করবে না রাষ্ট্র তোমার জন্য কি করতে পারে? বরং প্রশ্ন করবে তুমি রাষ্ট্রের জন্য কি করলে?’’
যদি আপনি ব্যবসায়ী হোন তাহলে নিষ্ঠার সাথে ব্যবসা পরিচালনা করুন, বিভিন্ন পার্টনারশিপ ও হোল্ডিংস গঠন করুন, অর্থ আয় করুন এবং উদারহস্তে দান করুন। কোনো পার্থিব প্রতিদান আশা না করে মানব সমাজের দায়িত্ব পালন করুন।
৫. পৃথকীকরণ, বর্ধনীকরণ এবং জনজীবনের ঘটনায় প্রতিক্রিয়াশীল না হয়ে সমাজের সকল প্রতিষ্ঠানে প্রতিনিধিত্ব করুন। বিচারবিভাগ, শাসনবিভাগ, সামরিক বাহিনী, মিডিয়া, শিল্পকলা ও ব্যবসা সর্বত্রই সেবার মনোভাব নিয়ে কাজ করুন। দেশের দায়িত্বশীল নাগরিকরা এসব প্রতিষ্ঠানগুলো “ধর্মবর্জিত গুণাবলী” সম্পন্ন ব্যক্তিদের হাতে অর্পণ করেছে। তারা তাদের সন্তানদের শুধুমাত্র মাদরাসা এবং ইমাম হাতিফ স্কুলে প্রেরণ করছে। ফলে তাদের প্রত্যাশা কিংবা বিশ্বশিক্ষা অবমূল্যায়িত হচ্ছে এবং রাষ্ট্রের সরকারি প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে তা বাস্তবায়িত হচ্ছে না। (চলবে)
-
বিষয়: বিবিধ
১৭২০ বার পঠিত, ১৪ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
আমি গত কয়েক মাস ধরে ইসলামী বিপ্লব নিয়ে গবেষনা করছি।
আপনার সহযোগিতা পেলে ভাল হয়।
আপনার লেখার শিরোনাম যা দিয়েছেন হয়তো পরবর্তী পর্বগুলো তার বিস্তারিত প্রতিফলন ঘটবে আশা করছি। তবে ড. আজাদী স্যারের পোস্টে যে কমেন্ট করেছি তা এখানে প্রাসঙ্গিক মনে করে তার কিছু অংশ এখানে কপি দিলাম।
বাংলাদেশে যারা ইসলামের রাজনৈতিক উত্থান বলেন অথবা পূণর্জাগরণ যে নামেই বলি না কেন- কামনা করেন তাদের জন্য অনেক গুরুত্বপূর্ণ কিছু শিখার ও অভিজ্ঞতা কাজে লাগানোর বিশাল সুযোগ রয়েছে। তুর্কি বুদ্ধিজীবিরা যেভাবে চিন্তা, গবেষণা ও বুদ্ধিবৃত্তিকভাবে নিজ জাতিকে গঠন করতে পেরেছেন তা বাংলাদেশের ক্ষেত্রে এদেশীয় চিন্তাবিদরা তার ধারে কাছেও যেতে পারেনি। কেন পারেনি তাও চিন্তা ও গবেষণা করা উচিত। কিন্তু যারা এ বিষয়টি নিয়ে সামান্য হা হুতাশ করেছে তাদেরকে অনেক সময় বাঁকা চোখে দেখার একটি অভিযোগ ইদানিং বেশ সমর্থন পাচ্ছেন উদীয়মান নবীনদের মাঝে। এখানো সেই বাঁকা চোখকে সোজা করার কোন আগ্রহ নেই।
বর্তমান তুরুস্কের অবস্থার আলোকে বাংলাদেশর পরিস্থিতির তুলনা করা হয় তবে আমাদের দেশে ইসলাম ও ইসলামপন্থীদের উপর চলমান দমন অভিযানের পটভূমি এবং ইসলামপন্থীদের কোন কোন দূর্বলতার সুযোগ কাজে লাগাতে পেরেছে ইসলামের রাজনৈতিক উত্থানের বিনাশকামীরা তা অনেকটা রিয়েলাইজড করা সহজ হবে। বর্তমানে শুধু ইসলাম বিনাশকারীদের দোষারোপ এবং তাদেরকে ডিফেন্সিভ কায়দায় মোকাবিলা করার রক্ত গরম মার্কা আত্মঘাতি চিন্তাভাবনা থেকে বেরিয়ে এসে মুক্ত হওয়ার একটা যৌক্তিক ব্যাখ্যাও হয়তো পেয়ে যেতে পারে মিশর ও তুরস্কের বিশেষ করে তুরুস্কের অবস্থা থেকে দরদের সাথে শিক্ষা গ্রহণ করার মানসিকাতায় পাঠ করি।
অনেক সমস্যার সূতিকাগার এটি!
আমার ব্যক্তিগত অভিমত অনেকটা এমন যে, পরিবর্তিত বিশ্ব পরিস্থিতিতে মুসলিমরা কোন মডেলকে কিংবা কোন পথকে যথার্থ মনে করে, তা ধারন করার মাধ্যমে সাফল্য নিশ্চিত করতে পারবে না। এর কারন গত ১০০ বছর ধরে - কোন রকম তাৎপর্যপূর্ন বাঁধা - বিপত্তি ছাড়া - ইসলাম ও মুসলিম এর শত্রুরা এ জাতি ও জনগোষ্ঠির মধ্যে বিভিন্ন রকম বিজানুর অনুপ্রবেশ ই শুধু করায় নি - তাদেরকে নার্সিং করে এমন একটি পর্যায়ে পৌছে দিয়েছে যে - ট্রু ইসলাম ও মুল মুসলিম জনগোষ্ঠি আজ মার্জিনালাইজড হয়ে পড়েছে।
এমনি একটি অবস্থায় যে কোন সমন্বিত উদ্্যোগ, আইডিয়োলজী কিংবা কর্মকান্ড অন্কুরেই আক্রমনের শিকার হবে এবং সাফল্্যের দেখা পাবেনা। ইতোপূর্বে ধারন করা অনুরূপ সব উদ্যোগ - সব মতবাদ - ঐ একই কারনে ব্যর্থ হয়েছে, হতে চলেছে এবং হবে। এর মধ্যে যে দু চারটি আপাতঃ সাকসেস কেইস আমরা অনেকসময় আলোচনায় সামনের কাতারে আনি - তা এ জন্য সম্ভব হয়েছিল যে - ১) উদ্যোক্তারা অতি সতর্কতার সাথে - তাদের কার্যক্রম ও উদ্দ্যেশ্যকে লুকিয়ে রাখতে সক্ষম হয়েছিল এবং ২) ইসলামের শত্রুরা ঐ কার্যক্রমকে ইমিডিয়েট থ্রেট হিসাবে বিবেচনা করতে সক্ষম হয়নি।
একজন সাধারন মুসলিম হিসাবে আমার বরং মনে হয়, আজকের এই বিশ্বে (যা লিটারেলী শেষ জামানার প্রায় শেষ অধ্যায়) মুসলিম লিডারশীপ ও মুসলিম এক্টিভিস্টদের কোরান হাদীসের কোন একটি বিষয় কিংবা দুনিয়াবী কোন একটি বিষয়ের ইসলামী সংস্করন নিয়ে বিচ্ছিন্ন কার্যক্রম শুরু করা উচিত এবং তা ছোট আকারে পরিচালনা করা উচিত। সে সাথে এক বা একের অধিক সংগঠন ইন্টেলেকচ্যুলায় ইস্যু সমূহ (শিক্ষা, রিসার্চ, পাবলিকেশানস্, সমন্বয়, প্রপাগেশান ইত্যাদি) নিয়ে কনটিনিউ কাজ করে উম্মাহকে সচেতন ও পরিবর্তনের জন্য প্রস্তুত করা উচিত।
আমাদের অবশ্যই মনে রাখা উচিত মিশরের মুসলিম ব্রাদারহূড কিংবা বাংলাদেশের হেফাজত কিংবা আফগানিস্থানের তালেবান - তারা প্রত্যেকে এক্সপোজ হবার আগে ছিল, কিন্তু এক্সপোজ হওয়া মাত্র তাদের মৃত্যু নিশ্চিত এর জন্য ওয়াশিংটন হতে শুরু করে শেখ হাসিনা হয়ে প্রথম আলো এবং এমনকি নারায়নগন্জের শামীম ওসমান ও কার্যক্রম হাতে নেয়।
সো আমি মনে করিনা আমাদের কোন একজন কিংবা কোন একটি সংগঠন কিংবা কোন একটি মতবাদকে কেন্দ্র করে আবর্তিত হবার সময় এটা - বরং আমাদের দরকার হাজার হাজার লক্ষ লক্ষ ইন্ডিপেন্ডেন্ট কোরান হাদীস ও দুনিয়াবী বিষয়ের ইসলামী সংস্করন সম্পন্ন প্রতিষ্ঠানকে উৎসাহিত করা এবং সে সাথে তাদের কো অর্ডিনেশান করার জন্য, তাদেরকে বিশ্লেষন ও গবেষনা ধর্মী জ্ঞান পরিবেশনের জন্য ও সংগঠনকে উৎসাহিত করা।
এতে করে ইসলামের শত্রুরা এ সংগঠন সমূহের পেছনে আড়ি পাতা হতে শুরু করে, টিকটিকি লাগানোর মাধ্যমে তাদেরকে কনটেইন করার জন্য যে পরিমান রিসোর্স ডেপ্লয় করতে বাধ্য হবে - তা আলটিমেটলী ইসলামের জন্য সহায়ক হবে।
এ কথায় অমত করার সুযোগ নেই
তবে জামায়াত বোধ হয় কখনো-ই গুলেন মুভমেন্টকে পূর্ণ অনুসরণের পথে যায়নি- সেটাকে পরিপূর্ণ মনেও করেনি!
- অন্ততঃ আমার তাই মনে হয়!
নার্সারীর চারা এনে রাজনীতির জমিনে লাগালে সেটা বাঁচবেনা বা বাঁচলেও প্রত্যাশিত ফল দেবেনা - এ ধরণের একটা কথা মাওলানা মওদুদী রাহঃ এর কোন এক বক্তৃতায়(লেখায়) পড়েছি মনে হয়!!
উপরে "আহমদ মুসা" এবং "সাদাচোখে"র মন্তব্য প্রণিধানযোগ্য!!
নাজিমুদ্দিন আরবাকান, ফাতহুল্লাহ গুলেন, এমনকি মীর কাশেম আলী যে কাজ করেছে যার যার অবস্থান থেকে, আপনি কেন করছেন না? সেন্টিমেন্ট বুকে ধারন করে আপনিও শুরু করেন, যদি কোন ভুল করে ফেলেন সে জন্য আপনার ক্ষুদ্র ইউনিটের জন্য আপনি দায়ী থাকবেন জামায়াত-শিবির না।
তাহলে আমরা সবাই মিলে কেন কিছু শুরু করছি না।
সোনাতলার আলোর প্রদীপ।
Click this link
গ্রামে যাই কর্মসূচীতে গিয়ে যার যার গ্রামে আমরা প্রত্যেকে সোনাতলার মেহেরুল ইসলামের মতো করে শুরু করতে পারি।
খুব সুন্দর লেখেছেন অনেক কিছু জানতে পারলাম। ধন্যবাদ
মন্তব্য করতে লগইন করুন