সদরপুরের ঘরে ঘরে মাতম চলছে

লিখেছেন লিখেছেন মাজহার১৩ ১৩ ডিসেম্বর, ২০১৩, ০৩:৩৬:৩১ দুপুর



সদরপুরে দলমত নির্বিশেষে সর্বসাধারণের নিকট অতিশয় সাদাসিধে মানুষ হিসেবে পরিচিত জামায়াত নেতা আব্দুল কাদের মোল্লার ফাঁসির রায়ের বিরুদ্ধে দায়ের করা রিভিউ আবেদন খারিজ হওয়ার খবরে তার (কাদের মোল্লার) জন্মস্থান সদরপুর উপজেলার ভাষাণচর ইউনিয়নের আমিরাবাদ গ্রামসহ পুরো সদরপুর উপজেলার ঘরে ঘরে কান্নার রোল পড়েছে। এ ঘটনায় সাধারণ মানুষ বিস্মিত। সারাজীবন কাদের মোল্লাকে একজন সৎ ও শান্তিপ্রিয় মানুষ হিসেবেই দেখেছেন তারা। তার বিরুদ্ধে মুক্তিযুদ্ধকালে কোনো যুদ্ধপরাধতো দূরের কথা, পাকবাহিনীকে সহায়তা করারও কোনো ঘটনা দেখেননি তারা। এমন একজন মানুষের বিরুদ্ধে শত শত মানুষকে হত্যার অভিযোগে ফাঁসি দেয়া হচ্ছে এতে তাদের মাঝে নেমে এসেছে শোকের ছায়া।

ভাষানচর গ্রামের প্রবীন ব্যাক্তি আব্দুস সামাদ মুন্সী বলেন, ‘এ কেমন বিচার হচ্ছে জানিনা। কাদের মোল্লাকে সারাজীবন সততার সাথে রাজনীতি করতে দেখেছি। যুদ্ধের সময়েও সে সদরপুরেই থেকেছে। তার বিরুদ্ধে কোনো অপরাধের খবর পাইনি।’ দানেজউদ্দিন দফাদার নামে আরেক ব্যক্তি বলেন, ‘কাদের মোল্লার বিরুদ্ধে চরম অন্যায় করা হচ্ছে। তাকে ন্যায়বিচার থেকে বঞ্চিত করা হয়েছে। একই গ্রামের ছালেহা খাতুন, হাসিনা বেগম, আলেসা খাতুন বলেন, ‘উনি (কাদের মোল্লা) কোনো অন্যায় কাজ করতে পারে এইডা বিশ্বাস হয়না। উনারে সারাজীবন দেখছি নম্রভদ্রভাবে চলাফেরা করতে। যুদ্ধের সময়েও তিনি কোনো অপরাধ করছেন এইডা আমরা শুনিনাই।’

আওয়ামী লীগের ঘাঁটি হিসেবে পরিচিত সদরপুর উপজেলার আওয়ামী লীগের ঘরানার সমর্থকেরাও এ খবরে মুষড়ে পরেছেন। ভয়ে আতঙ্কে মুখ খুলছেন না অনেকে। এলাকার মানুষ এক অজানা অতঙ্কে সময়যাপন করছে। দূরদূরান্ত থেকে সাধারণ মানুষ ছুটে আসছেন কাদের মোল্লার পৈত্রিক নিবাসের সদস্যদের স্বান্তনা দিতে। তবে সান্তনা দেয়ার ভাষা খুঁজে পাচ্ছেন না তারা কেউ। হিন্দু-মুসলিম, দলমত নির্বিশেষে সাধারণ মানুষ এখনো প্রতিক্ষা করছেন কাদের মোল্লার প্রতি ন্যায়বিচার করা হবে। তিনি আবার মুক্ত মানুষ হয়ে ফিরে আসবেন জন্মস্থান সদরপুরের বুকে। গতকাল বৃহস্পতিবার এলাকাবাসী কাদের মোল্লার মুক্তি দাবিতে বিরাট মিছিল ও সমাবেশও করেছে।

এলাকার বয়োবৃদ্ধ থেকে যুবা-মহিলাসহ বিভিন্ন শ্রেণিপেশার মানুষ এতে অংশ নেন।

বৃহস্পতিবার সারাদিন দূরদূরান্ত থেকে অসংখ্য গুণগ্রাহী ও আত্মীয়স্বজন গ্রামের বাড়ি সদরপুর উপজেলার ভাষাণচর ইউনিয়নের আমিরাবাদ গ্রামের বাড়িতে আসেন। সকালে গ্রামবাসী কাদের মোল্লার ফাঁসির আদেশের প্রতিবাদে শান্তিপূর্ণভাবে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করে। রিপোর্ট লেখার সময় অগণিত মানুষ তার সদরপুরের বসতবাড়িতে অবস্থান করছিল। কাদের মোল্লার ভাই ভাষানচর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মাইনুদ্দিন মোল্লা জানান, ‘সরকারের তরফ থেকে তাদের গ্রামের বাড়িতে এখনো কিছুই জানানো হয়নি। ফলে তারা এখনো বুঝতে পারছেন না কি হচ্ছে।’ মাইনুদ্দিন মোল্লা বলেন, ‘এটি চরম অবিচার করা হচ্ছে। আমরা ন্যায়বিচার পাইনি।’ এর আগে সাংবাদিকদের নিকট মাইনুদ্দিন মোল্লা জানিয়েছিলেন, মাসদেড়েক আগে কারাগারে সাক্ষাতের সময় কাদের মোল্লা তাকে জানিয়েছিলেন যে, যে কোনো সময় তাকে ফাঁসি দেয়া হতে পারে। এ সময় তিনি তার মৃত্যুর পর তাকে সদরপুরে বাবা-মায়ের কবরের পাশে দাফন করার জন্য তার নিকট ইচ্ছা প্রকাশ করেন। মাইনুদ্দিন মোল্লা বলেন, রাজনৈতিক প্রতিহিংসার বশবর্তী হয়ে তার ভাইকে অন্যায়ভাবে হত্যার চক্রান্ত চলছে।

এদিকে, কাদের মোল্লার ফাঁসিকে কেন্দ্র করে জন্মস্থান সদরপুরসহ পুরো জেলায় বিশেষ নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টে অতিরিক্ত পুলিশ ও আর্মড পুলিশ মোতায়ন করা হয়েছে। উৎকন্ঠিত অবস্থায় রয়েছে হাজার হাজার মানুষ। এদিকে, কাদের মোল্লার ফাঁসির রায়কে কেন্দ্র করে বৃহস্পতিবারও সারাদিন ফরিদপুরের সবমহলে নানারকম আলোচনা চলছিল।

ফরিদপুরের বিভিন্ন বাসাবাড়িতে নারীপুরুষ কাদের মোল্লার মুক্তি চেয়ে আল্লাহর দরবারে কান্নাকাটি করছে বলে খবর পাওয়া গেছে। বিভিন্ন এলাকার সাধারণ মানুষের মাঝে চরম উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা নেমে আসে। বিভিন্ন ঘরে ঘরে নারীপুরুষ আব্দুল কাদের মোল্লার সুস্থ্যতা ও মৃত্যুদ- রহিতের জন্য আল্লাহর দরবারে দোয়া করতে থাকেন। টিভিতে ফাঁসির মঞ্চ প্রস্তুতসহ স্বজনদের সাক্ষাতের খবর জানতে পেরে অনেকে কান্নায় ভেঙে পরেন।

শহরের পশ্চিম খাবাসপুরের নিবাসী মাহমুদ কলি নামে একজন ব্যবসায়ী বলেন, আব্দুল কাদের মোল্লাকে দেখেছি সারাজীবন সততার সাথে রাজনীতি করতে। তিনি ফরিদপুরের পৌর মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত একটি সভায় কাদের মোল্লার যোগদানের বিষয়টি তুলে ধরে বলেন, ওইদিন তাকে দেখেছি একটি ছেড়া পঞ্জাবি ও প্লাস্টিকের স্যান্ডেল পরে অনুষ্ঠানে যোগ দিতে। এতো উচ্চ শিক্ষিত ও হাই প্রোফাইল রাজনীতিবীদের এমন সাদামাটা জীবনযাপন দেখে সেদিন থেকেই তার সম্মন্ধে একটি বিশাল ধারণা পাই। তিনি কাদের মোল্লার ফাঁসির প্রক্রিয়াটিকে সম্পূর্ণ অন্যায় ও অন্যায্য বলে অভিহিত করে বলেন, এভাবে সৎ ও যোগ্য রাজনীতিবীদদের রাজনৈতিকভাবে হত্যা করলে তার পরিণতি কখনোই ভালো হবে না।

শহরের পূর্ব খাবাসপুরের আবু সাদাৎ সায়েম নামে এক ব্যক্তি ফেসবুকে লেখেন, যাই বলেন না কেনো একজন নিরীহ মানুষকে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে হত্যা করা হচ্ছে। এটি মেনে নিতে পারছি না। শহর ও প্রত্যন্ত অঞ্চলে ঘুরে বিভিন্নস্থানে সাধারণ মানুষের সাথে কথা বলে এমনটিই জানা গেছে। স্থানীয় সাংবাদিকদের নিকট ফোন করেও তারা সর্বশেষ পরিস্থিতি জানতে চান। একাধিক সূত্র থেকে প্রাপ্ত খবরে জানা গেছে, কাদের মোল্লার ফাঁসি কার্যকর হচ্ছে এমন খবর পেয়ে দলীয় নেতা-কর্মীদের বাইরে সাধারণ মানুষের মাঝে তীব্র ক্ষোভ নেমে আসে। তারা নিরূপায় অবস্থায় মহান আল্লাহর দরবারে কান্নাকাটি ও দোয়া করেন। বিভিন্ন মসজিদে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কড়া নজরদারি থাকায় প্রকাশ্যে দোয়া অনুষ্ঠিত না হলেও মুসুল্লীরা মসজিদ থেকে বেরিয়ে বিষয়টি নিয়ে উদ্বেগ উৎকণ্ঠা প্রকাশ করেন। সরকার এভাবে কেন তড়িঘড়ি করে তাকে ফাঁসিতে ঝুঁলিয়ে হত্যা করতে চাইছে এমন প্রশ্ন করেন তারা। জবাবে নানা জল্পনা কল্পনাও উঠে আসে। এটিকে একটি নির্মম রাজনৈতিক হত্যাকা- বলে অনেকে মন্তব্য করেন এবং একটি স্বাধীন দেশে কোনো নাগরিকের মানবাধিকার এভাবে ভুলুণ্ঠিত হতে দেয়া মোটেই কাম্য নয় বলে জানান তারা। একপর্যায়ে কাদের মোল্লার ফাঁসি স্থগিতের খবর পেয়ে তাদের মাঝে স্বস্তি নেমে আসে। তারা আল্লাহর দরবারে শুকরিয়া জানান। বুধবার সকালে সদরপুরে আব্দুল কাদের মোল্লার ফাঁসি বাতিলের দাবিতে হাজার হাজার নারী পুরুষ রাজপথে নেমে এসে বিক্ষোভ করে।

বিষয়: বিবিধ

১২৫৮ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File