শরীয়তের দৃষ্টিতে জন্মনিয়ন্ত্রনের বিধান কি?
লিখেছেন লিখেছেন মাদানী ২৮ জুন, ২০১৩, ০৮:৩৫:৪১ সকাল
উত্তরঃ بإسمه تعالى আল্লাহ রব্বুল আলামিন মানুষকে সৃষ্টি করেছেন এবং তিনি নিজেই মানুষের খাদ্য ও বাসস্থানের দায়িত্ব নিয়েছেন। কুরআনে ইরশাদ হচ্ছে: পৃথিবীতে বিচরণশীল সকল প্রাণীর আহারের দায়িত্ব আল্লাহর কুদরতী হাতে। সুতরাং খাদ্যের অভাব ও বাসস্থানের সংকটের খোড়া অজুহাতে মানবাগমণের পথ রূদ্ধ করা তথা জন্মনিয়ন্ত্রন পদ্ধতি ব্যবহার করা ঈমান ও তাওয়াক্কুলের পরিপন্থী কাজ।
বর্তমান সমাজে জন্মনিয়ন্ত্রনের বিভিন্ন পদ্ধতি [স্থায়ী, দীর্ঘ মেয়াদী, ইত্যাদি] চালু আছে। লোকেরা এ সকল পদ্ধতি বিভিন্ন উদ্দেশ্যে [দারিদ্রের ভয়ে, আনন্দ স্ফুর্তির জন্য, অসুস্থতার কারণে ইত্যাদি] গ্রহণ করে থাকে। শরীয়তের দৃষ্টিতে জন্মনিয়ন্ত্রন পদ্ধতিসমূহের হুকুম নিম্নে আলোকপাত করা হলো:
১ম স্থায়ী পদ্ধতিঃ যেমন পুরুষের জন্য ঠধংবপঃড়সু (ভ্যাসিকটমি) ও মহিলাদের জন্য খরমধঃরড়হ (লাইগেশন)। এ পদ্ধতিতে অপারেশনের মাধ্যমে পুরুষ বা নারীর সন্তান জন্ম দেয়ার ও নেয়ার ক্ষমতাকে চিরতরে নষ্ট করে দেয়া হয়।
শরয়ী বিধানঃ যে কোন উদ্দেশ্যেই এ পদ্ধতি গ্রহণ করা সম্পূর্ণ হারাম। কেননা এর মাধ্যমে আল্লাহ প্রদত্ত নেয়ামত ‘প্রজনন ক্ষমতাকে’ নষ্ট করা হয়।
২য় দীর্ঘ মেয়াদীঃ যেমন দীর্ঘ মেয়াদী ইনজেকশন, রিাপদকাল মেনে চলা এবং আই.ইউ.ডি (এক ধরণের প্লাস্টিক কয়েল) ব্যবহার করা ইত্যাদি।
শরয়ী বিধানঃ খাদ্য ও বাসস্থন সংকট কিংবা কন্যা সন্তান জন্ম দেয়ার আসংকায় এ পদ্ধতি গ্রহণ করলে সম্পূর্ণ হারাম। এবং ঈমানের দূর্বলতার পরিচয়। আর আনন্দ স্ফুর্তির জন্য এ পদ্ধতি গ্রহণ করলে মাকরূহে তাহরিমী ও বিবাহের মাকসাদের পরিপন্থী। আর স্ত্রীর বা সন্তানের অসুস্থতার কারণে হলে অভিজ্ঞ দ্বীনদার ডাক্তারের পরামর্শে হলেও তা খারাপ কাজের অন্তর্ভুক্ত। তবে মজবুর হলে যায়েজ আছে।
৩য় স্বল্প মেয়াদী পদ্ধতিঃ যেমন কনডম ব্যবহার ও জন্মবিরতি করণ পিল বা বড়ি ব্যবহার করা।
শরয়ী বিধানঃ খাদ্য ও বাসস্থন সংকট কিংবা কন্যা সন্তান জন্ম দেয়ার আসংকায় এ পদ্ধতি গ্রহণ করলেও সম্পূর্ণ হারাম। এবং ঈমানের দূর্বলতার পরিচয়। আর আনন্দ স্ফুর্তির জন্য ও বিলাসিতার উদ্ধেশ্যে এ পদ্ধতি গ্রহণ করলে যায়েজ হলেও খেলাফে আওলা বা অনুত্তম। শর্ত হলো স্ত্রীর অনুমতি লাগবে। কেননা এটা শরীয়তের মাকসাদের পরিপন্থী। আর স্ত্রীর বা সন্তানের অসুস্থতার কারণে হলে অভিজ্ঞ দ্বীনদার ডাক্তারের পরামর্শে হলে তা যায়েজ আছে ও ক্ষেত্র বিশেষে উত্তম।
উল্লেখ্য যে, জন্ম নিয়ন্ত্রনের উপরোক্ত বৈধ সুরতগুলি একান্ত ব্যক্তিগত ব্যাপারে সীমাবদ্ধ। সুতরাং এটাকে ব্যাপকভাবে আন্দোলনে রূপ দেয়া এবং জনসাধারণকে উৎসাহ দেয়া কখনো যায়েজ হতে পারে না। বরং তা শরীয়ত গর্হিত ও নাযয়েজ কাজ। তাই সরকারসহ সকল সংগঠনকে এ থেকে বিরত থাকা আবশ্যক। আল্লাহ আমাদের তাওফিক দান করুন। আমীন!
তথ্যসূত্রঃ
১) আল কুরআনুল কারীম (সুরা বনী ইসরাইল-৩১, সুরা আনআম-১৫১, সুরা নিসা-১,১১৯, সুরা রূম-৩০, সুরা ত্বুর-৫৮, সুরা হুদ-৬, সুরা আনকাবুত-৬০, সুরা তালাক-৩, সুরা হিজর-২১, সুরা শুরা-২৭, সুরা কামার-৪৯, সুরা মায়িদা-৮৭, সুরা বকারা-১৮৭)
২) সহীহ বুখারী শরীফ (২/৭৫৯)
৩) সহীহ মুসলিম শরীফ (১/৪৬৪)
৪) তিরমিযি শরীফ (১/২১৫,১৬)
৫) আবু দাউদ শরীফ (১/২৮০)
৬) নাসায়ী শরীফ (২/৫৯)
৭) ইবনে মাজাহ শরীফ (১৩৪,১৩৮)
৮) মিশকাত শরীফ (২/২৫২,২৬৭)
৯) তুহফতুল আলমায়ী (৩/৫৬৯-৭২)
১০) দরসে তিরমিযি (৩/৪২৩-২৫)
১১) ফাতাওয়া শামী (৯/৫৩৭-৫৫৭)
১২) ফাতাওয়া আলমগিরী (৫/৩৫৬)
১৩) মাজমাউল আনহুল (৪/১৬৫)
১৪) ফাতাওয়া রহীমিয়া (১০/১৮১-৮৫)
১৫) জাদীদ ফিকহী মাসায়েল ১/১৯৭-১০৩)
১৬) ইমদাদুল মুফতিয়্যিন (১/৮০৯)
১৭) আপকে মাসায়েল আওর উনকা হল (৭/৩৫৩-৬৩)
والله اعلم بالصواب
বিষয়: বিবিধ
৩৬৫৩ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন