ফরয সালাতের পরে সম্মিলিত মুনাজাত একটি প্রচলিত বিদআত (২য় পর্ব)

লিখেছেন লিখেছেন মোঃমাছুম বিল্লাহ ১৭ আগস্ট, ২০১৩, ০৮:১৩:০০ রাত

১ম পর্বের পর

(৫) কবর জিয়ারতের সময়ঃ

আয়েশা রাঃ বলেন , একদা রাতেরাসূল সাঃ আমার নিকটে ছিলেন । শোয়ার সময় চাদর রাখলেন এবং জুতা খুলে পায়ের নিচে রেখে শুয়ে পড়লেন । তিনি অল্প সময় এ খেয়ারে থাকলেনযে , আমি ঘুমিয়েপড়েছি । অতঃপর ধীরে চাদর ও জুতা নিলেন এবং ধীরে দরজা খুলে বেরিয়ে পড়লেনএবং দরজা বন্ধ করে দিলেন । তখন আমিও কাপড় পরে চাদর মাথায় তাঁর পিছনে চললাম । তিনি “বাক্বীউল গারক্বাদে” (জান্নাতুল বাক্বী) পৌঁছলেন এবং দীর্ঘ সময় দাঁড়িয়ে থাকলেন । অতঃপর তিন তিন বার হাত উঠিয়ে প্রার্থনা করলেন । (মুসলিম, ১ম খন্ড , পৃঃ ৩১৩ , হা/৯৭৪ ‘জানাযা’ অধ্যায় , অনুচ্ছেদ-৩৫)

আয়েশা রাঃ বলেন , কোন এক রাতে রাসূল সাঃ বের হলেন , আমি বারিরা রাঃ কে পাঠালাম , তাঁকে দেখার জন্য যে , তিনি কোথায় যান । তিনি জান্নাতুল বাক্বীতে গেলেনএবং পার্শ্বে দাঁড়ালেন । অতঃপর হাত তুলে দোয়া করলেন। তারপর ফিরে আসলেন । বারিরাও ফিরে আসলো এবং আমাকে খবর দিল । আমি সকালে তাঁকে জিজ্ঞেস করলাম , হে আল্লাহর রাসূল ! আপনি গত রাতে কোথায় গিয়েছিলেন ? তিনি বললেন জান্নাতুল বাকীতে গিয়েছিলাম কবরবাসীর জন্য দোয়া করতে । (ইমাম বুখারী , রাফউল ঈয়াদাঈন, পৃঃ ১৭ , হাদীস সহীহ; মুসলিম হা/৯৭৪ (মর্মার্থ))

(৬) কারো জন্য ক্ষমা চাওয়ার লক্ষ্যে হাত তুলে দোয়া:

আউতাসের যুদ্ধেআবু আমেরকে তীর লাগলে আবু আমের স্বীয় ভাতিজা আবু মুসার মাধ্যমে বলে পাঠান যে , আপনি আমার পক্ষ থেকে রাসূল সাঃ কে সালাম পৌঁছে দিবেন এবং ক্ষমা চাইতে বলবেন । আবু মুসা আশ’আরী রাঃ রাসূলু্ল্লাহ সাঃ এর কাছে এ সংবাদ পৌঁছালে তিনি পানি নিয়ে ডাকলেন এবং ওযু করলেন । এবং হাত তুলে প্রার্থনা করলেন , “হে আল্লাহ ! উবাইদ এবং আবু আমেরকে ক্ষমা করে দাও । (রাবী বলেন) এ সময় আমি তাঁর বগলের শুভ্রতা দেখলাম ।তিনি বললেন , “হে আল্লাহ ! ক্বিয়ামতের দিন তুমি তাকে তোমার সৃষ্টি মানুষের অনেকেরউর্ধ্বে করে দিও” ।(বুখারী , ২য় খন্ড , পৃঃ ৯৪৪ , হা/৪৩২৩ ও ৬৩৮৩ ‘দু’আ সমূহ’ অধ্যায় )

(৭) হজ্জে পাথর নিক্ষেপের সময়:

আব্দুল্লাহ ইবনু ওমর রাঃ তিনটি জামারায়সাতটি পাথর খন্ড নিক্ষেপ করতেন এবং প্রতিটি পাথর নিক্ষেপের সাথেতাকবীর বলতেন । প্রথম দু’জামারায় পাথর নিক্ষেপেরপর ক্বিবলামুখীহয়ে দীর্ঘক্ষণদাঁড়িয়ে দু’হাত তুলে দু’আকরতেন । তবে তৃতীয় জামারায় পাথর নিক্ষেপের পর দাঁড়াতেন না । শেষে বলতেন , আমিরাসূল সাঃ কে এগুলো এভাবেই পালন করতে দেখেছি । (বুখারী , ১ম খন্ড , পৃঃ ২৩৬৭ , হা/১৭৫১ ‘হজ্জ’ অধ্যায় )

(৮) যুদ্ধক্ষেত্রে:

ওমর ইবনু খাত্তাব রাঃ হ’তে বর্ণিত তিনি বলেন , রাসূল সাঃ বদরের যু্দ্ধে মুশরিকদের দিকেলক্ষ্য করে দেখলেন, তাদের সংখ্যা এক হাজার । আর তাঁর সাথীদের সংখ্যামাত্র তিনশত উনিশ জন । তখন তিনি ক্বিবলামুখী হয়ে দু’হাত উঠিয়ে দু’আ করতে লাগলেন । এ সময় তিনি বলছিলেন , ‘হে আল্লাহ ! তুমি আমাকে সাহায্য করার ওয়াদা করেছ । হে আল্লাহ! তুমি যদি এই জামা’আতকে আজ ধ্বংস করে দাও , তাহ’লে এই জমীনে তোমাকে ডাকার মত আর কেউ অবশিষ্ট থাকবে না । এভাবে তিনি উভয় হাত তুলে ক্বিবলা মুখী হয়ে প্রার্থনাকরতে থাকলেন । এ সময় তাঁর কাঁধ হতে চাদরখানা পড়ে গেল । আবু বকর রাঃ তখন চাদরখানা কাঁধেতুলে দিয়ে রাসূল সাঃ কে জড়িয়ে ধরে বললেন, হে আল্লাহর রাসূল! সাঃ আপনার প্রতিপালক প্রার্থনা কবুলে যথেষ্ট । নিশ্চয়ই তিনি আপনার সাথে কৃত ওয়াদা পূরণ করবেন । (মুসলিম, ২য় খন্ড , পৃঃ ৯৩ , হা/১৭৬৩ , ‘জিহাদ’ অধ্যায়, অনুচ্ছেদ – ১৮ )

(৯) কোন গোত্রের জন্য দু’আ করা :

আবু হুরায়রা রাঃ বলেন , একদা আবু তুফাইল রাসূল সাঃ এর কাছে গিয়ে বলল ,হে আল্লাহর রাসূল ! দাউস গোত্রও অবাধ্য ও অবশীভূত হয়ে গেছে , আপনি তাদের জন্য আল্লাহর কাছে বদ দু’আ করুন । তখন রাসূল সাঃ ক্বিবলামুখী হ’লেন এবং দু’হাততুলে বললেন , হে আল্লাহ ! তুমি দাঊস গোত্রকে হেদায়াত দান কর এবং তাদেরকে সঠিক পথে নিয়ে আস’। (বুখারী , মুসলিম , ছহীহ আলআদাবুল মুফরাদ , পৃঃ ২০৯ , হা/৬১১ সনদ সহীহ)

(১০) সাফা মারওয়া সায়ী করার সময় :

আবু হুরায়রা রাঃ বলেন , রাসূলসাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মক্কায় প্রবেশকরলেন এবং পাথরের নিকট এসে পাথর চুম্বন করলেন, বায়তুল্লাহ তাওয়াফ করলেন এবং সাফা পাহাড়ে এসে তার উপর উঠলেন । অতঃপর তিনি বায়তুল্লাহর দিকে লক্ষ্য করে দু’হাত উত্তোলন পুর্বকআল্লাহকে ইচ্ছামত স্মরণ করতে লাগলেন এবং প্রার্থনা করতে লাগলেন । (সহীহ আবু দাউদ , হা/১৮৭২ সনদ সহীহ , মিসকাত হা/২৫৭৫ ‘হজ্জ’ অধ্যায় )

(১১) কুনুতে নাযেলার সময় :

আবু উসামা রাঃ হতে বর্ণিত , রাসূল সাঃ কুনুতে নাযেলায় হাত তুলে দু’আ করেছিলেন । (ইমাম বুখারী , রাফউল ঈয়াদাঈন, সনদ সহীহ)

বিষয়: বিবিধ

১৪৫৪ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File