মুসমানদের উন্নতি কোন পথে?

লিখেছেন লিখেছেন স্বঘোষিত ব্লগার ২২ মে, ২০১৩, ১১:১১:২০ রাত

সারা বিশ্বে আজ মুসলিমরা মার খাচ্ছে। মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ রাষ্ট্রগুলিতে মুসলমানদের অবস্থা আরও শোচনীয়। মহান আল্লাহকে চেনা সত্ত্বেও কেন তারা আল্লাহর জমিনে নির্যাতিত হচ্ছে এ নিয়েও অনেকে প্রশ্ন তুলছে। তবে কি আল্লাহ মুসলমানদের পক্ষে নন? আসলে মুসলমানরা তাদের আদর্শকে ভুলে বিজাতীয় আদর্শের অনুকরণ অনুসরণ করতেছে। ফলে তারা দিন দিন অধঃপতিত হচ্ছে। অথচ আল্লাহ তা’য়ালা বিজাতীয় আদর্শ অনুসরণের মধ্যে দুনিয়া ও আখিরাতের শান্তি ও সফলতা রাখেন নি। আল্লাহর হুকুম ও মহানবী (সাঃ) এর আদর্শকে পরিপূর্ণভাবে পালন করার মাধ্যমেই মুসলমানদের দুনিয়া ও আখিরাতের সফলতা নিহিত। ব্যক্তি জীবন, পারিবারিক জীবন, সামাজিক জীবন সর্বত্র আল্লাহর হুকুম, নবীর ত্বরীকায় জিন্দেগী পরিচালনা করতে হবে।

সাহাবায়ে কেরাম (রাঃ) পরিপূর্ণভাবে ইসলামের শিক্ষা অনুযায়ী চলেছিলেন। ফলে তাঁদেরকে আল্লাহ তায়ালা দুনিয়া ও আখিরাতের বাদশাহী দিয়েছিলেন। সাহাবায়ে কেরামের সুন্দর চরিত্র, মানবিক গুণাবলী দেখে দলে দলে বিধর্মীরা ইসলাম গ্রহণ করেছিল। কিন্তু আজ আমাদের অবস্থা দেখলে বিধর্মীরা ইসলাম গ্রহণ তো দূরে থাক, উলটো পালানোর পথ খোঁজে। কারণ আমরা ইসলামের শিক্ষা থেকে দূরে সরে গেছি। ফলে ‘ইসলাম শান্তির ধর্ম, ইসলাম সত্য ধর্ম’ ইত্যাদি কথা যতই বলি না কেন, লাভ হচ্ছে না। আগে নিজেদের জিন্দেগীতে পরিপূর্ণভাবে ইসলাম প্রতিষ্ঠা করতে হবে। ইসলামের ছোট থেকে বড় বিধানগুলোকে গুরুত্ব দিয়ে আদায় করতে হবে। কোনও বিধানকেই ছোট বলে অবহেলা করা যাবে না। উদাহরণ স্বরূপ, সাহাবায়ে কেরাম জিহাদের ময়দানেও মিসওয়াকের সুন্নাত আদায় করতেন। আসলে তাঁদের প্রতিটা কাজ ছিল আল্লাহকে রাজি খুশী করার জন্য। ফলে আল্লাহও তাঁদের উপর সন্তুষ্ট হয়ে গিয়েছিলেন। সাহাবায়ে কেরামের একদল যখন রোম অভিযানে গেলেন, তখন রোম শাসন কর্তা তাদেরকে রোম অভিযানে আসার কারণ জানতে চাইলেন। মুসলিমদের সেনাপতি উত্তর দিলেন, “আমরা আসি নি, আমাদেরকে পাঠানো হয়েছে। আল্লাহ তায়ালা রোম সাম্রাজ্যকে আমাদেরকে দিয়ে দিবেন বলে ওয়াদা করেছ” এ ছিল সাহাবীদের শান। কারণ তারা ১০০% আল্লাহর হুকুম, নবীর ত্বরীকায় চলেছিলেন। আল্লাহ তায়ালা মুসলমানদের দুনিয়ার বাদশাহী দিবেন, এটা আল্লাহর ওয়াদা। কিন্তু সেজন্য শর্ত হলো, মুসলমানদের পরিপূর্ণভাবে ইসলাম পালন করতে হবে। মহানবী (সাঃ) যেভাবে সাহাবায়ে কেরামকে দ্বীন শিক্ষা দিয়েছিলেন, এবং সাহাবায়ে কেরামও যেভাবে দ্বীনের উপর উঠেছিলেন, ঠিক সেই ভাবে আমাদেরও দ্বীনের উপর উঠতে হবে। কিন্তু আজ মুসলমানদের অবস্থা সম্পূর্ণ তার উলটো। আল্লাহ প্রদত্ত ত্বরিকা ভুলে বিজাতীয় ত্বরীকায় আমরা দুনিয়া আখেরাতের শান্তি এবং কামিয়াবি খুঁজতেছি।

অনেক ভাই বলে থাকেন যে, পশ্চিমারা ইসলাম না মানা সত্ত্বেও তারা অনেক উন্নতি করতেছে। হ্যাঁ ভাই, মানলাম তারা উন্নতি করতেছে। কিন্তু তাদের এ উন্নতি কেবল দুনিয়াবী, আখেরাতে তারা বঞ্চিত। আর মুসলিমদের জন্য আল্লাহ যে ত্বরিকা দিয়েছেন সে ত্বরীকায় চললে তাদের দুনিয়া ও আখেরাত, উভয় জগতেরই উন্নতি হাসিল হবে। এখন মুসলমানরা যদি পশ্চিমাদের বাতানো ত্বরীকায় সফলতার পথ খোঁজে, তাহলে তারা দুনিয়া ও আখেরাত দুটোই হারাবে। এ প্রসঙ্গে, পাকিস্তানের সাবেক বিচারপতি জাস্টিস আল্লামা ত্বাকী উসমানী একটা গল্প বলে থাকেন-

এক ব্যক্তি খুব শখ করে বড় একটা গাছে উঠল। গাছের চূড়ায় উঠার পর সে এখন আর নামতে পারতেছে না। উপর থেকে সে চিৎকার চেঁচামেচি করে লোকজনকে ডাকতে লাগলো। গ্রামের সব লোক এসে জড়ো হলো। একেক জন একেক বুদ্ধি দিচ্ছে, কিন্তু কোনটাই যথার্থ হচ্ছে না। এরপর এগিয়ে এলেন গ্রামের মাতব্বর। তিনি একজনকে লম্বা একটা রশি আনতে বললেন। রশি আনা হলে মাতব্বর লোকটি রশির এক মাথা ঐ লোকটির দিকে ছুড়ে মারলেন এবং কোমরের সাথে রশিটি শক্ত করে বাঁধতে বললেন। এবার গ্রামের লোকজনে রশির অপর মাথা ধরে টান দিতে বললেন। নেতার কথা মতো সবাই তাই করলো। ফলে গাছের লোকটি ধপাস করে নিচে পড়ে মারা গেল। লোকটির মৃত্যুর জন্য গ্রামের লোকজন মাতব্বরকে দায়ী করলে তিনি উত্তর দেন, আসলে ওর হায়াত শেষ, নইলে এভাবে মারা যাওয়ার কথা না। আমি এ পদ্ধতিতে কূপে পড়া অনেক লোককে উদ্ধার করেছি’

আজ আমাদের অবস্থাও গ্রামের মাতব্বরটির মতো। সব পদ্ধতি যে সব ক্ষেত্রে এবং সবার ক্ষেত্রে প্রযোজ্য নয় আমরা সেটাও বুঝতেছি না। আল্লাহকে স্বীকার করে যখন আমরা আল্লাহর দ্বীনে দাখিল হয়েছি, তখন আমাদের সব ধরণের উন্নতি কেবল আল্লাহর হুকুম মতো চলার মধ্যেই নিহিত। এছাড়া মুসলমানদের উন্নতি সম্ভব নয়। আর যদি পশ্চিমাদের মতো কেবল দুনিয়াবি সফলতা চাই, তাহলে আগে (আল্লাহ হেফাজত করুক) ইসলাম থেকে বের হয়ে যেতে হবে। কিন্তু তখন আখেরাতে আমাদের জন্য কিছুই থাকবে না।

আল্লাহ আমাদের সবাইকে বুঝার এবং পরিপূর্ণভাবে আল্লাহর হুকুম ও মুহাম্মদ (সাঃ) এর ত্বরিকা অনুযায়ী চলার তৌফিক দান করুক-আমীন।

বিষয়: বিবিধ

১৭৩৯ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File