সংঘাত ও সঙ্কটের রাজনীতিঃ কে বেশি দায়ী ?

লিখেছেন লিখেছেন স্বঘোষিত ব্লগার ০৯ এপ্রিল, ২০১৩, ০৩:৫২:৫৫ রাত

রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, বাংলাদেশের চলমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি স্বাধীনতা পরবর্তী অন্য যেকোনো সময়ের তুলনায় সবচেয়ে বেশি সংঘাতময় এবং সংকটময় হয়ে উঠেছে। এমন পরিস্থিতিতে সচেতন দেশপ্রেমিক নাগরিক মাত্রই দেশের ভবিষ্যৎ নিয়ে শঙ্কিত হয়ে পড়বেন। দেশের এমন সংকটময় পরিস্থিতি দেখার জন্য আমরা একাত্তরে শোষক শ্রেণীর বিরুদ্ধে লড়াই করে এক সাগর রক্তের বিনিময়ে স্বাধীনতা অর্জন করিনি। কিন্তু এ সংঘাতময় পরিস্থিতির জন্য কে বেশি দায়ী, সরকারি দল নাকি বিরোধীদল? “এক হাতে তালি বাজে না” এ সত্য কথাটি স্বীকার করার পর দুই হাত মিলে তালি বাজার হেতুটাও আমাদের উৎঘাটন করতে হবে।

আওয়ামীলীগ নেতৃত্বাধীন মহাজোট সরকার ক্ষমতা গ্রহণের পরবর্তী তিন বছর প্রধান বিরোধীদল বিএনপি বড় ধরণের কোনো আন্দোলনে যায়নি বা যেতে পারেনি। অবশ্য এ ক্ষেত্রে ‘আন্দোলনে যেতে পারেনি’-কথাটি বেশি যুক্তিযুক্ত এবং মানানসই। কারণ, এক এগার পরবর্তীতে সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত এবং বিপর্যস্ত দল হলো বিএনপি। সাংগঠনিকভাবে ভেঙ্গে পড়া এ দলটির তিন বছর কেটে গেছে সংগঠন পুনর্গঠনে। একটি দেশের উন্নয়নের ধারা বজায় রাখার জন্য রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা বা সংঘাতহীন রাজনৈতিক পরিস্থিতি অত্যাবশ্যক। সবকিছু বিবেচনা করলে দেখা যায় যে, মহাজোট সরকারের ক্ষমতা গ্রহণের পরবর্তী তিন বছর দেশে মোটামুটিভাবে এমনই এক অনুকূল রাজনৈতিক পরিস্থিতি বিরাজমান ছিল। এর অর্থে হচ্ছে দেশের কাঙ্ক্ষিত উন্নয়নের জন্য এবং নির্বাচনী ইশতেহার পূরণের জন্য আওয়ামীলীগ নেতৃত্বাধীন মহাজোট সরকার যথেষ্ট সুযোগ পেয়েছিল। কিন্তু বাস্তব দৃষ্টিকোণ থেকে বিচার করলে দেখা যায় যে এ সুযোগের সদ্ব্যবহার ক্ষমতাসীন সরকার খুব কমই করতে পেরেছ।বিগত চারদলীয় জোট সরকারের সীমাহীন দুর্নীতিতে অতিষ্ঠ জনগণ যে আশা-আকাঙ্ক্ষা মহাজোটকে নিয়ে ক্ষমতায় পাঠিয়েছে তার সিংহ ভাগই অপূর্ণ থেকে গেছে। সরকারের ক্ষমতা গ্রহণের এক বছরের মধ্যে জনগণ বুঝতে পেরেছে যে বর্তমান সরকার বিএনপির জুতো পরেই দেশ শাসন করতেছে। অর্থাৎ চারদলীয় জোট সরকারের পদাংকিত পথেই অনিবার্যভাবে হাঁটতেছে মহাজোট সরকার। দলীয়করণ, নিয়োগ বাণিজ্য, টেন্ডারবাজি, গুম, হত্যা Click this linkপ্রভৃতি ক্ষেত্রে অতীতের যেকোনো সরকারকে হার মানিয়ে বর্তমান সরকার। ছাত্রলীগের নিয়ন্ত্রণহীন দৌরাত্ম্যের কারণে সরকার সবচেয়ে বেশি বদনাম কুড়িয়েছে Click this link। স্বাধীনতার পূর্ব ও পরবর্তী সময়ে বেশ কিছু গৌরবের অধিকারী এ ছাত্র সংগঠনটির বর্তমানে অনেকে নাম দিয়েছেন ‘চাপাতিলীগ’ Click this link

গণতান্ত্রিক শাসন ব্যবস্থায় সত্যিকারের নিয়মতান্ত্রিক উন্নয়নের জন্য দেশ পরিচালনায় সরকারি দলের পাশাপাশি বিরোধীদলের সক্রিয় অংশগ্রহণ জরুরি। কিন্তু আমাদের ত্রুটিযুক্ত গণতান্ত্রিক চর্চায় বিরোধীদলের জন্য এরকম পরিস্থিতি সরকারের তরফ থেকে তৈরি করা হয় না, এ পদ্ধতি অতীতকাল থেকেই চলে আসছে। অবশ্য এ ক্ষেত্রে বিরোধীদলেরও রাজনৈতিক সদিচ্ছার প্রচণ্ড অভাব।

বর্তমান সংসদের বিরোধীদলীয় নেত্রী খালেদা জিয়াকে তাঁর সেনানিবাসের বাড়ি থেকে উচ্ছেদের পর মহাজোট সরকারের আমলে প্রথম বড় ধরণের সংঘাতময় রাজনীতির শিকার হয় বাংলাদেশ। এ ঘটনাও বাংলাদেশের চিরাচরিত প্রতিহিংসার রাজনীতির কুফল যেখানে জনগণের স্বার্থ থাকে বিবেচনাহীন।

বাড়ি রক্ষার রাজনীতির পর বেশ কিছুদিন বিরোধীদল সরকার বিরোধী আন্দোলনে যায় নি। সাংগঠনিকভাবে কোমর ভাঙ্গা এবং দুর্বল হওয়ার কারণেই হয়তো এমন স্থিতিশীলতা তৈরি হয়েছিল। আগেই বলেছি বিরোধীদলেরও রাজনৈতিক সদিচ্ছা এবং দেশপ্রেমের অভাব আছে। কেননা এ সরকারের সমালোচনা বা বিরোধিতা করার জন্য ক্ষেত্র বা ইস্যুগুলো সরকার নিজেই তৈরি করে দিয়েছে। সরকারের ঊর্ধ্বতন মহল যাই বলুক না কেন, শেয়ার বাজার কেলেঙ্কারি ক্ষমতাসীন মহাজোট সরকারের ব্যর্থতার এক চরম দৃষ্টান্ত Click this link । শেয়ারবাজার লুটপাটের ফলে সর্বস্ব হারিয় পথে বসা চল্লিশ লাখ ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীর স্বার্থ রক্ষায় সরকার উল্লেখযোগ্য কোনো পদক্ষেপই নেয় নি। উপরন্তু অর্থমন্ত্রী বিনিয়োগকারীদের পটকাবাজ বলে তাদের কাটা গায়ে নুনের ছিটা দিয়েছে Click this link। কিন্তু বিরোধীদল বিএনপি ক্ষতিগ্রস্ত বিনিয়োগকারীদের স্বার্থ রক্ষায় কতটুকু সচেষ্ট হয়েছে তা সচেতন সবারই জানা। এরপরে পদ্মা সেতু দুর্নীতির মতো বিশ্ব স্বীকৃত দুর্নীতি এবং হলমার্ক কেলেঙ্কারির মতো বড় ধরণের ব্যাঙ্ক আত্মসাতের ঘটনা ঘটেছে এ সরকারের আমলে Click this link। প্রশাসনের উপর থেকে নিচ পর্যন্ত দুর্নীতিগ্রস্ত এ সরকারের আমলে দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে সাবেক রেল মন্ত্রী এবং বর্ষীয়ান রাজনীতিবিদ সুরঞ্জিত সেন গুপ্তের (পড়ুন, কালো বিড়াল) বিরুদ্ধে Click this link। সব ক্ষেত্রেই বিএনপি মৌখিক এবং লোক দেখানো প্রতিবাদ করেছে। বিএনপি তাদের বিগত শাসনামলের কথা মনে করা চক্ষুলজ্জার (!) কারণে কিংবা আগামীতে ক্ষমতায় গেলে তারাও একই পথে হাঁটবে এমন ধারণা থেকেই হয়তো সক্রিয় প্রতিবাদের সাহস পায়নি। সক্রিয় প্রতিবাদ বলতে আমি সংসদে গিয়ে বা জনগণকে সাথে নিয়ে গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে আন্দোলন করার কথা বলছি। কেননা, বিরোধীদল সচরাচর যেসব ইস্যু নিয়ে আন্দোলন করে তারচেয়ে সরকারের দুর্নীতির বিরুদ্ধে আন্দোলন গড়ে তোলা সত্যিকারের দেশপ্রেমের পরিচয় নয় কি?

ক্ষমতা গ্রহণের পর আওয়ামীলীগ নেতৃত্বাধীন মহাজোট সরকার বেশ কিছু সফল পদক্ষেপ গ্রহণ এবং বাস্তবায়ন করেছে। মোটের উপর বিদ্যুৎ উৎপাদন তেমন একটা না হলেও প্রধান প্রধান শহরগুলোতে লোড শেডিং বিগত দুই সরকার (তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দুই বছর সহ) এর তুলনায় মোটামুটি সহনীয় পর্যায়ে ছিল। ঢাকা শহরের যানজট নিরসনে সরকারের কিছু গৃহীত পদক্ষেপ বেশ প্রশংসার দাবিদার। এরকম আরও কিছু সাফল্যের ফসল ঘরে তুলেছে মহাজোট সরকার।

সরকারের নির্বাচনী ইশতিহারের মধ্যে উল্লেখযোগ্য একটি হলো যুদ্ধাপরাধীদের বিচার প্রসঙ্গ। ২০১২ সালের শেষের দিকে বহুপ্রতীক্ষিত এ বিচারের মূল প্রক্রিয়া শুরু হয়। কিন্তু দুঃখজনকভাবে সরকারের এ বিচার প্রক্রিয়াকে রাজনৈতিক বিতর্কের ঊর্ধ্বে রাখতে পারেনি। বেশ কয়েকজন চিহ্নিত যুদ্ধাপরাধী বিচারের বাইরে থেকে গেছে কেবলমাত্র দলীয় বিবেচনায়। যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের জন্য গঠিত ট্রাইব্যুনাল দলমত নির্বিশেষে সবার আস্থা অর্জন করতে পারে নাই, বিতর্কিত হয়েছে দেশ বিদেশে Click this link। উপরন্তু সরকার ইস্যুটাকে ছলে-বলে কৌশলে বিরোধীদল দমনের মোক্ষম হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করতেছে।

২০১১ খ্রিস্টাব্দে ১৫ম সংশোধনীর মাধ্যমে সংবিধান থেকে তত্ত্বাবধায়ক সরকার পদ্ধতি উঠিয়ে দেওয়া হয়। অবশ্য এর আগে আদালত তত্ত্বাবধায়ক সরকার পদ্ধতিকে অবৈধ ঘোষণা করে রায় দেয়।আদালতের রায়ে এও বলা হয় যে, সংসদ চাইলে আগামী দুটি জাতীয় নির্বাচন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে হতে পারে। কিন্তু মহাজোট সরকার আসন্ন জাতীয় নির্বাচন দলীয় সরকারের অধীনে হবে বলে ঘোষণা দেয় এবং এ সিদ্ধান্তে অটল থাকে।শুরু থেকেই বিএনপি তত্ত্বাবধায়ক সরকার পদ্ধতি পুনর্বহালের দাবি জানিয়ে আসছিল। তত্ত্বাবধায়ক সরকার ইস্যুতে অতীতে দু’দলই জাতীয় নির্লজ্জতার পরিচয় দিয়েছে, এসব বলতে গেলে আমার আলোচনা অন্যদিকে চলে যাবে।

গণতন্ত্রের সাথে সাংঘর্ষিক হলেও বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে তত্ত্বাবধায়ক সরকার পদ্ধতির প্রয়োজন আছে বলে আমি মনে করি। এছাড়া যেহেতু আগামী দুটি নির্বাচন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে হতে পারবে বলে আদালত রায় দিয়েছে সেহেতু অন্তত আগামী জাতীয় নির্বাচনটা তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে হলে বিরোধীদল আন্দোলনের ইস্যু খুঁজে পেতো না, অনিবার্য সংঘাতময় পরিস্থিতি থেকে দেশ রক্ষা পেত। এর ফলে যুদ্ধাপরাধের বিচার প্রক্রিয়াও সরকার নির্বিঘ্নে সম্পন্ন করতে পারত। কিন্তু না, এক্ষেত্রেও সরকারের হঠকারী অবস্থান দেশকে ক্রমশ: সংঘাতময় পরিস্থিতির দিকে ঠেলে দিচ্ছে।

যুদ্ধাপরাধে অভিযুক্ত জামায়াতে ইসলামের শীর্ষ কয়েকজন নেতার রায় ঘোষিত হওয়ার পর দেশের সংকটময় পরিস্থিতি আরও ঘনীভূত হয়ে ওঠে। কাদের মোল্লা এবং সর্বশেষ দেলোয়ার হোসেন সাঈদীর রায়ের পর সংকটময় অবস্থা চূড়ান্ত পর্যায়ে পৌঁছে। কাদের মোল্লার যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের রায় ঘোষিত হওয়ার পর তার মৃত্যুদণ্ড এবং জামায়াত নিষিদ্ধের দাবিতে ‘ব্লগার অ্যান্ড অনলাইন অ্যাক্টিভিস্ট’ নামক সংগঠনের আহ্বানে শাহবাগ চত্বরে তরুণ প্রজন্মের আন্দোলনের একটা ধারা সূচিত হয়। তরুণদের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণে শুরু হওয়া আন্দোলন শুরুতে দখল করে ধর্মবিদ্বেষী বামপন্থী দলগুলো। নাম সর্বস্ব দলগুলো এক সাথে এত বিপুল জনতার সামনে ইতোপূর্বে আর দাঁড়ায়নি। ফলে হুঁশ হারিয়ে বা সুযোগ পেয়ে তরুণদের ঐ সমাবেশ থেকে জামায়াত নিষিদ্ধের পাশাপাশি ধর্মভিত্তিক রাজনীতি নিষিদ্ধের দাবি তোলে, যা দেশের ধর্মভিত্তিক রাজনৈতিক দলগুলোর ক্ষোভের কারণ হয়। এরপরে তরুণদের ঐ গণজাগরণে আওয়ামী দলীয় করণের প্রভাব পড়ে। সরকার সর্বাত্মকভাবে ঐ আন্দোলনের রসদ সরবরাহ করতে থাকে।

ইতোমধ্যে শাহবাগ আন্দোলনের সক্রিয় অংশগ্রহণকারী স্বঘোষিত ধর্মবিদ্বেষী নাস্তিক রাজীব হায়দার ওরফে থাবা বাবা দুর্বৃত্তদের হাতে নৃশংসভাবে খুন হয়। রাজীব খুন হওয়ার দু’এক দিনের মধ্যেই তার অতীতের চরম ইসলামবিরোধী কুকর্মগুলো কয়েকটি জাতীয় দৈনিকে প্রকাশিত হতে থাকে। আগেই বলেছি, ব্লগারদের আহ্বানেই শাহবাগে গণজাগরণ শুরু হয়েছিল, ফলে স্বাভাবিকভাবেই ঐ আন্দোলনে গুটিকয়েক ইসলামবিদ্বেষী নাস্তিকও সক্রিয় অংশগ্রহণ করেছিল। এসব নাস্তিক দীর্ঘদিন থেকেই ইসলাম অবমাননা করে আসলেও ইতিপূর্বে কোনো দৈনিকে তা প্রকাশিত হয়নি। শাহবাগ আন্দোলন শুরু হওয়ার পর তা প্রকাশিত হওয়ার ফলে বিষয়টা অনেকের নিকট প্রশ্নবিদ্ধ।

সে যাইহোক, ব্লগে ইসলাম অবমাননার অভিযোগে সারাদেশে ধর্মপ্রাণ মুসলমানরা বিক্ষুব্ধ হয়ে ওঠে। প্রতিবাদী মুসলমানদের নেতৃত্ব দেয় দেশের কওমী আলেমদের প্রধান এবং সর্বজন শ্রদ্ধেয় আলেম আল্লামা শাহ আহমদ শফীর নেতৃত্বাধীন হেফাজতে ইসলাম নামক অরাজনৈতিক সংগঠন। ধর্মদ্রোহী নাস্তিকদের গ্রেপ্তার এবং ফাঁসির দাবিতে সংগঠনটি আন্দোলন শুরু করে। কিন্তু সরকার গুটিকয়েক নাস্তিকের পক্ষাবলম্বন করে ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাতের অভিযোগ অস্বীকার করে চরম মিথ্যাচার করে। এমনকি নিহত রাজীবকে দ্বিতীয় মুক্তিযুদ্ধের প্রথম শহীদ বলে আখ্যায়িত করে। সরকারের এসব ভুল সিদ্ধান্তের নেপথ্যে ছিল বামদল প্রভাবিত গোয়েন্দা বিভাগ। কিন্তু হেফাজতে ইসলামের আন্দোলন যখন বেগবান হতে থাকে তখন সরকার সামাল দিতে না পেরে ধর্মাবমাননার বিষয়টি স্বীকার করে চারজন ব্লগারকে গ্রেপ্তার করে যাদের মধ্যে ধর্মবিদ্বেষী নাস্তিকগুরু আসিফ মহিউদ্দীনও ছিল। কিন্তু বাকি অপরাধীদের গ্রেপ্তার এবং ইসলাম বিদ্বেষী ব্লগগুলোর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে সরকার গড়িমসি করে। অথচ সরকার হাতেগোনা কয়েকটা নাস্তিকের পক্ষাবলম্বন না করলেই পারতো, এতে করে শাহবাগ আন্দোলনও বিতর্কিত হতো না। দেশের অধিকাংশ মানুষ ব্লগ সম্পর্কে ধারণা রাখে না। ফলে ধর্মাবমাননার অভিযোগ সব ব্লগারদের বিরুদ্ধেই আসতে থাকে। এজন্য অবশ্য সরকার এবং সর্বোপরি সচেতন ব্লগাররাও দায়ী। কেননা মতপ্রকাশের স্বাধীনতার নামে ধর্মানুভূতিতে আঘাত দেশের বিদ্যমান আইনেই শাস্তিযোগ্য অপরাধ। কিন্তু সচেতন ব্লগার এবং সরকার এ ব্যাপারে কতটুকু দায়িত্বশীল হয়েছে তা প্রশ্নবিদ্ধ। সর্বশেষ হেফাজতে ইসলাম তাদের তের দফা দাবি নিয়ে ৬ এপ্রিল ঢাকার উদ্দেশ্যে লংমার্চ এবং মহাসমাবেশের ঢাক দেয়। বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি না করার শর্তে সরকার সহযোগিতার আশ্বাস দিলেও লংমার্চ প্রতিহতে সর্বাত্মক চেষ্টা করে। সরকার সমর্থিত অখ্যাত সাতাশটি সংগঠন লংমার্চ প্রতিহতে হরতালের আহ্বান করে। কিন্তু শত বাধাবিপত্তির পরেও হেফাজতে ইসলামের মহাসমাবেশে স্মরণকালের সবচেয়ে বেশি লোকসমাগম হয়। সরকার হেফাজতে ইসলামের তের দফা দাবি বিবেচনার আশ্বাস দেয়। শান্তিপূর্ণভাবে সম্পন্ন হয় হেফাজতে ইসলামের মহাসমাবেশ।

কিন্তু সমাবেশের পরদিন থেকেই সরকারের সুর পাল্টাতে থাকে। এদিকে হেফাজতে ইসলামও দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দেয়। তত্ত্বাবধায়ক সরকার ইস্যুতে আন্দোলনরত বিএনপি, শীর্ষ নেতাদের মুক্তির দাবিতে আন্দোলনকারী জামায়াতে ইসলাম এবং তের দফা দাবি নিয়ে আন্দোলনরত হেফাজতে ইসলাম; এ ত্রিমুখী চাপের মুখে বর্তমান সরকার সবচেয়ে সংকটময় সময় অতিবাহিত করছে। দেশের এহেন সংকটময় রাজনীতির সবচেয়ে করুণ শিকার দেশের অর্থনীতি, সর্বোপরি দেশের খেটে খাওয়া মানুষ।

বিষয়: রাজনীতি

২৩৯৮ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File