স্বঘোষিত ব্লগার ইমরানের হেফাজত দর্শন

লিখেছেন লিখেছেন স্বঘোষিত ব্লগার ০৬ এপ্রিল, ২০১৩, ১২:২২:০৫ রাত



একদা এক দেশে ছিল ইমরান এইচ সরকার নামে তুমুল জনপ্রিয় এক লোক।তিনি ছিলেন সে দেশের নামকরা বলগার। যদিও তাঁর লেখা বলগ কেউ কোনও দিন দেখে নি, দেখবেই বা কীভাবে? সেদেশের বেশিরভাগ মানুষ বলগ কী চীজ এইডাও ভালোভাবে জানে না। ফলে সে দেশের কতিপয় মূর্খ লোক তাঁর নাম দিয়েছিল “স্বঘোষিত বলগার”। তো একদিন হইলো গিয়া, ঐ দেশে যুদ্ধাপরাধীদের ফাঁসির দাবিতে কিছু বলগার সে দেশেরই শাহবাগ চত্বরে জমায়েত হইল। সেদেশের সরকার মহলের বিশেষ আশীর্বাদপুষ্ট স্বঘোষিত বলগার ইমরান ‘উড়ে এসে জুড়ে বসা’র মতো করে সে জমায়েতের নেতৃত্ব দেওয়া শুরু করলো। ইমরানের নেতৃত্বে সে আন্দোলনে যেন জাদুর ছোঁয়া লাগলো। রাতারাতি দৃশ্যপট পাল্টাতে লাগলো। ‘গণ জাগরণ’, ‘গণআন্দোলন’ ইত্যাদি কতো নামে যে বিশেষিত হলো বলগারদের সে আন্দোলন! স্থাপিত হলো গণজাগরণ মঞ্চ। শহরের বিভিন্ন জায়গা থেকে বিভিন্ন পেশার উৎসুক মানুষ ভিড় করতে লাগলো শাহবাগে, অনেককে আবার ভাড়া করে আনা হলো। দেশের মানুষ অবাক হয়ে দেখতে লাগলো বলগার নামক এ আজব দেশের আজব প্রাণীদের। যারা আসতে পারেনি তারা মিডিয়ায়, পত্র-পত্রিকায় সরাসরি দেখতে লাগলো। বিনা টিকিটে এসব প্রাণীদের দেখতে মানুষজনকে খালি মুখে ফিরতে দেয়নি মহামতি ইমরান। শাহী বিরিয়ানি, ফলমূল, নগদ টাকা আরও কত কী! সে সাথে ব্যাপক বিনোদনের ব্যবস্থা, লাইভ কনচার্ট, নাচ-গান কোনও কিছুরই বাদ রাখেননি এ উদীয়মান স্বঘোষিত বলগার। আর দেশের তাবৎ মিডিয়া মহামতির নূরানি চেহারা সরাসরি সম্প্রচার করতে লাগলো। এতো আয়োজন তিনি কীভাবে করেছিলেন তা নিয়ে অবশ্য ঐ দেশের দুষ্ট লোকেরা নানা কথা বললেও আসলে তিনি জাদুর কাঠি দিয়ে এসব করেছিলেন বলেই মনে হয়।

ভুরিভোজের সাথে সাথে আন্দোলনও থেমে নেই। দাবি আদায়ে সরকারের প্রতি তিনি আল্টিমেটামের পর আল্টিমেটাম ছুঁড়ে দিচ্ছেন। অবশ্য সবগুলো আল্টিমেটাম এখনও ঝুলে আছে কারণ সেদেশের ৪৮ ঘণ্টার আল্টিমেটাম মানে হচ্ছে এক অসীম সময় যা কখনও শেষ হবার নয়। বুঝতেই পারছেন আজব দেশের আজব নেতা।

তো আল্টিমেটাম আর ভুরিভোজ দ্বৈত ভাবে চলছিলো। হঠাৎ কালবৈশাখীর ন্যায় ধেয়ে আসলো আকাল। আন্দোলনরত বলগাদের বিরুদ্ধে ধর্মাবমাননার অভিযোগ উঠলো। কিছু দুষ্টু মিডিয়ার কারণে থলের বিড়াল বেরিয়ে গেল। দেশের মানুষ দেখল, ‘যা কিছু রটে বেশির ভাগই বটে’। ধর্মানুভূতিতে আঘাত দেওয়ার অভিযোগে আন্দোলনরত বলগারদের ফাঁসির দাবিতে ধর্মপ্রাণ মানুষ জেগে উঠলো, শুরু হলো বৃহৎ আন্দোলন। ধর্মপ্রাণ মুসলমানদের নেতৃত্ব দিচ্ছিল ‘হেফাজতে ইসলাম’ নামের একটি অরাজনৈতিক সংগঠন। ইসলামী গণজাগরণ দেখে স্বঘোষিত ব্লগার ইমরান পড়লেন মহাফাঁপড়ে, জীবনে যিনি একটাও বলগ লিখেন নি তাঁর বিরুদ্ধে ধর্মাবমাননার অভিযোগ! তিনি এবার জাদুর কাঠি নাড়লেন, হেফাজতে ইসলামকে যুদ্ধাপরাধীদের দল বলে ট্যাগ দিলেন। নাহ, কাজ হচ্ছে না। পিঠ বাঁচাতে বাধ্য হয়ে তিনি হেফাজতে ইসলামের সাথে বৈঠক করার চেষ্টা করলেন। তিনি কতো বড় ঈমানদার ব্যক্তি তা হেফাজতের হুজুরদের বোঝাবেন, বিশ্বাস না হলে কাপড় খুলে তাঁর মুসলমানীত্ব দেখাবেন, প্রয়োজনে হুজুরদের কালেমা পড়ে শুনাবেন।সে সাথে কারা তাঁদের বিরুদ্ধে এ বৃহৎ আন্দোলন শুরু করেছে তাদেরকে এক নজর দেখবেন। কিন্তু ‘নাস্তিকদের সাথে বৈঠক নয়’ বলে হেফাজতের হুজুররা মহামতি ইমরানের প্রস্তাব নাকচ করে দিলো। পূরণ হলো না ইমরানের হেফাজত দর্শনের স্বপ্ন।

এদিকে গণজাগরণ মঞ্চের উদ্দেশ্যে পালটে যেতে লাগলো। যুদ্ধাপরাধীদের ফাঁসির দাবির কথা ভুলে বলগাররা নিজদেরকে মুসলমান প্রমাণে ব্যস্ত হয়ে পড়লো। হেফাজতের আন্দোলনের চাপে সরকার গণজাগরণ মঞ্চের রসদ সরবরাহ কমিয়ে দিলো। শক্তি কমে গেল গণজাগরণ মঞ্চের। কিন্তু ইমরানের হেফাজত দর্শনের বাসনা মনের গভীরে গেঁথে রইল।

একদিন অলৌকিকভাবে কিছু হেফাজতের কর্মী তাঁর পাশ দিয়ে যাচ্ছিলো। আনন্দে গদ গদ করে উঠলো ইমরানের মন। এগিয়ে গিয়ে দেখা করলেন তিনি হেফাজতের কর্মীদের সাথে। তাঁর চক্ষু শীতল হলো।

কিছুদিন পর কয়েকটা মিডিয়ায় সে খবর প্রচারিত হলো। Click this linkস্বঘোষিত বলগার ইমরানের হেফাজত দর্শন! মহামতি ইমরানের মহানুভবতায় দেশের মানুষ মুগ্ধ হয়ে গেল। কেউ কেউ আবার এ মহান নেতাকে দেশের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দেখতে চাইলো। সকলে বলিল, ‘ভ্যালারে ইমরান, বেঁচে থাক চিরকাল’। এদিকে ইমরান তো দেশের ভবিষ্যৎ প্রধান হওয়ার স্বপ্নে বিভোর।

নাহ, এবারও তাঁর দিবা স্বপ্ন বেশীক্ষণ দীর্ঘায়িত হলো না। হেফাজতের ঐ কর্মীগুলোর সাথে আসলে কী কথোপকথন হয়েছিলো তার একটা ভিডিও ছড়িয়ে পড়লো ইন্টারনেটে।

Youtube link

Facebook link

ভবিষ্যতে দেশের প্রধানমন্ত্রীর হওয়ার দিবাস্বপ্ন অকালে ভেঙ্গে চুরমার হয়ে গেল। দুঃখ ভারাক্রান্ত মনে তিনি নতুন আল্টিমেটাম নির্ধারণে মনোনিবেশ করলেন।



বিষয়: রাজনীতি

২৩৭৮ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File