মানুষের প্রকৃতি বিজয়

লিখেছেন লিখেছেন ফারুক আহমেদ০২ ৩১ মে, ২০১৩, ০৯:০৬:৩০ রাত

বিজয় কথাটার সাথে পরাজয় জড়িত ।যখন মানুষের প্রকৃতির কোন কিছু জয়ের কথা বলা হয় তখন তার সাথে প্রকৃতির পরাজয়ের প্রশ্ন জড়িত ।মানুষ প্রকৃতির বাইরে নয় ।তাই প্রকৃতির যদি পরাজয় ঘটে তা হয় সামগ্রিকভাবে মানুষের পরাজয় ।বিষয়টি হয় এমন যে, কোন ব্যাক্তি বা গোষ্ঠির প্রকৃতি বিজয় মানে অবশিষ্ট সকল মানুষের পরাজয় ।

বিজ্ঞান প্রকৃতি অনুসন্ধান করতে শেখায় ।প্রকৃতির রহস্য জানতে শেখায় । প্রকৃতির নিয়মগুলো ব্যাখ্যা করতে শেখায় প্রকৃতির মধ্যে সর্বজীবের সুন্দর আবাস গড়বার জন্য ।একমাত্র মানুষের আবাস বলে কিছু থাকতে পারে না । বিজ্ঞান শেখায় কোন একটি জীবের ধ্বংস মানে প্রকৃতির ধ্বংস সাধন এবং শেষ বিচারে মানুষেরও ধ্বংস সাধন ।বিজ্ঞান এই তথ্য দেয় বটে । কিন্তু বিজ্ঞানের এই তথ্য কিভাবে কাজে লাগানো হবে তা নির্ভর করে বিজ্ঞান কার দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হচ্ছে তার ওপর ।বিজ্ঞানের আবিষ্কারগুলো যে ব্যবহার করবে অর্থাৎ যে ব্যবহার করার ক্ষমতা রাখে সে যদি সর্বজীবের কল্যাণের কথা ভাবে তা হলে সে ব্যবহার হবে একরকম ।অপরদিকে সে যদি ব্যাক্তি স্বার্থ,গোষ্ঠি স্বার্থ এমনকি নির্বোধভাবে শুধুমাত্র মনুষ্য প্রজাতির স্বার্থের কথাও ভাবে তবে তার ব্যবহার হবে অন্য রকম ।আমরা পৃথিবীর মানুষেরা এখন বিজ্ঞানের দ্বিতীয় প্রকারের ব্যবহারের সাথে পরিচিত ।বিজ্ঞানের বর্তমান ব্যবহার হচ্ছে আধিপত্য প্রতিষ্ঠার জন্য।ব্যাক্তির ওপর ব্যাক্তির আধিপত্য ।গোষ্টির ওপর গোষ্টির আধিপত্য ।এক দেশের ওপর অন্য দেশের আধিপত্য ।জীবের ওপর মানুষের আধিপত্য।জীব-প্রকৃতির ওপর মানুষের আধিপত্য।এইসব আধিপত্যের মূলে থাকে শোষণ , শোষণের শক্তি প্রতিষ্ঠা এবং শোষণের শক্তি অর্জন ।এ শোষণ মানুষের দ্বারা মানুষের ,জীবের ,মাটির ,বাতাসের ,পানির,নদীর, সাগরের ,পাহাড়-পর্বতের সমগ্র প্রকৃতির ।

মানুষ প্রকৃতিকে বিজয় করতে পারে না ।মানুষ প্রকৃতিকে বিজয় করতে পেরেছে তখনই বলা যেত যদি প্রকৃতি মানুষের বিরূদ্ধে দাঁড়াত। কিন্তু প্রকৃতি মানুষের বিরুদ্ধে দাঁড়ায় না । প্রকৃতি প্রকৃতির মত চলে ।মানুষ প্রকৃতিকে তার বিরুদ্ধে দাঁড় করিয়ে দেয় ।এটাই মানুষের মস্ত বড় এক সংকট ।মানুষেরই আবার ক্ষমতা হলো মানুষ এই সংকট বুঝতে পারে এবং এর বিরুদ্ধে লড়াই করে ।

এক সময় বাঘ শিকারীদেরকে বীর বলা হতো ।বাঘ শিকার করতে পারলে সে মানুষের সামাজিক মর্যাদা বৃদ্ধি পেত ।সমাজ থেকে এমনকি রাষ্ট্র থেকেও সে মানুষকে পুরষ্কৃত করা হতো ।দেরিতে হলেও এক সময় মানুষ বুঝতে পারল বাঘের অস্তিত্বের সাথে মানুষের অস্তিত্ব্ও জড়িত ।এখন বাঘ শিকারীকে ঘৃনা করার জন্য শিক্ষিত পন্ডিত হওয়ার প্রয়োজন পড়ে না ।পৃথিবীর সকল দেশে বাঘ শিকার এখন দন্ডনীয় অপরাধ ।

মানুষ তার স্বার্থপরতা এবং আধিপত্য প্রতিষ্ঠার বীরত্ব দেখাতে গিয়ে মূক পাহাড় কেটে সমান করেছে ,নদী ভরাট করেছে ,প্রকৃতির ঝর্ণাধারা বন্ধ করে দিয়েছে , বন কেটে ,বন জ্বালিয়ে উজাড় করে দিয়েছে আর ভেবেছে প্রকৃতির ওপর বিজয় লাভ করেছে ।প্রকৃতি পরাজিত হয়নি । বিরুপ হয়েছে ।বিরুপ প্রকৃতি তার প্রচন্ড ক্ষমতা ঘৃনায় মানুষকে ফিরিয়ে দিয়ে বুঝিয়ে দিয়েছে প্রকৃতির ওপর মানুষের বিজয় বলে কিছু নেই, থাকতে পারে না ।

হিমালয় পর্বতমালা ।মূক দাঁড়িয়ে তার পাদদেশে বিছানো পৃথিবীর বিরাট অংশের সকল জীবের জন্য বাতাস, পানি,পরিবেশের নিয়ন্ত্রকের অভিভাবকত্ব করে চলেছে ।বুক চিতিয়ে দাঁড়িয়ে পৃথিবীর এক বিশাল অংশের জীবের জন্য প্রত্যক্ষভাবে এবং সারা পৃথিবীর জীবের জন্য পরোক্ষভাবে রক্ষকের ভূমিকা পালন করে চলেছে ।তাকে দেখা, তার কাছে যাওয়া ,দেখে মুগ্ধ হওয়া যেতেই পারে ।বুদ্ধিমান প্রাণি হিসাবে প্রকৃতির যে কোন সৌন্দর্য্যে মানুষের আনন্দিত হওয়া এবং প্রকৃতির কোন ক্ষতি না করে সম্ভব হলে তার কাছে যাওয়া স্বাভাবিক ।কিন্তু এভারেস্ট বিজয়ের নামে প্রতি বছর হাজারে হাজারে মানুষ সর্বজীবের রক্ষক এই পর্বতের গায়ে হামলে পড়ছে ।নির্বোধের মত তাকে খুঁড়ছে ,চিড়ছে , তার ওপর লাফাচ্ছেতো বটেই । আশংকার কথা হলো হাজার হাজার কেজি মানব বর্জ্য , হাজার হাজার কেজি প্লাস্টিক , কাগজ , সিলিন্ডার ইত্যাদি ফেলে তাকে দুষিত করে চলেছে ।আর এদেরকে আমরা ,পৃথিবীর নির্বোধ মানুষেরা বলছি বীর যেমন একসময় বাঘ শিকারীদের বীর বলা হতো ।ব্যাক্তি স্বার্থ ,বিজ্ঞাপনী স্বার্থ আর আধিপত্যবাদী মানসিকতা ছাড়া জীবের বা মানুষের কি কল্যাণে এরা বিজয়ের নামে এমন করছে ?কেন আমরা তাদেরকে বীর বলবো?১৯৫৩ সালে এডমুন্ড হিলারী , শেরপা তেনজিংতো দেখিয়েই দিয়েছেন যে মানুষ সেখানে উঠতে পারে ।তাহলে আর কেন?ব্যাক্তিগত আনন্দ ?তাহলে আমরা তাদেরকে বীর বলবো কেন?যেখানে পরিবেশের এতবড় প্রশ্ন জড়িত সেখানে ব্যাক্তিগত আনন্দকেই বা সমষ্টির বিরুদ্ধে গিয়ে প্রাধান্য দিব কেন ?

বিষয়: বিবিধ

১২১৮ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File