ফরমায়েশ বরদার
লিখেছেন লিখেছেন ফারুক আহমেদ০২ ১৩ মে, ২০১৩, ০২:০৪:২২ দুপুর
মুন্নি সাহার রেশমা উদ্ধার বিষয়ক প্রশ্ন করা নিয়ে কয়েকদিন ধরে বেশ মাতামাতি চলল এবং এখনও চলছে। হাস্য রসাত্নক কথাবার্তা থেকে সিরিয়াস আলোচনা পর্যন্ত সবই চলছে। কেউ আবার মুন্নী সাহাকে কটু কাটব্য করছেন এবং আজে বাজে কথা বলে গালাগালিও করছেন।উদ্দেশ্য ছাড়া কেউ কোন কাজ করে না ।তাই যারা গালিগালাজ করছেন তাঁদের যেমন যাই হোক একটা লক্ষ্য আছে যিনি গালিগালাজ শোনার ব্যবস্থা করেছেন তাঁরও নির্দিষ্ট লক্ষ্য আছে ।আপাতঃ দৃষ্টিতে এগুলোকে আহাম্মকি বা নির্বুদ্ধিতা বলে মনে হয় ।কিন্তু এগুলো কোন আহাম্মকি বা নির্বুদ্ধিতা নয় । এসব কাজ যে সে লোকের পক্ষে করা সম্ভব নয় ।গুরুত্ব পাবে না ।এমন সব মানুষ এসব কাজ করেন যারা সবচেয়ে বেশি আলোচনা-সমালোচনা এবং গালিগালাজ টানতে সক্ষম হন ।মুন্নী সাহা যা নিয়ে এ অবস্থার জন্ম দিয়েছেন সেই রানা প্লাজায় শ্রমিক হত্যাকে কেন্দ্র করে আরো কয়েকজন একই রকমের গালিগালাজ এবং আলোচনা-সমালোচনার জন্ম দিয়েছিলেন ।স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর ‘ঝাঁকুনি’ তত্ত্ব,অর্থমন্ত্রীর ‘তেমন কিছু নয়’ তত্ত্ব সবারই মনে থাকার কথা । এটাও মনে থাকবার কথা এসব আপাতঃ উদ্ভট কথা সরকার এবং সংশ্লিষ্টদের অনেক স্বস্তি এনে দিয়েছিল ।সরকারি লোকজন যখন কোন রকমের ভাষা খুঁজে পাচ্ছিলেন না তখন এসব কথার বিরোধিতাই তাঁদের অনেকের মুখে এত বড় হত্যাকান্ড নিয়ে প্রথম ভাষা এনে দিয়েছিল ।এই কৃতিত্বের জন্যই তাঁরা নিজেদের গালিগালাজের এমন ব্যবস্থা করে থাকে ।নব্বই সালে স্বৈরাচারের বিরূদ্ধে চূড়ান্ত আন্দোলনের কথা মনে পড়ে ।সে সময় একদল লোক এরশাদের কোন্ কোন্ নারীর সাথে কি সম্পর্ক এসবের আলোচনায় পরিবেশ মুখর করে রেখেছিল ।কিবা শিক্ষিত কিবা অশিক্ষিত সকল নির্বিশেষে আমাদের দেশে যুক্তির ভিত্তিভূমিটা যেহেতু অত্যন্ত দুর্বল সেজন্য দৃষ্টি ঘুরিয়ে দেওয়ার ,প্রশ্নহীন করার এ এক মস্ত বড় কৌশল ।এখানকার ভিত্তিভূমিটা এমন যে ,শুনুক বা না শুনুক দুর্বৃত্তকে গালি দিয়ে আকাশ বাতাশ বিদীর্ণ করা হয় কিন্তু যাদের দায়ীত্ব ছিল দুর্বৃত্বকে প্রতিরোধ করা তাদেরকে কিছুই বলা হয় না ।ফলে চিৎকারে আকাশ-বাতাস যতই বিদীর্ণ হোক দুর্বৃত্ত্বও রক্ষা পায় দায়িত্বপ্রাপ্তরাও দায় মুক্ত হতে পারে ।
১৭ দিন পরে ধ্বংসস্তুপের মধ্য থেকে প্রাণের স্পন্দন অবশ্যই আনন্দের বিষয় ।এমন একটি মানুষকেও মনে হয় খুঁজে পাওয়া যাবে না যার এমন ঘটনায় আনন্দ হবে না ।কিন্তু নানা হিসাব থেকে আনন্দ প্রকাশের প্রতিযোগিতায় চোখের সামনে উঠে আসা প্রশ্নগুলো এড়িয়ে যাওয়া যায় না । তাই উপযুক্ত লোককে উপযুক্ত ফরমায়েশ দিয়ে তাদের দ্বারা এমন সব প্রশ্নের অবতারণা করানো হয় যার মধ্যদিয়ে মানুষের চোখের সামনে উঠে আসা অনেক প্রশ্নই চাপা পড়ে যায় ।আমাদের চিন্তার ভিত্তিভূমিটা এই কৌশলকে সমর্থন করে । মুন্নি সাহার সেদিনের প্রশ্নগুলো মোটেও তার নিজের প্রশ্ন ছিল না ।সেটা ছিল ফরমায়েশী অ্যাসাইনমেন্ট । আমাদের দেশে সাংবা্দিকতার যে অবস্থা তৈরী হয়েছে তাতে একথা সাধারণভাবে সত্য ।মুন্নি সাহাহাকে দেওয়া ফরমায়েশ সফল হয়েছে বলা চলে ।এর মাধ্যমে বিশেষ করে শিক্ষিত জনদের কাছ থেকে অনেক প্রশ্নকে সরিয়ে রাখা সম্ভব হয়েছে ।এ না হলে একটি জীবন অনেক মানুষের পঙ্গুত্বের দুর্বিসহতার কাতর চাহনি , হাজার হাজার মানুষের আহাজারি আর হাজারেরও বেশি মানুষের মৃত্যুর ভার এমনভাবে প্রশ্নহীনভাবে আড়াল করে দিতে সমর্থ হতো না ।এই ধ্বংসস্তুপ থেকে আরো জীবন ফিরে পাওয়া গেছে ।কিন্তু সেসব জীবন হাজারো মানুষের মৃত্যুর কষ্ট , আহাজারি আর ভারকে আড়াল করতে প্রতিদ্বন্দ্বী হয়নি। কোন জীবনই আনন্দের অতিশয্যে মৃত্যর ভার আড়াল করার প্রতিদ্বন্দ্বী হয় না । মৃত্যুপুজারীরা হঠাৎ জীবনানন্দে মেতে উঠবার ভানে তাই করে থাকে ।আর এ করতে গিয়েই মুন্নি সাহাদের প্রয়োজন পড়ে ।
সাভার শ্রমিক হত্যাকান্ডে হাজারো মানুষের জীবনের সাথে সাথে অনেক প্রশ্নকেও ধ্বংসস্তুপে চাপা দেওয়ার ব্যবস্থা করা হচ্ছে ।নিহত এবং আহতদের সব দেওয়ার গল্পের আড়ালে সকল প্রশ্নকেই চাপা দেওয়ার ষড়যন্ত্র চলছে ,বিস্মৃত করে দেওয়ার নানা উপায় খোঁজা হচ্ছে ।সংবাদ মাধ্যম গুলোর কয়েকদিনের আচরণে তা বুঝতে কোন অসুবিধা হচ্ছে না ।রেশমাকে নিয়ে তারা এমন বাড়াবাড়ি করছে যাতে সব হারানোদের কষ্ট না পাওয়ার জন্য তাদেরকে মহামানব হতে হবে ।তাঁদের কাছে খুবই মনে হওয়া স্বাভাবিক জীবন যেন তাদের নয় ! তাঁদের স্বজনদের মৃত্যুরও যেন কোন ভার নেই !খবরের কাগজসহ বিভিন্ন মাধ্যমে বাবুর খালি গায়ের ছবি প্রকাশ করা হয়েছিল ।তিনি একাই ত্রিশ-চল্লিশ জন শ্রমিককে ধ্বংসস্তুপ থেকে উদ্ধার করেছিলেন।তিনি নিজেও একজন গরীব মানুষ ।খবরে জানা গেল পরবর্তীতে তিনি অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে থাকা কালে রহস্যজনকভাবে মারা যান ।তাঁকে হত্যা করা হয়েছে বলে সন্দেহ করা হলো ।এতবড় একটি ঘটনা মিডিয়া ধামাচাপা দিয়ে দিল। এ নিয়ে কোন প্রশ্নই তুলতে দেখা গেল না ।যিনি বেঁচে গিয়েছেন তাঁকে নিয়ে মাতামাতি করে বাবুর মৃত্যুকে চাপা দিয়ে দেওয়া হলো ।জীবনের বন্দনা সবাই করেন । আর জীবনের বন্দনার আরেক নাম হলো মৃত্যুকে নিয়ে প্রশ্ন তোলা ।যাঁরা মৃত্যু নিয়ে প্রশ্ন তোলেন না তারা মৃত্যুপুজারী মতলববাজ ।
বিষয়: বিবিধ
১২১২ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন