বি.জি.এম.ই.এ’র লজ্জা হবে না , শোষকদের লজ্জা নেই
লিখেছেন লিখেছেন ফারুক আহমেদ০২ ২৬ এপ্রিল, ২০১৩, ১১:৫০:২৫ সকাল
প্রাকৃতিক বা শোষকদের দ্বারা সৃষ্ট যখনই মানুষের ওপর দুর্যোগ নেমে আসে এ দেশের মানুষ পরস্পর হাত ধরাধরি করে বাঁচে এবং বাঁচায় ।ক্ষমতার মদমত্ততায় বিভোর দানবদের ভয়ানক বেপরোয়ায়ীতে সাভারে যে মানবিক বিপর্যয়ের সৃষ্টি হয়েছে সেখানেও এদেশের মানুষের পারষ্পরিক সহযোগিতার এক অনন্য দৃষ্টান্ত দেখা যাচ্ছে ।সাধারণ মানুষ যেভাবে খালি হাতে নিজের জীবনের ঝুঁকি নিয়ে উদ্ধার কাজ পরিচালনা করছেন তা পৃথিবীর খুব কম দেশেই দেখা যাবে ।
এসব ঘটনায় যারা সরাসরি দায়ী তারা সব সময়ই থাকে ধরাছোঁয়ার বাইরে । তাদের কখনোই খুঁজে পাওয়া যায় না ।বিচারের কোন দৃষ্টান্ততো নেই-ই।সাভারের রানা প্লাজায় মৃত্যু কূপের মধ্যে ঠেলে দিয়ে যারা অসংখ্য শ্রমজীবী মানুষকে হত্যা করলো , সারা জীবনের জন্য পঙ্গু করলো বরাবরের মতই ঘটনার পর থেকে তারা লাপাত্তা ।সরকার বরাবরের মতই এবারও একে দুর্ঘটনা বলে চালিয়ে দিতে চেয়েছে ।দায়ীদের আড়াল করবার জন্য পুরোনো কায়দায় উদ্ভট সব গল্প এঁটে ধুম্রজাল সৃষ্টি করেছে ।এরই মধ্যে দায়ীরা আড়ালে চলে যেতে পেরেছে বা তাদের আড়াল করা হয়েছে ।অবস্থা বেগতিক দেখে সরকারের পক্ষ থেকে তাদের গ্রেফতার করার নির্দেশ দিয়েছে ।
পোষাক নির্মাণকারীদের প্রতিষ্ঠান বি.জি.এম.ই.এ’র লোকেরা দায় এড়ানোর জন্য সেই পুরোনো কায়দায় কথা বলে চলেছে ।তারা বলছে , তারা নাকি ঝুঁকিপূর্ণ ওই ভবনে কাজ বন্ধ রাখার কথা বলেছিলেন ।সেটাকি ছিল শুধুই কথার কথা নাকি সাংগঠনিক নির্দেশ ?সাংগঠনিক নির্দেশ হলে তা পালন করাতে বাধ্য করাও সংগঠনের দায়ীত্বের মধ্যে পড়ে ।যেখানে হাজার হাজার মানুষের জীবনের প্রশ্ন এবং এ ধরণের ঘটনা নতুন নয় সেখানে কেবলই কথার কথা বলে তারা কিভাবে পার পেতে চান?সেতো গেল ঘটনা ঘটার আগে তাদের দায়ীত্বহীনতার বিষয় ।কিন্তু এ ধরণের ভয়াবহ ঘটনার পর তারা কি দায়ীত্ব পালন করছেন?যে শ্রমিকদের রক্ত-ঘাম-শক্তিতে মুনাফায় স্ফীত হয়ে তাদের হাজার হাজার কোটি টাকা, মুনাফার অমানবিক নেশায় তাদেরকে হত্যার পর সেই শ্রমিকের দাফনের জন্য এক টুকরো সাদা কাপড়ের জন্য মানুষকে হাহাকার করতে হয়! এতে এই সমস্ত অর্থলিপ্সুদের লজ্জা হয় না ।
বিভিন্ন প্রচার মাধ্যমে প্রচার করা হচ্ছে সেই মৃত্যুপুরিতে অক্সিজেন নেই , পানি নেই ,জীবন বাঁচানোর জন্য প্রয়োজনীয় খাদ্য নেই , অসম্ভব দুর্গন্ধের মধ্যে মানুষকে কাজ করতে হচ্ছে তা থেকে একটুখানি রেহাই পাওয়ার জন্য এয়ার ফ্রেশনার নেই ।সাধারণ মানুষ তাঁদের সাধ্য অনুযায়ী এসব সরবরাহ করে চলেছেন ।আশপাশের এলাকার মানুষ খাবার রান্না করে নিয়ে এসে হতভাগা স্বজনদের জীবন রক্ষা করে চলেছেন । এসবই এদেশের মানুষের মানবিকতার এক উজ্জল দৃষ্টান্ত ।মানুষের পাশে এসব সাধারণ মানুষের এগিয়ে আসা যেমন আস্বস্ত করে , করূণ আনন্দে চোখে পানি এনে দেয় তেমনই যাদের দায়ীত্ব তাদের নির্লজ্জ অবহেলার কারণে যে ঘৃনা এবং ক্ষোভ সৃষ্টি হয় তা ভাষায় ব্যাক্ত করা যায় না ,মনের মধ্যেই গুমরে মরে ।
যে সব জিনিসের কথা বলা হলো সেগুলোর কত দাম? এর জন্য কি বি.জি.এম.ই.এ-ই যথেষ্ট নয় ?তারা তাদের এক একটি পার্টিতে , ক্লাবে এর চাইতেও অনেক বেশি টাকা খরচ করে ।এরা জীবিত অবস্থায় শ্রমিকের অধিকারতো দেয়ই না শোষণ করে হত্যার পরেও তার দাফনের জন্য এক টুকরো সাদা কাপড়ের জন্য সাহায্যের আহ্বান জানাতে হয় !আর সরকার ?সরকারের দায়ীত্ব এসব কর্তৃপক্ষকে বাধ্য করা । কিন্তু এদের শেকড়তো একই জায়গায় তাই কখনোই সরকার তা করে না ।সরকারেরও একটি ত্রাণ এবং দুর্যোগ মন্ত্রণালয় আছে।তাহলে এসবের অভাব হবে কেন?
শ্রমিকদের জন্য কেন এমন করে ?কল্পনায় ধরে নেওয়া যাক এই সমস্ত মানুষগুলো শ্রমিক নন ,তারা সবাই এলিট।সবাই একবার কল্পনা করুণ দৃশ্যটা কেমন হতো ।কোন সাধারণ মানুষকে কাছে ঘেঁষতে দেওয়া হতো কি? সরকার এবং সংশ্লিষ্টদের তৎপরতা কেমন হতো ?গণ সাহায্যের আহ্বান জানানো হতো কি?এসব প্রশ্নের জবাবের কোন প্রয়োজন নেই । কারণ এর জবাব সবারই জানা ।
যাঁরা অর্থের স্রষ্টা অর্থে তাঁদের ততটুকুই অধিকার অর্থ সৃষ্টির জন্য ধুঁকে ধুঁকে জীবন ধারণ করতে যতটুকু প্রয়োজন ঠিক তততটুকু !জীবন ফুরিয়ে গেলে তাঁর দাফনের কাপড়ে তো আর বিনিয়োগ হয় না ! তাতে তো মুনাফা নেই!খুবই সরল হিসাব ।এতে বি.জি.এম.ই.এ বা সরকারের লজ্জার কিই বা থাকতে পারে !!
বিষয়: বিবিধ
১৩৯৩ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন