জামাত তথা ধর্মভিত্তিক রাজনীতি নিষিদ্ধের একমাত্র অন্তরায় আমাদের গরিবী
লিখেছেন লিখেছেন রহমতুল্লাহ শেলী ০৩ এপ্রিল, ২০১৩, ০৩:১৩:৫৮ দুপুর
ইদানিং আমরা অনেকেই অধৈর্য হয়ে সরকারের উপর রাগান্বিত হয়ে যাচ্ছি এই কারনে যে সরকার এখনও কেন জামাত-শিবিরকে নিষিদ্ধ করছেনা। রাগ হওয়াটাই স্বাভাবিক- কারণ সাধারণ মানুষ সব সময় আবেগের বশবর্তী হয়ে চলে। তারা আগে-পিছে অত কিছু চিন্তা করেনা। কিন্তু যারা একটা সরকার চালান তাদের আবেগের বশবর্তী হয়ে কাজ করলে চলেনা, তাদের অনেক কিছুই চিন্তা করতে হয়। আর চিন্তার কিছু থাকলে তা থেকে যাতে অপ্রীতিকর কিছু না ঘটে সে ব্যাপারে কাজ করার পূর্বেই নিশ্চিত হওয়া প্রয়োজন, নইলে সরকারের সামনে অনতিক্রমযোগ্য বিপদ সামনে এসে পড়তে পারে। তেমনই একটি কাজ হচ্ছে জামাত তথা ধর্মভিত্তিক রাজনীতি নিষিদ্ধ করা- যে দাবীতে দেশের বিশাল এক জনগোষ্ঠী এখন সোচ্চার।
জামাত তথা ধর্মভিত্তিক রাজনীতি নিষিদ্ধের বিষয়টির একটি আন্তর্জাতিক প্রাসঙ্গিকতা আছে- বিশেষ করে সৌদি আরবের সঙ্গে। এই দেশটিকে আস্থায় না নিয়ে এ ধরনের কাজ করাটা আমাদের মতো গরীব দেশের কোন সরকারের পক্ষে প্রায় অসম্ভব একটি কাজ।
সৌদি আরব কেমন দেশ তা আমরা সবাই জানি, তাই সেটা নিয়ে কিছু লিখছিনা। তবে এর সমাজ গঠনের কিছু বিষয় হয়তো অনেকেই জানেন না- তাই লেখাটি বুঝানোর সুবিধার্থে সে বিষয়ে কিছু লেখার প্রয়োজন মনে করছি। সৌদিরা হচ্ছে দুই ধরনের- এক ধরন হচ্ছে এই দেশটির আদি জনগন যাদেরকে বদু বলা হয়, আর এক ধরনের হচ্ছে বাইরে থেকে আসা, যেমন সিরীয় সৌদি, মিশরীয় সৌদি, বাংগালী সৌদি, ইত্যাদি। বদুরা সাধারণভাবে খুবই সহজ, সরল, বাদশাহ্ ভক্ত ও ধর্মপ্রাণও বটে। এদের মাথায় যদি কোনক্রমে একবার ঢোকে যে বাংলাদেশের মানুষরা ইসলামের শত্রু তাহলে সেখানে যে আমাদের প্রায় বিশ লক্ষ নাগরিক কর্মরত আছেন তাদের সেখানে থাকাটা যে হুমকির মধ্যে পড়বে তা বলাই বাহুল্য। এই বিষয়ে তাদের সরকারী আদেশের কোন প্রয়োজন নেই- কারণ সৌদির পুলিশ, সেনাবাহিনী, রয়েল গার্ড প্রভৃতিতে রয়েছে শুধু এদেরই প্রবেশাধিকার। বস্তুতঃ সৌদী রাজতন্ত্র টিকে আছে এদের জোরেই । সরকারী আদেশ না থাকলেও এরা ইচ্ছা করলে পদে পদে বাংলাদেশীদের হয়রানি করতে পারে- এমনকি দেশ থেকে বের করে দেয়া পর্যন্ত। আর সেজন্যেই আমাদের সরকারের জামাত বিষয়ক যে কোন পদক্ষেপ নেয়ার জন্য খুবই প্রস্তুতির প্রয়োজন হয় তথাকার সরকার তথা সাধারণ জনগনকে বুঝাতে যে পদক্ষেপটির সঙ্গে আমাদের ইসলাম প্রীতির কমতির কোন বিষয় জড়িত নয়। নিকট অতীতের কিছু ঘটনাতেই তার প্রমান পাওয়া যাবে।
এই সরকার শুরুতে এসে কওমী মাদ্রাসাগুলোকে নিয়ন্ত্রণের ভেতর আনতে সচেষ্ট হয়েছিল, কিন্তু যুদ্ধাপরাধীদের বিচার শুরু করার পর সেই নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করতে আর সাহস পায়নি পাছে এমনটা যদি মনে করা হয় যে সরকার ইসলামী শিক্ষা চায়না। তাহলে তার পরিণাম যে সৌদিতে কি হতে পারে তা উপরে বলেছি। তারপর, গণজাগরণ মঞ্চের চাপে সরকার যখন যুদ্ধাপরাধের দায়ে কোন দলকে বিচার করার বিষয়ে বিলটি পাশ করে, তখন মন্ত্রিপরিষদের একই সভায় একটি আরবী বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার জন্যও একটা বিল পাশ করতে হয় এটা বোঝাতে যে সরকার ইসলামের শত্রু নয়।
ইসলামী ব্যাংক নিয়েও অনেকের অভিযোগের অন্ত নেই। কিন্তু এই ব্যাংকের এক শেয়ার হোল্ডার হচ্ছেন সৌদির আল-রাজহী পরিবার- এঁরা যেমন ধনী, তেমন প্রভাবশালীও। তাই এঁদেরকে আস্থায় না নিয়ে ইসলামী ব্যাংক নিয়ে সরকারের যে কোন পদক্ষেপ সৌদিদের বিরুদ্ধে নেয়া কোন পদক্ষেপ হিসাবে পরিগণিত হওয়ার সম্ভাবণা ষোল আনা। আর তার পরিনাম কি হতে পারে তা উপরে বলেছি।
তারপর এখন আবার যোগ হয়েছে হেফাজতে ইসলামের কর্মকান্ড। যদিও আমরা বলছি এরা জামাতেরই ‘বি টিম’। কিন্তু বাইরের লোক তো আর সেটা জানেনা। তাই, এদের মোকাবেলায় সরকার যদি সরাসরি হার্ডলাইনে যায় তাহলে কথা উঠবে যে- তোমরা আসলে ইসলাম-কেই পছন্দ করোনা, তাই কোন ইসলামী দলই তোমাদের পছন্দ নয়। আবেগের বশবর্তী হয়ে কেউ হয়তো বলে বসবেন- এতো কেয়ার করার কি আছে? অবশ্যই আছে- যদ্দিন আমাদের বিশ লক্ষ নাগরিক সৌদিতে আছেন। একবার কি কল্পনা করতে পারেন সরকারের কোন কাজের কারণে যদি মাত্র দশ বিশ হাজার বাংলাদেশীকেও দেশে ফিরে আসতে হয় তাহলে তার পরিণাম কি হবে? আমাদের মিডিয়াগুলো ফেরত আসা লোকগুলোর ও তাদের পরিবারের কান্না, আহাজারি আর বিলাপ ২৪ ঘন্টা বিরামহীনভাবে প্রচার করতে থাকবে। আর ফেরত আসলে তো একদিনে আসবে না, অনেকদিন ধরে আসবে। আর যতদিন আসবে ততদিন দেশবাসী এই আহাজারি দেখবে। তাকি কোন ভোটের রাজনীতির দল চাইবে? ভুলেও না। অবশ্য বিপ্লবী সরকার হলে অন্য কথা- তেমন সরকার সব কিছুই তুচ্ছ জ্ঞান করতে পারে।
তাই মুক্তিযুদ্ধের চেতনার পক্ষের আমাদের সকলকে ধৈর্য্যশীল হয়ে সরকারকে সময় দিতে হবে যাতে তারা প্রয়োজনীয় কৌশল ঠিক করে সময় মতো আমাদের ইচ্ছা পূরণ করতে পারেন। মনে রাখতে হবে বর্তমানে এই সরকারই আমাদের ভরসা। আরও মনে রাখতে হবে যে, আমাদের সকল নাগরিকদের কর্মের সংস্থান আমরা নিজেরা করতে পারিনা, তাই চাইলেও অনেক কিছুই আমরা হুট করে করতে পারিনা।
বিষয়: রাজনীতি
১০৪০ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন