দুনিয়ার সময় সমুদ্রের এক ফোটা পানির সমান
লিখেছেন লিখেছেন মুহাঃ মুস্তাফিজুর রহমান ২০ মে, ২০১৩, ০৪:১৮:২৬ বিকাল
মানুষকে আল্লাহ তায়ালা সৃষ্টির শ্রেষ্ঠ জীব হিসাবে তৈরি করেছেন। আল্লাহ মানুষকে বহুবিধ গুন দিয়েছেন। আর মানুষের মাঝে খারাপ-ভালোর অসংখ্য চরিত্র রয়েছে। মানুষের একটি বড় দিক হলো, মানুষ সবসময়ই পৃথিবীকে নিজেদের চীরস্থায়ী আবাসস্থল হিসাবে মনে করে। অথচ এই পৃথিবী হলো ক্ষণস্থায়ী। হাদিসের ভাষায়,
হযরত মুস্তাওরাদ(রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন যে,নবী কারীম(সাঃ) বলেছেন, আল্লাহর শপথ পরকালের তুলনায় দুনিয়ায় শুধু এতটুকু যে, তোমাদের কেহ যদি অঙ্গুলি (কেহ যদি তার অনামিকা অঙ্গুলি) সমুদ্রে ডুবিয়ে বের করে আনে, অতঃপর সে দেখবে যে, সেই অঙ্গুলি কতটুকু লয়ে ফিরছে।(মুসলিম)
তার মানে হচ্ছে দুনিয়ার জীবন খুবই কম। অথৈ পানির মাঝে এক ফোটা পানি যেমন কিছুই না। তেমনিই এই দুনিয়া আখেরাতের জীবনের কাছে কিছুই না। আর এই সামান্য দুনিয়ার জন্য এত কিছু? মুমিনের জন্য দুনিয়া আসল না। আসল হলো আখেরাত। তবে বিধর্মীদের জন্য দুনিয়াই আসল। কারণ আখেরাতে তারা কিছুই পাবে না। মুমিনের জন্য দুনিয়া হচ্ছে, আখেরাতের শস্য ক্ষেত্র।
যারা আল্লাহকে বিশ্বাস করে এবং সেই অনুযায়ী জীবনকে অতিবাহিত করে তারাই সফলকাম। দুনিয়ার কোন মোহ তাদেরকে সঠিক পথ থেকে দূরে সড়াতে পারবে না। সকল কিছুর থেকে আল্লাহ এবং রাসূল(সাঃ) এর ভালোবাসাই শ্রেষ্ঠ।
ৃৃৃৃৃৃزُيِّنَ لِلنَّاسِ حُبُّ الشَّهَوَاتِ مِنَ النِّسَاء
১৪) মানুষরে জন্য নারী, সন্তান, সোনারুপার স্তূপ, সরো ঘোড়া, গবাদী পশু ও কৃষি ক্ষতেরে প্রতি আসক্তকিে বড়ই সুসজ্জতি ও সুশোভতি করা হয়ছে৷ে কন্তিু এগুলো দুনয়িার ক্ষণস্থায়ী জীবনরে সামগ্রী মাত্র৷ প্রকৃতপক্ষে উত্তম আবাস তো রয়ছেে আল্লাহর কাছ৷ে আলে ইমরান
হযরত আনাস(রাঃ) থেকে বর্ণিত রাসূল(সাঃ) বলেছেন, যার হাতে আমর প্রাণ, তার কসম, কেউ ততক্ষণ ঈমানদার হতে পারবে না, যে পর্যন্ত আমি তার পিতা,পুত্র ও সকল মানুষ হতে প্রিয় না হবো। (বুখারী)
দুনিয়ার এই লোভ-লালসা,অর্থ সম্পদ থেকে আল্লাহ ও রাসূল(সাঃ)কে বেশি ভালোবাসা ফরজ। তাইতো দেখা যায়, রাসূল(সাঃ) সবকিছুর থেকে আল্লাহর সান্নিধ্য পাওয়ায় শ্রেষ্ঠ মনে করেছেন। সূরা নাসর নাযিল হওয়ার সাথে সাথে রাসূল(সাঃ) বুঝতে পারলেন তার জীবন শেষ ভাগে। তাই তিনি বেশিবেশি তওবা ও ইস্তেখফার করেন। শেষ বিদায়ের পাঁচ দিন পূর্বে মসজিদে নববীতে উপস্থিত সাহাবীদের উদ্দেশ্য করে বলেন, আল্লাহ তাঁর এক বান্দাকে দুনিয়ার সকল সম্পদ অথবা আখেরাত কবুল করার এখতিয়ার দিয়েছেন, কিন্তু সেই বান্দা কেবলমাত্র আখেরাত কবুল করে নিয়েছেন। অর্থাৎ অর্থসম্পদের চেয়ে আল্লাহর সান্নিধ্য পাওয়া রাসূল(সা) এর কাছে প্রিয়। রাসূলের(সা) বিদায়ের আগে বলেন, রাসূল তার আল্লাহর সাথে মিলিত হতে যাবে আর তার ঘরে দুনিয়ার সম্পদ জমা থাকবে! এই নির্দেশের সাথে সাথে ঘরের সবকিছুই বিলিয়ে দেয়া হয়। ঐ দিন রাতে বাতি জ্বালানোর মতো তেল পর্যন্ত ছিল না। অন্য ঘর থেকে ধার করে বাতি জ্বালানোর জন্য তেল আনা হয়। দুনিয়ার এই জীবন আরাম আয়েশের জন্য নয়। সুতরাং এই জীবন নিয়ে বাহাদুরি করার কিছুই নেই। আল্লাহর শুকরিয়া আদায়ের মাধ্যেমেই জীবনকে অতিবাহিত করা শ্রেষ্ঠ। দুনিয়ার অর্থ সম্পদকে আঁকড়ে থাকলে আল্লাহকে পাওয়া যায় না। এই কথাটি বুঝতে পেরে ছিলেন মুসলিম জাহানের প্রথম খলিফা হযরত আবু বকর(রা)। মৃত্যুর কিছুক্ষণ পূর্বে তিনি বলেন, বায়তুলমাল থেকে আমি এই পর্যন্ত যে পরিমাণ পারিশ্রমিক গ্রহণ করেছি। তার হিসাব করো। হিসাব করে জনা গেল গোটা খেলাফত আমলে মোট ছয় হাজার দেরহাম গ্রহণ করেছিল। তৎক্ষণাৎ ভূমি বিক্রি করে এই পরিমান অর্থ বায়তুলমাল ফেরত দেয়া হয়। শুধু তাই নয় বায়তুলমাল থেকে অর্থ নেয়ায় যে সম্পত্তি বৃদ্ধি পেয়েছে তাও ফিরত দিয়েছেন। কারণ রেখে যাওয়া দুনিয়ার এই সম্পদের হিসাব খুবই কঠিনভাবে আল্লাহর কাছে দিতে হবে। তাই অনেক সাহাবীগণ সারাদিন কষ্ট করে যে টাকা পেত তার দুই-তৃতীয়াংশই আল্লাহর রাস্তায় ব্যয় করে দিতেন। আমাদেরও উচিৎ দুনিয়ার মোহে আক্রান্ত না হওয়া। এই জীবনের থেকে আখেরাতের জীবনকে বেশি ভালোবাসা দরকার। সাহাবীদের মাঝে অনেকেই ছিলেন ধনী। কিন্তু ইসলামের জন্য তারা সম্পত্তিকে ত্যাগ করেন। তাদের মাঝে হযরত মুসয়াব ইবনে উমাইর(রা) অন্যতম। মক্কার বিত্তশালী পরিবারে তার জন্ম হয়। কিন্তু সবকিছুকে ছেড়ে আল্লাহ ও রাসূল(সা)কে ভালোবেসেছেন। ইসলাম গ্রহণ করায় পরিবার তার উপর নির্যাতন চালায়। অতপর নিজের অঢেল সম্পত্তি ত্যাগ করে হিজরত করেন। একদিন সাহাবীদের একটি দল রাসূল(সা)এর পাশে বসা ছিলেন। এমন সময় পাশ দিয়ে মুসয়াব(রা) যাচ্ছিলেন। তাকে দেখে সাহাবীদের চোখে পানি চলে আসে। কারণ মুসয়াবের গায়ে শত তালি দেয়া র্জীণ র্শীণ একটি কাপড়। রাসূল(সা) মুচকি হেসে বলেন, মক্কায় আমি মুসয়াবকে দেখেছি। তার পিতামাতার বেশি আদরের আর কোন যুবক মক্কায় ছিল না। আল্লাহ ও রাসূলের মহাব্বতে সবকিছু সে ত্যাগ করেছে। রাসূল(সা) উহুদ যুদ্ধে ইসলামের ঝান্ডা মুসয়াব(রা)এর হাতে তুলে দেন। যখন শত্রুরা রাসূলের কাছাকাছি চলে যাচ্ছিল। তখন জোরে তাকবির দিয়ে নিজের দিকে শত্রুদের দৃষ্টি ফেরান। কারণ একটিই রাসূল(সা) যাতে কষ্ট/আহত না হয়। শত্রুরা তরবারি দিয়ে তাঁর ডান হাতটি বিচ্ছিন্ন কারে ফেলে। তারপর মুসয়াব(রা) ইসলামের ঝান্ডাটি বাম হাত দিয়ে তুলে ধরেন। নিষ্ঠুর কাফেরেরা তাঁর বাম হাতটিও কেটে ফেলে। এমন অবস্থায় ঝান্ডার ওপর ঝুকেঁ পড়ে দুই বাহু দ্বারা তুলে ধরেন। ঠিক এই সময় আল্লাহর প্রিয় মুসয়াবকে লক্ষ্য করে বর্শা নিক্ষেপ করা হয়। সাথে সাথে মাটিতে পড়ে যান। আর এইভাবে তিনি শহীদ হন। তাঁর লাশের সামনে দাঁড়িয়ে আল্লাহর রাসূল(সা) অঝোরে কাঁদেন। বিশাল সম্পত্তির মালিক মুসয়াব(রা)। শেষে বিদায়ে তার দাফনের জন্য এক টুকরা কাপড় ছিল। যা দিয়ে পুরো দেহ ঢাকেনি। তিনি দুনিয়ার সহায় সম্পত্তির চেয়ে আল্লাহ ও রাসূলকে বেশি ভালোবেসেছেন। আর আল্লাহ তায়ালা তাঁর মর্যাদা দিয়েছেন শহীদ করে।
পৃথিবীতে যতজন শহীদ হয়েছে, তারা সবাই দুনিয়ার মোহ ত্যাগ করেছেন। শুধুই শহীদরাই নয় সাহাবী,তাবেঈ,তাবে তাবেঈনসহ ইসলামী আন্দোলনের কর্মীরাও। আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনেরই ছিল প্রধান লক্ষ্য। বিংশ শতাব্দীর ইসলামী জাগরণের অন্যতম নেতা মাওলানা মওদূদী(রহঃ)। তিনি অঢেল সম্পত্তি অর্জনের হাতজানি পেয়েও দূরে থেকেছেন। ইসলামী আন্দোলনকে তিনি বেছে নিয়েছিলেন। নিজের লক্ষ্য উদ্দেশ্য হিসাবে গ্রহণ করেন আল্লাহর সন্তুষ্টিকে। আর এই কারণে তার উপর চলে জেল-জুলুম নির্যাতন। ”কাদিয়ানী সমস্যা” বইটি লেখার জন্য তাকে ফাঁসির আদেশ দেয়া হয়। জেলখানায় মাওলানা মওদূদী নিজের ফাঁসির আদেশ শুনেও ছিলেন স্থির। ফাঁসির আসামিদের পায়জামার ইজারবন্দ দেয়া হয় না। জেলের নম্বদারের কাছে পায়জামার ইজারবন্দ চান। উত্তরে নম্বরদার জানায়ঃ ফাঁসির আসামিদের পায়জামার ইজারবন্দ দেয়া হয় না। কারণ তা দিয়ে যদি অতœহত্যা করে বসে।
মাওলানা মওদূদী মৃদু হাস্য সহকারে বলেনঃ আরে যে প্রাণভরে শাহাদাতের জাম পান করতে যাচ্ছে, সে কি এত নির্বোধ যে, আতœহত্যা করে জাহান্নামে যাবে?
আল্লাহর প্রতি তাঁর অবিচল আস্থার প্রকাশ পায় একটি উক্তি থেকে। তিনি বলেনঃ জীবন-মৃত্যুর ফয়সালা আসমানে হয়, যমীনে হয় না। আল্লাহু আকবার।
আল্লাহর প্রেমে যখন মুমিনেরা আরাম আয়েশকে ত্যাগ করে, আখেরাতকে অগ্রাধিকার দেন। ঠিক তখন আমারা দুনিয়ার চাকচিক্যে মত্ত হয়ে আছি। আখেরাতের চেয়ে দুনিয়াকে বেশি অগ্রাধিকার দিচ্ছি। আমরা হারামকে হারাম জানার পরেও হারামকেই গ্রহণ করছি। শুধুমাত্র একটি উদ্দেশ্য দুনিয়াতে প্রতিষ্ঠিত হওয়া। সুদ ইসলামে সরাসরি হারাম। সুদের ব্যাপারে কোন প্রকার ইসতেহাদ করার সুযোগ নেই। অথচ আমরা দুইটি টাকার আশায় সুদকে অবলীলায় গ্রহণ করছি।
﴿يَمْحَقُ اللَّهُ الرِّبَا وَيُرْبِي الصَّدَقَاتِ ۗ
كَفَّارٍ أَثِيمٍ﴾
আল্লাহ সুদকে নশ্চিহ্নি করনে এবং দানকে র্বধতি ও বকিশতি করনে ৷আর আল্লাহ অকৃতজ্ঞ দুষ্কৃতকারীকে পছন্দ করনে না
সুরা বাকারা-২৭৬
যারা সুদ খায় তাদেরকে জিজ্ঞাসা করলে তারা বলে যে, আমি টাকা বিনিয়োগ করব তার বিনিময়ে লাভ পাবোনা? এইটা কি হয়? এই কথা শুনলে সাথে সাথে মনে পরে অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক সিনিয়র ও মার্শালের কথা। তারা চমৎকারভাবে ইসলাম বিরুদ্ধী দুইটি সুদের সংজ্ঞা দিয়েছেন।
অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক সিনিয়র বলেনঃ সুদ হচ্ছে বর্তমান ভোগ বিরতির পুরস্কার।
অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক মার্শাল বলেনঃ সুদ হচ্ছে ভোগের জন্য প্রতীক্ষার পুরস্কার।
এই সংজ্ঞার সাথে সুদখোরদের মানসিকতার মিল খুজে পাওয়া যায়। কারণ মুসলমানদের মাঝে সুদের প্রচলন তো ঘটিয়েছে তারাই।
সাহাবায়ে কেরামরা ক্ষুধার জ্বালা নিয়ে ইসলামের কাজ করেছে। ঠিক তখন আমরা কোটিকোটি টাকা খরচ করে থার্টিফাষ্ট নাইট উদযাপন করছি। ঢাকায় এমনও ক্লাব আছে, যেখানে ঐ রাতে প্রবেশের মূল্য ছিল মাত্র ১০,০০০টাকা। সেখানে পাওয়া যাবে অর্ধউলঙ্গ মেয়ে এবং পানীয়। পত্রিকাতে দেখি দেশের অনেক মুক্তিযোদ্ধারা ভিক্ষা করে জীবন ধারণ করছে। আল্লাহর রাসূল(সাঃ) বলেন, অপচয়কারী শয়তানের ভাই।
আমরা বিজয় দিবস ও ভাষা দিবস সহ বিভিন্ন দিবসে ফুলের জন্য শতশত কোটি টাকা ব্যয় করা হয়।
আমরা আজকে দুনিয়ার নেশায় মত্ত হয়ে গেছি। আমরা একবারও ভাবছি না আল্লাহর দরবারে আমাদের দাঁড়াতে হবে। জবাবদিতে হবে জীবনের প্রত্যেকটি মূহুর্তের। আল্লাহর কাছে সবচেয়ে প্রিয় সময় হচ্ছে যৌবনকাল। আমরা পাশ্চাত্য সভ্যতায় মগ্ন হয়ে ভুলে গেছি আল্লাহর কথা। যে সময়টা আল্লাহর প্রেমে দেওয়ানা হওয়ার কথা, তখন আমরা বেগানা মেয়েদের দেওয়ানা হয়ে ঘুড়ে বেড়াচ্ছি। মাঝে মাঝে শুনা যায় দুই-চারটি গার্লফ্রেন্ড না থাকলে সে আবার কিসের স্মার্ট ছেলে। এটাই পাশ্চাত্য অসভ্যতার ফল। যুবক-যুবতীদের উদ্দেশ্যে বলবো, আমাদের এই জীবন ক্ষণস্থায়ী। এই জীবনটাই শেষ নয়। একটু চোখ বুঝে দেখুন তো, এখন যদি মারা যান। তাহলে আপনার রবের সামনে কি আপনি দাঁড়াতে প্রস্তুত?
﴿يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا لَا تُلْهِكُمْ أَمْوَالُكُمْ وَلَا أَوْلَادُكُمْ
عَن ذِكْرِ اللَّهِ ۚ وَمَن يَفْعَلْ ذَٰلِكَ فَأُولَٰئِكَ هُمُ الْخَاسِرُونَ
হে সইে সব লোক যারা ঈমান এসছেো, তোমাদরে ধন-সম্পদ ও সন্তানাদি যনে তোমাদরেকে আল্লাহর স্মরণ থকেে গাফলি করে না দয়ে৷ যারা এরূপ করবে তারাই ক্ষতগ্রিস্ত হতে থাকব৷ে সূরা মুনাফিকুন-০৯
বিষয়: বিবিধ
২১৭৭ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন