নন্দিত না নিন্দিত মানুষ!!
লিখেছেন লিখেছেন ড মাহফুজুর রহমান আখন্দ ২৪ অক্টোবর, ২০১৪, ০৪:৫১:১৬ বিকাল
বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর সাবেক আমীর অধ্যাপক গোলাম আজম ইন্তিকাল করেছেন। ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন।দূর থেকে অধ্যাপক গোলাম আজমের বক্তব্য শুনেছি, অনেক কাছে বসে উনার সাথে কথা বলেছি, উনার বই পড়েছি, সব কিছুতেই মুগ্ধ হয়েছি। উনি ছিলেন একজন জ্ঞানী, প্রজ্ঞাবান ও ব্যক্তিত্ব সম্পন্ন নেতা।
অধ্যাপক গোলাম আযম ১৯৪৮ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ ডাকসু’র জিএস হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। তখন ভাষা আন্দোলনে অসামান্য অবদান রাখেন তিনি। পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা ‘বাংলা’ দাবিতে প্রধানমন্ত্রী লিয়াকত আলী খানকে দেয়া স্মারকলিপি পাঠ করেন অধ্যাপক গোলাম আযম। এজন্য তিনি কয়েকবার কারা বরন করেন। এদেশের এক শ্রেনীর মিডিয়া তার এ সকল ভূমিকাকে তুলে ধরতে বড়ই কৃপনতা প্রদর্শন করেছে। তার সংক্ষিপ্ত জীবন বৃত্তান্ত তুলে ধরছি।
অধ্যাপক গোলাম আযম ১৯২২ সালের ৭ই নভেম্বর ঢাকার লক্ষীবাজারে তার মাতুলালয় শাহ সাহেব বাড়িতে জন্মগ্রহন করেন। তার পৈতৃক নিবাস ব্রাম্মনবাড়িয়ার নবীনগরের বীরগাও। তিনি ১৯৪৬ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে রাষ্ট্রবিজ্ঞানে বিএ ও ১৯৪৮ সালে এমএ পাশ করেন। এর আগে ১৯৪৪ সালে ঢাকার ততকালিন ইসলামিক ইন্টারমিডিয়েট কলেজ থেকে মেধা তালিকায় দশম স্থানসহ ইন্টারমিডিয়েট পাস করেন। ১৯৫০ থেকে ১৯৫৫ সাল পর্যন্ত তিনি রংপুর কারমাইকেল কলেজে অধ্যাপনা করেন।
অধ্যাপক গোলাম আযম ১৯৪৭-৪৮ মেয়াদে ডাকসুর জিএস নির্বাচিত হন। ১৯৪৮-৪৯ মেয়াদে তিনি আবার এ পদে নির্বাচিত হন। তিনি একজন অন্যতম ভাষা সৈনিক। ডাকসুর জিএস থাকাকালে রাষ্ট্রভাষা বাংলার দাবিতে ১৯৪৮ সালের ২৭শে নভেম্বর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় খেলার মাঠে সব ছাত্রছাত্রীর পক্ষ থেকে তিনি পাকিস্থানের ততকালিন প্রধানমন্ত্রী লিয়াকত আলী খানের কাছে ঐতিহাসিক স্মাররকলিপি উপাস্থাপন করেন্। ভাষা আন্দোলনের কারনে ১৯৪৮ সালের ১১ই মার্চ তাকে গ্রেফতার করা হয়। রংপুর কারমাইকেল কলেজে অধ্যাপনার সময়ও তিনি কারাবরন করেন।
জীবনের শুরুতে তিনি তাবলিগ জামায়াতের সাথে যুক্ত হন। পরে ১৯৫৪ সালে তিনি জামায়াতে ইসলামিতে যোগদান করেন এবং ১৯৬৭ থেকে ১৯৭১ সাল পর্যন্ত তিনি ততকালিন পুর্ব পাকিস্তানের জামায়াতে ইসলামির আমিরের দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৫৭ সাল থেকে ১৯৬৭ সাল পর্যন্ত একই দলের সেক্রেটারি জেনারেল হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। জীবনে বহুবার তিনি রাজনৈতিক কারনে কারাবরন করেছেন।
জামায়াতে ইসলামির আমির সহ এ দলের গুরুত্বপুর্ন পদে দায়িত্ব পালনের পাশাপাশি তিনি পাকিস্তান সরকার বিরোধী আন্দালন এবং জাতীয় বিভিন্ন সঙ্কট উত্তরনে গুরুত্বপুর্ন ভুমিকা পালন করেছেন। ১৯৫৪ সালে যুক্তফ্রন্ট নির্বাচনের পক্ষে প্রচারনা ,আইউব খান বিরোধী জোট ডেমোক্্রাটিক অ্যাকশন কমিটির কেন্দ্রীয় সদস্য ,পাকিস্তানের শাসকবিরোধী জোট পাকিস্তান ডেমোক্রাটিক মুভমেন্টর সেক্রেটারি জেনারেলের দায়িত্ব পালন করেছেন।
১৯৭১ সালের ২২ নভেম্বর তিনি পাকিস্তানের উদ্দেশ্যে বাংলাদেশ ত্যাগ করেন এবং ১৯৭৩ সালে লন্ডন যান। ১৯৭৮ সালের ১১ই আগস্টে তিনি দেশে ফিরে আসেন এবং আবার জামায়াতের আমির নির্বাচিত হন। ২০০১ সালে তিনি আমিরের দায়িত্ব থেকে অবসরে যান। ১৯৭৩ সালে অধ্যাপক গোলাম আযমের বাংলাদেশী নাগরত্বি কেড়ে নেয়া হয় এবং পরে ১৯৮৪ সালে হাইকোর্টের আদেশের মাধ্যমে তা আবার ফিরিয়ে দেয়া হয়।
বাংলাদেশে জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ক্ষেত্রে তত্বাবধায়ক সরকার ব্যাবস্তার রুপকার অধ্যাপক গোলাম আযমের পরিচিতি রয়েছে দেশের গন্ডি পেরিয়ে আন্তর্জাতিক মহলেও। দীর্ঘ রাজনৈতিক জীবনের সুবাদে বিশ্বের অনেক রাজনৈতিক নেতার কাছে অধ্যাপক গোলাম আযম একজন ইসলামি রাজনৈতিক হিসেবে খুবই পরিচিত একটি নাম। জেনারেল এরশাদের শাসনামলে আশির দশকের মাঝামাঝি তিনি জাতীয় নির্বাচনের ক্ষেত্রে তত্বাবধায়ক সরকারর ব্যাবস্থার ধারনা প্রচার করেন এবং ১৯৯১ সালে এ ব্যাবস্থার অধীনে বাংলাদেশে একটি নির্বাচন অনষ্টিত হয় যা স্বাধীন বাংলাদেশে শান্তিপুর্ন অবাধ সুষ্টু নির্বাচনের ক্ষেত্রে মাইলফলক এবং যুগান্তকারী ঘটনা হিসেবে চিন্হিত হয়ে আছে
অধ্যাপক গোলাম আযম বেশ কিছু আলোচিত গ্রন্থের প্রনেতা। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য পশাশি থেকে বাংলাদেশ, ইকামাতে দ্বীন, মনটাকে কাজ দিন , তার আত্মজীবনীমুলক বই জীবনে যা দেখলাম ইত্যাদি।
অধ্যাপক গোলাম আযমের ৬ ছেলে। এর মধ্যে সাবেক ব্রিগেডিার জেনারেল আব্দুল্লাহিল আমান আযমী দেশে আছেন। তার স্ত্রী সৈয়দা আফিফা আযম জীবিত আছেন।
জীবনের শেষ ভাগে তার যখন বড়ই সেবা যত্নের প্রয়োজন ছিল, তখন প্রিজন সেলে একাকী তিনি কষ্টকর জীবন অতিবাহিত করলেন।এ বিষয়টি চিন্তা করলে অত্যন্ত ব্যথিত হই।
আল্লাহ এ মর্দে মুজাহিদ কে শাহাদাতের মর্যাদা দান করুন, তার নেক আমল সমূহ কবুল করুন, তাকে জান্নাতে উত্তম মর্যাদা দান করুন।
বিষয়: বিবিধ
১২৬৬ বার পঠিত, ৪ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন