রাবিতে গোল টেবিল বৈঠকে বক্তারা- গণ মানুষের কন্ঠরোধ করতেই সম্প্রচার নীতিমালা

লিখেছেন লিখেছেন ড মাহফুজুর রহমান আখন্দ ২৭ আগস্ট, ২০১৪, ০২:১১:৪২ দুপুর



“আওয়ামীলীগ সরকার কখনো মিডিয়া বান্ধব নয়। এরা যখনি ক্ষমতায় এসেছে তখনি গণমাধ্যমের কন্ঠ চেপে ধরেছে। মানুষের মত প্রকাশের অধিকারকে হরণ করেছে। তারই ধারাবাহিকতায় সম্প্রতি জাতীয় সম্প্রচার নীতিমালার অনুমোদন দিয়েছে। শুধু সংবাদ মাধ্যমকে নিয়ন্ত্রণ নয় গণ মানুষের কন্ঠরোধ করতেই এই সম্প্রচার নীতিমালা করা হয়েছে। গতকাল মঙ্গলবার দুপুরে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে ‘গণমাধ্যম ও জাতীয় সম্প্রচার নীতিমালা ২০১৪’ শীর্ষক গোলটেবিল বৈঠকে বক্তারা এসব কথা বলেন। লেখক ফোরাম সভাপতি কবি ও গবেষক ড. মাহফুজুর রহমান আখন্দের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠিত এ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় কুষ্টিয়ার সাবেক ভিসি প্রফেসর রফিকুল ইসলাম। বিশিষ্ট রাষ্ট্রচিন্তক ও গবেষক ড. পিয়াস করিম ও পিআইবি’র সাবেক মহাপরিচালক ড. রেজোয়ান সিদ্দিকী টেলিকনফান্সের মাধ্যমে অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন। অনুষ্ঠানে মূলপ্রবন্ধ উপস্থাপন করেন প্রফেসর ড. আবদুর রহমান সিদ্দিকী ও অধ্যাপক মুহম্মদ শরীফুল ইসলাম।

রাবি লেখক ফোরামের উদ্দোগে বিশ্ববিদ্যালয় রবীন্দ্রভবনের শিক্ষক লাউঞ্জে এ গোলটেবিল বৈঠকে দৈনিক দিনকালের সম্পাদক ড. রেজোয়ান সিদ্দিকী টেলিকনফারেন্সে বলেন, “আওয়ামীগ সরকার কখনো মিডিয়া প্রেমী ছিলনা। ফ্যাসীবাদের ধর্মই হচ্ছে ভিন্নমতকে দমন করা। তাই এই ফ্যাসীবাদী সরকার ভিন্নমত দমনে জাতীয় সম্প্রচার নীতিমালা প্রনয়ন করেছে”।

তিনি আরো বলেন, “সরকার নিজ লোকদের গণমাধ্যমকেও বিশ্বাস করেনা। সব সময় ভয়ে থাকে কখন যেন সত্য প্রকাশিত হয়ে যায়। এ নীতিমালার ফলে দেশীয় গণমাধ্যম পথে বসবে আর ভিনদেশী সাংস্কৃতিক আগ্রাসন বাড়বে। এতে রয়েছে বন্ধুভাপন্ন বিদেশী রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে প্রচারনা চালানো যাবে। এর অর্থ সীমান্তে বিএসএফ কোন বাংলাদেশীকে গুলি করে মারলে সংবাদমাধ্যম তা প্রকাশ করতে পারবেনা। তিস্তার পানি বন্টন নিয়ে কথা বলা যাবেনা। আইনশৃংখলা বাহিনীর অত্যাচারের দৃশ্য প্রচার করা যাবেনা”। তিনি সর্বসাধারণকে এই কালো আইনের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ গড়ে তোলার আহ্বান জানান।

বিশিষ্ট কলামিস্ট ও রাজনৈতিক বিশ্লেষক ড. পিয়াস করিম বলেন, “জাতীয় সম্প্রচার নীতিমালা গণমাধমের উপর সরকারের সরাসরি হস্তক্ষেপ। এর মাধ্যমে মানুষের মত প্রকাশের অধিকারকে হরণ করা হয়েছে। ফলে নারায়নগঞ্জের সাত খুনের ঘটনায় আইনশৃংলাবাহিনী জড়িত তা আপনি বলতে বা প্রকাশ করতে পারবেন না। বন্ধু রাষ্টের সাথে সম্পর্ক নষ্ট হবে এজন্য আপনি তাদের হত্যা-নির্যাতনের সংবাদ প্রকাশ করতে পারবেন না। এই নীতিমালা বাতিলের আন্দোলন কোন দলের বা মতের নয়। এটা গণতন্ত্র রক্ষার আন্দোলন। এ আন্দোলনে সবাইকে ঝাঁপিয়ে পড়তে হবে”।

ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ভিসি প্রফেসর রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘‘আওয়মীলীগ বাংলাদেশকে তাদের পৈত্রিক সম্পত্তি মনে করে। তাই যখন যা খুশি তাই করে যাচ্ছে। তাই শুধু জাতীয় সম্প্রচার নীতিমালা বাতিল নয় সরকার উৎখাতের আন্দোলনে নামতে হবে”।

অনুষ্ঠানে বক্তাগণ আরো বলেন, ক্ষমতাসীন অনির্বাচিত সরকার অতি কৌশলে মতায় থেকে সকল ধরনের অনিয়ম দূর্নীতিকে লালন করে নিজেদের মতাকে আরো পাকাপোক্ত করতেই এ নীতিমালা প্রণয়ন করেছে। এ নীতিমালার মাধ্যমে রাষ্ট্রীয় সন্তাস আরো বেশি জেকে বসবে কিন্তু প্রতিবাদ করার কোন মতা থাকবে না। এ নীতিমালার কারণে সশস্ত্র বাহিনী কিংবা আইন শৃঙ্খলা বাহিনী এমনকি প্রতিবেশি রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে কোন সমালোচনা করার পথও রুদ্ধ হবে। প্রতিবেশি দেশ হাজারো অন্যায় করলে, সীমান্তে পাখির মতো গুলি করে মানুষ হত্যা করলে কিংবা বাংলাদেশকে মরুভূমি করে মারলেও কোন কথা বলার সুযোগ থাকবে না। মূলত এ নীতিমালার দ্বারা শুধুমাত্র গণমাধ্যমের কণ্ঠরোধ করা হচ্ছেনা বরং এর দ্বারা জনগণের কণ্ঠরোধ করে সমস্ত মানবাধিকার থেকে বঞ্চিত করার কৌশল গ্রহণ করা হচ্ছে। তাই অতি সত্তর এ নীতিমালা বাতিলের দাবী করা হয়। সেইসাথে দিগন্ত ও ইসলামিক টেলিভিশন, সিএসবি, চ্যানেল ওয়ান ও আমারদেশসহ সকল বন্ধ মিডিয়া খুলে দিয়ে মাহমুদুর রহমানসহ সকল কারাবন্দি দেশপ্রেমিক নাগরিককে মুক্তি দেয়ারও দাবী উত্থাপন করা হয়।

আলোচনায় অংশ গ্রহণ করেন রাবি বিজ্ঞান অনুষদের সাবেক ডিন প্রফেসর ড. আবুশ হাশেম, রাবির সাবেক প্রোভিসি ও পিএসসির সাবেক সদস্য প্রফেসর ড. কে এ এম শাহাদত হোসেন মণ্ডল, সোনারগাঁ বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি প্রফেসর আবদুর রাজ্জাক, ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের সহসভাপতি রেজাউল করিম রাজু, রাবি শিক সমিতির সাবেক সভাপতি প্রফেসর ড. মু. আজহার আলী, জাতীয়তাবাদী ও ইসলামী মূল্যবোধে বিশ্বাসী শিক্ষক গ্রুপের আহ্বায়ক প্রফেসর ড. শামসুল আলম সরকার, সাংবাদিক নেতা ও কথাশিল্পী নাজিব ওয়াদুদ, প্রফেসর ড. মোস্তফা কামাল আকন্দ, প্রফেসর ড. মু. এনামূল হক, প্রফেসর ড. মু. নিজাম উদ্দিন, প্রফেসর ড. গোলাম হোসেন, প্রফেসর ড. জে এ এম সকিলউর রহমান, প্রফেসর ড. মাঈন উদ্দিন, ড. জি এম সফিউর রহমান, ড. ইফতিখারুল আলম মাসউদ, সাংবাদিক সোহেল মাহবুব, রাবি প্রেসকাবের সভাপতি ডালিম হোসেন শান্ত, রেডিও পদ্মার সাংবাদিক নাজমুস সালেহী প্রমূখ। অনুষ্ঠানে বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্ধশতাধিক শিক্সকসহ বিভিন্ন মিডিয়ার সাংবাদিকবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।

বিষয়: বিবিধ

৮৭৩ বার পঠিত, ৩ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

258754
২৭ আগস্ট ২০১৪ দুপুর ০২:১৬
হাকিম তালুকদার লিখেছেন : আওয়ামীলীগ কখনো মিডিয়া বান্ধব না হলেও মিডিয়া কিন্তু সবসময় আওয়ামী বান্ধন ।
258779
২৭ আগস্ট ২০১৪ দুপুর ০৩:২৪
সুশীল লিখেছেন : লাভ নাই
258793
২৭ আগস্ট ২০১৪ দুপুর ০৩:৫০
মেঘ ভাঙা রোদ লিখেছেন : লত এ নীতিমালার দ্বারা শুধুমাত্র গণমাধ্যমের কণ্ঠরোধ করা হচ্ছেনা বরং এর দ্বারা জনগণের কণ্ঠরোধ করে সমস্ত মানবাধিকার থেকে বঞ্চিত করার কৌশল গ্রহণ করা হচ্ছে। তাই অতি সত্তর এ নীতিমালা বাতিলের দাবী করা হয়।

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File