রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে কবি আল মাহমুদের শুভজন্মদিনে আলোচনা ও কবিতা পাঠের আসর
লিখেছেন লিখেছেন ড মাহফুজুর রহমান আখন্দ ১২ জুলাই, ২০১৩, ০৫:৪৪:৪০ বিকাল
‘আল মাহমুদ বাংলাদেশের কবি, বাঙালির কবি। বাংলাদেশ, বাঙলার প্রাকৃতজন, বাঙলার ইন্দ্রিয়ময় অপরূপ প্রকৃতি ও বাঙালি জীবনের প্রতিদিনের জীবনালেখ্যই তাঁর কবিতার প্রধান ভাষ্য। জীবনানন্দ দাশের মত তিনিও বাঙলার রূপসী মুখ দেখেছেন। শুধু দেখেননি, অনুভব করেছেনও গভীর অন্তর্দৃষ্টি দিয়ে। সে কারণে তাঁর উপমা, চিত্রকল্প বা উৎপ্রেক্ষা একদম প্রকৃতির নিকটতম দূরত্ব থেকে সংগৃহিত ও বিন্যস্ত। ‘পিঠার মতো হলুদ মাখা চাঁদ/যেন নরম কলাপাতায় মোড়া’, ‘কাঁখে টিল¬াভরা পানি’, ‘কালো বাউশী যেন কলমী বনে’, ‘সামনে দেখি ভরা ভাতের থালা’, ‘ঝাঁলের বাটি উপচে পড়ে ঝোলে’, ‘পিঠার পেটের ভাগে ফুলে ওঠা তিলের সৌরভ’, ‘মাছের আঁশটে গন্ধ’, ‘উঠোনে ছড়ানো জাল’ আর ‘বাঁশঝাড়ে ঘাসে ঢাকা দাদার কবর’। এইসব চিত্রকল্প কোন পল¬¬ী-কবির নয়, আধুনিক ঐতিহ্যবাহী কবির দরদমাখা পঙ্ক্তি। এখানেই অন্যান্য কবি থেকে তাঁর স্বাতন্ত্র্য। বর্তমান বাঙলার প্রতিনিধি কবি ব্যক্তিত্বের আধুনিক উৎসারণ।’ গতকাল বৃহস্পতিবার সমকালীন বাংলা সাহিত্যের প্রধান কবি আল মাহমুদ এর ৭৮তম জন্মদিন উপলক্ষে শীলন সাহিত্য পরিষদের আয়োজনে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদুল¬াহ কলাভবনে অনুষ্ঠিত আলোচনা সভা ও কবিতা পাঠের আসরে বক্তাগণ এসব কথা বলেন।
মোহনা সম্পাদক কবি ও গবেষক ড. মাহফুজুর রহমান আখন্দ এর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত আসরে প্রধান অতিথি ছিলেন বিশিষ্ট লোক গবেষক রাবি ফোকলোর বিভাগের সাবেক সভাপতি প্রফেসর ড. মুহাম্মদ শহীদুর রহমান। অনুষ্ঠানে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বিশিষ্ট আল মাহমুদ গবেষক ড. ফজলুল হক তুহিন। আলোচনা করেন রাবি নাট্যকলা ও সঙ্গীত বিভাগের অধ্যাপক মুহাম্মদ আলমগীর স্বপন, ড. মুহাম্মদ খলিলুর রহমান, শিল্পী আবদুল ওয়াদুদ প্রমূখ। অনুষ্ঠানে লেখা পাঠ করেন কবি রঞ্জু সেলিম, সৈকত আবদুর রহিম, আহমেদ রাফি, আশিক উজ্জ্বল প্রমুখ।
প্রাবন্ধিক তাঁর প্রবন্ধে উলে¬খ করেন, আল মাহমুদ জীবনানন্দ দাশ ও জসীমউদদীনের গ্রামীণ নিসর্গ, জনপদ ও জীবন চিত্রণের ভঙ্গি অনুসরণ করেননি এবং গ্রামীণ বাংলায় তাদের পথে ফিরে আসেননি। বরং তিনি জয়নুল, কামরুল ও সুলতানের দৃষ্টিভঙ্গি ও পদ্ধতি অনুসরণ করেন। বিশেষভাবে সুলতানের মতো তাঁর প্রকৃতি কৃষকের কর্ষণের জায়গা, জীবিকার আয়তন এবং উত্তরাধিকারের ভবিষ্যৎ; আর তাঁর মানুষ আবহমান কৃষক, যে গাঁয়ের মাঠে কাজ করে, শস্য উৎপাদন করে এবং তার সন্তান ফিরে আসে নগর সভ্যতায় মার খেয়ে, প্রত্যাখ্যাত হয়ে। আল মাহমুদ সুলতানের মতো কৃষকের উপস্থিতিকে বাস্তবতা দিয়েছেন। কৃষকেরা মৃত নয়, অতীতের একটা অংশ নয়, তারা বিদ্যমানতা এবং বর্তমানতার মধ্যে জীবন্ত। তাই তাঁর কৃষক আধুনিক ঐতিহ্যের অংশ।
বিষয়: বিবিধ
১৪৪৭ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন