র্যাবকে বিলুপ্ত নয়, রাজনৈতিক প্রভাব মুক্ত করা হোক...
লিখেছেন লিখেছেন আহাম্মেদ খালিদ ১৩ মে, ২০১৪, ০৬:১০:৫৫ সন্ধ্যা
চ্যানেল আইয়ে বিবিসি বাংলা সংলাপ হচ্ছিলো । বেশ কিছুক্ষন দেখলাম, ওখানে প্রায় সবারই একই কথা র্যাব কে বিলুপ্ত করা হোক। বিএনপি সহ অনেক দলের বা সুশিল সমাজেরও অনেকের কন্ঠেই একই সুর বাজছে। কিন্তু আমি নিজে র্যাব বিলুপ্ত করার ঘোর বিরোধী। মাথা ব্যাথা করলেই যে মাথা কেটে ফেলতে হবে এমনতো কোন কথা নেই। সবচেয়ে কষ্ট লাগলো যখন স্বয়ং খালেদা জিয়া র্যাব বিলুপ্ত করার দাবী তুললেন। ২০০৪ সালে খালেদা জিয়া নিজেই তৈরি করেছিলেন এই র্যাব বাহিনি। র্যাব যখন তাদের কার্যক্রম শুরু করলো তখন দেশের অপরাধীদের কাছে তারা ছিলো মুর্তিমান আতংক। সাধারণ মানুষের মাঝে এসেছিলো স্বস্তি। মানুষের মনে জেগেছিলো সুন্দর দিনের প্রত্যাশা।
আগে প্রতিটা বাহিনীর চৌকস,সৎ,সাহসী,ক্ষিপ্র ও দেশ প্রেমিক অফিসার ওসদস্যদের বাছাই করে র্যাবে নেয়া হতো। তখন তাদের মাঝে ছিলো দেশ প্রেম, দেশের সেবার জন্য জীবন বাজি রেখে তারা ঝাপিয়ে পড়তো। কর্নেল গুলজার সাহেব যখন র্যাব প্রধান ছিলেন সেই সময়টাকে বলা হয় র্যাব এর স্বর্নালী সময়। একের পর এক সফল অভিযান উনি পরিচালনা করেছেন। র্যাব থেকে উনাকে নিয়ে যাওয়া হলো বিডিয়ারে (বর্তমান বিজিবি)সেখানে তাকে হত্যা করার পর থেকে র্যাবে নেমে এলো ভয়াবহ দূর্যোগ। চলতে লাগলোএকের পর এক দুর্নীতি। দূর্নীতি আজ র্যাবের প্রতিটা জায়গায় ছড়িয়ে পড়েছে। এখন পর্যন্ত এসব দূর্নীতির কারনে প্রায় ১০হাজারের বেশি র্যাব সদস্য শাস্তি পেয়েছে,এখনও অসংখ্য র্যাব সদস্য জেলে সাজা খাটে চলেছেন বিভিন্ন অরাধের কারণে।
তার পরও আমি র্যাব বিলুপ্ত করার পক্ষপাতি নই। কারণ যখন তাদের কার্যক্রম শুরু করে তখন তারা সম্পুর্ণ রাজনৈতিক প্রভাব মুক্ত ছিলো। সে সময় ক্ষমতায় ছিলো বিএনপি কিন্তু দেখা গিয়েছে র্যাবের হাতে যারা ক্রসফায়ারে মারা গিয়েছে তাদের ৬৫%ই ছিলো বিএনপি পন্থি ক্যাডার/সন্ত্রাসী। তার পরও বিএনপি সরকার কোন রাজনৈতিক প্রভাব খাটানোর চেষ্টা করেনি। খালেদা জিয়া চেয়েছিলেন দেশকে সন্ত্রাসমুক্ত করতে,দেশের মানুষের জান-মালের নিরাপত্তা দিতে,মানুষের মাঝে স্বস্তি ফিরিয়ে আনতে। কিন্তু সেটাই যে উনার জন্য কাল হয়ে দাড়াবে সেটা হয়তো তখন উনি ভাবতেও পারেননি। নারায়ণগঞ্জে বিএনপি পন্থি ক্যাডার ছিলো ডেভিড তাকে হত্যা করলো র্যাব শামিম উসমান গেলো পালিয়ে। এখন শামিম উসমান একাই রাজত্ব করছে সমগ্র নারায়ণগঞ্জে। এখন যদি ডেভিড থাকতো তাহলে শামিম উসমান এতো বাড় বাড়তে পারতোনা। নারায়ণগঞ্জ নামক জঙ্গলে এখন একটাই পশু হুংকার দিয়ে বেড়াচ্ছে।
আমরা যতই সততার ভান করিনা কেনো আমরা সবাই জানি সন্ত্রাসী/ক্যাডার ছাড়া কোন রাজনৈতিক দল চালানো সম্ভব নয়। এই সত্য কথাটার উপলব্ধি হাসিনার বেশি থাকলেও তখন খালেদার কম ছিলো আর সে কারণেই সে তখন র্যাবকে একটাই নির্দেশ দিয়েছিলেন 'সন্ত্রাসী যেই হোকনা কেনো তাকে কোন ছাড় দেয়া হবেনা" আর এটাই ছিলো উনার সবচেয়ে বড় বোকামি! ঢাকা কেন্দ্রীক উনার বিএনপি পন্থী যত ক্যাডাররা ছিলো একে একে সব শেষ করে দিয়েছিলেন আর ঠিক এই কারনেই আজ রাজধানীতে বিএনপির রাজনীতির এই বেহাল অবস্থা। কেউ হয়তো বলবেন আপনি সন্ত্রাসের পক্ষ নিচ্ছেন ? আমি বলবো: আমি কাঁটা দিয়ে কাঁটা তোলার পক্ষ নিচ্ছি।
মানবাধিকার কর্মী নামক কিছু জোকার রয়েছে আমাদের সমাজে,(গোলাম মাওলা রনি'র উক্তিটা ধার করেই বলছি)উনারা পেন্টের পিছনে চেইন লাগিয়ে মানবাধিকার রক্ষায়! ঝাপিয়ে পড়েছেন। আমার ভাষায় ওরা হলো এক চক্ষু বিশিষ্ট পেইড দালাল। যখন যেই সরকার আসে তখন সেই সরকারের পক্ষ হয়ে দালালীতে নেমে পড়ে। "বিচার বহির্ভূত" হত্যাকান্ড নামক শব্দটাকে পুঁজি করে তারা তাদের ব্যাবসা চালিয়ে নিচ্ছে।
আমি বলবো "সন্ত্রাসীদের কোন মানবাধিকার থাকতে নেই" চিন্হিত সন্ত্রাসীদের যেখানেই পাওয়া যাবে তাকে সেখানেই হত্যা করা হোক। এই সন্ত্রাসী যদি আজ আইনের ফাঁক গলে বেড়িয়ে যায় তাহলে কাল আরও ১০ টা হত্যা করবে, আর তাই ১০ টা হত্যা বন্ধে একটা হত্যা করা বান্চনিয় বলে আমি মনে করি। পরিশেষে র্যাবকে বিলুপ্তি নয় তাদেরকে রাজনৈতিক প্রভাব মুক্ত করে দেয়া হোক। রাজনৈতিক কোন সুপারিশে নয় চৌকস,সৎ,সাহসী,ক্ষিপ্র ও দেশ প্রেমিক অফিসার ওসদস্যদের বাছাই করে র্যাবে অর্ন্তভুক্ত করা হোক। তাহলেই র্যাব আবারও ফিরে পাবে তাদের সেই স্বর্ণালী অতিত আর মানুষ ফিরে পাবে তাদের হারানো সেই স্বস্তি।
বিষয়: বিবিধ
১২৩৫ বার পঠিত, ১০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন