আলেমদের প্রতি সেকুলারদের এলার্জী

লিখেছেন লিখেছেন আহাম্মেদ খালিদ ১১ মে, ২০১৪, ০৭:২৫:২৫ সন্ধ্যা

ইদানিং কিছু 'উগ্র মৌলবাদী' মানুষকে দেখছি যারা দেশের আলেম উলামা তথা দাড়ি-টুপি ওয়ালাদের পিছনে প্রকাশ্যে উঠেপড়ে লেগেছে। হুজুররা যাই করুক সেখানেই কোন না কোন দোষ খুজে বের করবেই। হুজুরদের সব কিছুতেই তাদের এলার্জী। একজন মাওলানা সাহেব উনার বয়ানের মাঝখানে কয়েকটা উর্দূ শের বা শ্লোক উচ্চারণ করেছে আর তাতেই তাদের গায়ে ফুসকা পরে যাচ্ছে।

একজন মাওলানা সাহেব বয়ানের মাঝখানে কয়েকটা উর্দূ শের বা শ্লোক উচ্চারণ করেছে সেটা শুনে একজন তার স্ট্যাটাসে লিখেছেন: "কেন এই উর্দুর ব্যবহার? নাকি তারা এখনও পাকিস্তানের মায়া ছাড়তে পারে নি!একটি স্বাধীন দেশে কিভাবে আগের শকুন শোষণকারী দেশের ভাষা চলতে পারে?

ভালো কথা আপনি উর্দুর মায়া ত্যাগ করেছে, আমিও বলছিনা যে আমি উর্দূ প্রেমিক। আমরা বাংলা ভাষার জন্য রক্ত দিয়েছি,বাংলা আমার মায়ের ভাষা। কিন্তু নিজেকে কোন মায়ার জড়িয়ে ফেলেছেন সেটা কি খেয়াল করেছেন ? আজ আমাদের ঘরে ঘরে হিন্দি চ্যানেলের ছড়াছড়ি,আজকাল কথায় কথায় হিন্দিতে ডায়ালগ মারা স্মাটনেস,এক লাইনের মধ্যে দুই চারটা ইংরেজী শব্দ বলাটা আজ ফ্যাশান হয়ে দাড়িয়েছে। একুশে ফেব্রুয়ারীর স্ট্যাটাস দেয় "happy mother language day" তখন তো আপনি তাদের বাহবা দিতে সামান্য দেরি করেননা আর যখনি একজন দাড়ি টুপি ওয়ালার পান থেকে চুন খসে তখনি 'মহা ভারত অশুদ্ধ' হয়ে যায়। আসলে সমস্যা হুজুরের উর্দু বলাতে নয়,সমস্যা আমাদের মানসিকতায়। কথায় আছে,'যারে দেখতে নারি তার চলন বাঁকা'।

একজনকে দেখলাম নিজেকে মহাজ্ঞানী জাহির করতে লিখলেন:"শ্রোতা যেন সব-কিছু ঠিকমত বুঝতে না পারে তাই উনারা (হুজুররা) বিভিন্ন ভাষা ব্যাবহার করেন - তাতে গোমর ফাঁক হবার ভয় থাকেনা -উনাদের ব্যবসার সুবিধা!"

যিনি এই মহান!বাণীটা প্রসব করেছেন উনি নাকি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র,আসলে নামকরা বিশ্ববিদ্যালয় আর কাগজের দুইচারটা সার্টিফিকেটই যে মানুষকে শিক্ষিত করতে পারেনা উনি তার বাস্তব উদাহারন। মনে রাখতে হবে,যে বিষয় সমন্ধে সঠিক ভাবে জানা নেই সে বিষয়ে কথা বলা মানে নিজেকে মূর্খের কাতারে দাঁড়া করানো ছাড়া আর কিছুই নয়।

একজন আলেম হওয়ার জন্য অনেক ধরনের কিতাব পড়তে হয় আর সেই কিতাব গুলির মাঝে অনেক কিতাব আছে যেগুলি আরবী, উর্দূ আর ফার্সী ভাষায় লিখিত। কারণ এখন পর্যন্ত বাংলা ভাষায় সেই ধরণের কিতাব রচিত হয়নি। আর একটা ব্যাপার আছে (আমি যত টুকো জানি) সেটা হলো যে কিতাব গুলি পড়ানো হয় সেগুলি ইউনিভার্সেল কিতাব। বিশ্বের সবগুলি কওমি মাদ্রাসায় সেই একই কিতাব পড়ানো হয়। এখন যদি আমরা আমাদের কিতাবের ভাষা চেন্জ করে ফেলি তাহলে অবশ্যই আমাদের দেশের আলেমগণ বিশ্বের অন্য দেশের আলেমদের থেকে পিছিয়ে পরবে। যেমন আমাদের দেশের মেডিকেল/ইন্জিনিয়ারিং বিশ্ববিদ্যালয়/সিএ/এমবিএ, এ জাতীয় স্টুডেন্টদের পাঠ্য বই গুলি যদি সব বাংলায় করা হয় তাহলে কি হবে সেটা কি ভাবা যায় ? না,কিছু কিছু বিষয় আছে যেগুলি কখনই চেন্জ করা সম্ভব নয়। বিশেষ করে আমাদের দেশের মতো একটা দেশের জন্যতো নয়ই।

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে উর্দু ভাষায় অনার্স-মাস্টার্স করার বিভাগ আছে বলে অনেকেরই এলার্জী আছে। ইংরেজি সাহিত্যে অনার্স-মাস্টার্স করার ক্ষেত্রে যদি কোন বিরোধ না থাকে তাহলে উর্দু সাহিত্য নিয়ে বিরোধ কেন ? ইংরেজি সাহিত্য যেমন সমৃদ্ধ ঠিক তেমনি সমৃদ্ধ উর্দু সাহিত্যও । আমি মনে করি বাংলাদেশে আরও অনেক দেশের সাহিত্য নিয়ে চর্চা হওয়া প্রয়োজন। যে জাতি যত বেশি জানবে সে জাতি ততবেশি উন্নতি করতে পারবে।

একজন বলছেন যে 'বয়ান করার সময় উর্দূ শব্দ ব্যাবহার করা উচিৎ না'। কেন ব্যাবহার করা উচিৎ নয় ? আপনারা কথায় কথায় হিন্দি ডায়ালগ মারতে পারেন তখন কোন সমস্যা হয়না আর একজন হুজুরে উর্দূ বললেই দোষ ? আমরা বিভিন্ন টকশো বা সেমিনারে দেখি দেশের অনেক জ্ঞানী গুণীরা তাদের বক্তব্যের মাঝখানে প্রায় সময়ই ইংরেজি বাক্য ব্যাবহার করেন। কেন ? সে বাক্যটার কি বাংলা কোন শব্দ আমাদের অভিধানে ছিলোনা ? অবশ্যই ছিলো তার পরও উনি ইংরেজিই ব্যাবহার করেছেন। এখানে উনাকে দোষ দিয়ে লাভ নেই,আসলে কিছু কিছু শব্দ আছে যেগুলিকে সঠিক ভাবে উপলব্ধি করার জন্য বা সেটার ইমপোর্টেন্সি বুঝানোর জন্য আমরা (যারা ইংরেজি শিক্ষিত)ইংরেজি শব্দ ব্যাবহার করে থাকি,কেউ কেউ বিভিন্ন মনিষীদের উক্তি, কেউ হয়তো কোন ইংরেজ কবির কবিতার দুই এক লাইন উচ্চারণ করে থাকেন,এটা কিন্তু দোষের কিছু নয়। ঠিক তেমনি হুজুররাও (যারা আলেম বা আরবী শিক্ষিত) তাদের বয়ানের মাঝখানেও কিছু কিছু শের বা বিভিন্ন উর্দূ বা ফারসী কবির কবিতার দুই এক লাইন উচ্চারণ করে থাকেন। উনারা যদি ইংরেজি সাহিত্যে পারদর্শী থাকতো তাহলে আমার ধারণা উনারা উনাদের বয়ানের মাঝখানে ইংরেজ কবির কবিতার লাইনই ব্যাবহার করতো। এখন কথা হলো শুধুমাত্র হুজুরদের ক্ষেত্রে কেন আমাদের এই মানসিকতা?

আমাদের সকলের পছন্দের কবি জাতিয় কবি,বিদ্রহী কবি কাজি নজরুল ইসলাম অসংখ্য কবিতা,গান,নাটক,গজল লিখেছেন। তার মাঝে অসংখ্য গান /গজল/কবিতায় উনি উর্দূ ব্যাবহার করেছেন। এমনও গান আছে যেখানে বাংলা আর উর্দূ পর পর সাজিয়ে গানটা লিখেছেন, যেমন:"আলগা করো গো খোপার বাধন দিল মেরা ওয়াহী পাঁস গেয়ী, বিনোদ বেনীর জরীর ফিতায় আন্ধা ইশক মেরা খাস গেয়ী।" এখন কাজি নজরুলকে তারা কি বলবেন ? শ্রোতা যেন সব-কিছু ঠিকমত বুঝতে না পারে তাই কাজি নজরুল বিভিন্ন ভাষা ব্যাবহার করেছেন ? নজরুলের কি গোমর ছিলো যে সেটা ফাঁক হবার ভয় ছিলো ? নজরুল কি ব্যবসার সুবিধার জন্য এমন উর্দূ আর বাংলা মিশিয়ে গান লিখেছিলেন ? দোষ উর্দূ বা বাংলা বা ইংরেজী নিয়ে না,দোষ হলো দাড়ী-টুপি।

আসলে একটা রাজনৈতিক দল তাদের পৃষ্টপোষকতায় একদল পথভ্রষ্ট, নেশাখোর,তরুণ-তরুণীদের লেলিয়ে দিয়েছে বাংলাদেশের আলেম সমাজের উপর। আজ দেশে আলেম সমাজ আছে বলেই এখনও আমাদের দেশে ইসলামী মূল্যবোধ কিছুটা হলেও অবশিষ্ট আছে, আর সে কারণেই তাদের মাথা ব্যাথা। তারা চায় দেশের মানুষের মন থেকে ইসলামী মূল্যবোধ ধ্বংষ করে দিয়ে দেশটাকে একটা সেকুলার রাষ্ট্রে পরিনত করতে চায়। সেকুলার কারা ? যারা প্রচণ্ড ইসলাম বিদ্ধেষী হয়ে থাকে। এরা নিজেদেরকে ধর্ম নিরপেক্ষ দাবী করে। কিন্তু কাজে কর্মে এরা প্রচণ্ড ভাবে ইসলাম বিরুধিতা করে থাকে।

আমি এই জাতিয় উগ্র মানসিকতার মানুষদের বলতে চাই, কোন আলেম সমন্ধে কথা বলার আগে ১০০ বার চিন্তা করে তারপর কথা বলবেন। একজন আলেমের ঘুম সাধারণ মানুষের সারারাত এবাদত করার চেয়েও উত্তম।

বিষয়: বিবিধ

১৫৫০ বার পঠিত, ১০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

220339
১১ মে ২০১৪ সন্ধ্যা ০৭:৩৩
লিখেছেন : সুন্দর লেখার জন্য ধন্যবাদ।
১১ মে ২০১৪ সন্ধ্যা ০৭:৩৬
167988
আহাম্মেদ খালিদ লিখেছেন : আপনাকেও ধন্যবাদ কষ্ট করে লিখাটা পড়ার জন্য...
220342
১১ মে ২০১৪ সন্ধ্যা ০৭:৪০
বিন হারুন লিখেছেন : খুব ভাল লাগল. জাযাখাল্লাহ্ খাইর
১১ মে ২০১৪ সন্ধ্যা ০৭:৪১
167989
আহাম্মেদ খালিদ লিখেছেন : আপনাকে ধন্যবাদ...
220348
১১ মে ২০১৪ রাত ০৮:০৫
সিকদারর লিখেছেন : আস্-সালামু-আলাইকুম ওয়া রহমতুল্লাহ। আপনার পোষ্টটা অনেকের জন্য তিতা হলেও সত্য । হুজুরদের এমন কিছু নাই যা মধ্যে তারা দোষ খুজে পান না । দাড়ি টুপিতেই তাদের এলার্জী ।
১১ মে ২০১৪ রাত ০৮:০৬
168010
আহাম্মেদ খালিদ লিখেছেন : অনেক ধন্যবাদ...
220356
১১ মে ২০১৪ রাত ০৮:৩৬
নীল জোছনা লিখেছেন : কজন আলেমের ঘুম সাধারণ মানুষের সারারাত এবাদত করার চেয়েও উত্তম

এরকম আলেম বাংলাদেশে কয়টা আছে বলতে পারবেন? নাকি সব আলেম জালেমই এই আপনার বিশেষ বাণীর অন্তর্ভুক্ত?
১১ মে ২০১৪ রাত ০৯:০০
168018
আহাম্মেদ খালিদ লিখেছেন : কথাটা রুপক অর্থে ব্যাবহার করা হয়ে থাকে। ঘুমানোর সময় কিছু আমল আছে, সেগুলি পালন করে ঘুমালে সারারাত আপনার ঘুমটাকে ইবাদতের অন্তভূক্ত করা হবে। সাধারণ মানুষ বলতে যাদের পরিপূর্ণ ইসলামী জ্ঞান নেই তাদের বুঝানো হয়েছে। আর আমার ধারণা আলেম শব্দটার সঠিক অর্থ আপনার জানা নেই।

ধন্যবাদ আপনার কমেন্টের জন্য...
220367
১১ মে ২০১৪ রাত ০৯:২৯
চাটিগাঁ থেকে বাহার লিখেছেন : সুন্দর পোষ্ট শেয়ার করার জন্য আপনাকে আন্তরিক ধন্যবাদ । Good Luck
১১ মে ২০১৪ রাত ১০:০৮
168023
আহাম্মেদ খালিদ লিখেছেন : বাহার ভাই, এই ছোট ভাইয়ের লিখাটা পড়ে কমেন্ট করার জন্য অনেক অনেক ধন্যবাদ...

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File