এক অভিশাপের ফসলের নাম 'ঐশী'
লিখেছেন লিখেছেন আহাম্মেদ খালিদ ১৯ আগস্ট, ২০১৩, ০৭:৫৩:২৩ সন্ধ্যা
ঐশিকে নিয়ে অনেকে অনেক ধরনের কথা লিখছে। প্রায় সবার লিখাতেই ঘুরে ফিরে দোষটা ঐশির ঘাড়েই দিচ্ছে। তবে আমি বলবনা যে সে দুধে ধুয়া তুলশি পাতা। দোষ তারও আছে আর একটা এডিক্টেট মানুষ আর পাগল এক সমান কারণ তাদের সেন্স কখনই সঠিক ভাবে কাজ করেনা।
ছোট্ট একটা ঘটনা শেয়ার করবো, ঘটনাটা একজন পুলিশের এসপি সাহেবকে নিয়ে উনার নামটা না বলাই ভালো,উনার বাসা মিরপুর ৬ নাম্বারে ছিলো। যাইহোক আমার খুব কাছের এক বন্ধুর বাসার ঠিক সামনের বাসাটাই ছিলো এসপি সাহেবের বাসা, আমার বন্ধুর বাসার সামনেই তার একটা দোকান ছিলো সেখানে আমি প্রায় সময়ই বসে আড্ডা দিতাম। ঐ এসপি সাহেব আমাদের খুব আদরও করতেন আর আমাদের সাথে খুব ফ্রিও ছিলেন। ভাতিজা বলে ডাকতেন আমাদের, মাঝে মাঝেই অফিস থেকে এসে আমাদের সাথে বন্ধুর মতই আড্ডা দিতেন কিছুক্ষন তারপর বাসায় ডুকে যেতেন।
আমাদেরকে উনি প্রায় সময়ই তার পেন্টের পকেটের মাঝে ফুলে থাকা টাকার বান্ডেলে হাত দিয়ে চাপড় দিয়ে বলতেন: ভাতিজা, আমার এমন কোন দিন নেই যে এইরকম ২টা ৫০০ শত টাকার বান্ডেল পকেটে নিয়ে ফিরিনাই। আমরা উনার দিকে এমন ভাবে তাকাতাম যেন উনি একটা জিনিয়াস আর উনিও আমাদের তাকানো দেখে বড়ই পুলকিত হইতেন আর হে হে হে করে শরীর দুলিয়ে হাসতে হাসতে বাসায় ঢুকে যেতেন।
এভাবে প্রায় অনেক বছর চলে গেলো এর মাঝেই উনি উত্তরাতে জমি কিনলেন ফ্লাটও নাকি কিনেছিলেন ১ টা। এভাবেই খুব ভালই চলছিলো তাদের সংসার। একদিন বিকেলে বন্ধু দোকানে গিয়ে দেখি তার মনটা খারাপ,জিজ্ঞেস করলার কি হয়েছে ? বললো এসপি সাহেবের মেয়েটা কয়েকমাস আগে থেকে অসুস্থ আজ হটাৎ বেশি রকম হওয়ায় তাকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। পড়ে জানলাম প্রায় ৩ মাস আগে উনার বড় মেয়েটা এবনরমাল আচরন করা শুরু করে এতদিন কাউকে জানায়নি।
হাসপাতালেই রেখে মেয়ের চিকিৎসা চলছে সেই সাথে চলছে টাকার আউটগোয়িং। এর কয়েকমাস পর শুনি এসপি আংকেল নিজেই অসুস্থ হাসপাতালে ভর্তি খবর নিয়ে জানলাম উনার শরিরে বাসা বেঁধেছে নানা ধরনের অসুখে হার্টের সমস্যা, লিভারের সমস্যা, শ্বাস কষ্ট সহ আরও অনেক কিছু। উনাকে নিয়ে ইন্ডিয়া,থাইলেন্ড, সিঙ্গাপুরে শুরু হলো দৌড়াদৌড়ি...
আস্তে আস্তে ফুরিয়ে যেতে লাগলো তার নামে বে-নামে ব্যাংকে জমানো টাকা, এরপর প্রথমে বিক্রি করলো উত্তরার প্লট তাতেও কাজ হলোনা, এরপর বিক্রি করলেন বনানীর ফ্লাট, তাতেও কাজ হলোনা এরপর উনার যে বাসাটা ছিলো সেটারও অর্ধেক বিক্রি করে দিলেন উনার চিকিৎসার ব্যায় বহন করার জন্য। যখন পরিবারটা প্রায় নিস্ব অবস্থায় চলে এসেছে তার কয়েকদিন আগে মারা গেলো তার মেয়েটা। এর প্রায় একমাস পরে টাকার অভাবে চিকিৎসা করাতে না পেরে এসপি সাহেবকে বাসাতেই রেখে দেয়া হলো। এর মাঝে একদিন উনার শুরু হলো প্রচন্ড স্বাসকষ্ট, কোন ভাবেই স্বাস নিতে পারছেননা। যারাই তাকে দেখতে যাচ্ছে তাকেই ইশারায় বলছে তার বুকে চাপ দেয়ার জন্য যেন একটু স্বাস নিতে পারে। যে যার মতো বুকে চাপ দিচ্ছে কিন্তু উনার কষ্ট কেউ কমাতে পারছেনা। এরপর এসপি সাহেব ইশারায় বললেন যেন তার বুকের উপর উঠে পা দিয়ে চাপ দেয়, কিন্তু কেউ রাজি হচ্ছেনা তখন এসপি সাহেব হাতজোর আকুতি করা শুরু করলেন যেন কেউ তার বুকের উপরে উঠে দাড়িয়ে বুকে চাপ দেয় যেন উনি একটু স্বাস নিতে পারেন। উনার আকুতি শুনে সবার সম্মতিক্রমে একজন উনার বুকে উঠে পা দিয়ে উনার বুকে চাপ দিতে লাগলেন আর এভাবে চাপ দিতে দিতেই উনি এই দুনিয়া ছেড়ে চলে গেলেন।(দোয়া করি আল্লাহ উনাকে ক্ষমা করে জান্নাত দান করবেন, আমিন)।
এই ঘটনা এই জন্য শেয়ার করলাম যে, আজ আমাদের দেশে যত বড় বড় ক্রাইম হচ্ছে তার ৯৫% পুলিশের যোগসাজসে হচ্ছে কারণ তারা সেখান থেকে পাচ্ছে বড় অংকের উৎকোচ আর এই উৎকোচের টাকা ( একটা ছবিতে একজন ভিলেন টাকার বান্ডেল তার ছেলেকে দেখিয়ে বলেছিলো এটা কি ? ছেলে বলেছিলো টাকা, তখন সেই ভিলেনটা বলেছিলো না এটা টাকার বান্ডেল না এটা "গরীবের রক্ত")দিয়ে তারা নিজেদেরকে তুলে ধরতে চায় সমাজের উচ্চ শিখরে কিন্তু মহান আল্লাহ কাছে রয়েছে ইনসাফ। সেই উচ্চ শিখর থেকে এক ঝটকায় ছুড়ে ফেলে দিতে পারেন নর্দমায়।
হারামের পয়সা যত দ্রুত আসে ঠিক তার থেকেও দ্রুত চলে যায়,কিন্তু যাওয়ার সময় সুদে-আসলে একবারেই নিয়ে যায়। হারামের টাকা দিয়ে যদি আপনি আপনার ছেলে-মেয়েকে 'সু-সন্তান' হিসেবে গড়ার চেষ্টা করেন সেটা আহাম্মকি ছাড়া আর কিছুই নয়।
আমার এলাকার এক বড়ভাই একবার একটা কথা বলেছিলেন: খালিদ, নদীর জোয়ার ভাটা দেখেছো কখনো ? হারামের টাকা হলো নদীর জোয়ারের মতো যখন আসে সব ভরিয়ে দেয়, আর যখন ভাটার সময় হয় তখন জোয়ারের যে পানি এসেছিলো সেটা তো টেনে নিয়ে যায়ই সাথে করে আশেপাশে যা থাকে সেগুলিও সাথে করে নিয়ে যায়।
আজ আমাদের দেশের পুলিশ এমন এক পর্যায়ে নেমে এসেছে যে সাধারন মানুষ তাদের দেখলে গালি দেয়। হাতে গনা দু একজন ছাড়া প্রতিটা পুলিশের টাকাতে রয়েছে গরিবের রক্ত বা মানুষের অভিশাপ, আর এই অভিশাপেরই এক ফসলের নাম "ঐশী"
বিষয়: বিবিধ
২৩৩১ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন