মদিনা সনদ ও আওয়ামী রাজনীতি...
লিখেছেন লিখেছেন আহাম্মেদ খালিদ ১৫ এপ্রিল, ২০১৩, ০৩:৫৪:২৬ দুপুর
মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, আপনি কি জানেন মদীনা সনদ কাকে বলে ? ওখানে কি কি লিখা আছে ? একজন মুসলিম হিসেবে একটু কষ্ট করে একবার মন দিয়ে "দুনিয়ার শ্রেষ্ট মহামানবের তৈরি করা ঐতিহাসিক মদিনা সনদ" টা পড়ে দেখার অনুরোধ করছি। আপনি বলেছেন মদিনা সনদ অনুযায়ী দেশ চালাবেন, ভালো কথা আপনার এই কথায় আমরা মুসলিমরা অনেক খুশি হয়েছি, কিন্তু আল্লাহর দোহায় লাগে আমাদের প্রানপ্রিয় নবীজির ঐতিহাসিক "মদিনা সনদ"কে বিকৃত করবেন না, তাহলে মুসলিম জনগন কিন্তু আর ঘরে বসে থাকবেনা।
আপনি যদি "মদিনা সনদ" অনুযায়ী যদি দেশ চালাতে চান তাহলে প্রথমেই আপনাকে সরকার প্রধানের পদ থেকে অব্যাহতি দিতে হবে এমনকি আপনার দলের সভানেত্রীর পদ থেকেও আপনাকে সরে দাড়াতে হবে। আপনি কি তা পারবেন ? আপনি কি জানেন আপনাকে ঠিক সেভাবেই বিভ্রান্ত করা হচ্ছে যেভাবে বিভ্রান্ত করা হয়েছিল শাহবাগের আন্দোলনের ব্যাপারে। বিভ্রান্ত করা হয়েছিল ইসলামবিদ্ধেষী ব্লগারদের সমন্ধে। আপনাকে বিভ্রান্ত করে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল ব্লগার রাজিবের বাড়ীতে এবং রাজিবকে শহীদ!উপাধী দেয়ানোর জন্য। বিভ্রান্ত করা হচ্ছে কোটি কোটি মুসলিম বাঙ্গালীর প্রানের দাবী সমন্ধে। আপনি কোন দলের প্রধানমন্ত্রী নন, আপনি ১৬ কোটি বাংলাদেশীর প্রধানমন্ত্রী। এত সহজেই আপনি বিভ্রান্ত হলে চলবেনা। জাতি আজও শত কষ্টের মাঝেও আপনার দিকে তাকিয়ে আছে শুধুমাত্র আপনি বঙ্গবন্ধুর কন্যা বলে।
আমি একজন সাংবাদি,ব্লগার। শাহবাগের গণজাগরণের প্রধান হোতাদের প্রায় সকলেই আমার অনেক কাছের মানুষ ছিল।তাদের সাথে সমাজকল্যান মূলক অনেক কাজেই আমি সম্পৃক্ত ছিলাম। শাহবাগ আন্দোলনের প্রথমদিকে তাদের সবাইকে দেখেছি কতটা আন্তরিকতার সাথে শাহবাগ আন্দোলনের প্রতিটা কজে ঝাপিয়ে পড়তে, কিন্তু আজ তাদের অনেকেই চুপসে গিয়েছে। যখন তারা বুঝতে পারলো তাদের ঘাম ঝরানো আন্দোলনের ফসল অন্যের হাতে চলে যাচ্ছে।তাদেরকে ব্যাবহার করা হচ্ছে রাজনৈতিক স্বার্থে।
এই শাহবাগের তরুণরা যখন জেগে উঠলো আর তাদের এই তারুন্যের জোয়ার প্রবাহীত হতে লাগলো সারাদেশ ব্যাপি তখন আপনি হয়তো ভেবেছিলেন এটাই হবে আপনার ট্রামকার্ড আর সেই লক্ষ্যেই আপনার মন্ত্রীসভার সদস্যরা একে একে হাজির হতে লাগলো শাহবাগের চত্তরে। টাকা,পানি,বিরিয়ানীর প্যাকেট,বাথরুমের ব্যাবস্থা,তিন স্তরের নিরাপত্তা বলয় দিয়ে তাদের মন জয় করার চেষ্টা করে যেতে লাগলেন।সরকারী নিরাপত্তার ভিতরে বসে আন্দোলন করার মজাই আলাদা,আর এই মজার! আন্দোলনে বুঝে হোক আর না বুঝেই হোক তরুন-তরুনিরা দলে দলে হাজির হতে লাগলো।
আর এই পরিস্থিতি দেখে আগেথেকেই কোনঠাসা হয়ে থাকা বিএনপির নীতি নির্ধারকদের মাথা গেল খারাপ হয়ে। তারা না পারছে বসতে না পারছে দাড়াতে। এই অবস্থায় কেউ কেউ আবার শাহবাগের সাথে একাত্বতা প্রকাশও করে ফেললো এই ভেবে যে তারা না আবার জনবিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে। এভাবেই কেটে গেল বেশ কিছুদিন। শাহবাগের আন্দোলনটা হয়ে গেল চুইংগামের মত,চিবুতে চিবুতে সেটা থেকে যখন আর রস বের হওয়া বন্ধ হয়ে গেল আর তখনি তরুনদের আন্দোলনে ভাটা পড়তে শুরু করলো। আর যেদিন তারা তাদের আন্দোলন স্থগিত করার ঘোষনা দিল সেদিনই ঘটলো! রাজিবের হত্যার ঘটনা। টিম টিম করে জ্বলতে থাকা প্রদীপে যেন ঢেলে দেয়া হলো ঘি। আবারও ফুসে উঠলো শাহবাগ, প্রধানমন্ত্রী স্বয়ং ছুটে গেলেন ব্লগার রাজিবের বাসায়, তাতক্ষনিক তাকে শহীদ! ঘোষনা করলেন।আর সবার মনে তখন একটা প্রশ্ন জেগে উঠলো কে এই রাজিব?সারাদেশে যখন শত শত মানুষ খুন হচ্ছে,ধর্ষিত হচ্ছে মা-বোনেরা,প্রকাশ্যে পুলিশের সামনে হত্যা করা হচ্ছে নিরিহ মানুষকে তখনতো প্রধানমন্ত্রী এভাবে ছুটে যাননি, কে এই রাজিব। শুরু হলো রাজিবকে নিয়ে আলোচনা আর তার ব্যাপারে খোঁজ-খবর। আর বেরিয়ে আসতে লাগলো রাজিবের ইসলাম বিদ্ধেষী লিখা গুলি আর তখন সারা দেশে আরেক প্রদীপ জ্বলে উঠতে শুরু করলো যা প্রধানমন্ত্রীর চোঁখে পড়েনি বা পড়তে দেয়া হয়নি।
দেশব্যাপি শুরু হয়ে গেল গুন্জন, তারা রাজিবের লিখা সমন্ধে জানতে চায়, পড়ে দেখতে চায় সে কি লিখেছিল তাদের কলিজার টুকরো সারা জগতের সর্বশ্রেষ্ঠ মানব প্রিয় নবী হযরত মোহাম্মদ (সা: ) কে ও মহান সৃষ্টিকর্তা আল্লাহ রাব্বুল আলামিনকে নিয়ে। তাদের সেই চাওয়াটা পূরনে এগিয়ে আসলো দৈনিক আমার দেশ। আর সেই সাথে সারা দেশে বাতাসের গতিতে ছড়িয়ে পড়লো রাজিব সহ ইসলাম বিদ্ধেষী ব্লগারদের কথা আর বাংলাদেশের জনগন যখন দেখলো এই ইসলাম বিদ্ধেষী ব্লগাররাই নেতৃত্ব দিচ্ছে শাহবাগের আন্দোলনকে তখনি শাহবাগের প্রতি মানুষের ভালবাসা পরিনত হতে থাকলো ঘৃণায়।
সাধারণ শান্তিপ্রিয় মানুষের কন্ঠে উচ্চারিত হতে থাকলো প্রতিবাদের ভাষা, কিন্তু আবারও প্রধানমন্ত্রীসাহেবাকে বিভ্রান্ত করলো কিছু মানুষ,উনাকে বুঝাতে লাগলো এটা জামাত-শিবিরের কাজ। উনার দৃষ্টিকে ঘুরিয়ে দেয়া হলো অন্য দিকে। শান্তিপ্রিয় আলেমরা যারা মাদ্রাসার গন্ডির ভিতরেই কাটিয়ে দেয় বছরের পর বছর যারা সবসময় এড়িয়ে চলে রাজনৈতিক ঝামেলাকে তাদের কানে যখন পৌছলো তা ছড়িয়ে পড়লো বিদুৎগতিতে সমগ্র বাংলার ধর্মপ্রান মুসলিমদের মাঝে, সরকারকে অনুরোধ করা হলো এই সব ইসলাম বিদ্ধেষী ব্লগারদের বিরুদ্ধে ব্যাবস্থা নিতে, কিন্তু সরকার আবারও ধর্মপ্রাণ সাধারণ মানুষকে উপেক্ষা করলেন কিছু চাটুকারের কথায়। আর তারই প্রেক্ষিতে বাংলাদেশের ইতিহাসে সবচেয়ে বড় লংমার্চ করলো বাংলাদেশের ধর্মপ্রাণ মুসলিমদের অরাজনৈতিক সংগঠন "হেফাজতে ইসলাম"। সরকার দলীয় লোকেরা নজিরবিহীন ভাবে শুক্রবার সহ রাতের বেলায়ও হরতাল আহ্বান করলো এই লংমার্চ ঠেকাতে, কিন্তু সরকারের সকল বাহিনীর সকল চেষ্টাকে ব্যার্থ করে দিয়ে ঐতিহাসিক লংমার্চ করে সারা দুনিয়াকে চমকে দিল। আবারওতারা প্রমান করলো মুসলমানরা বীরের জাতি, তাদেরকে দমানোর সাধ্য এই দুনিয়ার কারও নেই।
মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, আপনাকে অনুরোধ করবো বাংলার জনগনকে আর কষ্ট দিবেন না, তাদের মনের কথা বুঝার চেষ্টা করুন, নির্বাচন কিন্তু বেশী দুরে নয়। আর এই দেশের ৯০% মানুষ কিন্তু মুসলমান। তাদের কাছে আপনাকে ভোট চাইতে যেতে হবে।
আসুন দেখে নিই ঐতিহাসিক মদিনা সনদে কি ছিল:মদীনা সনদের মূল বিষয়বস্তু ছিল,৪৭ টি ধারার মধ্যে এখানে উল্ল্যেখযোগ্য ১৩ দেয়া হলো:
১) সনদপত্রে স্বাক্ষরকারী সম্প্রদায়সমূহ ইসলামী রাষ্ট্রের অধীনে একটি সাধারণ জাতি গঠন করবে।
২.হযরত মুহাম্মদ (স) ইসলামী রাষ্ট্রের রাষ্ট্রপ্রধান থাকবেন।
৩) কোন সম্প্রদায় গোপনে কুরাইশদের সাথে কোন প্রকার সন্ধি করতে পারবে না কিংবা মদীনা বা মদীনাবাসীদের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রে কুরাইশদের কোনরুপ সাহায্য-সহযোগীতা করতে পারবে না।
৪) মুসলিম, খ্রীস্টান, ইহুদী, পৌত্তলিক ও অন্যান্য সম্প্রদায় ধর্মীয় ব্যাপারে পূর্ণ স্বাধীনতা ভোগ করবে। কেউ কারো ধর্মীয় কাজে কোন রকম হস্তক্ষেপ করতে পারবে না।
৫) মদিনার উপর যে কোন বহিরাক্রমণ কে রাষ্ট্রের জন্য বিপদ বলে গণ্য করতে হবে। এবং সেই আক্রমণ কে প্রতিরোধ করার জন্য সকল সম্প্রদায়কে এক জোট হয়ে অগ্রসর হতে হবে।
৬) রাষ্ট্রের প্রতি নাগরিকের অধিকার ও নিরাপত্তা রক্ষার ব্যবস্থা থাকবে।
৭) অসহায় ও দূর্বলকে সর্বাবস্থায় সাহায্য ও রক্ষা করতে হবে।
৮) সকল প্রকার রক্তক্ষয়, হত্যা ও বলাৎকার নিষিদ্ধ করতে হবে এবং মদীনাকে পবিত্র নগরী বলে ঘোষণা করা হবে।
৯) কোন লোক ব্যক্তিগত অপরাধ করলে তা ব্যক্তিগত অপরাধ হিসেবেই বিচার করা হবে। তজ্জন্য অপরাধীর সম্প্রদায় কে দায়ী করা যাবে না।
১০) মুসলমান, ইহুদী ও অন্যান্য সম্প্রদায়ের লোকেরা পরষ্পর বন্ধুসুলভ আচরণ করবে।
১১) রাষ্ট্রের অভ্যন্তরীণ বিরোধ নিষ্পত্তির অধিকার থাকবে রাষ্ট্রপ্রধানের এবং তিনি হবেন সর্বোচ্চ বিচারালয়ের সর্বোচ্চ বিচারক।
১২) মুহাম্মদ (সাঃ) এর অনুমতি ব্যতীত মদীনাবাসীগণ কারও বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করতে পারবে না।
১৩) মুসলমানদের কেউ যদি অন্যায় কিংবা বিশ্বাসঘাতকতা করে তবে সবাই মিলে তার বিরুদ্ধে যথোচিত ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। নিজ সন্তান বা আত্নীয় হলেও এ ব্যাপারে তাকে ক্ষমা করা যাবে না।
বিষয়: বিবিধ
১৪৫৮ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন