ছোট বেলার স্মৃতি ও ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন
লিখেছেন লিখেছেন খাস খবর ২১ এপ্রিল, ২০১৬, ০৩:৪৬:৩৯ রাত
- অহিদুজ্জামান
দেখতে দেখতে বয়সের ৪ দশক চলে গেল।কিন্তু পিছনের সব কিছুই স্পষ্ট মনে আছে। মা শীতের দিনে রোদেলা উঠোনে উষ্ণ পানি ভরা গামলার মাঝে দাড় করিয়ে গল্প বলে বলে গোসল করাতেন।একদিন গল্প না বলে বললেন-''এই ছোট গোসল করতে তাড়াতাড়ি আয়, দেখবি কত মানুষ আসবে একটু পরেই।তখন উঠোনে বের হতে পারবোনা।ছায়ায় বসে গোসলে ঠান্ডা লাগবে।'' মাকে প্রশ্ন করেছিলাম কারা আসবেন, কেন আসবেন।মা বলছিলেন- ভোট আসছে না? এই পাঁচ বছর পর এবারে ভোট হবে।কত আনন্দ মানুষের! ...গুমাতে দেবে না।আবার প্রশ্ন করলাম ভোট কী? মা বলেছিলেন- অনেকেই তো চেয়ারম্যান মেম্বার হতে চায়।দু'চারজন তো আর না, অনেক লোক তার মধ্যে যে ভালো-সৎ-যোগ্য তাকে মানুষ সমর্থন দেবে।এজন্য প্রার্থীরা সকলের বাড়িতে বাড়িতে গিয়ে সমর্থনের জন্য অনুরোধ করবে।রাত দিন ২৪ ঘন্টা দলে দলে লোকজন আসতে থাকে .....। আমাকে গোসল করাতে করাতে মায়ের এই কথা গুলো শেষ হতে না হতেই আমি দেখলাম অন্তত এক দেড়শ লোক আমাদের বাড়ির ভিতর প্রবেশের অনুমতি চাইতেছেন। আমার মা তাড়াহুড়ো করে আমাকে নিয়ে ঘরের পিছনের উঠোনে এলেন।লোকগুলো আমার বাবাকে উদ্দেশ করে বলতে লাগলেন- আমরা কি বাড়ির ভিতরে আসতে পারি! আমরা আপনার অনুমতির অপেক্ষায় আছি।এটা আমাদের এলাকায় সেই সময় একটা আদব লেহাজের রেওয়াজ ছিল।কেউ কারো বাড়িতে প্রবেশ করলে অনুমতি নিয়ে প্রবেশ করত। বাড়ির পাশ দিয়ে কেউ হেটে গেলেও জোরে অন্তত একবার দু'বার গলাজেরে কাশি দিত। কেউ অপরিচিত হলেও দেখা হলে বলতেন চা-পান খেয়ে যান। কেউ অনুমতি না নিয়ে বাড়িতে প্রবেশ করলে এলাকার সবচেয়ে সম্মানিত যিনি ছিলেন তার কাছে এসে বিনয়ের সাথে নালিশ করতেন।আমাদের বাড়ির বৈঠক খানায় প্রতিদিন দেখতাম লোকজন এসে বাবার কাছে নানা বিষয়ে বিচার চাইতেন।সেই সময় আমার যে বয়স তাতে এসব মনে থাকার কথা নয় কিন্তু পরে মায়ের কাছে অনেকবার শুনেছি একেকটা সময়ে উপলক্ষে তাই আজও মনে আছে।যাই হোক এই মানুষ গুলো এসেছিলেন বাবাকে চেয়ারম্যান হওয়ার অনুরোধ জানাতে।আমার বাবা সবিনয় প্রস্তাব ফিরিয়ে দিয়ে বলেছিলেন- বিনা ভোটে চেয়ারম্যান হলে এলাকার উন্নয়ন হবে না।এভাবে যে হবে তার মাঝে মানুষের সেবা করার প্রতিযোগিতা থাকবে না। সে মনে করবেন যে আমি ছাড়া তো আর কেউ নাই।অতএব ভোট হওয়া চাই। আর যে প্রার্থী হবেন তিনি ন্যায় বিচার করেন কিনা, এলাকার উন্নয়ন করতে সক্ষম কিনা, আপনাদের বিপদে-আপদে ডাকলে তাকে কাছে পান কিনা, সৎ কিনা এসব দেখে ভোট দেবেন।যদি কেউ কোনো দিন তার ন্যায় বিচারে আপনি ঠকে থাকেন তারপরও তাকেই ভোট দিয়েন।মনে রাখবেন এর পরের দিন একজন সৎ মানুষের কাছ থেকে আপনি জিতবেন।কারো প্রভাবে প্রভাবিত হয়ে ভোট দিবেন না।আপনি শুধু ভোটের মালিক নন।আপনারা এলাকার উন্নয়নের মালিক,আপনারা ন্যায় বিচারের ভাগিদার, এই ইউনিয়নের যাবতীয় ভালোমন্দ যাকিছু আছে বা হবে সবকিছুরই আপনি একজন হকদার।আপনার হকের আমানত যে খেয়ানত করবে তাকে আপনি ভোট দিবেন না।চেয়ারম্যান-মেম্বার তারা সকলেই জনগণের সকল কিছুর আমানতদার।এমপি নির্বাচনেও এই কথা মনে রাখবেন।যিনি রাষ্ট্রপ্রধান তিনি পুরো রাষ্ট্রের আমানতদার।অতএব ওই নির্বাচনে আপনারা বেশি সতর্ক হবেন।
পরে শুনেছি ১৯৭৩ সালের নির্বাচনে যাদেরকে এলাকার এমপি, চেয়ারম্যান, মেম্বার ঘোষণা দেয়া হয়েছিল তারা লঙ্গর খানার রুটিতে বালি মিশিয়ে মানুষকে খাইয়েছিল। স্কুলের বাচ্চাদের জন্য রেডক্রসের দেয়া বিস্কুট বাড়ির কুকুর, হাঁস-মুরগিকে খাইয়েছে।স্কুল শিশুদের তারা দেয় নাই।তখন বাংলাদেশ আওয়ামী লিগ ভোট পেয়েছিল ৭৩ দশমিক ২ শতাংশ।
বিষয়: রাজনীতি
১২১৮ বার পঠিত, ২ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন