বাংলাদেশের সর্বনাশা রাজনীতি এবং আর্ন্তজাতিক ভূবনের ভাবনা
লিখেছেন লিখেছেন খাস খবর ১২ অক্টোবর, ২০১৪, ১২:৩৯:২৮ রাত
।। মো. অহিদুজ্জামান।।
বাংলাদেশ সম্পর্কে আর্ন্তজাতিক ভূবনের মানুষ কী জানে এবং তারা কী ভাবেন? এ প্রশ্নের উত্তর হয়তো অনেকেরই জানা আছে। বিশেষ করে যারা বিদেশে ভ্রমণ-ব্যবসা কিংবা পড়তে আসেন তাদের মধ্যে অনেকেরই তিক্ত অভিজ্ঞতা রয়েছে। তবে আমার মনে হয় এই বিষয়ে গভীরভাবে জানার সংখ্যা খুব বেশি নয়।
বাংলাদেশের রাজনীতিকদের মধ্যে বিদেশ ভ্রমণের নেশা প্রবল। গাঁয়ের পাতি থেকে কেবিনেট মন্ত্রী-পার্লামেন্ট সদস্য কেউ কম নয়। প্রধানমন্ত্রী-রাষ্ট্রপতির সফর সঙ্গির বহর তার জলন্ত প্রমাণ। সুযোগ পেলেই আমলা-কামলারা কম যায় না। তার নজিরও অসংখ্য রয়েছে।
রাজনীতিকরা বিদেশে এসে তারা প্রথমে ৫ তারকা হোটেলকে খুব সুন্দর ভাবে উপভোগ করেন। এরপরের ধাপে কেনাকটায় ধুম লাগিয়ে সুখানুভুতির ঢেকুর তুলে বাড়ি ফেরন। তাদের সময় কই ইউরোপ-আমেরিকা-লন্ডন এসে এসব দেশের উন্নয়ন, সভ্যতা, কৃষ্টি, আদব-লেহাজ দেখবে এবং নিজের দেশ গড়ার কাজে লাগাবে। আর একাজটি করতে হলে এসব বিষয়ে পূর্বঅভিজ্ঞতালব্ধ জ্ঞান যেমন প্রয়োজন তেমনি ইংরেজি ভাষা জানতে হবে। আমলাদের বেলায়ও একই অবস্থা তা আর বলার অপেক্ষা রাখে বৈকি! আর পাতি যারা আসে তাদের প্রথম প্রতিজ্ঞা-চিন্তা এসব দেশে থেকে যাওয়ার। তারা তো তা-ই করে। এরমধ্যে মন্ত্রী-এমপিদের শালা-দুলা ভাই-পরিবারের সদস্য এবং দলের চামচা একই বৃন্তের পুষ্প। অতএব বলা যায় ওরা সবাই নিজপুঁজ্যের সিদ্ধ তপস্যি।
তবে সমস্যা হলো দেশটিতে গুটিকয়েক হতভাগা হয়ে জন্ম নেয়া মানুষের। এদের সংখ্যা খুবই নগণ্য হবে। উল্যিখিতদের কোন সমস্যা নেই। কারণ ওরা জানে না আর্ন্তজাতিক ভূবনের মানুষ কোন দৃষ্টিতে বাংলাদেশকে জানে এবং মূল্যায়ণ করে।
ক্যামব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের মাইক্রোসকোপিস্ট সিরামিক বিজ্ঞানী মিজ ক্যাটরিনার সঙ্গে আমার পরিচয় প্রায় দেড় বছর। তার সঙ্গে প্রতি সপ্তাহে দুইবার খুব ঘনিষ্টভাবে কথা হয়। গত বছর তিনি বাংলাদেশ সফর করেছেন। জানতে চাইলাম বাংলাদেশটি তার কেমন লেগেছে। এক্ষেত্রে বলা প্রয়োজন- ইংরেজ জাতি বিশ্বের বুকে একটি শালিন-শোভন জাতি।যদি তারা কাউকে তুচ্ছ করে তাও অত্যন্ত মার্জিত-শোভন ভাষায় করে। সহজে অনুমান করা বড়ই কঠিন। তারা হাঙ্গার-অ্যাঙ্গার এবং আন-হ্যাপি শব্দগুলি ব্যবহার করে অত্যন্ত নেতিবাচক বিষয়কে প্রকাশ করে থাকে। এই শব্দগুলি যদিও ক্যাটরিনা আমার সাথে ব্যবহার করেননি। তিনি খোলামেলাভাবে বললেন- বাংলাদেশটি প্রাকৃতিকভাবে অত্যন্ত সুন্দর। কিন্তু এমন একটি সুন্দর দেশের মানুষ কীভাবে প্রতিদিনই মরামারি-হানাহানি করে। তাদের মধ্যে এতোবেশি পরিমাণ অব্যবস্থাপনা, সহনশীলতার অভাব, শৃঙ্খলাবোধের অভাব এবং পরিিমিতিবোধের ঘাটতি কী করে থাকে এটা আমার ভাবতে কষ্ট হয়।
তিনি কয়েকটি বিষয় উদাহরণ হিসেবে ট্রেন-বাস-লঞ্চে উঠতে গিয়ে হুোরো-হুরির কথা বললেন। ঢাকাসহ প্রধান শহরগুলির যানজটের জন্য অব্যবস্থাপনার কথা উল্যেখ করলেন। নোংড়া পরিবেশ তাকে খুবই ব্যথিত করেছে। যেমন- যেখানে-সেখানে থুথু-কাশি, ময়লা-আবর্জনা ছুঁড়ে ফেলা দেখে তিনি হতবাক হয়েছেন। অশালিন-অশ্রাব্য কথা-বার্তা হরহামেসাই শুনেছেন। এমনকি ফুটপথে হাঁটার সময়ে মানুষের অসভ্যতায় দারুণভাবে দুঃখিত হয়েছেন। মানুষের আচার-আচরণ অত্যন্ত রুঢ় মনে হয়েছে। সবচেয়ে তিনি হতবাক হয়েছেন অফিস-আদালতের অব্যবস্থাপনা দেখে এবং কর্মকর্তা-কর্মচারিদের অশোভন-অশালিন ব্যবহার দেখে। উচ্চশিক্ষাকেন্দ্রের পরিবেশ ও কর্তব্য অবহেলা তাকে ভাবিয়ে তুলেছে যে এ জাতির ভবিষ্যত কোথায় যাচ্ছে। এাছাড়াও তিনি বিভিন্ন বিষয়ে দুঃখ প্রকাশ করলেন।
একইভাবে আমার খুবই ঘনিষ্ট ডা. বেকি। তিনি ক্যামব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে চিকিৎসা বিজ্ঞানে উচ্চতর শিক্ষা অর্জন করেছেন। এখন লন্ডনে একজন জিপি হিসেবে কর্মরত। আমি তার বাসায় কয়েকমাস থেকেছি। তাঁর অভিব্যক্তিও একই রকম।
মরোক্কর মোহাম্মাদ ইসমাইল একজন উচ্চশিক্ষিত ও ধর্মভিরু মানুষ। মাঝে মাঝে তার সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে কথা হয়। প্রসঙ্গক্রমে বাংলাদেশ নিয়ে কথা বলতে গিয়ে লজ্জায় নিজের মাথা নত করি আর তাকে বলি ভাই- প্লিজ প্রে ফর বাংলাদেশ। তিনি বলেন বাংলাদেশের মানুষের জন্য শুধু দোয়া করলে হবে না। তাদের নিজেদেরই পরিবর্তন হতে হবে।
চলবে-
বিষয়: বিবিধ
১০৬১ বার পঠিত, ৪ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
আর মাঝে মাঝে দেশ নিয়ে বিদেশীদের সাথে হাসাহাসি করবো নে!
মন্তব্য করতে লগইন করুন