গণভবনে শেখ হাসিনার খাহেশ পূরণ
লিখেছেন লিখেছেন খাস খবর ২৬ ডিসেম্বর, ২০১৩, ১২:০৩:১৭ দুপুর
।।মো. অহিদুজ্জামান।।
প্রথম শ্রেণীর রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন ''করতোয়া'' নাম পরিবর্তন করে শেখ হাসিনার ইচ্ছাতে ১৯৯৬ সালে গণভবন নাম করণ করা হয়। এটি ১৯৭৫-১৯৮৫ পর্যন্ত ছিল স্টাফ কলেজ। '৮৫ সালের শেষের দিকে রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন করা হয়। অবশ্য ১৯৭২-৭৪ সালে ১৫ একর জায়গার ওপর এই আলিশান বাড়িটি নির্মাণ করা হয় এবং '৭৫ সালের আগস্ট পর্যন্ত এটি প্রধানমন্ত্রীর অফিস ও সরকারি বাসভবন হিসেবে ব্যহৃত হয়। এই ভবনেই ছিল রক্ষিবাহিনীর সদর দফতর। ৪০ হাজার জাসদ কর্মীকে এই ভবনের নির্দেশেই হত্যা করা হয়েছিল। নিখাঁদ দেশ প্রেমিক সিরাজ সিকদারকেও জেলের ভিতরে হত্যা করা হয়েছিল এই ভবনের নির্দেশে।রক্ষিবাহিনীর হায়না থাবায় কত মায়ের সন্তান যে আজো নিখোঁজ তার হিসেব কেউ কোনদিন করবে না।তবে মার্কিন দূতাবাসের নথিতে অসংখ্য শব্দটির উল্লেখ রয়েছে। এই নিখোঁজ তালিকায় আমার একজন বড় ভাই রয়েছেন। ২০০৪ সাল পর্যন্ত আমার জনম দুঃখি মা প্রিয় সন্তানের ফিরে আসার ব্যকুলতায় পথপানে চেয়ে চেয়ে পরপারে চলে গেছেন। কিন্তু আজো তিনি ফিরেননি। ফিরবেন না কোন দিন।শুধু তাই নয় এই রক্ষিবাহিনী সেই সময়ে সংখ্যালঘুদের ওপর কতটা অমানবিক ও বর্বরোচিত অত্যাচার চালিয়েছিল তা লন্ডনে গার্ডিয়ান, টেলিগ্রাফ, মেইল, টাইমস- এর আর্কাইভে সংরক্ষিত আছে। '৭১-'৭৫ সময়ের পুরানো পত্রিকা আমি না পড়লে এই লোমহর্ষক হৃদয় বিদারক নিষ্ঠুর ইতিহাস আমাকে কেউ বলে বিশ্বাস করাতে পারতো না। সে যাই হোক- এই ইতিহাস হয়তো অলিখিতই থাকবে। '৯৬ সালের ২ জুলাই শেখ হাসিনা এই অভিশপ্ত ভবনে ওঠেন এবং ২০০১ সালে ক্ষমতা ছেড়ে দেয়ার পরও বেশ কিছুদিন এই ভবনের মায়া ছাড়তে পারেনি। ২০০১ সালের ৮ জুলাই বেআইনীভাবে চরদখলের ন্যায় গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের প্র:৩/১এম ১৬/২০০১/১৩০৯ নাম্বার স্মারকে বাড়িটি তার নিজ নামে বরাদ্ধ নেয়। একারণেই ২০০১ সালের ১৫ জুলাই ক্ষমতা হস্থান্তর করার পরও আগস্ট পর্যন্ত বসবাস করেন। তৎকালিন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের চাপের মুখে বাড়িটি ছেড়ে দেয়। তবে যাওয়ার সময়ে বেআইনীভাবে সরকারি ভবনের যাবতীয় আসবাবপত্র-মালামাল ১৭টি ট্রাক ভরে নিয়ে যায়। এর সত্যতা ওইসময়ের পত্রিকা খুঁজলে পাওয়া যাবে। কিন্তু শেখ হাসিনার যে ভয়ঙ্কর দুর্নীতি গুলো আজো মানুষের অজানা অথচ সত্য- তা কেন পরবর্তী সরকার গুলো মানুষকে জানায়নি এবং বিচার করেনি তা রহস্যাঘেরা মনে হয়। শেখ হাসিনা নিজ নামে গণভবন লিখে নেয় এবং বোন রেহেনার নামে নিয়েছিল ধানমন্ডি থানা ফাঁড়ি আর দেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় সাপ্তাহিক বিচিত্রার স্বত্ত্ব। গণভবনে ওঠার আগে তার মনের মত করে সাজাতে গিয়ে রাষ্ট্রের ব্যয় হয়েছিল ১৬ কোটি ৩৯ লাখ ৮৫ হাজার ৫০০ শ' টাকা (১৯৯৬-৯৭ অর্থবছর)। এবছর রক্ষণা-বেক্ষণের জন্য ব্যয় হয়েছে ৬৩ লাখ ৭২ হাজার ৫৫৪ টাকা ৫২ পয়সা মাত্র। এর পরের বছর ব্যয় হয়েছে ৮৬ লাখ ৩২ হাজার ৬০৯ টাকা ৩৫ পয়সা মাত্র। ১৯৯৮-৯৯ অর্থবছরে ব্যয় ৫০ লাখ ৮৯ হাজার ৪২৪ টাকা ৬৬ পয়সা মাত্র। '৯৯-০০০ অর্থবছরে ৭০ লাখ ৬৫ হাজার ২৮৪ টাকা ০৮ পয়সা মাত্র। ২০০০-০১ অর্থবছরে ব্যয় হয়েছে ৯০ লাখ ৭০ হাজার ৪৯৩ টাকা ৭৬ পয়সা মাত্র। পাঁচ বছরে শুধু রক্ষণা -বেক্ষণে ব্যয় ৩ কোটি ৬২ লাখ ৩০ হাজার ৩৬৬ টাকা ৩৭ পয়সা মাত্র। এরপর মেরামত খাতে তিনি ব্যয় করেছেন আরো পৌনে চার কোটি টাকা মাত্র। এছাড়া বৈদ্যুতিক খাতে মেরামত-রক্ষণা-বেক্ষণে তিনি ব্যয় করেছেন ১ কোটি ২৫ লাখ টাকা মাত্র। তিনি ৫ বছরে বিলাশিতা ও শোভা বর্ধনে খরচ করেছেন ৫৩ লাখ ৪৪ হাজার ২৭৫ টাকা মাত্র। ইঁদুর নিধনে ব্যয় দেখিয়েছেন প্রতিমাসে ২৩ হাজার থেকে ৪৯ হাজার ৮০০শ' পর্যন্ত। তার কাপড় ধোলাইতে খরচ হয়েছে ২ লাখ ২০ হাজার করে। গণভবনে ৩ টি দলীয় সভা করেছেন বেআইনীভাবে। এতে ব্যয় করেছেন ৮ লাখ টাকা। একটি দোলনা বানিয়েছিলেন ৩ লাখ ৭৫ হাজার ৭শ টাকা ব্যয়। তার আরাম আয়েশের জন্য বেআইনী ভাবে ৭০ জন পিয়ন খান সামা রেখেছেন। এদের বেতন ভাতা দিয়েছেন রাষ্ট্রীয় কোষাগার থেকে। তিনি একসেট সোফার কাপড় এবং জানালার পর্দা কিনেছেন ২ লাখ ৩৩ হজার করে মাত্র।
বিষয়: রাজনীতি
২৫১৩ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন