প্রসঙ্গঃ ব্লগে শিশুর ছবি ব্যাবহার এবং তার নিরাপত্তা
লিখেছেন লিখেছেন খাস খবর ১২ জুন, ২০১৩, ০৯:০৭:৪৭ সকাল
মো. অহিদুজ্জামান
নিছক জ্ঞান দেয়ার জন্য লিখছি না। নেয়াহাত প্রয়োজন বলেই লিখলাম। ব্লগে যারা লিখছেন তাদের নিজ নাম গোপনের পাশাপাশি অনেককেই দেখা যাচ্ছে একটি শিশুর ছবি ব্যাবহার করছেন। আপত্তিটা নাম নিয়ে নয়। শিশুর ছবিটা ব্যাবহারের বিষয়টি আমি মনে করি এটা শিশু অধিকার লঙ্ঘনের সামিল।
কেন এবং কিভাবে ?
প্রথমত অন্য কারো ছবি ব্যাবহারের অধিকার আপনার নেই। এটা প্রতাড়নার শামিল। যদি শিশুটি আপনারও হয়ে থাকে তাহলেও মনস্তাত্তিক এবং নৈতিকতার প্রশ্নে আপনি অধিকার সংরক্ষণ করেন না। কারণ একদিকে আপনি নিজের নাম গোপন করছেন এবং একটি শিশুর ছবি ব্যাবহার করে একান্তই আপনার নিজের মতকে প্রকাশ করছেন। দৃশ্যত মতামত একটি। মানুষ দুইজন। অথচ ছবির মানুষটি অত্যন্ত নিষ্পাপ। তার জানা তো দূরের কথা সে এবিষয়ে কিছুই বোঝে না। কিন্তু আপনার লেখা, মন্তব্য বা মতামত যাই মানুষ পড়ছে তার সঙ্গে কেউ দ্বিমত পোষণ করতে পারে। ঘৃণা করতে পারে। ক্রুদ্ধ হতে পারে। গালাগালও করতে পারে। মনস্তাত্তিকভাবে আপনার নামের সঙ্গে ছবিটার প্রতিও সমানভাবে ঘৃণা-ক্রোধ সৃষ্টি হয়। এতে প্রদর্শিত শিশুর ছবির পাশাপশি সকল শিশুর প্রতি একটি বিরূপ মনোভাব তৈরি হচ্ছে। যা শিশুর প্রতি পরোক্ষ, সাইক্লোজিক্যাল বৈরিতা সৃষ্টি হচ্ছে। এটা শিশু অধিকার লঙ্ঘনের সামিল। এটা ইসলাম ও পার্থিব এবং নৈতিকতার মানদণ্ডে গহিৃত কাজ।
অন্যদিকে নিজের কথা ভাবুন। আপনার কাছে এমন কোন গ্যারান্টি আছে যে আপনি যাই লিখছেন তাতে কোন শত্রুতা সৃষ্টি হচ্ছে না? কারো মনে প্রতিশোধ আকাঙ্খা তৈরি হচ্ছে না? আপনাকে চিনলো না। কিন্তু আপনার শিশুর ছবিটা দেখে কেউ চিনে ফেললো। তখন ওই শিশুটি কিন্তু অনিরাপদ। যার বাস্তব উদাহরণ আমি পরে দিচ্ছি।
অন্য আরএকটি বিষয় হচ্ছে- যখন এই শিশুটি বড় হবে এবং পড়তে শিখবে তখন আপনার এই মতের সঙ্গে একমত নাও হতে পারে। আপনাকে এজন্য তিরষ্কারও করতে পারে।
আমি অত্যন্ত দুঃখের সঙ্গে বলছি- লেখার নিচে মন্তব্য করতে গিয়ে যুক্তিহীনভাবে ব্যাক্তিকে আক্রমণ করা হয়। যা বুদ্ধি ভিত্তিক ও যুক্তি ভিত্তিক আক্রমণ নয়। যা হিংস্রতার বহিঃপ্রকাশ। মনে হয় মাদি বিড়ালের সঙ্গমকালিন চিৎকার। যা দন্ত-নখরে আঁচড়ে কামড়ে দেয়ার সমান।
রাষ্ট্র, রাজনৈতিক দল বা রাজনীতিক, সরকার বা সরকার প্রধান, সরকারি আমলাপৈলা অর্থাৎ পাবলিক প্রপার্টি বলতে যা বুঝায় তাকে তথ্য তুলে ধরে আক্রমণ করার অধিকার সকলের রয়েছে। কিন্তু কোন মতামত প্রকাশকারিকে যুক্তি এবং বুদ্ধি ভিত্তিক উপায় ছাড়া তিরষ্কার করার অধিকার কারো নেই। অবশ্যই যুক্তি দিয়ে চৌদ্দগোষ্ঠী উদ্দার করার অধিকার সকলের আছে।
ব্লগ একটি জনপ্রিয় গণমাধ্যম। এটা একটি পাবলিক প্রপার্টিও বটে। ব্যাক্তিগত বা পারিবারিক ব্লগ হলে পাবলিক প্রবেশাধিকার থাকতো না। যাই হোক এবিষয়ে
পরে একটি পোষ্ট লেখার ইচ্ছা আছে।
উদাহরণ দেয়ার কথা বলছিলাম- আর তা হচ্ছে অত্যন্ত করুণ ও হৃদয় বিদারক। ২০০১ সালের জানুয়ারি মাসে খুলনায় ৭ বছরের অর্ণবকে অপহরণ করে হত্যা করা হয়েছিল। কারণ ছিলো খুলনার একটি আঞ্চলিক দৈনিকে অর্ণবের ছবি ব্যাবহার করে শিশু নির্যাতনের ধারাবাহিক প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়েছিলো। এতে আপরাধীচক্রের মনে একটা তীব্র ক্ষোভ সৃষ্টি হয়েছিলো।
বাগেরহাট থেকে আতিফ নামের একটি শিশু অপহরণ করা হয়েছিল ১৯৮৫ সালে। তার ছিলো পত্রিকায় ছবি ছাপা হওয়ার পর। এভাবে অসংখ্য ঘটনা রয়েছে।
অতএব আমি এ বিষয়টি সকলের সতর্কতার জন্যই লিখলাম। অতএব আমরা মা-বাবার কৃতকর্মের জন্য কোন সন্তান যেন নির্যাতনের কিংবা সমাজে বৈষম্যের শিকার হবে বটো কারো কাম্য হতে পারে না।
বিষয়: বিবিধ
১৫০৫ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন