শাপলা চত্বর নিয়ে অনুসন্ধানঃ হত্যাকাণ্ডের শুরুতে ব্যাবহার করেছে স্মল আর্মস

লিখেছেন লিখেছেন খাস খবর ০৫ জুন, ২০১৩, ০৬:২৬:৩৩ সন্ধ্যা

মো. অহিদুজ্জামান

শাপলা চত্বরে কত নিরিহ মানুষ গণহত্যায় নিহত হয়েছেন সে হিসাব আওয়ামী লীগ সরকার কখনোই দেবে না। এই সত্য পাগলেও বুঝে। আর্ন্তজাতিক মহলকে দেখা যাচ্ছে যথেষ্ট নিরব। বরং তারা সরকারের এই জগণ্য কাজগুলোকে পরোক্ষ সমর্থন দিয়ে যাচ্ছে। অবস্থা দৃষ্টে এমনটাই মনে হচ্ছে।

কিন্তু হেফাজত কেন লাশের হিসাব দিচ্ছে না? এই প্রশ্নের জবাব চট্টগ্রামের সংবাদ সম্মেলনে তারা আংশিক দিয়েছে। তারা বলছে এই মূহুর্তে তারা তথ্য সংগ্রহ করছে। গড়পরতা হিসাব তারা দেবে না। ওই সংবাদ সম্মেলনে তারা বলছে যে তাদের কাছে ওইদিন পর্যন্ত ৭৮ টি লাশের তথ্য এসেছে। তবে লক্ষ্যণীয় হচ্ছে এই নিহতদের কোন বাড়ি ঘরের ঠিকানা দেয়নি। বরং ইঙ্গিত দিয়েছে যে সরকারি দলের লোকজন এবং সরকারের পোষ্যবাহিনী নিহতদের আত্মীয় স্বজনদের হুমকি দিচ্ছে। মামলা হামলার ভয় দেখাচ্ছে। জঙ্গি বানিয়ে ধরে নিয়ে যাওয়ার হুমকি দিচ্ছে।

অনুসন্ধানে দেখা গেছে এটা সত্য কথাই তারা বলছেন। তবে এর পাশাপাশি আরো সত্য হচ্ছে- হেফাজতের কাছে এমন কোন তথ্য নেই যে তারা বলে দেবে কোন গ্রাম থেকে বা শহর বন্দর থেকে কতজন লোক ওই কর্মসূচীতে অংগ্রহণ করেছিল।

প্রতিটি গ্রামে তাদের কমিটিও নেই যে হতাহতদের আত্মীয় স্বজন ওই কমিটির কাছে গিয়ে বলবে। যেসব কমিটি আছে বিশেষ করে লোকাল এরিয়ার কমিটির লোকজন পালিয়ে বেড়াচ্ছে। পুলিশের কিংবা গোয়েন্দা সদস্যদের ভয়ের পাশাপাশি সরকার দলীয় ক্যাডারদের ভয়ে তারা বেশি সন্ত্রস্ত। এবিষয়ে দৈনিক মানবজমিন একটি রিপোর্ট করার পর থেমে গেছে।

পিরোজপুর জেলার ভান্ডারিয়া উজেলার একজন স্থানিয় সাংবাদিক জানিয়েছেন, ওই উপজেলার বিভিন্ন গ্রামে অন্তত ২৫ জনের নিঁখোজ হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। কিন্তু এই খবর পত্রিকায় পাঠানোর পরও কতৃপক্ষ প্রকাশ করেনি। পরিবার গুলো ভয়ে মুখ খুলছে না।

ঢাকার ফকিরাপুলের বেশ কয়েকটি হোটেল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছেন ওই ঘটনার পর প্রতিদিন তাদের হোটেলে বিভিন্ন এলাকা থেকে ফোন আসে। তারা বিভিন্ন নাম জানতে চায় যে ওইসব নামের লোকজন তাদের হোটেলে ছিলো কিনা। তারা নামপ্রকাশ না করার শর্তে জানিয়েছে যে ঘটনার আগে অনেক লোক তাদের হোটেলে ছিলো। কর্মসূচীতে যোগদান করার পর তারা আর ফিরে আসেনি। এমনকি তাদের অনেকের ব্যাগ, মালামাল হোটেলেই রয়ে গেছে। আজো কেউ ফিরে আসেনি।

বিভিন্ন হোটেল কর্তৃপক্ষ অন্তত ১০ জনের ব্যাগ তল্লাশি করে ঠিকানায় খোঁজ নিয়ে জানতে পেরেছে যে তারা গুলিতে নিহত হয়েছেন। তাদের লাশ পাওয়া যায়নি।

পুলিশের একজন কর্মকর্তার স্ত্রী জানিয়েছেন যে তার স্বামী ওই অভিযানে অংশ নিয়েছিলেন। তিনি বাসায় এসে মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে ফেলেছিলেন। ঘুমের মধ্যে তিনি চিৎকার দিয়ে ওঠেন। ১০/১৫ দিনে কিছু খেতে পারেন নি। এখনো সে স্থির থাকতে পারেন না। শুধু চাকরির ভয়ে মুখ খুলছেন না তা নয়। যদি এই ঘটনা ফাঁস হয়ে যায় তার জীবন যাওয়ার আশংকা করছেন।

অপর একজন বিজিবি সদস্য জানিয়েছেন, শুধু যে ব্রাশফায়ার করে হত্যা করা হয়েছে তা নয়। এই অপারেশনে অংশ নেয়া সদস্যরা প্রথমে স্মল আর্মস যেমন রিভলবার, পিস্তল, বিষাক্ত চাকু ব্যাবহার করে এলোপাতারি হত্যাকাণ্ড চালিয়েছে। যাতে

উপস্থিত সকলে আতঙ্কিত হয়ে স্থান ত্যাগ করে এবং পরবর্তিতে আর না আসে।

প্রত্যক্ষদর্শীদের বর্ণনায় পাওয়া গেছে অপারেশন পরিচালনাকারিরা মূলত রাত ১০ টা থেকেই অপারেশন শুরু করেছে। এসময়ে তারা বিভিন্ন জায়গায় অভিযান চালিয়ে অন্তত ২০০ জনকে গ্রেফতার করে। ঢাকা মেট্রেপলিটন থানাগুলোর রেকর্ড অনুযায়ী হেফাজত কর্মী হিসেবে ওইদিন ৪৬৭ জনকে গ্রেফতার দেখানো হয়েছে।

বিষয়: বিবিধ

২২৫২ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File