শাপলা চত্বরে গণহত্যার অনুসন্ধানঃ ৭শ' ৩৭ টি লাশ দাফন করা হয়েছে বিভিন্ন কবরস্থানে
লিখেছেন লিখেছেন খাস খবর ০২ জুন, ২০১৩, ০৮:৫৭:৫৭ রাত
মো. অহিদুজ্জামান
শাফলা চত্বরে অপারেশন ফ্লাশআউট অভিযানে প্রকৃতপক্ষে কতজন নিহত হয়েছেন সেই হিসাব মূলত কারো কাছে নেই।
ওই গণহত্যার প্রত্যক্ষদর্শী, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য, সামরিক বিশেষজ্ঞ, পুলিশের সাবেক কয়েকজন আইজিপি, অনুসন্ধানী সাংবাদিক এবং মাদ্রাসা প্রধান ও মসজিদের ইমাম-মোয়াজ্জিন সহ বিভিন্ন সূত্রের সঙ্গে কথা বলে বেশ কিছু চাঞ্চল্যকর এবং নির্ভরযোগ্য তথ্য পাওয়া গেছে।
অভিযানে অংশগ্রহণকারি পুলিশ, বিজিবি ও এলিট ফোর্স্ সদস্যরা নাম প্রকাশ না করার শর্তে (কোরআন শরীফ স্বাক্ষী রেখে প্রতিজ্ঞা করতে হয়েছে কোন প্রকার নাম প্রকাশ করবো না) বলেছেন, এই অভিযানের কথা নিচের পর্যায়ের কর্মকর্তা ও সাধারণ সদস্যদের আগে জানানো হয়নি এবং খুব সীমিত সংখ্যক সদস্যদের এই অভিযানে রাখা হয়েছে। এমনকি অভিযান পরিচালনার পূর্বে যে সব আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা আগে থেকে ডিউটিতে ছিলেন তাদেরকে অভিযানে নেতৃত্বদানকারি কর্মকর্তারা মাঠে নেমেই ব্রাকে পাঠিয়ে দিয়েছেন। এরকারণ হিসেবে মনেকরা হচ্ছে- যাতে এই ঘটনার কোন প্রত্যক্ষদর্শী না থাকে তার জন্যই এই সতর্ক ব্যবস্থা নেয়া হয়।
এমনকি কীধরনের অভিযান পরিচালনা করা হবে তারও ব্রিফিং দেয়া হয়নি কোন সদস্যকে এবং তাদেরকে রাখা হয়েছে মূল অভিযানের বাইরে।
পুলিশের এএসপি লেভেলের একাধিক কর্মকর্তা জানান, তারা জেনেছেন অভিযানের আধাঘণ্টা আগে। সবসময়েই এধরণের অভিযান পরিচালনা করে থাকেন পুলিশের এই লেভেলের কর্মকর্তারা। কিন্তু এটা ছিল একটা ব্যতিক্রম। তিনি আরো জানান, অভিযানের মূল স্পট শাপলা চত্বর হলেও ক্রাকডাউন এরিয়া ছিল- পশ্চিম-দক্ষিণে প্রেসক্লাব, পুরানা পল্টন, শিক্ষাভবন, হাইকোর্ট এলাকা, নগর ভবন, গোলাপ শাহ মাজার, বায়তুল মোকাররম মসজিদের দক্ষিণ গেট, উত্তর গেট, মূক্তাঙ্গন, স্টেডিয়াম এলাকা, পল্টন মাঠ, সিদ্দিক বাজার, নবাবপুর রোড সহ যাত্রাবাড়ি এলাকা। উত্তর-পূর্বে ছিলো কাকরাইল, বিজয় নগর, শান্তি নগর, নয়া পল্টন, ফকিরাপুল, ব্যাংক কলোনী, শাহজাহানপুর কলোনী, বাসাবো ওভার ব্রিজ এলাকা, মুগ্ধা, মানিক নগর সহ ডেমরা, শ্যামপুর এলাকা। এরকারণ হিসেবে বিশেষজ্ঞরা বলছেন এই বিশাল এরিয়ায় বেশ কয়েকটি প্রভাবশালি কওমী-হাফিজিয়া এবং আলীয়া মাদ্রাসা রয়েছে। এসব মাদ্রাসার রয়েছে আবাসিক হল। রয়েছে অসংখ্য মসজিদ। ফলে অত্যন্ত সুচারুরূপে এবং দক্ষতার সঙ্গে কৌশলী পনার মধ্যেই অভিযান সফল করেছে সরকার।
সূত্র জানায়, ঢাকায় অন্তত প্রভাবশালী আলীয়া ও কওমী মাদ্রাসা রয়েছে ৫০ টি। এরমধ্যে লালবাগ, তামিরুল মিল্লাত, শাহজাহানপুর, মিরপুর, খিলগাঁও, শান্তি নগর, ঢাকা আলীয়া, কেরানীগঞ্জ, সায়েদাবাদ, ফকিরাপুল, সিদ্দিকবাজার মাদ্রাসা উল্লেখযোগ্য হলেও ঢাকা ও ঢাকার আশপাশে অন্তত ১০ হাজার মাদ্রাসা, এতিমখানা ও মসজিদ রয়েছে। এসব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে বিপুল সংখ্যক ছাত্র পড়েন। রয়েছেন শিক্ষক, ইমাম-মোয়াজ্জেন। এসব প্রতিষ্ঠান থেকে রাত ৮/৯ টা পর্যন্ত অসংখ্য লোক কর্মসূচীতে উপস্থিত ছিলেন। এরপর দেশের বিভিন্ন দূর এলাকা থেকে যারা এসেছিলেন তারাই ছিলেন শাপলা চত্বরে। রাত ১২ টার পরে কত লোক উপস্থিত ছিলেন তার কোন সঠিক হিসাব না থাকলেও অন্তত ৩০-৪০ হাজার লোক থাকতে পারেন বলে ধারণা করছেন সতীর্থরা এবং এর পক্ষে স্বাক্ষী পাওয়া গেছে রাত ১২ টা পর্যন্ত ডিউটিতে থাকা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য ও বেশ কয়েকজন সাংবাদিকের সঙ্গে কথা বলে।
একটি স্বেচ্চাসেবী সংগঠন জানিয়েছে তারা রাত ১২ টার পর প্রথমে ৩০ হাজার বোতল পানি পাঠিয়েছিল। এরপর ওই পানিতে সঙ্কুলান না হওয়ায় আরো ২০ হাজার পানি পাঠানো হয়। এই সংগঠনটি কোন রাজনৈতিক দলের বা মতের নয়। তারা আল্লাহর রাস্তায় দান করার কথা জানিয়েছেন।
অপরএকটি সংগঠন জানিয়েছে রাত ১১ টার দিকে তারা জানতে পেরেছে যে অসংখ্য মানুষ না খেয়ে আছে। এরমধ্যে শিশু ও বৃদ্ধ রয়েছেন। এই সংগঠনটি তিন বস্তা চিড়া, ১০০ কেজি মুড়ি ও ৫০ কেজি গুড় পাঠিয়েছেন। কিন্তু এসব খাবার আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা নিয়ে গেছে।
মতিঝিলের একজন বাসিন্দা জানিয়েছেন তারা কয়েকজন মিলে রাত ৮ টার দিকে ৩০ কেজি চাউলের খিচুড়ি দিয়েছেন। এসময়ে ভলান্টিয়াররা উপস্থিত অনেককে রাস্তায় জায়নামাজ বিছিয়ে নামাজ-জিকির করতে দেখেছেন।
এভাবে অন্তত ২০ জন মতিঝিলের প্রত্যক্ষদর্শী জানিয়েছেন
শাপলা চত্বর, কমলাপুর, মানিক নগর, পীরজঙ্গীমাজার, রেলকলোনী, আইডিয়েল স্কুল, ইডেন বিল্ডিং এলাকায় কমপক্ষে ৩০/৩৫ হাজার লোক ছিলো। এদিকে ফকিরাপুল এলাকার বাসিন্দারা জানিয়েছেন, ফকিরাপুল পানির ট্যাংকি, দৈনিক বাংলামোড় মোড় এলাকায় ১৫/১৬ হাজার লোক অবস্থান করতে দেখেছেন। পুরানা পল্টন-সেগুন বাগিচা এলাকার বাসিন্দারা জানিয়েছেন তোপখানা রোড, বায়তুল মোকাররম এলাকা, বিজয় নগর, শান্তি নগর, মুক্তাঙ্গন, নয়াপল্টন, কাকরাইল মোড় এলাকায় রাত ১০/১১ টার দিকে কমপক্ষে ৩০/৩৫ হাজার লোক দেখেছেন।
পুলিশের সাবেক তিন জন আইজিপি মনে করেন, এইধরণের অভিযান পরিচালনা করার সক্ষমতা বাংলাদেশ পুলিশের নাই। অভিযানের ধরণ দেখে তাদের মনে হয়েছে বিশেষ কোন বাহিনী অত্যান্ত দক্ষতার সঙ্গে অপারেশন পরিচালনা করেছে। ফলে সূর্যের আলোতে কেউ শেষ চিহ্নটুকুও খুজেঁ পায়নি। অভিজ্ঞতা সম্পন্ন এই তিন জন সাবেক আইজিপি বলেছেন, ভারতের ইন্দিরা গান্ধির মৃত্যুর পর ভারতের কমান্ডো বাহিনী যেভাবে অভিযান চলিয়েছিল তার সঙ্গে তারা শাপলা অভিযানের মিল দেখতে পান। ইন্দিরা গাঁন্ধি আততাইর হাতে নিহত হওয়ার পর গণহত্যা চালিয়েছিল ভারতের কমান্ডো বাহিনী। চলছিল দীর্ঘদিন অঘোষিত জরুরি অবস্থা। কিন্তু আর্ন্তজাতিক সম্প্রদায় জেনেও না জানার ভান করেছিল। ভিনদেশী মিডিয়াও ছিল নিরব। এরমধ্যে বিদেশী সাংবাদিকদের সেখানে আমন্ত্রণও জানানো হয়। তবে তারা ছিলো ভারতের গৃহপালিত সাংবাদিক্। বাংলাদেশে থেকে গিয়েছিলেন বর্তমানে দৈনিক মানব জমিনের প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী (মতি ভাই)। ভারতে এসময়ে টেলিভিশনে, প্রিন্ট মিডিয়ায় সরকারের সমালোচনাও করা হয়েছে। তবে প্রকৃত ঘটনাকে আড়াল করে। এই সমালোচনার মাধ্যমে দেখানো হয়েছে মিডিয়া স্বাধীন। যা এখন বাংলাদেশে হচ্ছে। এমনটাই মনে করেন এই তিন সাবেক অভিজ্ঞ কর্মকর্তা।
অপর একটি নির্ভর যোগ্য সূত্র জানিয়েছে ঢাকার জুরাইন, ডেমরা, আজিমপুর, উত্তরা, চট্টগ্রামের মেহেদী বাগের গোলপাহাড় এলাকার সরকারি কবরস্থানে ৭শ' ৩৭টি লাশ কবরস্থ করা হয়েছে। এরমধ্যে উত্তরায় নেয়া হয়েছে ১০৬ টি। চট্টগ্রামে নেয়া হয়েছে ৫৫০টি। আজিম পুরে নেয়া হয়েছে ৭০টি এবং ডেমরায় কবর দেয়া হয়েছে ১১টি। ে
চোখ রাখুন খাস খবরে
আগামী পর্বে পড়ুন তৃতীয় কিস্তি।
বিষয়: বিবিধ
২৪৩৪ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন