হেফাজতে ইসলামের লংমার্চঃ একটি বিশ্লেষণ
লিখেছেন লিখেছেন খাস খবর ০৭ এপ্রিল, ২০১৩, ০৩:৫২:১০ দুপুর
মো. অহিদুজ্জামান
বাংলাদেশে ইসলামী শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রতি সাধারণ মানুষের একটি বিশেষ দুর্বলতা রয়েছে। প্রায় ৯০ ভাগ মুসলমানের দেশে ধর্মীয় দৃষ্টিকোন থেকে এটা থাকাটা স্বাভাবিক। তবে এর বিপরিতে একশ্রেণীর মানুষ ইসলামী শিক্ষাকে ঘৃণাও করে থাকে।
তবে প্রতিবেশি রাষ্ট্র ভারতে ইসলামী শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান হিসেবে মাদ্রাসা শিক্ষার প্রতি হিন্দুধর্মাবলম্বী সংখ্যাআধিখ্য জনগোষ্ঠীর
কোন দুর্বলতা না থাকলেও প্রতিহিংসা বা ঘৃণা নেই। মুসলমানদের ওপর নির্যাতন, বৈষম্য রয়েছে। মাঝে মাঝে দাঙ্গা-হাঙ্গামা চলে। গরু কোরবানীর ওপর নিষেধাজ্ঞা আছে। মসজিদে মাইক ব্যাবহার করে আজান দেওয়ায় বারণ রয়েছে। কিন্তু আশার কথা হচ্ছে- হিন্দু ধর্মের ছেলে-মেয়েরা মাদ্রাসায় পড়ে। সমাজ বিজ্ঞানীদের কাছে এটা সামাজিক সুস্থিতির লক্ষণ।
২০০৮ সালে কোলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাংবাদিকতা বিভাগের আমন্ত্রণে আমি একটি অনুষ্ঠানে যোগদিয়েছিলাম। এসময়ে আমার বন্ধুবর বিশ্বজিত আমাকে তার কর্মস্থল দৈনিক বর্তমান পত্রিকা অফিসে আমন্ত্রণ জানিয়েছিল। সে একজন সিনিয়র সাংবাদিক।
বর্তমান পত্রিকার অফিস হচ্ছে কোলকাতা শহরের বাইপাস সড়কে। পুরানো শহর থেকে প্রায় ৬০/৭০ মাইল দুরে। এখানে শাইন সিটি নামে আধুনিক শহর নির্মাণ চলছে। আগামী ৫শ' বছরের পরিকল্পনা নিয়ে নান্দনিক এক নগর বিনির্মাণের কাজ চলছে। ওখানে যাওয়ার পথে ট্যাক্সিক্যাব ড্রাইভারের সাথে কথা হয়। সে আমার কাছে জানতে চেয়েছিল আমি বাংলাদেশী কিনা। এবিষয়টিতে একটি আপদ আছে। আমি তা চিন্তা না করে সত্য কথাই বললাম। তবে তা আর হয়নি। বরং হিন্দু ধর্মের ছেলে-মেয়েরা মাদ্রাসায় পড়ে এই চমৎকার সৌহার্দ্যের বিষয়টি জানতে পারলাম। প্রথমে বিশ্বাস হয়নি। পরে বিণয়কে অনুরোধ জানাই আমাকে একটি মাদ্রাসায় নিয়ে যেতে।
আমি কলেজ স্ট্রিট থেকে ক্যাব নিয়ে সাইন সিটিতে যেতেছিলাম। অবশেষে বিণয় আমাকে তুলসি গাঁও গ্রামে নিয়ে যায়। এ গ্রামে জামেয়া-এ ইসলামীয়া নামে একটি মাদ্রাসা রয়েছে। দেখলাম সত্যিই এখানে হিন্দু ছেলে-মেয়েরা পড়ছে। আমি ২/৩ জনের সাথে কথা বলে জানতে পারলাম যে মন্দির ভিত্তিক টোল বা স্কুলের চেয়ে মাদ্রাসায় লেখা-পড়া ভালো হয়। যার কারণে হিন্দুরা ছেলে-মেয়েদেরকে মাদ্রাসায় পড়তে দেয়।
মমতা ব্যানার্জি ক্ষমতায় এসে মাদ্রাসা ছাত্রদের জন্য রেল ভাড়া ফ্রি করে দিয়েছেন। মাদ্রাসার অবকাঠামো উন্নয়ন বাজেট বাড়িয়েছেন।
এসব নিয়ে আমার বন্ধু বিশ্বিজতকে প্রশ্ন করে বেশ পজেটিভ উত্তর পেয়েছি। তাতে আমি নিশ্চিত হলাম যে একটি শিক্ষা ব্যাবস্থার প্রতি কোন সভ্য মানুষের বিদ্বেষ থাকে না। এটা আরো নিশ্চিত হলাম লন্ডনে মাদ্রাসা দেখে। এখানে মাদ্রাসা শিক্ষার পাশাপাশি বিজ্ঞান ভিত্তিক শিক্ষা চলছে। এতে মূলধারার বৃটিশদের কোন মাথা ব্যাথা না থাকলেও কতিপয় বাঙালি-বৃটিশের বেশ মাথা যন্ত্রণা দেখেছি। যেমনটা আমি বাংলাদেশে এক শ্রেণীর মানুষের মাঝে মাদ্রসা শিক্ষার প্রতি প্রবলভাবে ঘৃণা দেখেছি। সবসময়ই তারা সমালোচনায় লিপ্ত থাকে। মাদ্রাসায় পড়ুয়া ছেলেদেরকে দেখলে ভ্রুকুটি করে।
তারা মনে করে মাদ্রাসায় পড়ুয়ারা শুধু ভিক্ষা করে। আবার একশ্রেণীর মধ্যে রয়েছে ভ্রান্ত ধারণা। তারা মনে করে মাদ্রাসায় পড়লে মৌলবাদী হয়। তবে আমার অভিজ্ঞতা বলে বাংলাদেশের এই দুই শ্রেণীর বাস্তবভিত্তিক কোন ধারণা নেই। তারা সত্য কোনটি তা জানে না। ওদেরকে আপাদমস্তক মূর্খ বলে আমার মনে হয়।
কারণ আমরা দেখতে পাই- ঢাকা আলীয়া মাদ্রাসায় সকল রাজনৈতিক দলের ছাত্র সংগঠন রয়েছে। ছাত্র লীগ, ছাত্র দল, ছাত্র শিবির, ছাত্র ইউনিয়ন সহ সকল সংগঠনই রয়েছে। এভাবে মাদ্রাসায় পড়াকালিন রাজনীতিতে যারা জড়িত হওয়ার সুযোগ না পায় তারা অনেকেই কর্ম জীবনে কোন না কোন ইসলামী রাজনীতির বাইরে জড়িত হয়। মাদ্রসায় শিক্ষা শেষে পুরো নাস্তিক হওয়ারও দৃষ্টান্ত রয়েছে।
আবার মাদ্রসায় পড়ে যে পরিপূর্ণ ইসলামী অনুশাসন মানছে তা কতটা সত্যি? আমার ব্যাক্তিগত জীবনে দেখেছি একজন কোরআনে হাফিজ সে খতমে কোরআন পড়া কালিন অবৈধভাবে পর নারীর সংগে যৌন কাজে লিপ্ত হয়েছে।তার লালসার কর্মটি শেষ করেই কোরআন তেলাওয়াত শুরু করেছে। মাদ্রাসায় পড়ুয়াদের অনেকের মধ্যে গে আসক্তি প্রবলভাবে রয়েছে। এটা একজন জবরদস্ত হুজুর থেকে মসজিদের ইমাম-মুয়াজ্জিনদের অনেকের মধ্যেই দেখা গেছে । তবে আমি এমনটা বলছি না যে একেবারে একশ জনের মধ্যে একশ জনই এই কর্মটি করছেন।
এই গে কিংবা অবৈধ পরিণয় আসক্তি বিশ্ববিদ্যলয় পড়ুয়াদের মধ্যেও কী নেই? বাংলাদেশে মাদ্রাসা-বিশ্ববিদ্যালেরে ছাত্র-শিক্ষক যে করুক না কেন তা পাপ পঙ্কিল বৈ শ্বেত-শুভ্র কখনো হবে না।
মাদ্রাসায় পড়ুয়াদের বিরুদ্ধে মৌলবাদ-জঙ্গিবাদের অভিযোগ রয়েছে। এই অভিযোগটি মাদ্রাসায় পড়ুয়াদের বিরুদ্ধে যেমন সত্য তেমনি বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়াদের ব্যাপারেও সত্য। তাতে কী কোন সন্দেহ আছে?
আবার বলা হয় যে, মাদ্রাসায় পড়লে গোঁড়ামী তৈরি হয়। এই গোঁড়ামী কিংবা কুসংস্কার আমি দেখেছি আধুনিক বিজ্ঞান শিক্ষিত মানুষের মধ্যেও। যেমন লন্ডনে এলেভেল পড়েছেন, এমবিবিএস করে চিকিৎসা বিজ্ঞানের সর্বোচ্চ ডিগ্রি যত আছে সবই অর্জন করেছেন। এখন বিশ্ববিখ্যাত একটি হসপিটালের সিনিয়র সার্জন। তিনি মৌলভী বাজারের একজন ওঝাকে স্পন্সর দিয়ে লন্ডনে নিয়ে এসেছেন তাবিজের জন্য। আবার দুর্নীতি-অসততা সেক্ষেত্রেও মাদ্রাসা-বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষিতদের আলাদা করে দেখার অবকাশ আছে বলে আমি মনে করি না। ভালো-মন্দ উভয়ের মধ্যে রয়েছে।
যাইহোক, হেফাজতে ইসলামের লংমার্চ সম্পর্কে বলতে গিয়ে এসব কথা বলাটা অবান্তর মনে হলেও আমি প্রাসঙ্গিক মনে করছি কয়েকটি কারণে। সেগুলি পরে বলছি।
মুলত হেফাজতে ইসলাম একটি অরাজনৈতিক সংগঠন। আর এই সংগঠনের প্রধান মাওলানা মুফতি আহমেদ শফি একজন প্রবীণ উচ্চমার্গের আলেম। তাঁর আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে ইসলামী পণ্ডিত হিসেবে সুখ্যাতি রয়েছে।
অপরদিকে ভারতীয় উপ-মহাদেশের সবচেয়ে বড় ইসলামী শিক্ষাকেন্দ্র ভারতের দারুল উলুম দেওবন্দ কতৃপক্ষ তাঁকে উচ্চমর্যাদা দিয়ে থাকে। ভারতের দারুলউলুমের দীর্ঘ ইতিহাস রয়েছে। এই প্রতিষ্ঠানটির নিজস্ব কিছু আইন রয়েছে। যা ভারতীয় সংবিধানের সংগে সাংঘর্ষিক বলে অনেকে মনে করেন। তবে ভারত সরকার কখনোই এব্যাপারে খবরদারি করতে যায় না। আর তুলনামুলকভাবে কংগ্রেস দল যেহেতু অন্যদের চেয়ে একটু উদার তাই দেওবন্দ কতৃপক্ষ কংগ্রেসকে সমর্থন করে থাকে। অনুরূপভাবে কোলকাতার জামে মসজিদ কতৃপক্ষের ব্যাপারেও ভারত সরকার কিছুটা সহনশীল। যেমন কোলকাতার অন্য মসজিদে মাইকে আজান প্রচার করতে না পারলেও ২০০৯ সালে কোলকাতা জামে মসজিদে নিন্ম আওয়াজে আজান দিতে আমি দেখেছি।
এব্যাপারে তৎকালিন কোলকাতা প্রেসক্লাবের সভাপতি শ্যামল বরণ রায়কে আমি প্রশ্ন করেছিলাম। তিনি বলেছিলেন ভারত সরকার কয়েকটি জায়গার ব্যাপারে সবসময়ই উদার নীতি পোষণ করে এবং সার্বিক নিরাপত্তা দিয়ে থাকে। এরমধ্যে এই দুইটি জায়গাসহ আরো রয়েছে আজমীর শরীফ, বসিরহাট পীরসাহেবের মাজার, ফুরফুরা শরীফ সহ মুসলিম বিখ্যাত স্থাপনা সমুহ। তবে এসব জায়গায় যে হামলা হয়নি তা নয়। এরপরও এই জায়গা গুলো ভারত সরকারের কাছে স্পর্শকাতর হিসেবেই বিবেচিত।
মাওলানা শফি সাহেব মুলত দেওবন্দ পন্থি আলেম। তাঁর মাদ্রাসার শিক্ষাকার্যক্রমে সিলেবাস ও তরিকা-আকিদার ক্ষেত্রে তিনি দেওবন্দকে অনুসরন করে থাকেন। কওমী সকল মাদ্রাসার অনুকরণীয় প্রতিষ্ঠান দেওবন্দ হলেও কোথাও কোথাও ভিন্নতা রয়েছে। তবে মাওলানা শফি সাহেব বাংলাদেশের কওমী মাদ্রাসা বোর্ডের প্রধান।
এই কওমী মাদ্রাসা গুলো পরিচালনার ক্ষেত্রে মানুষের দান-সদকার ওপর নির্ভর করতে হয়। এক্ষেত্রে অর্থের প্রধান যোগান দাতা হচ্ছেন বড় বড় ব্যাবসায়ী এবং ধর্মপ্রাণ প্রবাসীরা। তবে বিদেশী কিছু চ্যারেটি সহায়তাও পেয়ে থাকে। এদিক থেকে এসব মাদ্রাসার পরিচালকদের হাত-পা ডোনারদের কাছে বাঁধা। অন্যদিকে আরএকটি হচ্ছে- এতিমখানা। এই এতিমখানা সরকারি ভাবে অনুমোদন পেলে সমাজ কল্যাণ মণ্ত্রণালয়ের একটা অনুদান পাওয়া যায়।
সবমিলিয়ে কওমী মাদ্রাসার ভরসা একমাত্র তাওয়াক্কালতু আল্লাহ।
তাদের রাজনৈতিক ভিশন আছে। এটা দীর্ঘ পুরানো। হাফেজ্জী হুজুর ছিলেন স্বাধীনতা উত্তর বাংলাদেশের প্রধান পুরোধা। তবে কালক্রমে এদের মধ্যেও নানা বিভক্তি দেখা দিয়েছে। যেমন চরমোনাই পীর। প্রায়াত মাওলানা আমীনী দল। আল্লামা শায়খুল হাদিসের দল ইত্যাদি। এরমধ্যে ২০০৮ সালের নির্বাচনের আগে ইসলামী ঐক্য জোটের সঙ্গে শরিয়া আইন চালুর চুক্তি করেছিল শেখ হাসিনা। আর ঐতিহাসিক পরম্পরায় এদের সকলের সঙ্গে আওয়ামী লীগ প্রকাশ্যে-অপ্রকাশ্যে সখ্যতার কথা বলে এবং কখনোবা টাকার বিনিময়ে তাদেরকে রাজনৈতিক ভাবে ব্যাবহার করে আসছিল। তবে মাওলানা আহমদ শফি কয়েক মাস আগেও সাধারণ গণ মানুষের মাঝে তেমন পরিচিত ছিলেন না। আমার জানামতে তাঁর কোন রাজনৈতিক উচ্চাভিলাসও ছিলো না। তিনি এখন বয়সের ভারে কাবু হয়ে পরেছেন। এমুহুর্তে রাজনীতিতে আসার প্রশ্নই ওঠে না। আমি ব্যাক্তিগতভাবে যতটা জানি তাতে তিনি একজন মাটির মানুষ। এসত্ত্বেও তিনি এই বিশাল একটি কর্মসূচী কেন দিলেন? ১৩ দফা দাবি দিয়েছেন। এটা পাকিস্তান জন্মের পর থেকেই দেয়া হচ্ছে। নতুন কিছু নয়। আবার গণমানুষের কাছে তেমন পরিচিত নয় এমন একজন মানূষ কর্মসূচী দিলেন তাতে লাখ লাখ মানুষ উপস্থিত হলেন। এখানে মনে রাখা প্রযোজন যে জামায়াতের জন্মলগ্ন থেকেই এই কওমী মাদ্রাসা ফ্যাকসনের সঙ্গে কোন যোগসূত্র নেই। নীতিগতভাবে বরং বৈরিতা রয়েছে। জামায়াতের সঙ্গে কওমীগ্রুপ সবসময়েই আকিদা-বিশ্বাসে ভিন্নতা পোষণ করে থাকে। এখানে তারা জামায়াতকে রাজনৈতিক সুবিদা দিতে জামায়াতের টাকায় এই কর্মসূচী দিয়েছে তা বলার বা ভাবার কোন সুযোগ নেই। এরসঙ্গে যারা রয়েছেন তার মধ্যে চারদলীয় জোটের এক সময়ের ডাকসাইটের নেতা মুফতি এজাহারুল রয়েছেন। তার বিরুদ্ধে বিএনপি বিরোধী মিডিয়াগুলো জঙ্গি সংশ্লিষ্টতার অভিযোগ তুলে আসছে অনেক দিন থেকে। ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর তাকে জেলে নেয়া হয়েছিল। পরে নেগোসিয়েশন করে মুক্তি পায়। অবশ্য বিএনপি বৈরি মিডিয়া এবিষয়ে এখন আর কোন মুখ খোলে না।
লক্ষণীয় হচ্ছে- সরকার এই লংমার্চ বানচাল করার জন্য হেন অপতৎপরতা নেই যা করেনি। কিন্তু মানুষের নেমে আসা ঢল দেখে ভরকে গেছে তাতে কারো কোন সন্দেহ থাকার কথা নয়। অপরদিকে সরকারের পক্ষথেকে অব্যাহত ভাবে হেফাজত নেতাদের সঙ্গে আলোচনাও চালিয়েছে। অবশেষে হেফাজতের মঞ্চে সরকারের তেমন কোন সমালোচনা না করে ১৩ দফা দাবি পেশ করে এবং কঠোর দাবি থেকে সরে এসে তারা চলে গেলেন। যেখানে দাবি না মানা পর্যন্ত ঢাকায় তাদের অবস্থান করার কথা ছিল। তা আর করেনি। বরং একদিনের হরতাল দিলেন।
অপরদিকে দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার পক্ষ থেকে সংহতি প্রকাশ করা হয়েছে। তা মঞ্চে পাঠ করে শোনানো হয়। এসময়ে উপস্থিত জনতা মূহুর্মূহু করতালি দিয়ে স্বাগত জানিয়েছেন বেগম জিয়ার সংহতি জ্ঞাপনকে। বিএনপির অঙ্গসংগঠন স্বেচ্চাসেবী হিসেবে কাজ করেছে। জাতীয় পার্টিও সংহতি জানিয়েছে। লক্ষণীয় হচ্ছে- সরকার এই লংমার্চ ভন্ডুল করতে হেন অগণতান্ত্রিক অসূরবৃত্তির অপকর্ম নেই যা করেনি। তারপরও লাখ লাখ মানুষের উপস্থিতি জানান দিয়েছে এই অসূর দৈত্য পরজীবী হাসিনা সরকারকে সকলে সমবেত সুরে না বলে। অনুমান করা হয় বাংলাদেশের ইতিহাসে এতো মানুষের সমাগম আর কখনো হয়নি। সারা দেশে অন্তত ৩০/৩৫ লাখ জনগণ রাজপথে নেমে এসেছে। দেশে বর্তমানে সরকারের পুলিশ বাহিনীর পাশাপাশি ছাত্রলীগ, যুবলীগ, আওয়ামী লীগের গুণ্ডা-ষন্ডারা যে নির্যাতন-দলন-পিড়ন, হত্যা-গুম, মামলা-হামলা চালাচ্ছে- তাতে ভয়ে মানুষ ঘর থেকে বের হতে চায় না। এরকম এক আতঙ্ক উপেক্ষা করে রাজপথে নেমে আসা এক নিরব গণবিপ্লবের সঙ্গেই তুলনা করা যায়। রাজপথে নেমে আসা মানুষের চোখে মুখে ছিল আতঙ্কের করুণতা। ভীত শঙ্কিত্। কারণ তারা সকলেই জানে ঘরে আর ফেরা নাও হতে পারে। প্রিয়জন লাশটা হয়তো পাবে না। প্রিয়স্বজনেরা হয়তো শুনবে পোষ্য সাংবাদিকের টেলিভিশনে পিলে চমকানো মিথ্যাচার। অথবা লাশের ওপর দেখবে নগ্ন নৃত্য। দেখবে সরকারের শিকারি বাহিনীর পিস্তল-রিভলবার কিংবা বন্দুকের নিশানা হচ্ছে- সংসারের হাল ধরা মানুষটি। যে কিনা ছোট্ট শিশুর জন্য দুধ, বৃদ্ধ মায়ের মুখে একটু খাবার, অসুস্থ রোগীর ওষুধ জোটাতে প্রতিদিন খাটুনি খেটে হাঁড় ভাংতো। আবার দেখবে অফুরন্ত স্বপ্নে বেঁচে থাকা যুবক মুহুর্তেই লাশ হয়ে পরে আছে ঝাউ-জঙ্গলে বা পথে-ঘাটে। রাম দা, ক্রিজের কোপে কিংবা লাঠী-সোটা-ইটের নিষ্ঠুর আঘাতে কেঁপে কেঁপে ঘুরে পরছে তার রক্তাক্ত দেহ কর্ম ক্ষেত্রের বাইরে রাজ পথে। যেমনটা ঘটেছে বিশ্বজিৎ সহ শত যুবকের ভাগ্যে। এই চরম বাস্তবতাকে মেনে নিয়েই মানুষ আজ রাস্তায় নেমে এসেছে। যেমনটা নেমেছিল '৯০- এর গণ অভ্যুত্থানে শ্বৈরাচার পতনের জন্য। এটা একটা নিরব প্রতিবাদ। এটা একটি গুরুত্বপূর্ণ সঙ্কেত। মানুষ ভয়কে কখন জয় করতে পারে? যখন মানুষের বুকে কান্নাহীন শোকের জগদ্দল পাথর চাপা পরে। সাথে যোগ হয় ঘৃণা। এই দুই মিলে মানুষ পাহাড় ঘুড়িয়ে দেয়ার শক্তি পায়। আজ বাংলাদেশের মানুষের সে অবস্থাই হয়েছে। ২০০৯ সাল থেকে মানুষ দেখেছে- তিন বারের প্রধানমন্ত্রী কেঁদে কেঁদে ঘর থেকে বের হয়েছেন। নিমিষে গুড়িয়ে দেয়া হয়েছে ভালোবাসার মানুষটির স্মৃতি চিহ্ন। কী করুণ।দেশের মানুষ শুধুই দেখেছে- আক্রমণ-আক্রমণ আর আক্রমণ। হামলা-মামলা। লুটপাট-ধ্বংস। লোভের প্রতিহিংসা। ক্ষমতার সিংহাসন কেড়ে নিতে ঘৃণ্য সব ষড়যন্ত্রে মরিয়া হাসিনাকে দেখেছে তার সর্বাঙ্গে লোভ আর প্রতিহিংসার আগুন দাউ দাউ করছে।
ফলে মানুষ আজ ভয়কে জয় করে রাজপথে নেমেছে। তবে শুভলক্ষণ হচ্ছে- আঘাত করেনি। অদুর ভবিষ্যতে হয়তো ঘৃণা-ক্ষোভ আরো উতলে উঠলে তা সিডর-আইলায় রূপ নেবে।
বিষয়: বিবিধ
১৬১২ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন