পাঠক চন্দ্রবিন্দু

লিখেছেন লিখেছেন চন্দ্রবিন্দু কথন ০৫ এপ্রিল, ২০১৩, ০৯:৫৪:৪৯ রাত

হঠাৎ করেই আবিষ্কার করলাম যে আমার লেখাগুলো নেই। নেই মানে নেই। মুছে গেছে অথবা মুছে ফেলেছি; দুটোর কোন একটা হবে। সোনার বাংলা ব্লগ বন্ধ হয়ে যাবার কারণে সেগুলো পুনরুদ্ধারের অদূর কোন সম্ভাবনাও দেখছি না। খুব একটা অবাক হলাম না, নিজের খাপছাড়া স্বভাবে আমি মোটামুটি অভ্যস্ত। দুঃখ পেতে গিয়েও পেলাম না কারণ লেখার শিরোনামগুলো কিছুটা মনে থাকলেও বিষয়বস্তু গুলিয়ে ফেলেছি। গুণগত মান নিয়ে যথেষ্টই সন্দিহান! লেখনীর পরিপ্রেক্ষিতে কোনভাবে আমাকে লেখক খেতাব দেয়া না গেলেও পাঠক হিসেবে আমি যারপরনাই চমৎকার!

যাই হোক, মোটামুটি জলাঞ্জলিই দিলাম লেখাগুলো ফিরে পাবার আশা। আজকাল কেন জানি লেখালেখি আসে না। নতুন চাকরীতে যোগদান করার পর ব্যস্ততাও বেড়েছে। তারপরেও লেখার তাগিদে লিখতে বসলাম। এর মধ্যে স্রোতের মতন অনেক কিছু ঘটে গিয়েছে।

যারা কাছের মানুষ তারা এক বাক্যে স্বীকার করবে যে একই সময়ে ভিন্ন কাজ করার ক্ষেত্রে আমার অপটুতা অবাক করার মতন। যখন মন দিয়ে বই পড়ি, পাশে কেউ কথা বলে গেলেও কর্ণদুটি থাকে আঁটা। অফিসের কাজ করতে বসলে আমার উত্তম অর্ধাঙ্গ মোটামুটি টানা হেঁচড়া করেই খেতে বসায়। এমনও হয় যে মোবাইলে কোন গেম খেলছি বা বই পড়ছি আর পাশে বসে কেউ খুব গুরুত্বপূর্ণ কথা বলে আমার কাছে জবাব আদায় করে নিয়ে গেল। হায়, কত যে দিয়েছি এই ভুলের মাশুল! অস্বীকার করব না, আমার মনোযোগের সিংহ ভাগটুকু আমি বই পড়ার মহৎ কর্মে নিমজ্জিত করে ফেলেছি। বিয়ের আগে মায়ের নিত্য দিনের হুমকি ছিল যে হয় ক্রমাগত বেড়ে চলা বাসা ভরতি বইগুলো সের দরে বিক্রি করে দিতে হবে নয়ত আমার এ বাসা থেকে আমার বাস উঠল বলে! বিয়ের কিছুদিন পর সে অত্যন্ত হতাশ হয়ে অবলোকন করল যে ছত্রাক সংক্রমণের হারে আমার বইয়ের সংখ্যা শ্বশুরবাড়িতেও বেড়ে চলছে। অতএব, মায়ের বাড়ির বইয়ের স্তূপগুলো শ্বশুরবাড়িতে স্থানপরিবর্তন হবার সম্ভাবনা বলতে গেলে শূন্য!

ছোট বেলায় একটা উদ্ভট স্বভাব ছিল আমার। আবুধাবি থাকতাম তখন আমরা। সপরিবারে কেনাকাটা করার সময় আকর্ষণীয় কোন খেলনা চোখে পড়লে চলার গতি শ্লথ হয়ে যেত আমার। একসময় সেই খেলনার সামনে গিয়ে মন্ত্রমুগ্ধের মতন চেয়ে থাকতাম। মা বাবা আর আপু ততক্ষণে বেশ খানিকটা এগিয়ে গিয়েছে। বহুবার ডাকাডাকির পর বাধ্য হয়ে তারা আমাকে নেয়ার জন্য ফেরত আসতেন। বড় হবার পরেও এ স্বভাবটি অক্ষুণ্ণ রয়ে গেছে! বইয়ের দোকানে গেলে আমি হাঁ করে তাকিয়ে থাকি। এত এত বই যেন মলাট করা এক একটি জাদুর রাজ্য। বইমেলায় আমি যে পরিমাণে গিয়েছি, আমার তো ধারণা ওখানে ভিডিও-চিত্র ধারণ করা প্রতিটি ক্যামেরায় আমার আঁতেল-মার্কা হাসি মুখের টেপ আছে।

বই বই করতে করতে কিন্তু চাকুরীক্ষেত্রেও তার ব্যতিক্রম হয় নি। কাজের ফাঁকে ফাঁকে কখনো মোটা কখনো চিকন বই ব্যাগ থেকে বের করে পড়েছি। তারপর? তারপর কাজের রকম বদলে আমার দায়িত্ব পড়ল জলজ্যান্ত বইয়ের রাজ্যে! লক্ষ লক্ষ ই-বুকে পরিপূর্ণ একটি সাইটের প্রশাসক। বই আর বই। যত ইচ্ছা তত এবং অবশ্যই বিনামূল্যে। তখনি চেতনা হল যে আমার তো হাতের মাঝে সত্যিকারের বই না হলে তৃষ্ণা মেটে না। আহ, নতুন বইয়ের ভাঁজে ভাঁজে যে অতুলনীয় গন্ধ তা কি কোন কিছুর বিনিময়ে পাবার!

ছোট বেলায় লুকিয়ে লুকিয়ে প্রচুর বই পড়েছি। কখনো মশারীর তলে ডিম লাইটের আলোয়, আবার কখনো পড়ার বইয়ের মাঝে রেখে। মাসের শুরুতে যখন ও বলে ‘চল তোমাকে বই কিনে দেই...তোমার স্টক তো শেষ!’ , তখন মনে মনে আল্লাহ্‌কে বলি, ‘আল্লাহ্, যদি জান্নাত নসিব কর, তাহলে আমাকে অফুরন্ত বইয়ের বিরাট একটা লাইব্রেরি দিয়ো...আর...আর...লাইব্রেরিয়ান হিসাবে আমার স্বামীপ্রবরটিকে!’

বিষয়: বিবিধ

৯৬৭ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File