অবরুদ্ধ বাংলার গণতন্ত্র
লিখেছেন লিখেছেন যোবায়ের মজুমদার ০৪ এপ্রিল, ২০১৩, ১০:২৮:৫৭ সকাল
বাংলাদেশ একটি স্বাধীন দেশ। এদেশে প্রতিটি দলের আছে মুক্ত মত প্রকাশের অধিকার, কিন্তু বর্তমান সরকার তাদের মত প্রকাশের অধিকার দিচ্ছে না। সরকার রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে রাজনৈতিকভাবে মোকাবেলা করতে ব্যর্থ হয়ে এখন বিরোধী দলের সকল রাজনৈতিক কর্মসূচীতে পুলিশ বাহিনী, ছাত্রলীগ ও যুবলীগকে যুগপৎ ভাবে নামিয়ে প্রকারান্তরে রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাস চালিয়ে যাচ্ছে।
বর্তমান সরকারের সাড়ে ৪ বছরের শাসনামলে বিরোধী দলের উপর সরকার বর্বোরোচিত নির্যাতন এবং রাজনৈতিক নিপীড়ন চালালেও সরকার তাদেরকে রাজপথে কথা বলার সুযোগ দিচ্ছে না। বরং তাদের অবিরাম অত্যাচারের বিরুদ্ধে শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভ কর্মসূচী পালনকালে সরকারের উচ্চ মহলের নির্দেশে পুলিশ, ছাত্রলীগ ও যুবলীগের যুগপৎ হামলা, নির্দয়ভাবে লাঠিচার্জ, টিয়ারসেল, রাবার বুলেট নিক্ষেপ ও গুলী বর্ষণ, গণগ্রেফতার, মিথ্যা ও ভিত্তিহীন মামলা সহ গণমাধ্যমে বিকৃত, বিভ্রান্তিকর, ভিত্তিহীন ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত সংবাদ প্রকাশ করে যাচ্ছে। আমরা সবার কথা বলি নামে সরকারের গোলামি করছে কিছু মিডিয়া।একজন সাংবাদিক হিসেবে সেদিন আমিও বের হয়েছিলাম দায়িত্ত্ব পালনের জন্য, কিন্তু আমি সহ কোন সাংবাদিকের চোঁখেই পড়েনি হরতালে বেতনভুক্ত-প্রশিক্ষিত ক্যাডারদের তান্ডব।তবে হ্যা চোঁখে পড়েছিল নাম ব্যাচহীন পায়ে স্যান্ডেল ও জিন্স প্যান্ট পরিহিত পিস্তল হাতে একটি যুবক কে। অনেকে আমার কাছে বলেছিল, এরা হচ্ছে শিবিরের সেই বেতনভুক্ত-প্রশিক্ষিত ক্যাডার। আমার প্রশ্ন হচ্ছে তারা যদি বেতনভুক্ত-প্রশিক্ষিত ক্যাডারই হবে তাহলে কেন সে নিজেদের উপর পিস্তল হাতে হামলা করবে? তাহলে কি আমরা মনে করব হরতালে বেতনভুক্ত-প্রশিক্ষিত ক্যাডার নামিয়েছিল আওয়ামিলীগ? আরো দেখেছি কিছুদিন আগে সরকার বাহিনীর গণহত্যা । কিছু কিছু মিডিয়া আছে যাদের কাজ হচ্ছে এক জনের দোষ আরেক জনের ঘাড়ে চাপিয়ে দেয়া, তারা এমন ভাবে নিউজ করে যে, মনে হয় নিউজ আগে থেকেই লেখা থাকে পরে শূণ্যস্থান পূরণ করে লিখে দেয়, যেমনটি ঘটেছে সম্প্রতি রাজশাহীতে পুলিশের নিজ হাতে গ্রেনেট বিষ্ফোরণকে জামায়াত-শিবিরের বোমা হামলা বলে চালিয়ে দেয়া ।
অনেকেই আমাকে বলেছে বিরোধী দলগুলো তো পুলিশের উপর হামলা করছে । আমি বলি বিরোধী দল গুলো নিবন্ধিত দল, অন্যায়ের প্রতিবাদ করা তাদের গণতান্ত্রিক অধিকার, কিন্তু তারা যখন এটা করতে যাচ্ছে ঠিক তখনি সরকারের আইন শৃংখলা বাহিনী তাদেরকে গুলি করে মেরে ফেলছে ।
সম্রতি খেয়াল করা যাচ্ছে, কিছু অতি উৎসাহী পুলিশ বিরোধীদলের শান্তিপূর্ণ মিছিল দেখলেই গুলি করছে, এসব পুলিশকে প্রশ্ন করলে তারা বলে, নিজেদের বাচানোর জন্যই গুলি করেছি। এখন আমার প্রশ্ন হচ্ছে, তারা কি এমন করছে যে তাদের আন্দোলনকে ঠেকাতে গুলি করতে হবে? তারা অবিরাম নির্যাতনে নির্যাতিত হয়ে শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদ যানাচ্ছে, আর এটাই যদি অপরাধ হয় তাহলে বাংলাদেশের মানুষ আজ নূন্যতম অধিকার থেকে বঞ্চিত।
যখন ভারতের দিল্লিতে ধর্ষনের দায়ে প্রতিবাদের ঝড় উঠেছে পৃথিবী জুড়ে ঠিক তখন বাংলাদেশে ধর্ষন করে হত্যার পরও রাজনৈতিক হস্তক্ষেপে দোষিদের মুক্তি দেওয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে । গড়ে তুলছে ধর্ষন ও গনহত্যার রেকর্ড।
স্বপ্নের পদ্মা সেতু যখন দুঃসপ্ন হচ্ছিল ঠিক তখন আমাদের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আব্দুল মুহিতকে দিল দেশপ্রেমিকের সার্টিফিকেট। তার পক্ষে এমন সাফাই গাইল যেন সে দুধে ধোয়া তুলশি পাতা আর বিশ্ব ব্যাংকের তদন্ত টিম দুর্নিতীবাজদের আখড়া। আমাদের স্বপ্নের পদ্মাসেতু স্বপ্নই রয়ে গেল, আর মূল দুর্নীতিবাজরা ধরা ছোয়ার বাইরে রয়ে গেল।
বর্তমান সরকারের প্রতিশ্রুতি যুদ্ধপরাধীদের বিচার করা, কিন্তু বাংলার মানুষের দাবি বিচার যেন রাজনৈতিক প্রহসন না হয়। কিন্তু যে সরকার তাদের বিচারের জন্য উঠে পড়ে লেগেছে ঠিক এরাই ১৯৯১ সালে গোলাম আযমের সাথে আপস করতে চেয়েছিল। মানুষের সমর্থন পাওয়ার জন্য সাঈদী সাহেবের মাহফিলে যোগদান করেছিল আমাদের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বর্তমান সরকারের নেতারা বিচারে দোষী সাব্যস্ত হওয়ার আগেই বুলি ফোটাচ্ছে মানবতা বিরোধী অপরাধের মামলায় আটক নেতাদের অপরাধ প্রমাণ হয়েছে এবং তাদেরও সাঈদীর মত ফাসির রায় দেওয়া হবে, তাতে আদালত অবমাননা হয় না। কিন্তু স্কাইপি কেলেংকারী হওয়ার পর পূনরায় বিচারের আবেদন করলে আদালত অবমাননা হয় ।একদিন যুদ্ধপরাধ মামলা সম্পর্কে শিবিরের কেন্দ্রীয় সভাপতি মুহাঃ দেলোয়ার হোসেনের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন যুদ্ধপরাধের বিচার আমাদেরও দাবি কিন্তু এ বিচার হচ্ছে প্রতিহিংসার বহিঃপ্রকাশ এবং রাজনৈতিক সুবিধার জন্য। আর যুদ্ধপরাধী কি শুধু জামায়াত-বিএনপির মধ্যে? আমরা চাই আওয়ামীলীগের ভিতরের যুদ্ধপরাধীদেরও বিচার হোক ।
এই আওয়ামী সরকারের আমলেই রেকর্ড সংখ্যক ফাসির আসামিকে মাফ করে দেওয়া হয়েছে। এরা সবাই আওয়ামীলীগের নেতা কর্মী। যারা মানুষ খুন করে ধর্ষণ করে ফাঁসির আদেশ প্রাপ্ত হওয়ার পর তাদের মুক্তি দেন, খুন, ধর্ষন আর রাহাজানি ছাড়া তাদের কাছ থেকে জাতি আর কি আশা করতে পারে?
দেশের গণতন্ত্র আজ কোথায়? কিছু সুবিধাভোগী মানুষ আজ গণতন্ত্রের টুটি চেপে ধরেছে। আর এরই ফলে হচ্ছে খুন, মারমামারি, গুম, ধর্ষণ। আর মানবাধীকার থেকে বঞ্চিত হচ্ছে মানুষ।
পৃথিবীর কোন দেশেই কোন গণতান্ত্রিক সভ্য সরকার সাধারন মানুষ কে গুলি করে হত্যা করতে পারেনা। এক মাত্র তারাই এ কাজ করে যারা সাধারন জনগন কে ভয় পায়। এরা হল সামরিক সরকার। তারা ভাবে জনগন কে ভয় দেখিয়ে হত্যা করে জোর করে ক্ষমতায় থাকতে পারবে। কিন্তু তাদের পরাজয় হয় খুব মর্মান্তিক ভাবে।
আওয়ামীলীগ সরকারের উপর আজ মানুষ ত্যক্ত, বিরক্ত, ক্লান্ত, অসহায়, জানিনা এদের পতন কিভাবে হয়।
মোঃ যোবায়ের হোসেন
লেখক ও সাংবাদিক
তথ্য ও গবেষনা সম্পাদক-ঊষার আলো ফাউন্ডেশন
সদস্য- ইয়ুথ এগেনেষ্ট হাঙ্গার
ই-মেইলঃ
বিষয়: রাজনীতি
১২৫১ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন