তেতাল্লিশতম বসন্তের চেতনায়...

লিখেছেন লিখেছেন অনল দুহিতা ০৩ ডিসেম্বর, ২০১৩, ০১:৫৮:৪৪ দুপুর

বিভিন্ন পেইজগুলো হরতাল, অবরোধের ঘোষণা সংক্রান্ত পোস্ট দেওয়ামাত্রই কিছু “অতি অদ্ভুত” ব্যক্তিরা রীতিমত কই মাছের মত তিড়িং-বিড়িং করে কমেন্টে এই বলে খই ফোটানো শুরু করেন যে, ‘ভাল হইছে, ভাল হইছে। আরো হরতাল চাই, লাগাতার অবরোধ চাই।’ ইত্যাদি ইত্যাদি। এদের নেচারটা ঠিক বুঝে উঠতে পারিনা। তখন নানা ধরনের চিন্তা এসে মাথা হ্যাং করে দেয়। যে অবরোধ আর হরতালগুলো দেয়া হচ্ছে সেগুলো কারো জন্যই কখনো সুখকর কিছু হতে পারেনা। রোজ রোজ মানুষ মারা যাচ্ছে, আহত আর নিঃস্ব মানুষের সারি দীর্ঘ হচ্ছে... দিনে-রাতে তাজা তাজা মানুষগুলোকে ধরে এতটা বিভৎসভাবে অত্যাচার করে জীবনবায়ু নিঃশ্বেস করে দেয়া হচ্ছে যে, তারা আর কখনোই স্বাভাবিক জীবনে ফিরে যেতে পারবেনা। আমরা যারা প্রতিদিনই কোনো না কোনো ঘটনার সাক্ষী হচ্ছি তারা অন্তত কিছুটা হলেও বুঝি, যখন জীবনের একের পর এক পরীক্ষা সমুপস্থিত হয় তখন কেমন কষ্টকর হয় সবর করাটা। আজকে ন্যুনতম সচেতন যে ব্যক্তিটি ফজর পড়ে মিছিলের জন্যে দৌড়ে যান তিনি খুব ভাল করেই জানেন এটা তাঁর অস্তিত্ব রক্ষার জন্য। কারো হুকুম তামিল নয়, কোনো প্রতিহিংসায় নয়, কারো সামনে বীরত্ব প্রদর্শনের জন্যও নয়। এরা ভাল করেই জানেন, ভারত শত-কোটি রুপি কেন খরচ করে ‘গনতন্ত্রের মানসকন্যা!’র দলকে ক্ষমতায় আনতে। এ দুঃসময়ে জনাব মজিনার কেন ভারতের প্রতি টান! কেন চীনের মত কনজারভেটিভ দেশ তাদের প্রথা ভেঙ্গে এই দেশের রাজনীতি সম্পর্কে মন্তব্য করে। এমন কি এ কথা পর্যন্ত বলে ফেলে যে, তারা স্বাধীন বাংলাদেশ দেখতে চায়। ৭২ সালে ইন্দিরা গান্ধী নিজে এক সাক্ষাৎকারে এ কথা বলেছিলেন যে, বাংলাদেশে ৭১ এর যুদ্ধের পেছনে তারা প্ররোচনা দিয়েছিলেন বাধ্য হয়ে। কেননা দিনের পর দিন পূর্ব পাকিস্থানে রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতার কারণে তাদের দেশে যেভাবে শরনার্থীর সংখ্যা ক্রমশ বাড়ছিল সেটা সামাল দেয়া তাদের পক্ষে সম্ভব ছিলনা। অনির্দিষ্ট সময়ের জন্য নিজেদের দেশে উক্ত অস্থিতিশীল পরিস্থিতি সহ্য করা যায়না। তাই কখনো না কখনো এটা করতেই হতো। তিনি এটাও বলেছিলেন যে, “সেই শুরুর মুহূর্ত থেকে ধরলে বলতে হয়, আমরাই শুরু করেছি। আমরা মুক্তিবাহিনীকে সাহায্য করেছি।” তবে প্রকৃতপক্ষে যুদ্ধের প্রথম পদক্ষেপটা ছিল পাকিস্থানের। আর সেটা ছিল দিল্লীতে। যুদ্ধের শুরুটা ছিল, (ইন্দিরা গান্ধীর ভাষায়) “পাকিস্থান যখন ভারতের দিল্লীতে বোমা বর্ষণ করে।” আর, আমেরিকা পাকিস্থানের সামরিক জান্তার পক্ষে ছিল। (যদিও তিনি মনে করতেন, আমেরিকার এ সাহায্য ছিল তাদের নিজেদের স্বার্থে আর তা পাকিস্থানের জন্য ক্ষতিকর ছিল।) আর একটা কথা আমি কখনোই ছোট করে দেখতে রাজি নই, পাক-বাহিনীর জেনারেল নিয়াজী আত্মসমর্পণ করেছিলেন ভারতীয় জেনারেল আরোরার কাছে। বাংলাদেশী জেনারেল ওসমানীর কাছে নয়। এ কথাগুলোর হিসেবে চিন্তা করলে অনেক কিছুই বলা যায়। পাকিস্থান বাঙ্গালীদের ইচ্ছার বিরুদ্ধে একটা ঘোষণার মাধ্যমে তাদের যাবতীয় অভিলাষ বাস্তবায়ন করতে চেয়েছিল। পুর্ব পাকিস্থানের জনগণ এতটাই অবহেলার ছিল যে, এ ঘোষণায় বাঙ্গালীদের প্রতিক্রিয়ার প্রতি তাদের কোনো ভ্রুক্ষেপ ছিলনা। কিন্তু ইতিহাস বলে এটা পাকিস্থানের সবচেয়ে বড় ভুল ছিল। আর ব্রিটিশদের অপরিকল্পিত দেশ বিভাগ এ যুদ্ধকে ভারতের পক্ষে নিয়ে গিয়েছিল। ভারত ৪৩টা বছর অপেক্ষা করেছে সঠিক সময়ের। আর সে সময় এগিয়ে আসছে। পাকিস্থান যে ভুল করেছে, তারা তা করেনি। তারা কি করেছে সেটা টের পাওয়া যাবে যদি একদিনের জন্যও আমরা ভারতীয় সমস্ত কিছু ত্যাগ করে থাকতে যাই। হ্যা, তারা সামরিক স্টাইলে আরো আগেই তাদের উদ্দেশ্য হাসিল করতে পারতো, কিন্তু তারা সম্ভবত নতুন নাগরিক নয়, গোলাম চেয়েছে। আমার ধারণা নয়, আমি বিশ্বাস করি, আজ পর্যন্ত পুড়ে যাওয়া একটা ফ্যাক্টরিও দুর্ঘটনার স্বীকার নয়। এটা পরিকল্পিত বিদেশী ষড়যন্ত্রের অংশ। যেভাবে হোয়াইট গোল্ড চিংড়ির বাজার হারিয়েছে, যেভাবে পাটের বাজার হারিয়েছে, তেমন। আর যারা মনে করে যে, পাকিস্থান কখনো কোনোভাবে বাংলাদেশের কোনো ইসলামী দলকে সাহায্য করেছে বা করতে পারে, তারা নিরেট মুর্খ ছাড়া আর কিছু নয়। অন্তত জামায়াতের সহযোগীতার তো প্রশ্নই আসেনা! আজকে শুধু জামায়াতের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক ট্রাইবুনাল বসার পেছনে পাকিস্থানী গোয়েন্দা সংস্থা আইএসআই বছরের পর বছর কাজ করেছে বলে মনে করা হয়। যাতে অবধারিত এ আন্তর্জাতিক ট্রাইব্যুনালের ঝক্কি পাকিস্থানের ওপর আর না আসে। আর এর সমস্ত দায়ভার শুধু জামায়তের উপর কেন আসল সেটা আর নতুন কোন ব্যাখ্যার অবকাশ রাখেনা। যেখানে, পাকিস্থান বিভক্তির বিষয়ে প্রায় সকল ইসলামী দলই একমত ছিলেন। যুদ্ধ সংঘঠিত হবার সময়ে কিছু লোক ছিল ব্যক্তিস্বার্থের জন্য পাকিস্থানের দাস, কিছু লোক ছিল পাকিস্থানের শোষণ থেকে বাঁচতে উদগ্রীব, আর কিছু লোক ছিল অনাগত ভবিষ্যত নিয়ে চিন্তিত। দেশ বিভাগের সময়কালে যে নৃশংস দাঙ্গার প্রত্যক্ষদর্শী ছিল নতুন জন্ম নেয়া জামায়াত, সে সময় প্রত্যেক রুকনের প্রতি নির্দেশ ছিল, যেকোনো রকম সংঘর্ষ হতে দেখামাত্র তা মিমাংসার চেষ্টা করতে হবে। এতে প্রাণ যাওয়ার আশংকা থাকলেও। ভারতে হতে থাকা হিন্দু-মুসলিম এ দাঙ্গার ভয়াবহতায় মুসলিমরাই যে অধিক ক্ষতিগ্রস্থ ছিল, তা তো বলার অপেক্ষা রাখেনা। আজকের জামায়াত যেমন জানে, যদি আগামী নির্বাচনে ভারতের নির্ধারিত ব্যক্তি ক্ষমতায় আসে তবে তারা নিশ্চিহ্ন হয়ে যাবে, কিংবা সমুদ্রে ঝাপ দেয়া ছাড়া যাবার মত কোন জায়গা থাকবেনা, (এ কথার মানে এই নয় যে আমরা আল্লাহর উপর ভরসা করছিনা।)তেমনি একাত্তরেও জানতো যে, দুই পাকিস্থান আলাদা হবার পর ভারতের পেটের ভেতর যে বাংলাদেরশের জন্ম হবে, তা কোনদিন স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে মাথা উচু করতে পারবেনা। ভারত তা করতে দেবেনা। যা আমরা খুব ভাল করেই অনুভব করি এখন। “অরক্ষিত স্বাধীনতাই পরাধীনতা।” আজকে সীমান্তে যে অসংখ্য মানুষ বিএসেফের গুলিতে মারা যায়, কিংবা রোজ রোজ যে সীমান্ত থেকে মানুষ ধরে নিয়ে যাওয়া হয়, এতে তাদের কি লাভ? এ দেশের একটা মানুষের জীবনের চেয়ে তাদের একটা বুলেটের মূল্য তাদের কাছে বেশি। তাও কেন এ অহেতুক খরচটা?! শুধুই এটা বুঝানোর জন্য যে, তাদের মর্জিমত চলতে এ দেশের মানুষ বাধ্য এবং তাদের কথার উপর কথা বলার কোনো ক্ষমতা বাংলাদেশের নেই। আর কোনভাবে যদি ভারতের আকাংখা বাস্তবায়িত হয়, তবে ইতিহাসের সেই ভয়াবহ দাঙ্গাগুলো পুনরাবৃত্তির আশংকা কোনো অলিক কল্পনা থাকার কথা নয়। হিন্দুদের আধিপত্য সে সময় বাংলাদেশে অবধারিত। যেখানে আজকে, এখনই, দাড়ি-টুপি, বোরখা সন্ত্রাসের! প্রতীক, ইসলামী বই অলিখিত ভাবে নিষিদ্ধ, সেখানে উক্ত অবস্থায় কি হতে পারে? এ আশংকায়ই জামায়াত বিরোধী ছিল পাকিস্থান বিভক্তির। যদিও ভিন্ন একটি দেশের দুপাশে থাকা একটি দেশের অংশগুলো একসময় বিভক্ত হতোই, তথাপি মুসলিম হয়ে দাসত্বের জীবনে ফিরে যেতে রাজি ছিলনা সচেতন মুসলমানরা। যার কারণে বলা যায় প্রায় সমস্ত মুসলিম দলই বিরোধী ছিল এ স্বাধীনতার। কিন্তু তাই বলে যে, তারা নিজের যুদ্ধে যাওয়া ভাইয়ের বাড়ি-ঘর পুড়িয়ে, ধন-সম্পত্তি লুট করে, তাদের স্ত্রী-কন্যাকে ধর্ষণ করে পৈশাচিক আনন্দে মত্ত হবে, এ ভাবনা শুধু মানসিক রোগগ্রস্থ কারো মাথায়ই আসা সম্ভব। যেখানে এ বিরোধীতাই ছিল ইসলামকে টিকিয়ে রাখার জন্য, সেখানে এ সমস্থ ইসলাম বিরোধী কাজ তাদের দ্বারা কি করে সম্ভব! কিন্তু সেটাই আজ সম্ভব করিয়ে ছেড়েছে মুসলিম লীগের পেট থেকে জন্ম নেয়া আ’লীগ আর সুবিধাবাদী বামদের একাংশ। কমিউনিষ্টদের একটা কথা আছে, “কোন মিথ্যাকে যদি দশবার বলা হয়, তবে তা সত্যে পরিণত হয়।” মিথ্যাগুলোকে সত্যে পরিণত করতে মিডিয়া কি নিরলস পরিশ্রম করে যাচ্ছে তা তো আমাদের চোখের সামনেই! অসম্ভবকে সম্ভব করাই যাদের কাজ, তারা প্রমাণ করে ছাড়ল, ২২/২৩ বছরের যুবক শ’খানেক ধর্ষণ মাত্র নয় মাসে করেছে। আর তারপর দিব্ব্যি ভাল মানুষটি হয়ে বাকী জীবন কাটিয়ে দিয়েছে। আর এসব মিথ্যাচারে যাতে ন্যুনতম বাধা সৃষ্টি করার মত কেউ না থাকে সেজন্যে দিগন্ত আর ইসলামিক টিভিকে বিদায় কর হল। ইতিহাস পুনরাবৃত্তি হয়েছে, আবারো হবে। বাংলাদেশ যে আরেকটা যুদ্ধের অপেক্ষায়, তা বলার অপেক্ষা রাখেনা। আর ইতিমধ্যেই যে নতুন প্রজন্মের রাজাকারেরা ভারতে প্রমোদ ভ্রমণ শুরু করেছে, তা কি আমরা হাবাগোবা মানুষেরা দেখিনা?! কিংবা আমেরিকার সাথে যে সামরিক চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়! যাহোক, সবকিছুর পরও, এটাই আমার দেশ, এখানের দুষিত বায়ু আমার জীবন, স্বার্থবাদী মানুষগুলোই আমার ভাই। বদরের প্রান্তরে যেমন বাপ-ছেলে মুখোমুখি যুদ্ধ করেছিল তেমনটা হবার কথা ভাবতেও বুক কাঁপে......।।

বিষয়: বিবিধ

১২৬৮ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File