রুপান্তরণ

লিখেছেন লিখেছেন অনল দুহিতা ১২ অক্টোবর, ২০১৩, ১০:১১:৪০ সকাল

১.

ভার্সিটিতে ভর্তির প্রথম মাসে আমি একসাথে তিনটে হোচট খেলাম। প্রথমটা রিয়ার কাছ থেকে। রিয়া আমার এক্স গার্লফ্রেন্ড। আমরা একই কলেজে পড়তাম। প্রথম দেখা হয়েছিল কলেজের লাইব্রেরীতে। তারপর থেকে আমাকে প্রায়ই লাইব্রেরীতে দেখা যেতো। তবে পড়তে না, পড়াতে। চিরকুঠ ছুড়ে ছুড়ে একমাস পার করার পর অবশেষে মনের কথা পড়াতে পারলাম। তারপর দুবছরের উপচে পড়া আবেগ! অজস্র সৃতি, নির্ঘুম অসংখ্য রাত। ভাগ্যিস পরীক্ষার আগেই পড়ায় মন দিয়েছিলাম। ব্রেন নেহায়েতই খারাপ ছিলনা। চান্স পেয়ে গেলাম পাবলিক ইউনিভার্সিটিতে। কিন্তু চান্স পাওয়ার আনন্দে উল্লসিত হওয়ার আগেই দুঃসংবাদটা পেলাম। ভর্তির পরপরই রিয়া জানালো, বাসায় প্রেম কাহিনী জানাজানি হয়ে গেছে। এবং সাথে সাথেই তার বিয়ের ও তোড়জোড় শুরু হয়ে গেছে। শুনলাম এবং বিরান মরুভূমিতে হোচট খেয়ে পড়লাম। নানা ধরনের চিন্তায় আমার চেহারায় সন্ধ্যা নেমে আসলো। কিন্তু অবশেষে অনানুষ্ঠানিকভাবে রিয়ার বিয়ে হয়ে গেল। আর আমি পড়ন্ত বিকেলের ক্লান্তি নিয়ে বিচ্ছেদের ক্ষত পুষে দেবদাসের প্রেজেন্ট ভার্সন। হায়! আমার পার্বতী রিয়া! ভদ্র বালিকার মত বিনা বাক্য ব্যয়ে বিয়েটা করে নিল! সে যতই তার অন্তরের যাতনার কথা বলে, আমার ততই মেজাজ খারাপ হয়। আরে অন্তরের যাতনা ধুইয়া কি আমি পানি খামু? সিনেমাটিক কিছু করার কথাও ভেবেছিলাম। কিন্তু, না এটা সিনেমা ছিল, না আমি কোন দিক দিয়ে হিরোর মত! কেবলই মনে হতে লাগল, “অভাগা যেদিকে চায়, সাগর শুকিয়ে যায়।” নইলে আমার সাথেই কেন এমন হলো? সপ্তাহ দুয়েক পর শুরু হল নতুন ঝামেলা। আমার উল্টা-পাল্টা কাজকর্মের জন্য আব্বার কঠিন ধমক খেলাম। আব্বা এই মর্মে সতর্ক সংকেত দিলেন যে, “ভালা হইয়া যা। ভালা হইতে পয়সা লাগেনা। নাইলে ঘরেত্তে বাইর কইরা দিমু কইলাম!” এত্ত বড় অপমানের পর আমি নিজেই ঘর থেকে বের হওয়ার জোর প্রচেষ্টা চালাতে লাগলাম। হলে একটা সীটের জন্য নানাভাবে চেষ্টা করতে লাগলাম। কিন্তু সীট পাওয়া কি এতই সহজ! কোনো ঘাটের নৌকাতেই জায়গা পেলামনা। আমিও নিজের নিজের মন্দ ভাগ্য নিয়ে রীতিমত বিতৃষ্ণ। সেই মুহূর্তে খেলাম দ্বিতীয় হোচটটা। কলেজের করিডোরে সিনিয়র এক ভাইয়ের সাথে। অন্যমনষ্ক হয়ে হাটতে হাটতে ক্যান্টিন থেকে বের হতে গিয়েই বিপত্তিটা বাধল। আমি খানিকটা ভয় পেয়ে গেলাম। একে তো ভার্সিটিতে নতুন, তার উপরে বিশেষ কারতো জোরও নেই। সুতরাং ক্যান্টিন ভর্তি মানুষের সামনে হেনস্তা হতে মানসিকভাবে তৈরী হয়ে গেলাম। কিন্তু আমাকে অবাক করে দিয়ে আমার আতংকিত কন্ঠে বলা স্যরির জবাব উনি দিলেন একটা মিষ্টি হাসি দিয়ে। আমি ভড়কে গিয়ে বারবার স্যরি বলছিলাম দেখে উনি আমার কাধে হাত রেখে আশ্বস্ত করলেন। তারপর জিজ্ঞেস করলেন নাম-ধাম। ফার্স্ট ইয়ার জেনে আবারো হাসলেন। “হুম, এজন্যেই এত জড়তা!” এবার খেয়াল করলাম, বেশ সুন্দর করে হাসেন তিনি। আর কথা বলার ভঙ্গিও দারুণ আকর্ষনীয়। আমাকে এককাপ চা অফার করলেন। আমি বিনয়ে একাকার হয়ে রাজি হয়ে গেলাম। কিছুক্ষণ হালকা কথা-বার্তা হল। তারপর যখন আবহাওয়া অনেকটা সহজ হয়ে এল, তখন আমাকে অবাক করে দিয়ে জিজ্ঞেস করলেন, “কিছু নিয়ে টেনশনে আছো নাকি? এর আগেও মনে হয় তোমাকে অন্যমনষ্ক হয়ে করিডোরে হাটতে দেখেছি।” আমি থতমত খেয়ে ড্যাব ড্যাব করে কিছুক্ষণ তাকিয়ে রইলাম। তারপর মূল বিষয়টা গোপন রেখে বললাম,

-নান-না..., আসলে একটা সীট......

-ও, আচ্ছা দাড়াও আমি দেখি কিছু করতে পারি কিনা। আমাদের রুমে মাষ্টার্সের এক বড়ভাই থাকেন। পরীক্ষা শেষে চলে যাচ্ছেন। যদি ওই সীটটা ম্যানেজ করা যায় তাহলে সপ্তাহখানেকের মধ্যে উঠতে পারবে।

আমার চোখজোড়া ঝকমক করে উঠল। উফ্‌ বাঁচা গেল! ঘরের মধ্যে পড়ে পড়ে আব্বা-আম্মার বকা খেতে খেতে আমি ধৈর্যের চরম সীমায় আছি। যদি কোনভাবে এখানে এসে মুক্তি পাওয়া যায় তবে তো বেঁচেই গেলাম। বিগলিত কন্ঠে বললাম, খুবই ভাল হয় তাহলে।

-কিন্তু একটা ছোট্ট, অথবা বড় একটা শর্ত আছে। সিগারেট খাওয়া চলবেনা একদম। যত দ্রুত ছাড়তে পারো ততই উত্তম। নাহলে কিন্তু আমি অপারগ।

আমি আবারো অবাক হলাম। কিভাবে বুঝলো?! আমাকে কি সিগারেটখোরদের মত লাগে? আমিতো সবসময় খাইনা। তাহলে উনি কিভাবে ধরে ফেললো! সাংঘাতিক লজ্জা পেয়ে ঘন ঘন কয়েকবার মাথা নেড়ে বললাম-

-জ্বি জ্বি, অবশ্যই!

-অনেক ধন্যবাদ আমার কথা রাখার জন্য। আচ্ছা, তাহলে এবার উঠি। আশা করছি ইনশাআল্লাহ শিঘ্রই দেখা হচ্ছে আবার।

-জ্বি ভাইয়া।

সীট পাওয়ার লোভ ছিল। কিন্তু সেটার চাইতে ফরহাদ ভাইয়ের কথার প্রভাবই হয়ত বেশি ছিল সিগারেট ছাড়ার পেছনে। এত দ্রুত আমার উপর আর কেউ এতটা প্রভাব বিস্তার করতে পেরেছে বলে মনে পড়েনা। কিন্তু আমি তখনো জানতাম না কি ঘটতে যাচ্ছে।

হলে ওঠার একসপ্তাহের মধ্যে আমি ফরহাদ ভাইয়ের একনিষ্ঠ ভক্ত হয়ে গেলাম। ভীষণ ব্যস্ত মানুষ ফরহাদ ভাই। ছাত্র রাজনীতির সাথে জড়িত, তাই নিয়ে সারাদিন ছোটাছুটি করেন। কিন্তু শত ব্যস্ততা আর ক্লান্তিতেও মুখের অমায়িক হাসিটুকু মলিন হয়না। দুশ্চিন্তার ছাপ ও দেখা এত ঝামেলাতেও। একবার শুধু বলেছিলাম, কিভাবে পারেন? উনি বলেছিলেন,

“দুশ্চিন্তা আর হতাশা আসবে কেন? যদি আমার সমস্যাগুলো নিয়ে ভাবার জন্য আল্লাহর মত একজন শক্তিশালী সত্তা থেকে থাকে?”

সেদিন প্রথম অনেকক্ষণ কথাটা নিয়ে মাথার মধ্যে নাড়াচাড়া করে অনেককিছু ভেবেছিলাম। ওনার ছোট-খাট কিন্তু আত্মবিশ্বাসী কথা-বার্তা আমার অগোচরেই আমার উপর প্রভাব ফেলতে লাগল। আমি মোটেই ধার্মিক না। বরং ধর্ম-কর্ম আমার কাছে কষ্টকর মনে হয়। কিন্তু যে কুরআনে আমি এত বছরেও কোন আগ্রহ পাইনি সে কুরআনের সুরেই আমার দিন শুরু হতে লাগল। আর আমি সেটা উপভোগ ও করতে লাগলাম! আর নামাযের জন্য এত আদরমাখা কন্ঠে ডাকতেন যে, সে ডাক উপেক্ষা করতে পারতাম না। অবশেষে খেলাম তৃতীয় হোঁচটটা। সেদিন ছিল শুক্রবার। আমি একটা উপন্যাস পড়ে অবসর কাটাচ্ছিলাম। বিকেলে হঠাৎ পাশের রুমের একটা ছেলে হন্তদন্ত হয়ে রুমে আসলো। বলল,

-ফরহাদ ভাইকে নাকি হল ছাড়তে বলেছে! শুনেছিস কিছু?

-মানে? কি বলিস এসব? আমি অবাক হয়ে বললাম।

-আরে কালকে যে গ্যাঞ্জাম হইসে ফরহাদ ভাই তোরে বলে নাই?

-কি হইসে?

-আরে লেফটিস্ট কয়েকজনের সাথে এর আগে কিছুটা ঝামেলা ছিল। অরাই ক্যাম্পাসের প্রভাবশালী পোলাপাইন, সোজা কথায় গুন্ডাদের নিয়ে প্রক্টররে বলসে যে, ফরহাদ ভাইরে হল ছাড়া করতে। নাহলে নাকি প্রক্টরের খবর করে দিবে। উনি আর কি করবে, কালকের মধ্যে ফরহাদ ভাইকে হল ছাড়তে বলসে।

-কি বলিস?! বললেই হইল নাকি?

-আরো ঘটনা আছে, শুনলাম কিছুক্ষণ আগে এদিকে মারামারি হইসে। আমার তো ভয় ফরহাদ ভাইয়ের না কিছু হয়...

-কচু হবে। আমরা কি ভাইসা আসছি এইখানে? মানুষ হইল না এইগুলা।

-হু...।

আমি চিন্তিত হয়ে ফরহাদ ভাইয়ের অপেক্ষা করতে লাগলাম। অবশেষে মাগরিবের একটু আগে উনি আসলেন। খানিকটা কাটাছেড়া দেখা যাচ্ছে শরীরে। আমি সেদিকে চোখ না দিয়ে সিরিয়াস গলায় জিজ্ঞেস করলাম, সত্যিই কি হল ছেড়ে দেবেন? উনি এগিয়ে এসে বিছানায় বসলেন। তারপর মৃদু কন্ঠে বললেন, হু..., এছাড়া আর গতি নেই। আপাতত থাকার একটা জায়গা ঠিক করে আসলাম। দেখি এরপর কি হয়...

আমি খানিকটা শ্লেষ মিশ্রিত কন্ঠে বললাম, কেন? কেন করতে যান এসব ঝামেলা? কি দরকার এইসব নোংরা রাজনীতির? এইযে আজকে মাইর খেলেন, হল ছাড়ছেন, কেন? বলেন, কেন?

উনি হাসলেন। তারপর বললেন, আমি কি নোংরা?

আমি একটু বিব্রত হয়ে বললাম, না। আপনি ব্যতিক্রম। তাইতো বলছি, কেন? আপনি কেন এ আবর্জনায়?

-কে বলেছে, রাজনীতি নোংরা? রাজনীতি তো নোংরা না! বরং কিছু নোংরা মানুষ রাজনীতিকে নিজের স্বার্থ হাসিলের হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করতে গিয়ে মানুষের ভাগ্য নিয়ে ছেলেখেলা করছে। তারা মানুষকে ব্যবহার করে, আর স্বল্প বুদ্ধির মানুষেরা ব্যক্তি স্বার্থে বৃহৎ স্বার্থকে জলাঞ্জলি দিয়ে নোংরা করে পরিবেশ। আর আমরা যে পরিবেশে বেড়ে উঠেছি, সে পরিবেশকে কিছু মানুষ দিনের পর দিন দুষিত করতে থাকবে আর আমরা চেয়ে চেয়ে দেখবো? এরা ক্যান্সারের মত ছড়িয়ে পড়বে। আমি যেখানেই পালিয়ে থাকি না কেন, কোন একদিন এ মহামারি আমাকেও গ্রাস করবে। আল্লাহ আমাদের বিবেক দিয়েছেন, প্রয়োজনীয় বুদ্ধিমত্তা দিয়েছেন। আমরা কি করে হাত গুটিয়ে বসে থাকি? আমাদেরকে কি এ ব্যাপারে জবাবদিহি করা হবেনা? তুমি কি জানো, আল্লাহ আমাদের নির্দেশ দিয়েছেন “সৎ কাজের আদেশ দিতে আর অসৎ কাজে বাধা দিতে?” ফাহাদ, রাজনীতি আমাদের সমাজের সামাজিকীকরণের হাতিয়ার। পরিশুদ্ধ রাজনীতি একটি পরিশুদ্ধ সমাজের জন্ম দিতে পারে। আর অপরদিকে এ নোংরা রাজনীতির প্রভাব যে কতটা সুদূরপ্রসারী তা তুমি ভাবতেও পারবেনা। পরিবর্তন আজ সমাজের প্রত্যেকটি স্তরে অপরিহার্য হয়ে পড়েছে। আর, পরিবর্তন যদি চাও তবে তোমাকেই আগে এগিয়ে আসতে হবে। যে সত্তা তোমাকে সৃষ্টি করেছেন, তাঁর হক আছে তোমার উপর। যে পরিবার তোমাকে স্বাবলম্বী হতে শিখিয়েছে তার অধিকার আছে তোমার উপর। যে সমাজে তুমি বেড়ে উঠেছো, সে সমাজের কিছু দাবী আছে তোমার উপর। তুমি একজন সক্ষম মানুষ হলে এসব দায়বদ্ধতা থেকে মুখ লুকিয়ে থাকতে পারোনা। আর কেউ পারলেও আমি পারিনি। তাই এ আবর্জনায় আসতে বাধ্য হয়েছি। এ অদম্য আকাঙ্ক্ষায় যে, একদিন আমাদের মত কিছু মানুষের রক্ত আর ঘামে এ আবর্জনা সাফ হয়ে যাবে। একদিন আমরা নির্ভয়ে শ্বাস নেবো। চোখ মেলে দেখবো পরিষ্কার আকাশ।

কথাগুলো বলে ফরহাদ ভাই উঠে গেলেন। দৃঢ় চোয়াল আর মুষ্টিবদ্ধ হাত তার লক্ষ্যের অটলতার সাক্ষ্য দেয়। আমি নতুন করে ফরহাদ ভাইকে শ্রদ্ধা করতে বাধ্য হলাম। নিজেকে ছোট মনে হতে লাগল। কারণ আমি কখনো এত বড় করে ভাবতে পারিনি। আমার কাছেও তো ব্যক্তি স্বার্থটাই মুখ্য ছিল সবসময়। পড়াশোনায় একটা আশানুরুপ ফলাফল, আর তারপর একটা ভাল চাকুরী। তারপর গোছানো একটা সংসার আর শান্তিতে মৃত্যুর নিশ্চয়তা। এটুকুর জন্যই তো ছুটছি! কখনোই তো কোথাও নতুন কিছু করার আকাংখায় পা বাড়াইনি। নতুন করে কিছু ভাবতে চাইনি। বড়জোর এটুকু ভেবেছি যে, পরিবর্তন প্রয়োজন। আশা করেছি, শান্তি আসুক সবখানে। কিন্তু সেটা আসুক আমার হাত ধরেই, এমন করে ভাবার স্পর্ধা কখনো হয়নি। সত্যিই! ছোট ছোট মানুষদের ভাবনাগুলো কতইনা ছোট হয়! স্বপ্নের গন্ডিটা কতইনা ক্ষুদ্র! নিজেকে কুয়ার ব্যাঙ মনে হচ্ছিল সে সময়টায়।

২.

সাবিরা দৌড়ে এল।

-আম্মা, ছাদ থেকে দেখলাম ভাইয়া এসেছে!

তারপর মুচকি হেসে বলল, সাথে তোমার বিশেষ মেহমান ফরহাদ ভাই।

বলেই হাসতে হাসতে কোথায় যেন ছুটল আবার।

মেয়ের আনন্দ দ্বিগুণ গতিতে সংক্রমিত হল মায়ের মাঝে। জায়নামাজ থেকে উঠে কাঁপা হাতে মোটা ফ্রেমের চশমাটা অবিন্যস্ত চুলের ফাঁকে গুজে জানালার গরাদ ধরে দাড়ালেন। ধবধবে সাদা পাঞ্জাবিতে বড্ড মানিয়েছে। বড্ড মানিয়েছে আমার কলিজার টুকরোকে। কত স্থিরতা প্রত্যেক কদমে। কি মায়া ওই শুকনো চেহারাটায়............... এ আমার সেই ছেলে। আমার ছেলে।

প্রশান্ত হ্ণদয়ে দৃষ্টিশীতলকারী ছেলেকে প্রাণভরে দেখেন খাদিজা তাহেরা। এক তৃপ্ত মা।

বিষয়: সাহিত্য

১৮৮৭ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File