From A Teenager to the Teenagers...
লিখেছেন লিখেছেন অনল দুহিতা ২৫ আগস্ট, ২০১৩, ১০:১৯:০৮ সকাল
মাঝে মাঝে প্রচন্ড সংকীর্ণ হয়ে আসে হ্নদয়। ক্ষুদ্রতা অনুভূত হয় তীব্রভাবে। এত চাহিদা কেন আমাদের? এত হাহাকার...? এত হতাশা, ইর্ষা, পরশ্রিকাতরতা, পেলাম না বলে আর্তনাদ!
যা পেয়েছি তা বড় তুচ্ছ হয়ে গেছে আমাদের কাছে...
পরিবারের বন্ধন, শৃঙ্খল, রক্ষনশীলতা মেনে নিতে কষ্ট হয় আমাদের। ভাল লাগেনা বাবা-মার চোখ রাঙ্গানি আর যথার্থ শাসনটাও। অসহ্য লাগে বেধে দেয়া নিয়মগুলো। এমন কেউ আছো? তোমাকে বলি,
আমাদের বয়সি মানুষগুলোর অনেক অনেক অভিমান... অনেক অনেক হাহাকার... অনেক কষ্ট, হতাশা, দুঃখের অনুভূতি... তাইতো কেউ হেরে গেছি ভেবে জীবন থেকে পালিয়ে যায়। সেদিন শুনলাম, ১২ বছর বয়সি একটা মেয়ে বাবা-মায়ের সাথে রাগ করে গলায় ফাস দিয়ে আত্মহত্যা করেছে। আজ দেখলাম ১১ বছর বয়সি এক ছেলে বাবা চড় দিয়েছে বলে গলায় ফাস লাগিয়ে আত্মহত্যা করেছে। গতকাল শুনলাম পেছনের বেঞ্চের মেয়েটা দুদিন আগে পালিয়ে বিয়ে করে ফেলেছে। ক্লাসের আরেকটা মেয়ে সারাদিন মাথানিচু করে বসে থাকে। মাঝে মাঝে একটু আধটু কাঁদে। জানা গেল, বয়ফ্রেন্ডের সাথে ব্রেকআপ হয়ে গেছে তাই... সেদিন ক্লাসের মিষ্টি চেহারার একটা মেয়েকে অস্বুস্থ্য দেখে জিজ্ঞেস করেছিলাম কি হয়েছে? বলল, ডেটল খেয়েছিলাম রাগ করে। বলার অপেক্ষা রাখেনা, আত্মহত্যার জন্যই। পাশের বাড়ির মেয়েটার মন খারাপ কেন ওকে পছন্দের দুলটা কিনে দেয়া হলনা।
একটা এতিম বাচ্চার অনুভূতিগুলো কখনো হ্নদয় দিয়ে অনুভব করার চেষ্টা করে দেখেছো? ছোটবেলায় আমার খুব প্রিয় একটা গান ছিল। কচি কন্ঠে বাচ্চাটা মাকে নিয়ে গান গাইতো, গানটার একদম শেষে দেখা যেতো পুরো গানটা বাচ্চাটার কল্পনা। আর বাচ্চাটা অনেকগুলো এতিম শিশুর একজন।
আমি মাঝে মাঝে ভাবি, আমি যদি এতিম হতাম, তাহলে যখন আমার খুব কষ্ট হয়, তখন কার কাছে যেতাম! কাকে বলতাম যে, আমার খুব মন খারাপ। আমার অনেক কষ্ট হচ্ছে? কে আমার আর দুনিয়াবী নিষ্ঠুরতার মাঝে আড়াল হয়ে দাড়াতো? কে আমার সীমাবদ্ধতাকে ভুলিয়ে দিয়ে সামনে পা ফেলার উৎসাহ দিতো? আমি কার চোখে আশ্রয় খুজতাম? কে আমাকে নিয়ে স্বপ্ন দেখত?? প্রথম নাম লেখা কে শিখিয়ে দিতো আমার হাতটা ধরে? কার হাত ধরে আমি প্রথম স্কুলে যেতাম?! কার কাছে আবদার করতাম পছন্দের খেলনাটার জন্য? জীবনে পাওয়া প্রথম পুরষ্কারটা হাসিমুখে কাকে এনে দেখাতাম?
আর আমার যদি একটা পা না থাকতো, আমি কি আল্লাহর কাছে বলতাম, আমার এবারের ঈদের জুতোটা কেন আরেকটু সুন্দর হলোনা? যদি হাত না থাকতো, লিখতে পারতাম না এই লেখাটাও... কখনো কি ভেবেছি, যদি অন্ধ হতাম, কাঁদতামনা একটা দামী মোবাইল কিংবা ল্যাপটপের জন্য। মন খারাপ করতাম না পছন্দের অনুষ্ঠানটা দেখতে না পারার জন্য! শুধু হ্নদয় ভরা শূণ্যতা নিয়ে বলতাম, আল্লাহ! একবার দেখতে দিও পৃথিবীটা! কিংবা বুকভাঙ্গা আর্তনাদ নিয়ে অভিযোগ করতাম নিজের অসম্পূর্ণতার জন্য...
কখনো কি আশেপাশের মানুষগুলোর সাথে নিজেকে তুলনা করে দেখেছি? এমন কি হতে পারতো না যে, শেয়ার বাজারে সর্বশান্ত অনেকগুলো মুখের একটা মুখ আমারই বাবার! হতে পারতো না, রানা প্লাজায় চাপা পড়া একটা থ্যাতলানো শরীর আমার মায়ের! আমি কোথায় থাকতাম তখন? কোথায় থাকতো আমার ব্র্যান্ডের পোশাকের হাহাকার? এমন কি হতে পারতো না, ময়লার ভাগাড়ে পাওয়া কংকালের একটা আমি নিজেই? আমি কি এর চেয়ে ভাল আছি না?
যাকে আমার ভাল লাগে, তার খানিকটা অবহেলায় হতাশায় ছেয়ে যায় মনের অঞ্চল। সে কষ্ট প্রকাশিত হয় গানের সূরে, কবিতার ছন্দে কিংবা ডায়রীর পাতায়। অথবা আমার ফেইসবুক স্ট্যাটাসে। আমার সবচেয়ে বড় মানসিক কষ্টের কারণ হয় সেটাই। ওটাই হয় আমার সবচেয়ে বড় সমস্যা। স্থবিরতার একমাত্র কারণ। আর আমার পাচিল ঘেরা উচু দালানের পাশের বস্তিতে থাকা আমার বয়সি আরেকটা মেয়ের সবচেয়ে বড় সমস্যা হল, আজকে গার্মেন্টসে বেতন না পেলে বাড়িভাড়াটা দেয়া যাবেনা। দুপুরে ভাত রান্না হবেনা। ছোট ভাইয়ের স্কুলে নাম কাটা যাবে। কিংবা বাবার হাপানির ঔষধটা...
কি? এসব ভাবলে অনুশোচনা হয়? একটা দীর্ঘশ্বাস বেরিয়ে আসে? নাকি মনে হয়, “আমার কষ্ট তোমার পক্ষে বোঝা সম্ভব না।“
হু, খুব সত্যি! আমরা মানুষেরা খুবই স্বার্থবাদী। আমাদের পক্ষে খুব কমই নিজের সমস্যাগুলো দূরে রেখে অন্যের সমস্যাগুলো অনুভব করা সম্ভব। কিন্তু ব্যাপারটা কি জানো? মানুষ যখন তার সর্বশেষ আশ্রয়টাও হারিয়ে ফেলে তখন কার কছে যায়?
“তার মালিকের কাছে।” হু, একমাত্র তিনিই সর্বাবস্থায় তাঁর বান্দার ডাকে সাড়া দিতে প্রস্তুত থাকেন। একমাত্র তিনিই চান , যেন তাঁর একান্ত দাস/দাসীটি সিরাতুল মুস্তাকিমে যথাযথভাবে পুণরায় ফিরে আসে। তাইতো যখন কোন কোন বান্দা তওবা করে ফিরে আসে, তখন তিনি সবচেয়ে বেশি খুশি হন। যখন আমরা আমাদের সীমাবদ্ধতার জন্য খাস দিলে ক্ষমা চাই, তখন তিনি ক্ষমা করার ওয়াদা করেন। তাঁর কাছেই বলা যায় জীবনের সব অপূর্ণতা, চাওয়া-পাওয়া, গ্লানি-আনন্দ, হ্নদয়ের একান্ত ইচ্ছেটাও! শুধু ভরসা রাখতে হয়।
আমার অশ্রু যখন আমি নিজেই মুছে উঠে দাড়াই, আমার হতাশা চেপে আবার যখন মঞ্জিলের পথে পা বাড়াই, তখন আমাকে তিনিই আগলে রাখেন। আমাকে সবচেয়ে বেশি তিনিই ভালবাসেন। আমার প্রতিটি হাসির জন্য ধন্যবাদ পেতে পারেন শুধুই তিনি। বেশি কিছু না, জীবনের প্রতিটি আনন্দ আর দুঃখের সময় মস্তক অবনত করে সবটুকু আবেগ ঢেলে একবার ডাকুক তাঁর বান্দারা, এটুকুই চান তিনি। যিনি আমাদের সবচেয়ে বেশি ভালবাসেন, আমরা ব্যস্ত মানুষেরা এতটুকু সময় তো তাঁকে দিতেই পারি। তাইনা!!
বিষয়: বিবিধ
১৭৩০ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন