shekh Muzibur Rohman's Interview by Oriana Fallaci (translated)

লিখেছেন লিখেছেন অনল দুহিতা ১৯ জুলাই, ২০১৩, ১১:১৮:৪২ রাত



(এ সাক্ষাৎকারটি লেখা হয় ২৪শে ফেব্রুয়ারী, ১৯৭২ সালে। লেখিকা ইতালীর একজন প্রথম সারির সাংবাদিক 'ওরিয়ানা ফালাচি'। যিনি যুদ্ধকালীন সংবাদ সংগ্রহের জন্য ৭১- এ বাংলাদেশে অবস্থান করেছিলেন। ১৯৭৭ সালে শেখ মুজিবুর রহমান সহ ১২ জন বিখ্যাত রাষ্ট্রপ্রধানের সাক্ষাৎকার একসাথে বই আকারে প্রকাশিত হয়। ইন্টারভিউ উইথ হিস্টোরি নামের এ বইটি ১৯৮৯ সালে প্রথম বাংলায় ঢাকা ডাইজেষ্ট পত্রিকায় প্রকাশিত হয়।)

... মুজিবের স্ত্রী আমাকে উষ্ণ অভ্যর্থনা জানালেন। ঠিক তখনই মুজিব এলেন। সহসা রান্নাঘরের মুখে তার আবির্ভাব হল। তার পরনে সাদা পোষাক, যাতে আমার কাছে তাকে মনে হয়েছিল একজন প্রাচীন রোমান হিসেবে। পোশাকের কারণে তাকে দীর্ঘ ও ঋজু মনে হচ্ছিল। তার বয়স একান্ন হলেও তিনি সুপুরুষ। ককেশীয় ধরনের সুন্দর চেহারা। চশমা ও গোঁফে সে চেহারা হয়েছে আরো বুদ্ধিদীপ্ত। যে কারো মনে হবে, তিনি বিপুল জনতাকে নেতৃত্ব দেয়ার যোগ্যতা সম্পন্ন ব্যক্তি। তিনি স্বাস্থ্যের অধিকারী।

আমি সোজা তার কাছে নিজের পরিচয় পেশ করলাম এবং আমার উদ্দেশ্য ব্যক্ত করলাম। মি. সরকার ভূমিতে পতিত হয়ে মুজিবের পদচুম্বন করলেন। আমি মুজিবের হাতটা আমার হাতে নিয়ে বললাম, "এই নগরীতে আপনি ফিরে এসেছেন দেখে আমি আনন্দিত, যে নগরী আশংকা করেছিল যে আপনি আর কোনদিন ফিরবেন না।" তিনি আমার দিকে তাকালেন একটু উস্মার সাথে। একটু অবজ্ঞার হাসি হেসে বললেন, "আমার সেত্রেটারীর সাথে কথা বল।"

আমার দ্বিধা ও সন্দেহের কারণ উপলব্ধি করা সহজ। মুজিবকে আমি জেনে এসেছি একজন গণতন্ত্রী ও সমাজতন্ত্রী হিসেবে। আমি যখন দম নিচ্ছিলাম, একজন যুবক আমার কাছে এসে বলল, সে ভাইস সেক্রেটারী। বিনয়ের সাথে সে প্রতিশ্রুতি দিল, বিকেল চারটার সময় আমি 'সরকারী বাসভবনে' হাজির থাকতে পারলে আমাকে দশ মিনিট সময় দেয়া হবে। তার সাথে যারা সাক্ষাত করতে চায়, তাদের সাথে সেখানেই তিনি কথা বলেন। বিকেল চারটায় নগরী ক্লান্ত, নিস্তব্ধ, ঘুমন্ত মধ্যহ্নের বিশ্রাম নিচ্ছে। রাস্তায় কাধে রাইফেল ঝুলানো মুক্তিবাহিনী টহল দিচ্ছে। যুদ্ধ শেষ হয়েছে একমাসের ও বেশি সময় আগে। কিন্তু এখনো তাদের হাতে অস্ত্র আছে। তারা রাতদিন টহল দেয়। এলোপাথারি বাতাসে গুলি ছুঁড়ে এবং মানুষ হত্যা করে।। হত্যা না করলে দোকান লুটপাট করে। কেউ তাদের থামাতে পারেনা-এমনকি মুজিবও না। সম্ভবত তিনি তাদের থামাতে সক্ষম নন। তিনি সন্তুষ্ট এজন্যে যে, নগরীর প্রাচীর তার পোষ্টার সাইজের ছবিতে একাকার। মুজিবকে আমি আগে যেভাবে জেনেছিলাম, তার সাথে আমার দেখা মুজিবকে মেলাতে পারছিনা।

সোমবার সন্ধ্যাঃ আমি যে সাক্ষাৎকার নিয়েছি এটা ছিল দুর্বিপাক। তার মানসিক যোগ্যতা সম্পর্কে আমার সন্দেহ ছিল। এমনকি হতে পারে যে, কারাগার এবং মৃত্যু সম্পর্কে তার মস্তিষ্কে ভীষণভাবে আলোড়িত করেছে? তার ভারসম্যহীনতাকে আমি কোনভাবেই ব্যাখ্যা করতে পারিনা। একই সময়ে আমি বলতে চাচ্ছি, কারাগার এবং মৃত্যুর ভয় ইত্যাদি............ সম্পর্কে কাহিনীগুলো.........আমার কাছে এখনো খুব স্পষ্ট নয়। এটা কি করে হতে পারে যে, তাকে যে রাতে গ্রেফতার করা হলো, সে রাতে সকল পর্যায়ের লোককে হত্যা করা হল? কি করে কি করে এটা হতে পারে যে তাকে কারাগারের একটি প্রকোষ্ঠ থেকে পলায়ন করতে দেয়া হল, যেটি তার সমাধি সৌধ হতো? তিনি কি গোপনে ভুট্টোর সাথে ষড়যন্ত্র করেছিলেন? আমি যত তাকে পর্যবেক্ষণ করছি, তত মনে হয়েছে, তিনি কিছু একটা লুকোচ্ছেন। এমনকি তার মধ্যে যে সার্বক্ষনিক আক্রমনাত্মক ভাব, সেটাকেও আমার মনে হয়েছেয়াত্মরক্ষার কৌশল বলে।

ঠিক চারটায় আমি সেখানে ছিলাম। ভাইস প্রেসিডেন্ট সেখানে আমাকে করিডোরে বসতে বললেন, যেখানে কমপক্ষে পঞ্চাশজন লোকে ঠাসাঠাসি ছিল। তিনি অফিসে প্রবেশ করে মুজিবকে আমার উপস্থিতি সম্পর্কে জানালেন। আমি একটা ভয়ংকর গর্জন শুনলাম, এবং নিরীহ লোকটি পুনরায় আবির্ভুত হয়ে আমাকে প্রতিক্ষা করতে বললেন। আমি প্রতিক্ষা করলাম-এক ঘন্টা, দুই ঘন্টা, তিন ঘন্টা, চার ঘন্টা---রাত আটটা যখন বাজলো, তখনো আমি সেই অপরিসর করিডোরে অপেক্ষমান। রাত সাড়ে আটটায় আমকে প্রবেশ ক্রতে বলা হল। আমি বিশাল এক কক্ষে প্রবেশ করলাম। একটি সোফা ও দুটি চেয়ার সে কক্ষে। মুজিব সোফার পুরোটায় নিজেকে বিস্তার করেছেন এবং দু'জন মোটা মন্ত্রী চেয়ার দুটো দখল করে বসে আছেন। কেউ দাড়ালো না। কেউ আমাকে অভ্যর্থনা জানালো না। কেউ আমার উপস্থিতিকে গ্রাহ্য করলো না। মুজিব আমাকে বসতে বলার সৌজন্য প্রদর্শন না করা পর্যন্ত সুদীর্ঘক্ষণ নিরবতা বিরাজ করছিল। আমি সোফার ক্ষুদ্র প্রান্তে বসে টেপ রেকর্ডার খুলে প্রথম প্রশ্ন করার প্রস্তুতি নিচ্ছি। কিন্তু আমার সে সময় ও ছিল্ল না। মুজিব চিৎকার শুরু করলেন, ;হ্যারি আপ, কুইক, আন্ডারস্ট্যান্ড? নষ্ট করার মত সময় আমার নেই। ইজ দ্যাট ক্লিয়ার---আমি বললাম, "মি প্রিম মিনিস্টার......।"মুজিব আবার চিৎকার শুরু করলেন, ওরা আমার নারীদেরকে তাদের স্বামী ও সন্তানদের সামনে হত্যা করেছে। স্বামীদের হত্যা করেছেতাদের ছেলে ও স্ত্রীর সামনে। মা-বাপের সামনে ছেলেকে, ভাইবোনের সামনে ভাইবোনকে......"মি প্রাইম মিনিস্টার......আমি বলতে চাই......"

"তোমার কোন কিছু চাওয়ার অধিকার নেই, ইজ দ্যাট রাইট?"

"আমার প্রথম প্রতিক্রিয়া হলো। কিন্তু একটা বিষয় সম্পর্কে আমি আরো কিছু জানতে চাই।" বিষয়টা আমি বুঝতে পারছিলাম না। " মি প্রাইম মিনিস্টার, গ্রেফতারের সময় কি আপনার উপর নির্যাতন করা হয়েছিল?"

"নো, ম্যাডাম নো। তারা জানতো, ওতে কিছু হবেনা। তারা আমার বৈশিষ্ট্য, আমার শক্তি, আমার সম্মান, আমার মূল্য, বীরত্ব সম্পর্কে জানতো, আন্ডারস্ট্যান্ড?"

"তা বুঝলাম। কিন্তু আপনি কি করে বুঝলেন যে তারা আপনাকে ফাঁসিতে ঝুলাবে? ফাঁসিতে ঝুলিয়ে কি মৃত্যুদন্ড কার্যকর করা হয়?"

"নো, নো ডেথ সেন্টেন্স।"

এই পর্যায়ে তাকে দ্বিধাগ্রস্ত মনে হলো এবং তিনি গল্প বলতে শুরু করলেন, "আমি এটা জানতাম। কারণ ১৫ই ডিসেম্বর ওরা আমাকে কবর দেয়ার জন্য একটা গর্ত খনন করে।"

"কোথায় খনন করা হয়েছিল সেটা?"

"আমার সেলের ভিতরে।"

"আমাকে কি বুঝে নিতে হবে যে গর্তটা ছিল আপনার সেলের ভিতরে?"

"ইউ মিস আন্ডারস্ট্যান্ড?"

"আপনার প্রতি কেমন আচরণ করা হয়েছিল মি প্রাইম মিনিস্টার?"

"আমাকে একটা নির্জন প্রকোষ্ঠে রাখা হয়েছিল। এমনকি আমাকে সাক্ষাৎকারের অনুমতি দেয়া হত না, সংবাদপত্র পাঠ করতে বা চিঠিপত্রও দেয়া হত না, আন্ডারস্ট্যান্ড?"

"তাহলে আপনি কি করেছেন?"

"আমি অনেক চিন্তা করেছি, পড়াশুনা করেছি।"

"আপনি কি পড়েছেন?"

"বই এবং অন্যান্য জিনিস।"

"তাহলে আপনি কিছু পড়েছেন।"

"হ্যা, কিছু পড়েছি।"

"কিন্তু আমার ধারনা হয়েছিল, আপনাকে কোনকিছুই পড়তে দেয়া হয়নি।"

"ইউ মিস আন্ডারস্টুড।"

"তা বটে মি প্রাইম মিনিস্টার। কিন্তু এটা কি করে হলো যে, শেষ পর্যন্ত ওরা আপনাকে ফাঁসিতে ঝুলালো না।"

"জেলার সাহেব আমাকে সেল থেকে পালাতে সহায়তা করেছেনেবং তার বাড়িতে আশ্রয় দিয়েছেন।"

"কেন, তিনি কি কোন নির্দেশ পেয়েছিলেন?"

"আমি জানিনা। এ ব্যাপারে তার সাথে আমি কোন কথা বলিনি এবং তিনিও আমার সাথে কিছু বলেননি।

"নিরবতা সত্ত্বেও কি আপনারা বন্ধুতে পরিনত হয়েছিলেন?"

"হ্যা, আমাদের মধ্যে বহু আলোচনা হয়েছে এবং তিনি সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন যে, আমাকে সাহায্য করতে চান।"

"তাহলে আপনি তার সাথে কথা বলেছেন?"

"হ্যা, আমি তার সাথে কথা বলেছি।"

"আমি ভেবেছিলাম, আপনি কারো সাথেই কথা বলেননি।"

"ইউ মিস আন্ডারস্টুড।"

"তা হবে মি প্রিম মিনিস্টার। যে লোকটি আপনার জীবন রক্ষা করলো আপনি তার প্রতি কৃতজ্ঞতা অনুভব করেন না?"

"এটা ছিল ভাগ্য। আমি ভাগ্যে বিশ্বাস করি।

এরপর তিনি ভুট্টো সম্পর্কে কথা বললেন। এ সময় তার কথায় কোন স্ববিরোধিতা ছিলনা। বেশ সতর্কতার সাথেই বললেন তার সম্পর্কে। আমাকে মুজিব জানালেন যে, ২৬শে ডিসেম্বর ভুট্টো তাকে খুজতে গিয়েছিলেন। উদ্দেশ্য তাকে রাওয়ালপিন্ডিতে নেওয়া। তার ভাষায়, “ভুট্টো একজন ভদ্রলোকের মতই ব্যবহার করলেন। তিনি সত্যিই ভদ্রলোক।” ভুট্টো তাকে বলেছিলেন যে,একতা যুদ্ধ হয়ে গেছে। অবশ্য মুজিব ব্লাক আউট ও বিমানের গর্জন থেকে বরাবরই যুদ্ধ সম্পর্কে আঁচ করেছেন। ভুট্টো তার কাছে আর ব্যাখ্যা করলেন যে, এখন তিনি পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট এবং তার কাছে কিছু প্রস্তাব করতে চান।

আমি তাকে প্রশ্ন করলাম, “কি প্রস্তাব মি. প্রাইম মিনিস্টার?” তিনি উত্তর দিলেন, “হোয়াই শুড আই টেল ইউ? এটা একটা ব্যক্তিগত ব্যাপার। প্রাইভেট অ্যাফেয়ার।”

“আমার কাছে বলার প্রয়োজন নেই মি প্রাইম মিনিস্টার, আপনি বলবেন ইতিহাসের কাছে।”

মুজিব বললেন, “আমিই ইতিহাস। আমি ভুট্টোকে থামিয়ে বললাম, যদি আমাকে মুক্তি দেয়া না হয়, তাহলে আমি আলাপ করবো না। ভুট্টো অত্যন্ত শ্রদ্ধার সাথে উত্তর দিলেন, আপনি মুক্ত যদিও আপনাকে শীঘ্র ছেড়ে দিচ্ছিনা। আমাকে আরো দুই বা তিনদিন অপেক্ষা করতে হবে। এরপর ভুট্টো পশ্চিম পাকিস্তান ও বাংলাদেশ সম্পর্কে তার পরিকল্পনা তৈরী করতে শুরু করলেন। কিন্তু আমি অহংকারের সাথেই জানালাম,দেশবাসীর সাথে আলোচনা না করে আমি কোন পরিকল্পনা করতে পারিনা।” এই পর্যায়ে তাকে প্রশ্ন করলাম, “তাহলে তো কেউ বলতেই পারে যে, আপনাদের আলোচনা খুবই বন্ধুত্বপূর্ণ পরিবেশে হয়েছিল।”

“তা তো বটেই। আমরা পরস্পরকে ভালোভাবে জানি। খুব বন্ধুত্বপূর্ণ আলোচনা ছিল। কিন্তু তা হয়েছিল আমার জানার আগে যে, পাকিস্তানীরা আমার জনগনের বিরুদ্ধে বর্বরোচিত নিপীড়ন করেছে।”

আমি তাকে থামিয়ে বললাম, “আমি হানি মি প্রাইম মিনিস্টার, আমি জানি।” তিনি গর্জে উঠলেন, “তুমি কিছুই জানো না; আমি তখন জানতাম না যে, তারা বর্বরোচিতভাবে আমার মা-বোনকে হত্যা করেছে।

আমি তাকে থামিয়ে বললাম, “আমি জানি মি প্রাইম মিনিস্টার, আমি জানি।”

তিনি গর্জে উঠলেন, “তুমি কিছু জানো না; আমি তখন জানতাম না যে, তারা আমার স্থপতি , আইনবিদ, ইঞ্জিনিয়ার, বিজ্ঞানী, চিকিৎসক, আমার চাকরকে হত্যা করেছে এবং আমার বাড়ি, জমি, সম্পত্তি ধ্বংস করেছে, আমার......।”

তিনি যখন তার সম্পত্তির অংশে পৌছলেন, তার মধ্যে এমন একটা ভাব দেখা গেল, যা থেকে তাকে এই প্রশ্নটা করার প্রয়োজনীয়তা বোধ করলাম যে, তিনি সত্যিই সমাজতন্ত্রী কিনা? তিনি উত্তর দিলেন, “হ্যা......।” তার কন্ঠে দ্বিধা। তাকে আবার বললাম যে, সমাজতন্ত্র বলতে তিনি কি বুঝেন? তিনি উত্তর দিলেন, “সমাজতন্ত্র।” তাতে আমার মনে হলো, সমাজতন্ত্র সম্পর্কে তার যথার্থ ধারণা নেই।

এরপর ১৮ই ডিসেম্বর হত্যাযজ্ঞ সম্পর্কে তার প্রতিক্রিয়া জানতে চাইলে তিনি রাগে ফেটে পড়লেন। নিচের অংশটুকু আমার টেপ থেকে নেয়াঃ

“ম্যাসাকার? হোয়াট ম্যাসাকার?”

“ঢাকা স্টেডিয়ামে মুক্তিবাহিনীর দ্বারা সংঘটিত ঘটনাটি।”

“ঢাকা স্টেডিয়ামে কোন ম্যাসাকার হয়নি। তুমি মিথ্যে বলছো।”

“মি প্রাইম মিনিস্টার, আমি মিথ্যেবাদী নই। সেখানে আরো সাংবাদিক ওপনের হাজার লোকের সাথে য়ামি হত্যাকান্ড প্রত্যক্ষ করেছি। আপনি চাইলে আমি আপনাকে তার ছবিও দেখাবো। আমার পত্রিকায় সে ছবি প্রকাশিত হয়েছে।”

“মিথ্যেবাদী, ওরা মুক্তিবাহিনী নয়।”

“মি প্রাইম মিনিস্টার, দয়া করে মিথ্যেবাদী শব্দটি আর উচ্চারণ করবেন না। তারা মুক্তিবাহিনী। তাদের নেতৃত্ব দিচ্ছিল আবদুল কাদের সিদ্দিকী এবং তারা ইউনিফর্ম পরা ছিল।”

“তাহলে হয়তো ওরা রাজাকার ছিল যারা প্রতিরোধের বিরোধিতা করেছিল এবং কাদের সিদ্দিকী তাদের নির্মূল করতে বাধ্য হয়েছে।”

“মি প্রাইম মিনিস্টার, কেউ প্রমাণ করেনি যে, লোকগুলো রাজাকার ছিল এবং কেউই প্রতিরোধের বিরোধিতা করেনি। তারা ভীতসন্ত্রস্ত ছিল। হাত-পা বাঁধা থাকায় তারা নড়াচড়াও করতে পারছিল না।”

“মিথ্যেবাদী।”

“শেষবারের মত বলছি, আমাকে মিথ্যেবাদী বলার অনুমতি আপনাকে দেবো না।”

“আচ্ছা সে অবস্থায় তুমি কি করতে?”

“আমি নিশ্চিত হতাম যে, ওরা রাজাকার ও অপরাধী। ফায়ারিং স্কোয়াডে দিতাম এবং এভাবেই এই ঘৃণ্য হত্যাকান্ড এড়াতাম।”

“ওরা ওভাবে করেনি। হয়তো আমার লোকদের কাছে বুলেট ছিলনা।”

“হ্যা, তাদের কাছে বুলেট ছিল। প্রচুর বুলেট ছিল। এখনো তাদের কাছে প্রচুর বুলেট রয়েছে। তা দিয়ে সকাল থেকে রাত পর্যন্ত গুলী ছোড়ে। ওরা গাছে, মেঘে, আকাশে, মানুষের প্রতি গুলী ছোড়ে শুধু আনন্দ করার জন্য।

এরপর কি ঘটলঃ যে দুই মোটা মন্ত্রী ঘুমুচ্ছিলেন গোটা সাক্ষাৎকারের সময়টায়, সহসা তারা জেগে উঠলেন আমি বুঝতে পারছিলাম না মুজিব কি বলে চিৎকার করছেন। কারণ কথাগুলো ছিল বাংলায়।

সোমবার রাতঃ গোটা নগরী জেনে গেছে যে, মুজিব ও আমার মধ্যে কি ঘটেছে। শমশের ওয়াদুদ নামে একজন লোক ছাড়া আমার পক্ষে আর কেউ নেই। লোকটি মুজিবের বড়বোনের ছেলে। এই যুবক নিউইয়র্ক থেকে এসেছে তার মামার কাছে। তার মতে মুজিব ক্ষমতালোভী এবং নিজের সম্পর্কে অতি উচ্চ ধারণা সম্পন্ন অহংকারী ব্যক্তি। তার মামা খুব মেধা সম্পন্ন নয়। বাইশ বছর বয়সে মুজিব হাইস্কুলের পড়াশুনা শেষ করেছেন। আওয়ামীলীগ সভাপতির সচিব হিসেবে তিনি রাজনীতিতে প্রবেশ করেন। এছাড়া আর কিছু করেননি তিনি। কেউ কল্পনাও করতে পারেনি যে মুজিব একদিন প্রধানমন্ত্রী হবেন। ওয়াদুদের মতে, আত্মীয়স্বজনের সাথে দুর্ব্যবহারের কারণ এটা নয়। আসলে একমাত্র ওয়াদুদের মাকেই মুজিব ভয় করেন। এই দুঃখজনক আচরণের জন্য তিনি পারিবারিকভাবে প্রতিবাদ জানাবেন। সে আরো জানালো যে, আমার সাথে যে ব্যবহার করা হয়েছে তা সে তার মাকে জানাবে, যাতে তিনি এ ব্যাপারে মুজিবের সাথে কথা বলেন। সে আমাকে আরো বললো যে, সরকারী দফতরে গিয়ে আমার এ ব্যাপারে প্রতিবাদ করা উচিৎ এবং প্রেসিডেন্টের সাথে কথা বলা উচিৎ। কারণ পেসিডেন্ট খাঁটি ভদ্রলোক।

বিষয়: রাজনীতি

১৬১৩ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File