সূর্যের দিন আসে ঘন ঘোর আঁধিয়ায়...

লিখেছেন লিখেছেন অনল দুহিতা ১৫ জুলাই, ২০১৩, ১১:৩৮:৪০ রাত

১৫ই জুলাই ২০১৩। বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রীসংস্থার ৩৫তম প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী। নির্দেশ আসলো এ প্রসঙ্গে কিছু লেখার। মানুষ যেমন নিজের সম্পর্কে বলতে গিয়ে থমকে যায়, লিখতে বসে তেমনি থমকে গেলাম। কি লিখব, কোথা থেকে শুরু করব বুঝতে পারছিলাম না। বসলাম ২৫তম প্রতিষ্ঠা বার্ষিকীর স্মারক নিয়ে। বইটিতে প্রথম ৭ জন কেন্দ্রীয় সভানেত্রীর সংগঠনে আসা, আর তাঁদের দায়িত্ব পালনের অম্ল-মধুর অভিজ্ঞতা, সংগঠনকে ঘিরে তাঁদের আবেগভরা স্বপ্ন, সে স্বপ্নের পথে সমাজের অজস্র বাধা পেরিয়ে চলার গল্পগুলো তাঁরা লিখে গিয়েছেন অনুজদের জন্য। পড়তে পড়তে যেন চোখের সামনে ভেসে উঠছিল সে সময়গুলো...! দক্ষ লেখনিতে টের পাওয়া যায় তাঁদের যোগ্যতার কিছুটা।

১৯৭৮ সালে সমমনা ১১জন স্বপ্নবাজ তরুনীর আকাশসম স্বপ্ন নিয়ে ইডেনের বুকে যাত্রা শুরু করে "বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রীসংস্থা"। তারপর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, ইডেন, ঢাকা মেডিকেল,রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়, চট্টগ্রাম মেডিকেলে একটি একটি মানুষের হাত ধরে ক্রমান্বয়ে দেশব্যাপী ছড়িয়ে পড়ে এক নতুন শ্লোগান।

খালাম্মাদের সার্বক্ষনিক সাহায্য আর বিপদ-আপদে ভাইদের উৎসাহী অনুপ্রেরণায় সমাজের পংকিল দিকগুলো এক এক করে মুছে ফেলবার অদম্য আকাংখায় স্রোতের বিপরীতে পথা চলা কাফেলায় প্রতিদিন যুক্ত হতে লাগল নতুন নতুন নাম। শুভাকাংখীর যেমন অভাব ছিলনা, তেমনি যুগে যুগে ইসলামের পথ রুদ্ধ করার ষড়যন্ত্রের ও অভাব হয়নি। সাবেক প্রেসিডেন্ট এরশাদের সময়ে সংগঠনের বহু ছাত্রীকে নির্যাতন করে বিশ্ববিদ্যালয় হোস্টেল থেকে বের করে দেয়া হয়েছে। বই-পত্র কাপড়-চোপড়সহ আসবাবপত্র পুড়িয়ে বাস্তবায়িত করা হয়েছে ইসলামী ছাত্র আন্দোলনের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ হওয়া প্রগতিশীল ছাত্রসংগঠনগুলোর ষড়যন্ত্র। প্রতিটি ক্যাম্পাস থেকে ইসলামী ভাবধারার শিক্ষার্থীদের বিতাড়িত করাই ছিল যাদের মূল টার্গেট। অবস্থা এতটাই শোচনীয় ছিল যে, বোরখা পরিহিত কোন ছাত্রী, কিংবা দাড়ি-টুপি পরিহিত কোন ছাত্র বিশ্ববিদ্যালয়ে ক্লাস করতে পারতনা। উপরন্তু গোয়েন্দা সংস্থার তৎপরতা তো ছিলই। এমন প্রতিকূলতার মধ্যেও আল্লাহর উপর তাওয়াক্কুলকারী দায়িত্বশীলাদের দক্ষ হাতের পরিচালনায় ক্রমশই বিস্তৃত হয়েছে ছাত্রীসংস্থার পরিধি।

আজ তিন যুগ পরে অনুজ হিসেবে আমরা পেয়েছি কিছু ক্ষনজন্মা মানুষের রক্তশ্রমের বিনিময়ে প্রতিষ্ঠিত একটি গৌরবজ্জল সংগঠনের পতাকা উত্তোলনের সুযোগ। সৌভাগ্য হয়েছে অসংখ্য গুণী মানুষের সংস্পর্শে আসার, আত্মশুদ্ধির মাধ্যমে নিজেদের পরিশুদ্ধ করার।

ভ্রাতৃত্ব-ভালবাসা আর পারস্পরিক হ্নদ্যতার এক অনুপম দৃষ্টান্ত হল সংগঠন। নিতান্ত অপরিচিত মানুষগুলোকে মুহুর্তের মধ্যে আত্মার আত্মীয় হয়ে যেতে দেখেছি এ একটি পরিচয়ে। প্রশিক্ষণের প্রতিটি ধাপে পেয়েছি সৎকর্মে প্রতিযোগীতা কারী কিছু আত্মসমর্পিত বোনকে। সংগঠনের স্বার্থে ক্রমাগত ত্যাগের দৃষ্টান্ত স্থাপনকারী বোনদের সংখ্যা গুনে শেষ করা যাবেনা। প্রচার বিমুখতা যাদের অন্যতম আকর্ষনীয় দিক।

কেন্দ্রীয় অফিসে যখন প্রথম পা রাখি, তখন আমি অষ্টম শ্রেণীর শিক্ষার্থী। সেই থেকে বহুবার বিভিন্ন কাজে অফিসমুখী হতে হয়েছে। কেন্দ্রীয় দায়িত্বশীলাদের দেখে যখন খানিকটা ঘাবড়ে যেতাম, তখনও তাঁদের ক্লান্ত হাসিমুখ, আর আন্তরিক কুশল জিজ্ঞাসায় মুগ্ধ হতাম, তার চেয়ে বেশি অবাক হতাম যখন বহুদিন পর দেখা হলেও নাম ধরে সম্বোধন করতেন। যারা দিন-রাত পাহাড়সম চিন্তার বোঝা মাথায় নিয়ে বিশাল এক গঠনমূলক সংগঠনের নেতৃত্ব দিয়ে যাচ্ছেন, একজন সাধারণ জনশক্তির প্রতি তাঁদের আন্তরিকতা, শ্রদ্ধা আর ভালবাসায় হ্নদয় ভরিয়ে দেয়... অধঃস্তনদের প্রতি উত্তম আচরণই যে রাসূল (সাঃ)-এর শিক্ষা!

নানামূখী কার্যক্রমের মাধ্যমে ছাত্রীসমাজের দক্ষতা বৃদ্ধি সংগঠনের অন্যতম লক্ষ্য। যার ধারাবাহিকতায় নেয়া সংগঠনের বিভিন্ন কার্যক্রমের ফলে সংগঠনের তত্বাবধানে তৈরী হচ্ছে আল্লাহর একনিষ্ঠ কিছু বান্দা, দক্ষ কর্মী আর সাহিত্য-সাংস্কৃতিক জনশক্তিও। যাদেরকে গড়ে তোলা হয় প্রতিকূল পরিবেশে যথাযথ সিদ্ধান্ত গ্রহন এবং নেতৃত্ব দানের উপযোগী করে। যার কারণে শত বাধা-বিঘ্ন ও প্রতিকূলতা সত্ত্বেও এ কাফেলা এগিয়ে চলছে অবিরাম। এমনকি ১৭ই ডিসেম্বর ২০১২ তারিখে সংগঠনটির কেন্দ্রীয় অফিসে আওয়ামী সরকারের পোষা পুলিশ বাহিনীর নারকীয় তান্ডব, অফিস ভাংচুর, কম্পিউটার সমূহ সহ অফিস সরঞ্জাম সিজ, অফিস সিলগালা করা এবং উর্ধ্বতন ২১ জন দায়িত্বশীলাকে গ্রেফতার, অযৌক্তিক রিমান্ড ও জিজ্ঞাসাবাদের নামে মানসিক নির্যাতনসহ এ সংগঠনের কার্যক্রমকে স্তব্ধ করার যাবতীয় ষড়যন্তই ব্যর্থ হয়েছে আল্লাহর ইচ্ছায়। চিরুনী অভিযান, ডিবি পুলিশের নজরদারি, এলাকায় এলাকায় জনশক্তিদের লিস্ট তৈরীসহ সরকারের কোন অপতৎপরতাই দমাতে পারেনি এ কাফেলার অগ্রযাত্রা। ব্যাহত করতে পারেনি নির্ধারিত কোন স্বাভাবিক কার্যক্রম।

পারবে কি করে! এ কাফেলার জন্ম যে সুফিয়া, আয়শা আর খাওলার যোগ্য উত্তরসূরী তৈরীর নিয়্যাতে! যয়নাব আল গাজ্জালীর বিপ্লবী ইতিহাস যে প্রতিটি কর্মীর হ্নদয়ে গাঁথা! শহীদ মালেকের এক একটি গল্প, চিঠি আর গৌরবদীপ্ত শাহাদাত সে সময় থেকে এ সময় পর্যন্ত কর্মী এবং দায়িত্বশীলা বোনদের অনুপ্রেরণার অন্যতম উৎস। এরা যে সেই মানুষগুলোরই উত্তরসূরী, যাদের দিন কেটেছে যুদ্ধের ময়দানে আর রাত কেটেছে অশ্রুভেজা জায়নামাজে। সিক্ত আঁখিতে বলি, আমি এ সংগঠনের একজন নই, বরং এটা আমারই সংগঠন। আমার প্রাণের সংগঠন। নিঃশ্বাসে স্পন্দিত হয় যে স্পন্দন......

যে গান ঝড় তোলে হ্নদয়ে-

"সূর্যের দিন এসে ঘন ঘোর আঁধিয়ায়

অবশেষে তাড়ায় যেমন

ঘরে ঘরে আলো জ্বালে

ইসলামী ছাত্রীসংস্থা তেমন।।

মুক্তির দিকে ডাকে সুফিয়া আয়শা আর

ফাতেমার পথের পথিক

ভ্রান্তির বেড়াজাল ছিন্ন ভিন্ন করে খরতর স্রোতের অধিক

আলোকিত জীবনের এনে দেয় সন্ধান

প্রভাতের দিশারী এমন।।

সকল আঙ্গিনা জুড়ে পুষ্পের সমারোহ

পাখিদের নীড়ে ফেরা গান

অথবা নতুন করে নদী ও নারীর দেশে

ঈমানের নব উত্থান

জেহাদের প্রেরণায় যারা চলে অবিরাম

কোরানের কাঙ্খিত রাহে

মিথ্যার বাধা যত দলে যায় যারা

শহীদি স্বপ্ন উৎসাহে

খাওলার এ বাহিনী গড়ে তোলে সংগ্রাম

সময়ের দাবী যা এখন।।"

কথাঃ মতিউর রহমান মল্লিক

সুরঃ মশিউর রহমা



বিষয়: বিবিধ

২১৫১ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File