ফেরা (১ম পর্ব)

লিখেছেন লিখেছেন অনল দুহিতা ০১ জুলাই, ২০১৩, ০৯:৪০:৩৭ সকাল



#১.

রাত-২.১৫

উদাস চেহারায় ধীর পায়ে ঢাকার কোন এক রাস্তায় একাকী হাটছে জুনায়েদ। কিছু মুহূর্ত একান্তই নিজের। নিজের সাথে নিজের জীবনের গল্পগুলো শেয়ার করার করার। নিজের সাথেই মনে মনে কথা বলছে জুনায়েদ। অনেক রকম এলোমেলো কথা...

আচ্ছা,আমি মানুষটা কেমন? আমি জানি..., চারপাশের মানুষগুলো যে আমায় অসম্ভব ভালবাসে তা আমি জানি। বেঁচে থাকার জন্য একটা মানুষের যতটুকু ভালবাসার প্রয়োজন হয় তার চেয়ে অনেক বেশিই ভালবাসা পেয়েছি আমি। কিন্তু তবু কেন নতুন করে খুজে ফেরা...?

হাটতে হাটতেই লেখার ইচ্ছেটা মাথাচাড়া দিয়ে ওঠে...

রাত-৩.১০

নিঃশব্দে দরজা দিয়ে প্রবেশ করল জুনায়েদ। বাবা-মা আর ছোট বোন দুটি ঘুমিয়ে পড়েছে অনেক আগেই। নিরবতা আর আধার, এ দুটো হঠাৎই অসম্ভব ভাল লাগতে শুরু করেছে...

জানালার গরাদ গলে চাঁদের আলো চুইয়ে চুইয়ে পড়ছে যেন! জোছনার সে অবছা সাদাটে আলোয় টেবিলে রেখে যাওয়া ডায়রীটা অদ্ভুত লাগছে দেখতে। রুমের দরজায় দাঁড়িয়ে অনেকক্ষণ পর্যন্ত গাঢ় নীল মলাটের ডায়রীটার দিকে তাকিয়ে রইল জুনায়েদ। গত দুমাস ধরে প্রায় প্রতিদিনই এ ডায়রীর পাতার পর পাতা ভরে জুনায়েদের নিঃসঙ্গ কবিতায়। কেন, সে বিষয়ে নিজেকেই কৈফিয়ত দিতে চায়না। আর অন্য কাউকে তো নয়ই।

"তোমায় সত্যি বলি,

আমি চাইনা তুমিও আমায় ভাবো

আমার মত কবিতা লেখো অগছালো।

চাইনা এ ক্ষণিকের পরিচয় পোড়াক তোমাকেও!

কিংবা হ্নদয়ে পুষে রাখো কোন অচেনা অনুভূতি...

সত্যিই!

আমি চাইনা অসহ্য যন্ত্রনায় গতি হারিয়ে,

আমার মত তুমিও হও আরেকটি ধ্বংসস্তুপ।"

চোখ থেকে চশমাটা খুলে ফেলল জুনায়েদ। টেবিল ল্যাম্পটা বন্ধ করে প্রচন্ড মাথা ব্যাথায় কপাল চেপে ধরল। ভরা পূর্ণিমায় আলো-আধারে বসে থাকা নিঃসঙ্গ ছায়া মূর্তিটির শরীর ভরা জোছনা। আর সামনে রাখা ডায়রীর পাতায় লেখা ছন্দ জুড়ে নোনা জলের স্বাক্ষর......

#২.

-জুনায়েদ ভাই! প্লিজ প্লিজ, এই লেখাগুলো কষ্ট করে দেখে দিয়েন... না বলবেন না প্লিজ...!

হেসে ফেলল জুনায়েদ।

-আচ্ছা, রেখে যাও, কালকে নিয়ে যেও। ক্লাস শেষে লাইব্রেরীতে পাবে আমাকে।

-অনেক থ্যাংকস ভাইয়া!

বলেই একগাল হেসে অন্য সহপাঠীদের সাথে ক্যাম্পাস থেকে বেরিয়ে গেল জুঁই।

জুঁই তিন বছরের জুনিয়র জুনায়েদের। সবে অনার্স ২য় বর্ষে। একেবারে ছেলেমানুষ!

আনমনেই ভাবল জুনায়েদ।

-তোর যা অবস্থা, দেখলে আমারও মাঝে মাঝে কবি হইতে মন চায়...

একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে উদাস কন্ঠে আকাশের দিকে মুখ করে বলল রিফাত।

-কি অবস্থা!

-এইযে, ললনাদের আবদার মেটাতে মেটাতে আমাদের টাইম দেয়ার সুযোগই পাসনা! কি জীন্দেগী... তার উপর টিচার, বিশেষ করে ম্যাডামদের সুনজর... আমাগো দুঃখ তুই কি বুঝবি? তোরে আর কি বুঝামু...

আরেকটা দীর্ঘশ্বাস ফেলল রিফাত।

-রিফাতরে তোর এসিসটেন্ট নিয়োগ দে। ক্যাম্পাসের সাহিত্য সম্পাদকের সাথে থাকলে যদি একটু সুনজর পড়ে...

ফোড়ন কাটল জাভেদ।

-হুম, তোদের অবস্থা হল নদীর ঐ পাড়ের মত। মনে করিস সব সুখ এই পাড়ে। আল্লাহ যা দিসে খুশি থাক! আর, এবার চল। জামাতের সময় হইসে, আমার সাথে যখন আছিস, এই ওয়াক্ত অন্তত কাযা করিসনা।

-তোর সাথে থাকলে ভাল না হইয়া উপায় নাই। চল...। আর নামাযে আমাদের জন্যও একটু দোয়া করিস বুঝছিস!

-হুম, চল।

আমার যাপিত জীবনের বিন্দুমাত্র যন্ত্রনাও যেন তোদের কোনদিন স্পর্শ না করে, হ্নদয় থেকে এতটুকুই চাওয়া...

মসজিদের দুধসাদা মার্বেলে পা দিতে দিতে ভাবল জুনায়েদ।

#৩.

-এ্যাই জুনায়েদ! করছিসটা কি তুই? কখন থেকে নাশতা নিয়ে ডাকছি! পরেতো না খেয়ে দৌড় দিবি।

-ওফ্‌ফো আম্মু! ভাইয়া লেখালেখি করছে দ্যাখো না! কবি-সাহিত্যিকদের এইভাবে ডিস্টার্ব করতে নেই।

বলেই মুচকি হাসল জারা।

-এত্ত ফাযিল হচ্ছিস ক্যান দিনদিন?

বেণীর আগায় মৃদু টান মেরে বলল জুনায়েদ।

-এ্যাইইই...! ভাল হবেনা কিন্তু বলে দিচ্ছি! আমি এখন বড় হইসি, চুলে হাত দিবানা।

সিরিয়াস গলায় বলল জারা।

-আরি বাপরেহ্‌ তাই নাকি! সেদিন মাত্র কলেজে ভর্তি করালাম... আচ্ছা দেখি কি করা যায়...

রুটির টুকরো মুখে পুরে বলল জুনায়েদ।

-থাক থাক, জাতি কবি সম্প্রদায়ের অনুগ্রহ চায়না।

মুখ বাকিয়ে বলল আরা।

খালি রাতের ঘুমটা না মারলেই জাতি খুশি। মুখ নামিয়ে আস্তে করে বলল জারা।

রুটি চিবানো বন্ধ করে খানিকটা ভড়কে গিয়ে জারার চোখে তাকাল জুনায়েদ।

-তুই ও জেগেছিলি নাকি!

-ওমা! উদাস কবির উদাসী কর্মকান্ডে যদি চোর ব্যাটা ঘর সাফা করে যায় তখন কি হবে শুনি! তোমাকে নিয়ে আর পারিনা ভাইয়া। মাঝরাতে দরজা খোলা রেখে এভাবে যায় কেউ! আর চেহারার কি হাল করেছো? এরকম করলে কিন্তু জীবনেও কোন মেয়ে তাকাবেনা বললাম!

-আম্মাকে বলে দিয়েছিস নাকি?

আড়চোখে রান্নাঘরের দিকে তাকাল জুনায়েদ।

-না বলিনি, কিন্তু তোমার চোখ দেখলেই বোঝা যায় যে, রাত জেগেছো।

তারপর নিচু গলায় বলল, আরো কিছু ও বোঝা যায়......

বলেই খিলখিলিয়ে হাসতে লাগল জারা।

-তুই তো দেখি আসলেই পেকে গেছিস!

খানিকটা অবাক কন্ঠেই বলল জুনায়েদ।

"আঠার বছর বয়স

অকারণে খিলখিল

মনের আকাশ ভরা

স্বপ্নেরা ঝিলমিল!"

-ভাইয়া, তোমার পেট ভরা ছন্দ। এজন্যেই তো খেতে পারোনা!

ঘড়ির দিকে চেয়ে চমকে উঠল জুনায়েদ।

-ওফ্‌ফো... গেল লেইট হয়ে! তোর জন্য ফাযিল!

-বাহ্‌ এবার আমার দোষ!

তড়িঘড়ি করে ব্যাগটা কাধে তুলেই চোখ পড়ল খাতাটায়। ধুর! কবিতাগুলো তো দেখাই হয়নি। জুঁইয়ের দেয়া খাতাটা ব্যাগে পুরে ছুট দিল জুনায়েদ।

বিষয়: বিবিধ

১৪০২ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File